বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ১০টা। কলকাতা পুরসভার কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে থিকথিক করছে ভিড়। পা ফেলার জায়গা নেই! লম্বা লাইনে ৫ ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে হা পিত্যেশ করে মেয়ে হিনা খাতুনের সঙ্গে দাঁড়িয়ে দক্ষিণ ২৪ পরগনার সাবিনা বিবি। ৭ বছরের ছেলের জন্মের শংসাপত্র হাতে পেতে এত কসরত। ওই লম্বা লাইনে দাঁড়িয়ে তপসিয়ার নিতাই ভট্টাচার্যও। তিনিও ছেলের জন্মের শংসাপত্রের জন্য সব কাজ ছেড়ে ছুটে এসেছেন পুরসভায়। শুধু সাবিনা বা নিতাই নন, রাজ্যের শয়ে শয়ে মানুষ দরকারি নথিপত্রের জন্য বিভিন্ন সরকারি দফতরে ছোটাছুটি করছেন। কেন? ‘এনআরসি আতঙ্ক’! হ্যাঁ, এনআরসির আতঙ্কে বাংলার বহু মানুষের কার্যত দিশেহারা অবস্থা।
‘বাংলায় কোনওভাবেই এনআরসি করা হবে না’, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের এই অভয়বাণী সত্ত্বেও একরাশ আতঙ্ক গ্রাস করেছে বঙ্গবাসীর মনে। উল্লেখ্য, গত ৩১ অগাস্ট আসামে এনআরসি-র চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশের পরই বাংলায় এনআরসি করতে উঠেপড়ে লেগেছে পদ্মবাহিনী। ক’দিন আগে বিজেপি কেন্দ্রীয় নেতা কৈলাশ বিজয়বর্গীয় বলেছেন, ‘‘বাংলায় এনআরসি করা হবেই’’।
আরও পড়ুন: ভয় নেই, বাড়ল রেশন কার্ড সংশোধনের সময়
শুধু কলকাতাতেই নয়, রাজ্যের বিভিন্ন জেলাতেও সেই আতঙ্কের চেহারা সামনে এসেছে। মালদা, মুর্শিদাবাদ, দুই দিনাজপুর, কোচবিহার, আলিপুরদুয়ার, দুই ২৪ পরগনায় এনআরসি আতঙ্ক মাথাচাড়া দিয়েছে। গত এক মাস ধরে বাংলার অলিগলিতে এনআরসি আতঙ্কে গ্রাস করেছে। এনআরসি-র ব্যাপারে সতর্ক করতে লিফলেট বিলি করছে মুসলিম সংগঠনগুলো। পাশাপাশি সেমিনার করে প্রয়োজনীয় নথি আদায়ের পরামর্শও দিচ্ছে তারা। জামাত-এ-ইসলামি হিন্দের প্রাক্তন সভাপতি মহম্মদ নুরুমুদ্দিন বলেন, ‘‘বাংলায় যে কোনও সময় এনআরসি করতে পারে কেন্দ্রীয় সরকার। আমরা মুসলিম, দলিতদের বলেছি, যাতে তাঁদের প্রয়োজনীয় নথি নির্ভুল থাকে। জন্ম, মৃত্যুর শংসাপত্র সংগ্রহ করার পরামর্শ দিয়েছি। ভোটার কার্ডে নাম না থাকলে নাম তোলার কথা বলেছি’’। মহম্মদ জিশান নামে এক স্কুল পড়ুয়ার কথায়, ‘‘আমার জন্মের শংসাপত্রে নামের বানান ভুল রয়েছে। এনআরসি করার আগেই আমায় সংশোধন করাতে হবে’’।
আরও পড়ুন: ডিজিটাল রেশন কার্ডের সঙ্গে আধার লিঙ্ক করিয়েছেন? জেনে নিন পদ্ধতি
এ প্রসঙ্গে কলকাতা পুরসভার ডেপুটি মেয়র অতীন ঘোষ বলেন, ‘‘রোজ আড়াইশোরও বেশি মানুষ জন্মের শংসাপত্র, মৃত্যুর শংসাপত্র, নথি সংশোধনের জন্য পুরসভায় ভিড় জমাচ্ছেন। কিন্তু আমাদের যা পরিকাঠামো, তাতে রোজ ১০০ জনের আবেদন ছাড়া বাকিদের দেখা সম্ভব নয়। এনআরসি আতঙ্কেই সকলে পুরসভায় এসে ভিড় জমাচ্ছেন...এনআরসি করা হবে বলে যে গুজব ছড়িয়েছে তা পুরো ভিত্তিহীন। মুখ্যমন্ত্রী প্রায়ই বলছেন যে আতঙ্কিত হবেন না’’। এদিকে, ‘এনআরসি আতঙ্কে’ ইতিমধ্যেই রাজ্যে কয়েকজনের মৃত্যুর ঘটনা সামনে এসেছে। এনআরসি গুজব রুখতে ইতিমধ্যেই প্রচার শুরু করেছে মমতা সরকার। দরজায় দরজায় গিয়ে মানুষকে সচেতন করতে জনপ্রতিনিধিদের নির্দেশ দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী।
Read the full story in English