বাবা পেশায় লরিচালক, মা গৃহবধূ। বেহুলা নদীর ধারে খাস জমিতে কোনও রকমে ভাঙাচোরা টিনের ছাউনি দেওয়া একটি ঘর। সেখানে ওই দম্পতিদের দুই ছেলে এক মেয়েকে নিয়ে বসবাস। নুন আনতে পান্তা ফুরানোর সেই পরিবারের ছেলে নিট পরীক্ষায় ৫৪৯ নম্বর পেয়ে দেশের মধ্যে ১৭ হাজার র্যাঙ্ক করেছেন।
দুর্গম গ্রামের এই প্রথম কোনও পড়ুয়া নিট পরীক্ষায় সাফল্য পেয়ে চিকিৎসক হওয়ার পথে যেতে চলেছে। আর এতেই খুশিতে মেতে উঠেছেন ওই গ্রামের অধিকাংশ বাসিন্দারা। আদিবাসী অধ্যুষিত পুরাতন মালদা ব্লকের মঙ্গলবাড়ি গ্রাম পঞ্চায়েতের মৌলপুর গ্রামের ছাত্র মহম্মদ ওয়াসিম (২২) এবছর নিট পরীক্ষা দিয়ে ১৭ হাজার র্যাঙ্ক করেছেন।
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, ওয়াসিমের বাবা আলাউদ্দিন শেখ পেশায় লরিচালক। মা হাসনারা বিবি গৃহবধূ । বাড়ির সেজো ছেলে ওয়াসিম। বড় দিদির বিয়ে হয়ে গিয়েছে। ছোট ভাই স্থানীয় একটি হাই মাদ্রাসায় অষ্টম শ্রেণীতে পাঠরত। মহম্মদ ওয়াসিম পুরাতন মালদা ব্লকের ওসমানিয়া হাই মাদ্রাসায় মাধ্যমিক পর্যন্ত পড়াশোনা করে। এরপর মুর্শিদাবাদের জঙ্গিপুরে একটি মাদ্রাসা থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা দেয়। দুটো পরীক্ষাতেই ৯০ শতাংশের ওপর নম্বর পেয়েছিল ওয়াসিম।
আরও পড়ুন- Kolkata fire incident:খিদিরপুরে মুখ্যমন্ত্রী, অগ্নিকাণ্ডে পুড়ে যাওয়া বাজার ফের গড়ার আশ্বাস, আর্থিক ক্ষতিপূরণ ঘোষণা
এরপর গত দুই বছরে নিট পরীক্ষা দিয়ে তার সাফল্য আসেনি। কিন্তু এবারই সে ১৭ হাজার র্যাঙ্ক পেয়ে নিট পরীক্ষায় সাফল্য পেয়েছে। স্থানীয় গ্রামবাসীরা জানিয়েছেন, মৌলপুর গ্রামটি অত্যন্ত দুর্গম । গ্রামের প্রথম কোনও পড়ুয়া ডাক্তার হতে চলেছে। রবিবার থেকে গ্রামবাসীদের অনেকেই ওয়াসিমের বাড়িতে গিয়ে মিষ্টি খাইয়ে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন।
আরও পড়ুন- Abhishek Banerjee: অভিষেকের পঞ্চবান! পহেলগাঁও হামলা ইস্যুতে কেন্দ্রকে তুলোধোনা তৃণমূল নেতার
ওয়াসিমের বাবা আলাউদ্দিন শেখ জানিয়েছেন, তাদের নিজস্ব কোনও ভিটেমাটি নেই। বেহুলা নদীর ধারে খাস জমিতে কোনও রকমে বসবাস করছেন। অন্যের লরি চালিয়েই কোনও রকমে সংসার টানছেন। তার মধ্যে কষ্ট করে দুই ছেলের পড়াশোনা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন । ছেলে ওয়াসিমের এমন সাফল্যে রীতিমতো গর্বিত অভিভাবকেরা।
আরও পড়ুন- Malda News: আমের আড়ালে কী পাচারের চেষ্টা? সূত্রের খবরে অতর্কিতে হানায় বড়সড় গ্রেফতারি
কৃতী ছাত্র মহম্মদ ওয়াসিম জানিয়েছেন, প্রথম থেকে ইচ্ছা ছিল ডাক্তার হওয়ার। তবে দু'বার নিট পরীক্ষায় সাফল্য আসেনি। তৃতীয়বার পরীক্ষা দিয়েই সাফল্য এসেছে । ভবিষ্যতে ডাক্তার হয়ে গ্রামের মানুষদের বিনামূল্যে সেবা করতে চান তিনি। গরিব ঘরের হলেও শুধুমাত্র বাবা-মায়ের চেষ্টাতেই আজকে এই পথে সাফল্য মিলেছে বলে জানিয়েছেন কৃতী ওই ছাত্র।