/indian-express-bangla/media/media_files/2025/08/18/cp-radhakrishnan-2025-08-18-10-04-32.jpg)
উপরাষ্ট্রপতি পদে কেন রাধাকৃষ্ণণকেই পছন্দ মোদীর? নেপথ্য কারণ জোর চর্চায়
CP Radhakrishnan News: এনডিএ উপরাষ্ট্রপতি পদে তাদের পছন্দের প্রার্থী হিসেবে মহারাষ্ট্রের রাজ্যপাল সিপি রাধাকৃষ্ণণের নাম ঘোষণা করেছে। ভারতীয় জনতা পার্টির সিনিয়র নেতা বহু বছর আগে রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘে যোগ দেন। তিনি মূলত তামিলনাড়ুর বাসিন্দা এবং তামিলনাড়ু বিজেপির সভাপতিও ছিলেন। দক্ষিণ ভারতে বিজেপিকে শক্তিশালী করার ক্ষেত্রে রাধাকৃষ্ণণ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন।
এনডিএ-র উপরাষ্ট্রপতি পদপ্রার্থী হিসেবে মনোনীত হওয়ার পর প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে দিল্লিতে সাক্ষাৎ করলেন মহারাষ্ট্রের রাজ্যপাল সিপি রাধাকৃষ্ণণ। রবিবার (১৭ আগস্ট ২০২৫) বিজেপি সংসদীয় বোর্ডের বৈঠকের পর তাঁকে এনডিএ-র প্রার্থী ঘোষণা করা হয়। তার কিছু পরেই তিনি দিল্লিতে পৌঁছন। বিমানবন্দরে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী কিরেন রিজিজু, ভূপেন্দ্র যাদব এবং দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী রেখা গুপ্তা তাঁকে উষ্ণ অভ্যর্থনা জানান।
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এক্স-এ (টুইটার) পোস্ট করে লিখেছেন, “সিপি রাধাকৃষ্ণণ জি-র সঙ্গে সাক্ষাৎ হয়েছে। এনডিএ-র উপরাষ্ট্রপতি পদপ্রার্থী হওয়ার জন্য তাঁকে অভিনন্দন জানাই। তাঁর দীর্ঘ জনসেবা এবং বিভিন্ন ক্ষেত্রের অভিজ্ঞতা জাতির জন্য অত্যন্ত কার্যকর হবে। তিনি যেন নিষ্ঠা ও দৃঢ়তার সঙ্গে আগামীতেও দেশের সেবা করে যান।”
Met Thiru CP Radhakrishnan Ji. Conveyed my best wishes on his being the NDA’s Vice Presidential nominee. His long years of public service and experience across domains will greatly enrich our nation. May he continue to serve the nation with the same dedication and resolve he has… pic.twitter.com/5vjFzzwUqn
— Narendra Modi (@narendramodi) August 18, 2025
আরও পড়ুন- বঙ্গোপসাগরে নিম্নচাপ, ঝড় বৃষ্টির পূর্বাভাস কলকাতা সহ দক্ষিণবঙ্গে, উত্তরবঙ্গেও দুর্যোগ
এনডিএ উপরাষ্ট্রপতি পদে প্রার্থী হিসেবে মহারাষ্ট্রের রাজ্যপাল সিপি রাধাকৃষ্ণণের নাম ঘোষণা করেছে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী নিজেই তাঁর নাম অনুমোদন করেছেন। রাধাকৃষ্ণণ বর্তমানে মহারাষ্ট্রের রাজ্যপাল হলেও অতীতে ঝাড়খণ্ড, তেলেঙ্গানা এবং পুদুচেরির দায়িত্বও সামলেছেন। মাত্র ১৫ বছর বয়স থেকেই তিনি রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘের (আরএসএস) সঙ্গে যুক্ত। রাজনীতির পাশাপাশি খেলাধুলাতেও তিনি দক্ষ ছিলেন। মূলত তামিলনাড়ুর তিরুপুরের বাসিন্দা রাধাকৃষ্ণণ দক্ষিণ ভারতে বিজেপি সংগঠনের গুরুত্বপূর্ণ মুখ হিসেবে পরিচিত। আগামী কয়েক মাসের মধ্যেই তামিলনাড়ুতে নির্বাচন। তাই তাঁর মনোনয়ন রাজনৈতিকভাবে অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। রাধাকৃষ্ণণের প্রার্থী হওয়া কেবলমাত্র সাংবিধানিক পদে নিয়োগ নয়, বরং দক্ষিণ ভারতের দলের শক্তি বিস্তারে বিজেপির কৌশলগত পদক্ষেপ। বিরোধী দল এবং সাধারণ মানুষের প্রশ্ন—রাধাকৃষ্ণণের 'বায়োডাটায়' কী এমন রয়েছে যে বিজেপি তাঁকে দেশের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ সাংবিধানিক পদে বসাতে চাইছে? এর জবাবে রাজনৈতিক মহলের ব্যাখ্যা, এই সিদ্ধান্তের মাধ্যমে বিজেপি একদিকে আরএসএসকে একটি স্পষ্ট বার্তা দিতে চাইছে যে তারা সংগঠনের প্রতি অঙ্গীকারবদ্ধ, অন্যদিকে ২০২৬ সালের তামিলনাড়ু বিধানসভা নির্বাচনের আগে দক্ষিণে শক্তি বাড়ানোর পরিকল্পনা করছে গেরুয়া শিবির।
