Bengali language movement : বীরভূম থেকে ‘ভাষা আন্দোলন’-এর সূচনার ডাক দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। নির্বাচনের আগে বিজেপির ‘বিরুদ্ধে’ মাস্টারস্ট্রোক মমতার।
বিজেপি শাসিত রাজ্যে বাঙালি হেনস্থা নিয়ে আগেই গর্জে উঠেছেন মুখ্যমন্ত্রী। এবার বোলপুর থেকে বিজেপির বাঙালি ও বাংলা ভাষার বিরুদ্ধে বিদ্বেষের অভিযোগে 'ভাষা আন্দোলনের' ডাক দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মঙ্গলবার ২৩ জুলাই মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “বাঙালির ভাষা ও সংস্কৃতিকে রক্ষা করতেই এ আন্দোলন।” তাঁর স্পষ্ট অভিযোগ, “বিজেপি বাংলা ভাষাকে গুরুত্ব না দিয়ে হিন্দিকে চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছে।” এ প্রসঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী জানান, আগামী দিনে বাংলা ভাষার অধিকার রক্ষায় রাজ্যের প্রতিটি জেলা, ব্লক এবং অঞ্চল স্তরে ‘ভাষা আন্দোলন’ চলবে।
২১ জুলাইয়ের শহীদ দিবসের পর দলীয় সাংগঠনিক দিক থেকে মুখ্যমন্ত্রী একাধিক কৌশলগত বার্তা দেন। এবার তিনি নতুন করে দলের জেলা কমিটিকে নির্দেশ দিলেন,“প্রত্যেক বুথে গিয়ে ভাষা ও সংস্কৃতির লড়াইয়ে সাধারণ মানুষকে যুক্ত করতে হবে।” উল্লেখ্য, ২৮ জুলাই মুখ্যমন্ত্রীর বীরভূমের ইলমবাজারে বেশ কিছু প্রশাসনিক কর্মসূচী রয়েছে মুখ্যমন্ত্রীর। ২৯ জুলাই কেন্দ্রের বিরুদ্ধে ধিক্কার মিছিলের মধ্যে দিয়ে শুরু হবে কেন্দ্রের বিরুদ্ধে ভাষা আন্দোলন। প্রতিটি ব্লকে ‘বাংলা ভাষার পক্ষে’ মিছিল ও প্রচার অভিযান হবে বলে দলের তরফে জানানো হয়েছে।
বিজেপিকে নিশানা করে মমতা বলেন, “বাংলা ভাষা বললেই যেন অপমান! অথচ হিন্দি চাপিয়ে দেওয়া হচ্ছে সর্বত্র। এটা কি গণতন্ত্রের লঙ্ঘন নয়?”তিনি অভিযোগ করেন, কেন্দ্রীয় সরকার সাধারণ পরীক্ষায়, রেল ও অন্যান্য নিয়োগে হিন্দি ভাষা প্রাধান্য দিচ্ছে, যেখানে বাংলার ছেলেমেয়েরা বঞ্চিত হচ্ছে। এই অবস্থায় “বাংলা ভাষার অস্তিত্ব রক্ষায় লড়াই-ই একমাত্র পথ ” বলেই মত মুখ্যমন্ত্রীর।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, ২০২৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনের প্রস্তুতিতে তৃণমূল কংগ্রেস এবার বাঙালি আত্মপরিচয় ও ভাষা-সংস্কৃতির ইস্যুকে জোরদার করতে চাইছে। বিজেপির বিরুদ্ধে "বাঙালি বিদ্বেষের অভিযোগ" তুলে রাজ্য জুড়ে নতুন মেরুকরণ তৈরি করতে চাইছে তৃণমূল।
বিজেপি শাসিত রাজ্যগুলিতে বাঙালি বিদ্বেষ ইস্যুতে তীব্র আক্রমণ শানালেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মঙ্গলবার নবান্নে এক সাংবাদিক বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী দাবি করেন, আলিপুরদুয়ারের ফালাকাটার দুই বাসিন্দা অঞ্জলি শীল ও নিত্য শীল সম্প্রতি অসম সরকারের ফরেনার্স ট্রাইব্যুনাল থেকে 'নাগরিকত্ব সংক্রান্ত' নোটিশ পেয়েছেন, যা তিনি "অসাংবিধানিক ও বেআইনি" বলে আখ্যা দেন।
মমতা বলেন,“এটা একেবারেই গ্রহণযোগ্য নয়। এভাবে পশ্চিমবঙ্গের মানুষের উপর দমননীতি চালানো হচ্ছে। বিজেপি সব সীমা অতিক্রম করছে। এটা ভাষাগত ও সাংবিধানিক অধিকার লঙ্ঘনের সামিল।” তিনি প্রশ্ন তোলেন,“একটি রাজ্য কীভাবে অন্য রাজ্যের নাগরিকদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নিতে পারে? এটা কি বাংলার উপর জোর করে দখল কায়েমের চেষ্টা? এটা কি নতুন ধরনের ভাষাগত সন্ত্রাস? তথাকথিত ‘ডাবল ইঞ্জিন’ সরকার আগে নিজেদের রাজ্যকে ঠিক করুক, তারপর বাংলার বিষয়ে মাথা ঘামাক।”
মুখ্যমন্ত্রীর দাবি, শুধু অসম নয়, হরিয়ানা সরকারও বাংলার কিছু বাসিন্দাকে বাংলাদেশি সন্দেহে চিঠি পাঠিয়েছে। অসমের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মার সমালোচনা করে মমতা বলেন, “মণিপুর জ্বলছে, তিনি কিছু করতে পারছেন না। অথচ বাংলার মানুষকে লক্ষ্য করছেন। ভাষার উপর আঘাত করা হচ্ছে। আমি সব ভাষাকেই ভালোবাসি, কিন্তু মাতৃভাষার অপমান সহ্য করব না।”
মুখ্যমন্ত্রী আরও বলেন,“যদি কেউ ভাবেন ভোটার তালিকা থেকে নাম বাদ দিলে, বাংলায় ক্ষমতা দখল করা যাবে, তাঁরা ভুল করছেন। আমরা বাংলার মানুষের পাশে আছি। ভারতবর্ষের প্রতিটি নাগরিকের দেশের যেকোনো প্রান্তে কাজ করার অধিকার রয়েছে। তাহলে বাংলা থেকে যাঁরা কাজে গিয়েছেন, তাঁদের নিয়ে বিজেপির সমস্যা কোথায়?” তিনি জানান, বিশ্বের প্রায় ৩০ কোটি মানুষ বাংলা ভাষায় কথা বলেন, ফলে এই ধরনের অবমাননা গোটা ভাষা ও জাতির প্রতি অপমান।