/indian-express-bangla/media/media_files/2025/10/13/manikchak-panchayat-worker-death-2025-10-13-17-06-58.jpg)
Manikchak panchayat worker death: মানিকচকে পঞ্চায়েত কর্মীর মৃত্যু।
Malda News: অতিরিক্ত কাজের চাপ এবং মানসিক নির্যাতনের জেরে এক অস্থায়ী পঞ্চায়েত কর্মীর মর্মান্তিক মৃত্যু ঘিরে চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে মানিকচক ব্লকে। মৃত কর্মীর সহকর্মীরা অভিযোগ তুলেছেন, ব্লকের বিডিও অনুপ চক্রবর্তীর লাগাতার চাপ ও হুমকির ফলেই মৃত্যু হয়েছে সহকর্মী যদু মন্ডল (৩৫)-এর।
ঘটনার জেরে সোমবার সকাল থেকেই ক্ষোভে ফেটে পড়েন অন্যান্য অস্থায়ী পঞ্চায়েত কর্মীরা। মৃতদেহ গাড়িতে করে নিয়ে এসে তারা মানিকচক বিডিও অফিসের সামনে বিক্ষোভ দেখান এবং বিডিওর বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি তোলেন।
আরও পড়ুন- ৬ বছর ধরে কী করছিল CBI?”, রাজীব কুমার মামলায় বিস্ময় প্রকাশ সুপ্রিম কোর্টের
জানা গেছে, মৃত যদু মন্ডল ছিলেন দক্ষিণ চন্ডিপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের অস্থায়ী ডাটা এন্ট্রি অপারেটর। শনিবার কর্মরত অবস্থায় আচমকাই অসুস্থ হয়ে পড়েন তিনি। অফিসেই অচৈতন্য অবস্থায় পড়ে গেলে সহকর্মীরা প্রথমে তাঁকে মানিকচক গ্রামীণ হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখান থেকে অবস্থার অবনতি হলে স্থানান্তর করা হয় মালদা মেডিকেল কলেজে, যেখানে সোমবার ভোরে তাঁর মৃত্যু হয়।
চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, অতিরিক্ত মানসিক চাপ ও ক্লান্তির কারণে ব্রেন স্ট্রোক হয়েছিল যদু মন্ডলের। মৃতের সহকর্মী সঞ্জীব কুমার মিশ্র ও অমিত প্রামাণিক জানান, “সম্প্রতি SIR প্রকল্প চালু হওয়ার কারণে বিডিও সাহেব আমাদের ওপর অকল্পনীয় কাজের চাপ দিচ্ছিলেন। সকাল ৭টার মধ্যে অফিসে যেতে হতো, আর রাত ১১টা-১২টা পর্যন্ত কাজ করতে হতো। এমনকি বাড়িতেও কম্পিউটারে লগইন করে কাজ চালিয়ে যেতে হতো।”
আরও পড়ুন- বিশেষ হতে চলেছে এবারের দিপাবলী, এই তিন রাশির জাতক-জাতকরা 'মালামাল' হবেন
তাঁদের দাবি, যদু মন্ডল গত কয়েকদিন ধরেই অসুস্থ ছিলেন। শরীর খারাপ থাকা সত্ত্বেও ছুটি নেওয়ার সুযোগ পাননি, কারণ ছুটি নিলে নাকি “বেতন বন্ধ করে দেওয়া হবে”— এমন হুমকি দেওয়া হয়েছিল। প্রায় ৪০ জন অস্থায়ী পঞ্চায়েত কর্মী দীর্ঘদিন ধরে এমনই মানসিক চাপের মধ্যে কাজ করছেন বলে অভিযোগ তাঁদের।
আরও পড়ুন- ‘সরকার পাশে আছে’, উত্তরবঙ্গে ত্রাণ বিলিতে নিজেই তদারকি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের
মৃতের ভাই রবীন্দ্র মণ্ডল বলেন, “দাদা সকাল ছয়টায় বাড়ি থেকে বেরোত, ফিরত রাত বারোটায়। বলত, বিডিও সাহেব কাজ না করলে টাকা বন্ধ করে দেবেন। শরীর খারাপ থাকলেও বিশ্রাম নিতে পারেনি। কাজের মধ্যেই ব্রেন স্ট্রোকে মারা গেল। আমরা বিডিওর বিরুদ্ধে কড়া তদন্ত চাই।” মৃতের স্ত্রী পম্পা মন্ডলও কান্নাজড়িত কণ্ঠে জানান, “আমাদের সংসার পুরোপুরি ওর আয়ের ওপর নির্ভর করত। এখন দুই ছোট ছেলে-মেয়েকে নিয়ে আমি কীভাবে বাঁচব? বিডিওর মানসিক নির্যাতনের কারণেই আমার স্বামীর মৃত্যু হয়েছে। আমরা প্রশাসনের কাছে ন্যায় চাই।”
তৃণমূল পরিচালিত পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকারি কর্মচারী ফেডারেশন–এর মানিকচক ব্লক সভাপতি আব্দুল হালিম বলেন, “আমরা বহুদিন ধরে শুনছি, এই ব্লকের অস্থায়ী কর্মীদের ওপর অমানবিক কাজের চাপ দেওয়া হচ্ছে। যাঁরা মাত্র ১০-১২ হাজার টাকায় কাজ করছেন, তাঁদের দিয়ে দিনরাত কাজ করানো হচ্ছে। যদু মন্ডলের মৃত্যু নিছক দুর্ঘটনা নয়, এটি প্রশাসনিক ব্যর্থতা।” তিনি আরও জানান, সংগঠনের পক্ষ থেকে বিডিওর ভূমিকা নিয়ে উচ্চপর্যায়ে রিপোর্ট পাঠানো হবে এবং দোষীদের শাস্তির দাবি জানানো হবে।
ঘটনার পর থেকেই মানিকচক ব্লকের বিডিও অনুপ চক্রবর্তী নিজের মোবাইল ফোন বন্ধ রেখেছেন বলে জানা গেছে। সোমবার তিনি অফিসেও উপস্থিত হননি। প্রশাসনের অন্যান্য কর্মীরা তাঁর সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়েছেন। এই নীরবতা আরও প্রশ্ন তুলেছে প্রশাসনের ভূমিকা নিয়ে।
মালদার জেলাশাসকনীতিন সিংহানিয়া বলেন, “ঘটনাটি অত্যন্ত দুঃখজনক। বিষয়টি ইতিমধ্যেই আমাদের নজরে এসেছে। আমরা ঘটনার পূর্ণাঙ্গ তদন্তের নির্দেশ দিয়েছি। দোষী প্রমাণিত হলে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।” তিনি আরও জানান, জেলার অস্থায়ী পঞ্চায়েত কর্মীদের কাজের পরিবেশ সম্পর্কেও প্রশাসন খতিয়ে দেখবে।
যদু মন্ডলের বাড়ি ভুতনি থানার হিরানন্দপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের শুকসেনা এলাকায়। তাঁর পরিবারে স্ত্রী, বৃদ্ধ বাবা-মা এবং দুই নাবালক সন্তান রয়েছে। পাড়ার এক প্রতিবেশী জানান, “যদু খুব শান্ত স্বভাবের মানুষ ছিল। কাজের প্রতি ভীষণ দায়িত্বশীল ছিল, কিন্তু এত চাপ সহ্য করতে পারেনি।” পুরো এলাকায় এখন শোকের আবহ, একই সঙ্গে ক্ষোভও ছড়িয়ে পড়ছে প্রশাসনের ভূমিকা নিয়ে।