/indian-express-bangla/media/media_files/2025/10/28/jagadhatri-2025-10-28-20-52-31.jpg)
Jagaddhatri Puja: ঐতিহ্যবাহী সেই পুজো।
রাজবাড়ি থেকে ১৫ টাকা এলে কৃষ্ণনগর মালোপাড়া বারোয়ারির পুজো শুরু হয়। আগের মতো আজও এই প্রথা চলে আসছে। একইসঙ্গে জলেশ্বরী মাকে আজও আগের মতো মাছ সহকারে মহাভোগ দিয়ে পুজো দেওয়া হয়। রাজবাড়ি থেকে ১৫ টাকা এলে মালোপাড়ার বারোয়ারি পুজো শুরু হওয়ার পর এই মহাভোগে দেওয়া হয়। এই মহাভোগে অন্ন, পরমান্ন, খিচুড়ি, পোলাও, পাঁচ ভাজা, কদবেলের চাটনি ও মাছ থাকে। খুব যত্ন সহকারে বিশেষ ব্যবস্থার মাধ্যমে এই মহাভোগ তৈরি করা হয়। পুজো কর্তাদের থেকে জানা যায়, জয়রামবাটিতে সারদা মায়ের মা শ্যামা সুন্দরীদেবী যে জগদ্ধাত্রী পুজোর প্রচলন করেছিলেন, সেই প্রথা মেনেই মালোপাড়া বারোয়ারির পুজো হয়।
এ প্রসঙ্গে পুজো কমিটির অন্যতম কর্তা কৃষ্ণ হালদার বলেন, 'বিখ্যাত জয়রাম বাটিতে জগদ্ধাত্রী দেবীকে মাছ দিয়ে পুজো দেওয়া হয়। মালো পাড়ার মৎস্যজীবীরা দীর্ঘদিন ধরে এই প্রথা মেনে আসছে। সেই মতো ইলিশ হোক বা কাতলা, রুই মাছ দিয়ে দেবীর মহাভোগ হয়। এই মহাভোগ হলে দেবীর ভোগ বা পুজো সম্পন্ন হয়'।এই সাধারণ মানুষের মধ্যেও দেওয়া হয়। জানাযায়, একসময় জেলেরা রাজা কৃষ্ণচন্দ্র রায়ের পুজোর প্রতিমা নিরঞ্জনের জন্য নিয়ে যেতেন।
আরও পড়ুন- জগদ্ধাত্রী পুজোয় বিরাট বিপত্তি চন্দননগরে! হুড়মুড়িয়ে ভেঙে পড়ল বিখ্যাত পুজো কমিটির প্যান্ডেল
তাদেরও সাধ হল জগদ্ধাত্রী পুজো করার। রাজাও মেনে নিলেন সেই সাধের কথা। কিন্তু পুজোর খরচ মিটবে কী করে?পুজো করতে মহারাজা কৃষ্ণচন্দ্র রায় মালোদের দিলেন ১৫ টাকা। সেই আমলে ১৫ টাকা অনেক টাকাই ছিল। একই নিয়মে আজও রাজবাড়ি থেকে যায় ১৫ টাকা। রাজবাড়ি থেকে প্রতিমার কাঠামো তৈরির কাঠ ও পুজোর খরচের জন্য সেই আমলে ১৫ টাকা দেওয়া হয়েছিল। আজও সেই ধারা অব্যাহত। রাজবাড়ির বর্তমান গৃহকর্তা গৃহকর্ত্রীরা এই অর্থ মালোপাড়ার বারোয়ারিতে নিয়ে আসেন। বর্তমান সময়ের নিরিখে অবশ্য ১৫ টাকা কিছুই নয়। তবে এই টাকার আলাদা গুরুত্ব দেওয়া হয়।টাকা না এলে মালোপাড়া বারোয়ারিতে পুজোই শুরু হয় না। মহারাজা কৃষ্ণচন্দ্র জগদ্ধাত্রী পুজোর প্রসারে ও রাজবাড়ির রাজরাজেশ্বরীকে জলঙ্গি নদীতে ভাসানের সময় মালোদের সাহায্য করতে পুরস্কার হিসাবে এই অর্থ দিয়েছিলেন।
মালোপাড়ার পুজো কমিটির কর্তাদের দাবি, কৃষ্ণনগরের অন্যতম প্রাচীন পুজোগুলির অন্যতম মালোপাড়া। প্রায় ২০০ বছর বয়স হয়ে গেল জলেশ্বরী মায়ের। জানা যায়, জোড়া নৌকার মাঝখানে রাজরাজেশ্বরীকে রেখে এক অদ্ভুত কায়দায় মালোরা দেবীকে ভাসান দিতে নিয়ে যেতেন। এভাবে দীর্ঘদিন চলে আসার পর এলাকার মৎস্যজীবীরা বা মালোরা তাদের পাড়ায় পুজোর জন্য রাজার কাছে আবেদন জানিয়েছিলেন। সাবেকি ঘরানার সুষমা মণ্ডিত এই প্রতিমার মুখে আলাদা এক মাহাত্ম্য বিরাজ করে। পুজোর দিন মনস্কামনা পূর্ণ হওয়া ব্যক্তিরা ধূনো পোড়ায়। কয়েকশো কেজি ধূনো পোড়ানো দেখতে প্রচুর মানুষ আসেন। মনস্কামনা পূর্ণ নিয়ে অনেক কাহিনী শোনা যায়।
পুজো মণ্ডপে থাকা গ্যাসবাতি দেবীমূর্তিকে আরও দ্যূতিময় করে তোলে। এই দেবীকে দেখতে পুজো মন্ডপে হাজার হাজার মানুষ আসেন। পুজোটা এলাকার মানুষ সম্মিলিত ভাবে করে। নিয়ম নিষ্ঠা আন্তরিকতার সঙ্গে পুজো হয়। সেই মতো অষ্টমীর রাতে অধিবাসের সময় অথাৎ পুজোর আগের দিন রাতে ছেলেরা মহিলাদের বেশে জল সাজার অনুষ্ঠান করেন। জল ও জাল নিয়ে মৎস্যজীবীদের কাজ উঠে আসে এই অনুষ্ঠানে। তাই মালোপাড়ার প্রতিমার অপর নাম জলেশ্বরী মা। জলেশ্বরী মাকে পুজোর দিন দেখতে পুজো দিতে মালোপাড়া বারোয়ারিতে মানুষের ঢল নামে।
/indian-express-bangla/media/agency_attachments/2024-07-23t122310686z-short.webp)
Follow Us