মূলত তামিলনাড়ুর ওবিসি সম্প্রদায়ভুক্ত নেতা রাধাকৃষ্ণণ সাংগঠনিক পর্যায়ে দীর্ঘদিন কাজ করেছেন। দু’বার কোয়েম্বাটুর থেকে লোকসভা নির্বাচনে জয়ী হয়েছেন তিনি। বিজেপি মনে করছে, তামিলনাড়ুর মতো রাজ্যে জাতপাত ও সামাজিক ভারসাম্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এখানকার রাজনীতিতে দীর্ঘদিন ধরে ডিএমকে ও এআইএডিএমকে আধিপত্য বিস্তার করেছে। বিজেপির সেখানে এখনও ক্ষমতা সীমিত। তাই তামিল সমাজের একজন অভিজ্ঞ নেতাকে দেশের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ সাংবিধানিক পদে বসানো কৌশলগতভাবে তাৎপর্যপূর্ণ।
আরও পড়ুন-'মৃত্যুর দায় মুখ্যমন্ত্রীকেই নিতেই হবে',মমতাকে 'আগুনে আক্রমণ' প্রাক্তন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের
তামিলনাড়ুর সঙ্গে মহারাষ্ট্রেরও দীর্ঘ সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক সম্পর্ক রয়েছে। মুম্বই ও পুনেতে প্রচুর সংখ্যক তামিল সম্প্রদায়ের মানুষ থাকেন। সেই সম্পর্ককে মাথায় রেখে বিজেপি চাইছে একটি বৃহত্তর রাজনৈতিক সেতুবন্ধন তৈরি করতে। রাধাকৃষ্ণণকে উপরাষ্ট্রপতি করে দল বার্তা দিতে চাইছে—দক্ষিণ ভারতের নেতা শুধু প্রাদেশিক রাজনীতি নয়, জাতীয় স্তরেও সমান প্রভাব ফেলতে পারেন।
তামিলনাড়ুর রাজনীতিতে জাতপাত বড় ভূমিকা পালন করে। বিজেপি মনে করছে, রাধাকৃষ্ণণের মাধ্যমে তারা একদিকে ওবিসি সম্প্রদায়কে কাছে টানতে পারবে, অন্যদিকে শহুরে শিক্ষিত শ্রেণীর মধ্যেও গ্রহণযোগ্যতা পাবে। রাষ্ট্রপতি পদে আর. ভেঙ্কটরমনের পর এই প্রথম কোনো তামিল নেতা উপরাষ্ট্রপতি পদে নির্বাচিত হতে চলেছেন।
উল্লেখ্য গত এক দশকে বিজেপি দক্ষিণ ভারতে নিজেদের বিস্তার ঘটাতে চেষ্টা করছে। কর্ণাটকে তারা সফল, তেলেঙ্গানায়ও সংগঠন বেড়েছে। কিন্তু তামিলনাড়ু এখনও বিজেপির কাছে অধরা থেকে গিয়েছে। এই প্রেক্ষাপটে সিপি রাধাকৃষ্ণণকে প্রার্থী করে বিজেপি তামিলনাড়ুতে রাজনৈতিক সমীকরণ ধাপে ধাপে পরিবর্তন করতে এগোতে চাইছে।
বর্তমানে ৬৮ বছর বয়সী রাধাকৃষ্ণণ ২০২৪ সালের জুলাই থেকে মহারাষ্ট্রের রাজ্যপাল হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। এর আগে ২০২৩ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে ২০২৪ সালের জুলাই পর্যন্ত তিনি ঝাড়খণ্ডের রাজ্যপাল ছিলেন। পাশাপাশি ২০২৪ সালের মার্চ থেকে জুলাই পর্যন্ত তেলেঙ্গানার রাজ্যপাল এবং পুদুচেরির লেফটেন্যান্ট গভর্নরের অতিরিক্ত দায়িত্বও সামলেছেন। ঝাড়খণ্ডের রাজ্যপাল থাকাকালীন তিনি চার মাসে রাজ্যের সবকটি জেলা ঘুরে দেখেন এবং সাধারণ মানুষের পাশাপাশি জেলা প্রশাসনের সঙ্গেও মতবিনিময় করেন।
আরও পড়ুন- ঘাসফুল প্রতীক নিয়ে 'খেলা হবে' দিবসে বিতর্ক, মঞ্চে জেলাশাসক ও পুলিশ সুপার
রাধাকৃষ্ণণ কোয়েম্বাটুর থেকে দু’বার লোকসভা নির্বাচনে জয়ী হয়েছেন। তিনি ২০০৪ থেকে ২০০৭ সাল পর্যন্ত তামিলনাড়ু বিজেপির রাজ্য সভাপতি ছিলেন। ১৯৫৭ সালে তামিলনাড়ুর তিরুপুরে জন্মগ্রহণ করেন রাধাকৃষ্ণণ। তিনি কোয়েম্বাটুরের চিদাম্বরম কলেজ থেকে বিবিএ ডিগ্রি অর্জন করেন। পড়াশোনার পাশাপাশি খেলাধুলায়ও তিনি ছিলেন সমান দক্ষ। কলেজে টেবিল টেনিস চ্যাম্পিয়ন ছিলেন তিনি এবং দৌড় প্রতিযোগিতায়ও সাফল্য পেয়েছিলেন। এছাড়া ক্রিকেট ও ভলিবল খেলতেও ভালোবাসতেন।