Passport Scam Case: পাসপোর্ট জালিয়াতি কাণ্ডে (Passport Scam Case) লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে গ্রেপ্তারির সংখ্যা। জালিয়াতি কাণ্ডে জড়িত আরও একজনকে গ্রেপ্তার করল পূর্ব বর্ধমান জেলা পুলিশ। পুলিশ জানিয়েছে, ধৃতের নাম ভাস্কর সামন্ত। ধৃত ব্যক্তি হুগলির খানাকুলের বাসিন্দা। পাসপোর্ট জালিয়াতি কাণ্ড এই নিয়ে পূর্ব বর্ধমান জেলা পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হল পাঁচ জন। ধৃত ভাস্কর সামন্তকে মঙ্গলবার বর্ধমান আদালতে পেশ করে পুলিশ নিজেদের হেফাজতে নিয়েছে।
পাসপোর্টের আবেদনে জাল শংসাপত্র জমা দেওয়ার ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে দিন কয়েক আগে হুগলি থেকে দু’জনকে গ্রেপ্তার করে বর্ধমান থানার পুলিশ। ধৃতদের নাম গণেশ চক্রবর্তী ও অনির্বাণ সামন্ত। হুগলির সিঙ্গুরের নন্দা গ্রামে প্রথম জনের বাড়ি। অপর ধৃত অনির্বাণের বাড়ি সিঙ্গুর থানা এলাকায়। সিঙ্গুর থানার পুলিশকে সঙ্গে নিয়ে বর্ধমান থানার পুলিশ গত শুক্রবার রাতে বাড়ি থেকে এই দু’জনকে গ্রেপ্তার করে।
এই দুই ধৃতদের কাছ থেকে পাওয়া জালিয়াতিতে ব্যবহৃত দু’টি মোবাইল, সিমকার্ড ও একটি কম্পিউটার পুলিশ বাজেয়াপ্ত করে। চক্রে আরও কয়েকজন জড়িত বলে পুলিশের সন্দেহ হয়। তাই ঘটনার তদন্তকারী বর্ধমান থানার পুলিশ অফিসার ধৃতদের হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করে। তখনই পুলিশ পাসপোর্টের জন্য জাল সংশাপত্র তৈরি করে দেওয়া কাণ্ডে ভাস্করের নাম জানতে পারে।
পুলিশ ও আদালত সূত্রে জানা গিয়েছে, কয়েক মাস আগে পাসপোর্ট পেতে আবেদন করেন বর্ধমান শহরের নতুনপল্লির বাসিন্দা রিঙ্কা দাস। পাসপোর্টের আবেদনের সঙ্গে তিনি জন্মের শংসাপত্র জমা দেন। শংসাপত্রটি বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের দেওয়া বলে তিনি আবেদনে উল্লেখ করেন। আবেদনটি ভেরিফিকেশনের জন্য জেলা গোয়েন্দা দপ্তরে পাঠানো হয়।
আরও পড়ুন- Malda News: মালদায় নিহত তৃণমূল নেতার পোস্টার ছেঁড়া হল, দুলাল সরকার খুনে দলেরই নেতাকে জিজ্ঞাসাবাদ
গোয়েন্দা দপ্তর রিঙ্কাকে সমস্ত নথিপত্র নিয়ে অফিসে ডেকে পাঠায়। জন্ম শংসাপত্রটি দেখে তদন্তকারী অফিসারের সন্দেহ হয়। শংসাপত্রটি সঠিক কিনা তা জানতে বর্ধমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের দ্বারস্থ হয় পুলিশ। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ লিখিত রিপোর্টে পুলিশকে জানিয়ে দেয় শংসাপত্রটি বর্ধমান হাসপাতালের দেওয়া নয়। শংসাপত্রটি জাল। এরপরেই গোয়েন্দা দপ্তরের তরফে বর্ধমান থানায় অভিযোগ দায়ের করে।
গোয়েন্দা দপ্তরের দায়ের করা অভিযোগের ভিত্তিতে বর্ধমান থানার পুলিশ মামলা রুজু করে। গত ১৯ ডিসেম্বর রিঙ্কাকে গ্রেপ্তার করে । পরে ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে বর্ধমান শহরের বড়নীলপুর খেলার মাঠ এলাকার বাসিন্দা স্বরূপ রায়কে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। তাকে পাঁচদিন পুলিশি হেফাজতে পাঠানোর নির্দেশ দেয় আদালত। হেফাজতে থাকা স্বরূপকে জিজ্ঞাসাবাদ করে শংসাপত্র জালিয়াতিতে গণেশের জড়িত থাকার বিষয়টি জানতে পারে পুলিশ। এরপরেই গণেশের বাড়িতে হানা দিয়ে তাকে পাকড়াও করে পুলিশ। পুলিশের দাবি, গনেশ ঘটনায় জড়িত থাকার কথা কবুল করেছে। জালিয়াতিতে ব্যবহৃত কম্পিউটারটি তার বাড়ি থেকে উদ্ধার করে পুলিশ। তার মোবাইল ফোনটিও বাজেয়াপ্ত করা হয়।
তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করে জালিয়াতিতে অনির্বাণ জড়িত বলে জানতে পারে পুলিশ। রাতেই অনির্বাণের বাড়িতে হানা দিয়ে তাকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। ধৃত গণেশ ও অনিবার্ণ পুলিশকে জানায়, ভাস্কর সামন্ত চক্রের মূল পাণ্ডা। পাসপোর্ট জালিয়াতি কাণ্ডের শিকড় কতদূর বিস্তৃত রয়েছে সেটাই এখন পুলিশ খতিয়ে দেখছে।
জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার অর্ক বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “জাল ওয়েবসাইটের সাহায্য নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করে রাজ্যজুড়ে সরবরাহ করতো জাল জন্ম সার্টিফিকেট। পূর্ব বর্ধমান জেলা পুলিশের হাতে মূল পান্ডা সহ পাঁচজন এখনও পর্যন্ত গ্রেপ্তার হল। বর্ধমান থানার পুলিশ সিঙ্গুর থেকে প্রথমে গনেশ চক্রবর্তী ও গনেশকে জিজ্ঞাসাবাদ করে অনির্বাণ সামন্তকে গ্রেপ্তার করে এবং সবশেষে হুগলির খানাকুল থেকে ধরা পরে এই চক্রের মূল পাণ্ডা ভাস্কর সামন্ত। ধৃতের কাছ থেকে বাজেয়াপ্ত করা হয় একটি ল্যাপটপ দুটি ফোন এবং একটি বায়োমেট্রিক ডিভাইস।"