বাংলা বলার মাসুল! ভিনরাজ্যে বাংলার শ্রমিককে পিটিয়ে খুন, পুজোর মুখে চূড়ান্ত শোরগোল

ভিন রাজ্যে কাজে গিয়ে মোবাইল চুরির প্রতিবাদ করেছিলেন মালদার এক পরিযায়ী শ্রমিক। এরপরই বাঙালি ওই পরিযায়ী শ্রমিককে পিটিয়ে খুন করল দুষ্কৃতীরা।

ভিন রাজ্যে কাজে গিয়ে মোবাইল চুরির প্রতিবাদ করেছিলেন মালদার এক পরিযায়ী শ্রমিক। এরপরই বাঙালি ওই পরিযায়ী শ্রমিককে পিটিয়ে খুন করল দুষ্কৃতীরা।

author-image
Madhumita Dey
New Update
cats

ভিনরাজ্যে বাংলার শ্রমিককে পিটিয়ে খুন

ভিন রাজ্যে কাজে গিয়ে মোবাইল চুরির প্রতিবাদ করেছিলেন মালদার এক পরিযায়ী শ্রমিক। এরপরই বাঙালি ওই পরিযায়ী শ্রমিককে পিটিয়ে খুন করল দুষ্কৃতীরা। মৃতের পরিবারের অভিযোগ, ভিন রাজ্যে বাংলা ভাষায় কথা বলার কারণেই এই নির্মম হত্যাকাণ্ডটি ঘটিয়েছে হামলাকারীরা। বুধবার বিকেলে ঘটনাটি ঘটেছে কর্ণাটক রাজ্যের মহীশূর জেলায়। 

Advertisment

এরপর ওইদিন রাতেই পুরাতন মালদা ওই পরিযায়ী শ্রমিকের বাড়িতেই ফোন করে জানায় সংশ্লিষ্ট রাজ্যের পুলিশ। তারপরে শোকের ছায়া নেমে আছে গোটা পরিবারে। সংসারের একমাত্র উপার্জনশীল ব্যক্তিকে হারিয়ে রীতিমতো শোকে ভেঙে পড়েছে গোটা পরিবার। 

আরও পড়ুন- 'আর কত নির্দয় হবেন মমতা'? জমা জলে মৃত্যু মিছিলের রেশ কাটতে না কাটতে মুখ্যমন্ত্রীর পুজো উদ্বোধনকে 'খোঁচা' বিজেপির

Advertisment

স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, মৃত পরিযায়ী শ্রমিকের নাম খাইরুল জামাল (৫৪) । তার বাড়ি পুরাতন মালদা থানার সাহাপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের দিলালপুর এলাকায়। খাইরুলের পরিবারে তার স্ত্রী তাজকেরা বিবি এবং দুই মেয়ে রয়েছে । বড় মেয়ে শিউলির বিয়ে হয়ে গিয়েছে। ছোট মেয়ে স্থানীয় একটি স্কুলে সপ্তম শ্রেণীতে পাঠরত। খাইরুলের পরিবারে তার বৃদ্ধ বাবা নুরুল ইসলাম রয়েছে। এত বড় পরিবারকে একাই রোজগার করে টানছিল ওই পরিযায়ী শ্রমিক। 

মৃতের বড় মেয়ে শিউলি বিবি বলেন, ছয় মাস আগে কর্নাটকের মহিশূরে নির্মাণ শ্রমিক হিসেবে কাজ করতে গিয়েছিলেন বাবা । মূলত বাবা অন্যান্য শ্রমিকদের জন্য রান্নার কাজটাই বেশি করতো। যেখানে নির্মাণ কাজ চলছিল, তার আশেপাশেই তাবু খাটিয়ে একসঙ্গে ২৫ থেকে ৩০ জন পরিযায়ী শ্রমিক থাকতো। যারা পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন জেলার। বুধবার দুপুরে যখন বাবা রান্নার কাজ করছিল, তখন অন্যান্য পরিযায়ী শ্রমিকেরা নির্মাণের কাজে যুক্ত ছিল। সেই সময় স্থানীয় অচেনা এক যুবক তাবুতে ঢুকে মোবাইল চুরি করে। সেটি আমার বাবা হাতেনাতে ধরে ফেলে এবং প্রতিবাদ জানায়। এরপরই ওইদিন সন্ধ্যায় ওই যুবক দলবল নিয়ে এসে  বাবার ওপর হামলা চালায়। তাঁবুর মধ্যে বাবাকে পিটিয়ে খুন করে। ঘটনার সময় ওখানে কেউ ছিল না। এমনকি বাংলা কথা বলার জন্য আরও বেশি অত্যাচার চালানো হয়। এই ঘটনার আমরা দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানাচ্ছি। 

আরও পড়ুন- উত্তাল রাজপথ, পুজোর মুখে এসএসসি প্রার্থীদের বিক্ষোভে তুলকালাম

মৃতের এক আত্মীয় একরামুল আলি বলেন, ভিন রাজ্যে গিয়ে বাংলা ভাষায় কথা বললেই এই ভাবেই অত্যাচারের শিকার হতে হচ্ছে পরিযায়ী শ্রমিকদের। মোবাইল চুরি করেছিল বলে প্রতিবাদ জানিয়েছিল খাইরুল। তার জন্য ওকে এভাবে পিটিয়ে খুন করা হবে, তা ভাবতে অবাক লাগছে। আমরা যতটুকু জানতে পেরেছি বাংলা ভাষায় কথা বলে প্রতিবাদ করেছিল বলেই ওখানকার দুষ্কৃতীরা প্রকাশ্যেই পিটিয়ে মেরেছে তাঁকে। এই ঘটনার প্রতিবাদ জানাচ্ছি। অভিযুক্তদের যাতে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হয় সেই দাবিও জানানো হয়েছে।

এদিকে এই ঘটনার পর বৃহস্পতিবার মৃত পরিযায়ী শ্রমিকের বাড়িতে দেখা করেন তৃণমূলের শ্রমিক সংগঠন আইএনটিটিইডিসি'র জেলা সভাপতি বিশ্বজিৎ হালদার । তিনি বলেন, কর্নাটকে কংগ্রেস শাসিত রাজ্য। শুধু তাই নয়, এই ধরনের বিজেপি শাসিত রাজ্যগুলিতেও বাংলাভাষীদের ওপর নির্মম অত্যাচার চালাচ্ছে একশ্রেণীর মানুষ। মোবাইল চুরি হয়েছিল বলেই তো ওই পরিযায়ী শ্রমিক প্রতিবাদ জানিয়েছিল। তারজন্য ওকে এভাবে পিটিয়ে মারা হবে ভাবতেই অবাক লাগছে। শুধু মোবাইল চুরির প্রতিবাদ নয়, বাংলা ভাষায় কথা বলার কারনেই খাইরুলের ওপর আক্রমণ করা হয়েছে। আমরা এই ঘটনার তীব্র নিন্দা প্রকাশ করছি।

আরও পড়ুন- জমা জলে মৃত্যুমিছিল, দায় ঠেলাঠেলি, 'ক্ষুব্ধ' কলকাতা হাইকোর্ট, তড়িঘড়ি রিপোর্ট তলব

স্থানীয় পুলিশ ও প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে , মৃত ওই পরিযায়ী শ্রমিকের দেহ ফিরিয়ে আনার ক্ষেত্রে সব রকম ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। মৃতের পরিবারের যে অভিযোগ সেটি গ্রহণ করার পাশাপাশি কর্নাটক রাজ্যের প্রশাসনকেও জানানো হয়েছে। 

Malda