Merry Christmas: বড়দিন উপলক্ষ্যে বাংলার দিকে দিকে সাজিয়ে তোলা হয়েছে একের পর এক গির্জা। উৎসবের সাজে সেজে উঠেছে গির্জা। বাংলায় বেশ কিছু এমন চার্চ রয়েছে যার সঙ্গে সোনালী ইতিহাস জড়িয়ে। তেমনই একটি চার্চ রয়েছে পূর্ব মেদিনীপুরের গেঁওখালির মীরপুরে। বড়দিন উপলক্ষ্যে গোটা ডিসেম্বর মাস ধরেই এখানে নানা অনুষ্ঠান চলে। মীরপুর এমনিতেই পর্তুগিজ পাড়া নামে পরিচিত। গ্রামীণ বাংলার এতল্লাটে পর্তুগিজ পাড়া তৈরি হল কীভাবে? জেনে নিন প্রাচীন সেই স্বর্ণালী ইতিহাস।
সালটা তখন ১৭৪২। বাংলার নবাব তখন আলিবর্দী খাঁ। নদীপথ বেয়ে বর্গীরা তখন কাতারে কাতারে বাংলায় ঢুকে পড়ছে। মহারাষ্ট্র থেকে এসে বাংলার সমৃদ্ধশালী অঞ্চলগুলোতে চলছে বর্গী হামলা, চলছে লুটপাট। বর্তমান পূর্ব মেদিনীপুরের মহিষাদলে তৎকালীন ব্যবসা-বাণিজ্য ও বন্দরের রমরমা বাজার। রেহাই পায়নি তাই মহিষাদলও। আর জলপথে মহিষাদলে প্রবেশের রাস্তাই হল গেঁওখালির কাছের রূপনারায়ণ নদী।
মহিষাদলের রাজা আনন্দমোহন উপাধ্যায় তৎপর হয়ে উঠলেন। গোয়া সরকারের সঙ্গে তিনি যোগাযোগ করলেন। ১২ জন বন্দি পর্তুগিজ জলদস্যুকে নিয়ে তিনি আসেন বাংলায়। বর্গী হামলা থেকে বাঁচতে সেই পর্তুগিজদের ওপরেই রাজার ভরসা বাড়তে থাকে। তাঁদের বিনা শুল্কে রাজা মোতায়েন করেন নদীর পাশের এই মীরপুর অঞ্চলটিতে। সমস্ত সুযোগ সুবিধা তারা পেত রাজার থেকে। এসবের বদলে রাজা বর্গী বাহিনীর থেকে রক্ষা পেলেন। তখন থেকেই ধীরে ধীরে মীরপুরে পর্তুগিজ প্রভাব পড়তে শুরু করে। আজও এই অঞ্চলে পর্তুগিজ সেই জলদস্যুদের ১২টি উপজাতির বংশধরদের বাস। তাঁরা রক্তে পর্তুগিজ কিন্তু হৃদয়ে বাঙালি। বাংলার সংস্কৃতিকে আপন করে তারা নির্দ্বিধায় রয়ে গেছেন এখানে।
বাংলাকে আপন করলেও, তারা কিন্তু অস্বীকার করতে পারেন না তাদের পূর্বপুরুষদের সংস্কৃতিকে। তাই আজও তাঁরা ডিসেম্বরের গোটা মাস জুড়ে মেতে ওঠেন প্রভু যীশুর উপাসনায়। দুটি ঐতিহাসিক গির্জা রয়েছে এখানে। একটি ক্যথলিক, অপরটি প্রোটেস্ট্যান্ট। ফি বারের মতো এবারও ২৪ ডিসেম্বর রাত ১২টায় উপাসনালয়ে একত্রিত হয়েছিলেন সবাই, চলে বাইবেল পাঠ। যাকে ‘খ্রীষ্টের জাগরণ’ বলা হয়। এরপর আজ ভোরে ক্যাসিও এবং ড্রাম সহযোগে শুরু হয়েছিল ‘মিশা গান’। তবে এদের বাদ্যযন্ত্রে বাংলার সংস্কৃতির ছাপ পড়ে গিয়েছে। তাই খোল কর্তালও বাজানো হয়, বের হয় নগরকীর্তন, চলে কেক বিতরণ। এভাবেই হিন্দু-মুসলিম-খ্রিষ্টান সর্ব ধর্মের মেলবন্ধন ঘটে মীরপুরের এই চার্চে।
আরও পড়ুন- India-Bangladesh Relation: পায়ের তলায় ভারতের জাতীয় পতাকা, এবার বাংলাদেশ বয়কটের ডাক দিল দিল্লি
স্থানীয় বাসিন্দা শোভা তেসরার কথায়, "ধর্ম নিয়ে ভেদাভেদের ঝড় দেশ জুড়ে ছড়িয়ে পড়লেও বাংলার এই পর্তুগিজ পাড়ায় তার কোনও আঁচ পড়েনি। এখানে সমস্ত ধর্মের মানুষের উপস্থিতিতে আট দিন ধরে মহা সাড়ম্বরে পালিত হয় বড়দিন।" বড়দিনকে ঘিরে এলাকার চার্জ, অনুষ্ঠান প্রাঙ্গণ সাজিয়ে তোলা হয়েছে। ঠিক তেমনই এই এলাকার বাড়ি-বাড়ি তৈরি হয়েছে বড় বড় কেক।