/indian-express-bangla/media/media_files/2025/07/24/katwa-blast-2025-07-24-12-23-37.jpg)
Katwa blast: ভয়াবহ সেই বোমা বিস্ফোরণের পর ভেঙে পড়া সেই বাড়ি।
NIA তদন্তে 'না পসন্দ' শাসকের? অন্তত এই ঘটনায় ফের একবার এই বিষয়টিই মাথাচাড়া দিয়েছে। পূর্ব বর্ধমান জেলা যুব তৃণমূল কংগ্রেসের সহ-সভাপতি ও আইনজীবী শুভেন্দু দাস। জেলার কাটোয়ার রাজুয়া গ্রামে হওয়া বোমা বিস্ফোরণের ঘটনার NIA তদন্ত চেয়ে কলকাতা হাইকোর্টে মামলা দায়ের করেন তিনি। সেই মামলার পর থেকেই শুভেন্দু এখন দলেরই বিষ নজরে পড়েছেন। তাঁর উপর নাকি বেজায় চটেছেন খোদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। জেলা তৃণমূলের একটি সূত্রের দাবি, অভিষেকের নির্দেশেই জেলা তৃণমূল কংগ্রেসের সভাপতি তথা কাটোয়ার বিধায়ক রবীন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায় সাংবাদিক বৈঠক ডেকে শুভেন্দু দাসকে আজীবন তৃণমূল থেকে বহিস্কারের কথা ঘোষণা করেন। যদিও শুভেন্দু দলের সিদ্ধান্তে রীতিমতো হতবাক। বিষয়টি নিয়ে তৃণমূলকে কটাক্ষ করতে ছাড়েনি BJP।
কাটোয়া থানার রাজুয়া গ্রামের একটি বাড়িতে গত ৪ জুলাই রাতে বোমা বাঁধার কাজ চলছিল। ওই সময় বিকট শব্দে বিস্ফোরণ ঘটে। বিস্ফোরণের অভিঘাতে যে বাড়িটিতে বোমা বাঁধা চলছিল সেই বাড়িটি সহ আশপাশের আরও কয়েকটি বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় বীরভূম জেলার নানুর থানা এলাকার বাসিন্দা বরকত কারিগর নামে এক দুস্কৃতীর। রাজুয়া গ্রামের বাসিন্দা তুফান চৌধুরী ছাড়াও ইব্রাহিশ শেখ ও সফিক মণ্ডল নামে আরও দু’জন জখম হয়। তুফানকে পুলিশ উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করে। বাকি দু’জন পালিয়ে গিয়েছিল।
পরে তুফান-সহ মোট ১৩ জনকে রাজুয়া বিস্ফোরণকাণ্ডে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। চিকিৎসাধীন থাকা তুফান সুস্থ হলে গত সপ্তাহে তাকে নিজেদের হেফাজতে নিয়ে পুলিশ টানা জেরা করে। জেরায় পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে পুলিশ তুফান চৌধুরীর বাড়িতে তল্লাশি চালিয়ে দুটি দেশি পাইপগান, তিন রাউণ্ড কার্তুজ এবং দু'কেজি বোমার মশলাও উদ্ধার করে। বুধবার ধৃতকে কাটায়ো মহকুমা আদালতে পেশ করে পুলিশ। বিচারক তাকে ১৪ দিনের জেল হেফাজতের নির্দেশ দিয়েছেন। তুফানের কীর্তিতে পুলিশকর্তারা একপ্রকার নিশ্চিত হয়ে গিয়েছেন, যে বড় ধরনের কোনও অপরাধ সংঘটিত করার উদ্দেশ্যেই তুফান চৌধুরী বোমা তৈরির পাশাপাশি অস্ত্র মজুত করেছিল।
তদন্তের স্বার্থে পুলিশ তুফান চৌধুরীর পরিকল্পনার কথা যদিও এখনও সামনে আনেনি। তবে বোমা বিস্ফোরণের ঘটনার পর কাটোয়ার বিধায়ক তথা পূর্ব বর্ধমান জেলা তৃণমূল সভাপতি রবীন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায় যে অভিযোগ করেছিলেন তা রাজ্য রাজনীতিতে তোলপাড় ফেলে দিয়েছিল। বোমা বিস্ফোরণের ঘটনার পর কাটোয়ার ত্রাস জঙ্গল শেখকে নিশানা করে রবীন্দ্রনাথ বাবু দাবি করেছিলেন, “আমাকে বা আমার দলের কর্মীদের কাউকে প্রাণে মারার জন্য বোমা বাঁধা হচ্ছিল।"
আরও পড়ুন- Train Accident: ওড়িশায় ফের বড়সড় ট্রেন দুর্ঘটনা! লাইন থেকে ছিটকে গেল পরপর বগি
কাটোয়ার বিধায়ক রবীন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায়ের দাবির বিষয়টি জানতে পারেন কাটোয়ার দাঁইহাট শহরের বাসিন্দা জেলা যুব তৃণমূলের সহ-সভাপতি তথা কাটোয়া আদালতের আইনজীবী শুভেন্দু দাস। তিনি রাজুয়া বিস্ফোরণের ঘটনায় NIA তদন্ত চেয়ে কলকাতা উচ্চ আদালতে একটি জনস্বার্থে মামলা করে বসেন। সেই মামলা আদালতে গৃহীতও হয়েছে। মামলা দায়ের প্রসঙ্গে শুভেন্দু দাস বলেন, "বিস্ফোরণ কাণ্ডের পর বিধায়ক নিজে আক্রান্ত হতে পারেন বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন। এই পরিস্থিতিতে কাটোয়া এলাকার সাধারণ মানুষ আদৌ নিরাপদ কিনা তা নিয়ে প্রশ্ন উঠে গিয়েছে। বিধায়কের আশঙ্কার পর আর পুলিশের প্রতি আস্থা রাখা যায় না। তাই এলাকার সাধারণ মানুষের নিরাপত্তার স্বার্থে আমি জনস্বার্থে উচ্চ আদালতের কাছে রাজুয়ার বিস্ফোরণের ঘটনায় NIA তদন্ত চেয়ে আবেদন রেখেছি। রাজুয়ায় খুব বড় ধরনের বিস্ফোরণ হয়েছিল। একজন মানুষ মারা যায়। একাধিক ব্যক্তি আহত হন। একটা বাড়ি উড়ে যায়। আমি মনে করি এটা ছোটোখাটো কোনও ঘটনা নয়।"
আরও পড়ুন- kolkata metro:মেট্রোর কামরায় এই কাজ করলেই 'কড়া শাস্তি'! 'বেয়াড়া' যাত্রীদের সতর্ক করে বিবৃতি
যদিও রবীন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায় ওই প্রসঙ্গে বলেন, “যুব তৃণমূলের সহ সভাপতি NIA তদন্ত চেয়ে মামলা করলেও আমার এবং আমার দলের পুলিশের প্রতি পূর্ণ আস্থা রয়েছে। পুলিশ ঠিকঠাক তদন্ত করছে। উনি কেন এই ধরনের মামলা করলেন তা জানি না।" বিষয়টি নিয়ে কটাক্ষ করে বিজেপির সাংগঠনিক কাটোয়া জেলার সম্পাদক সীমা ভট্টাচার্য বলেন, “শাসকদলের নেতাদেরও যে পুলিশের উপর ভরসা উড়ে গিয়েছে, তা এখন বেশ ভালই বোঝা যাচ্ছে। তাহলে সাধারণ মানুষ আর কী করে বাংলার পুলিশের উপর ভরসা রাখবে!"