প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনা নিয়ে এখন রাজ্য জুড়ে বিতর্কের ঝড় উঠেছে। দুর্নীতির অভিযোগে বিদ্ধ তৃণমূল কংগ্রেস। পঞ্চায়েতের আগে কেন্দ্রীয় আবাস যোজনার প্রকল্প নিয়ে আসরে নেমে পড়েছে বিজেপিও। তদন্ত করতে রাজ্যে এসেছে কেন্দ্রীয় প্রতিনিধি দল। রাজনৈতিক মহলের মতে, অস্বস্তি এড়াতে ইতিমধ্যে নানা কৌশল অবলম্বন করছে শাসক দল। তৃণমূল নেতৃত্বের একাংশ দুর্নীতির জন্য নিশানা করেছে প্রশাসনকেও। গ্রামবাংলায় পঞ্চায়েত ভোট দোরগোড়ায়।
কীভাবে আবাস যোজনার দুর্নীতির অভিযোগ থেকে দলকে মুক্ত রাখা যায় তার জন্য তৃণমূল কংগ্রেস নানা কৌশল অবলম্বন করছে বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল। গ্রাম বাংলায় রীতিমতো পাকা বাড়ি বললে অন্যায় হবে একেবারে রাজপ্রাসাদ আছে, যে প্রাসাদ অনেক শহরেই চক্ষুগোচর হবে না, সেই নেতার বাড়িতে একাধিক সদস্যের নাম রয়েছে আবাস যোজনার তালিকায়। সেই সব ক্ষেত্রে স্থানীয় নেতৃত্ব 'জোরালো' যুক্তি খাড়া করছে। কারও ক্ষেত্রে বলছে ২০১৬ সালের সার্ভে কোনও ক্ষেত্রে তা ২০১৭, ২০১৮ যা মনে হচ্ছে বোঝানোর চেষ্টা চলছে। তৃণমূল উপপ্রধানের পরিবারের চার জন সদস্যের নাম তালিকায়! সে গত পাঁচ বছরে কোটি কোটি টাকা রোজগারও করে ফেলেছে।
যুক্তি নম্বর দুই। 'বুঝতেই পারছেন দলে নানা গোষ্ঠী রয়েছে। আমার নাম বিরুদ্ধ গোষ্ঠীরাই তালিকায় তুলে দিয়েছে। আমাকে বদনাম করার জন্য। যাতে আমি হেনস্থা হই।' এমন কথাও বলছেন ব্যবসায়ী, দোতলা দালানের মালিক তৃণমূলের অঞ্চল সভাপতি। ঘরে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত ব্যবস্থাও রয়েছে। অথচ তাঁর বাড়ির সামনে গরীবগুর্বো মানুষগুলি পরিবার নিয়ে যে ব্যবস্থাপনায় থাকে তাকে বাড়ি বলা যায় না। তাঁরা ক্ষোভে ফুঁসলে কি হবে তাঁদের তালিকায় কে নাম তুলবে? রাজনৈতিক মহলের বক্তব্য, বাঁচার জন্য় গোষ্ঠীকলহকেও সামনে নিয়ে আসতেও দ্বিধা করছে না দলের একাংশ।
আরও পড়ুন- চলন্ত ট্রেন থেকে খুলে গেল ২টি কামরা, বিরাট বিপদে মাথায় হাত!
যুক্তি নম্বর তিন। তৃণমূলের প্রবীণ নেতৃত্ব, একাধিকবারের বিধায়কের গলায় আবাস যোজনার দুর্নীতি নিয়ে সরাসরি অভিযোগ বিডিও-সহ প্রশাসনের বিরুদ্ধে। তাঁর দাবি, প্রশাসনের জন্যই নাকি আবাস যোজনার যাবতীয় নয়ছয়। রাজনৈতিক মহলের বক্তব্য, স্থানীয় প্রশাসন দায় এড়াতে পারে না ঠিকই তবে পঞ্চায়েত বা স্থানীয় তৃণমূল নেতৃত্বের মদত ছাড়া আবাস যোজনায় যে কারও নাম তালিকায় উঠে যাবে তা কোনও মুর্খও কি বিশ্বাস করবে? তবে তদন্তের প্রশ্নে দুর্নীতিতে মদতকারী আধিকারিকরাও যাতে ছাড় না পায় সে দাবিও তুলছে সাধারণ মানুষও।
স্থানীয় বিজেপি নেতাদের নামও রয়েছে আবাস যোজনার তালিকায়, এই প্রশ্ন তুলছে তৃণমূলের শীর্ষ নেতৃত্ব। রাজনৈতিক মহলের বক্তব্য, দলমত না দেখে এক্ষেত্রেও যথযাথ শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া উচিত। কিন্তু বিজেপি দুর্নীতি করছে এই অভিযোগ তুলে শাসক তৃণমূল কংগ্রেসের স্থানীয় নেতৃত্বের বিরুদ্ধে অভিযোগ কি চাপা দেওয়া যায়? তাছাড়া এক্ষেত্রে কি তৃণমূলের স্থানীয় নেতৃত্ব নজর রাখেনি? বা স্থানীয় প্রশাসন কি দায়িত্ব এড়াতে পারে? পর্যবেক্ষক মহলের মনে করে, কোনও ঘটনা চাপা না দিয়ে গরীব মানুষের আবাস নিয়ে যাঁরা দুর্নীতি করেছে তাঁদের বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন।
আরও পড়ুন- প্রয়াত বাংলার প্রাক্তন রাজ্যপাল কেশরীনাথ ত্রিপাঠী
রাজ্যে পঞ্চায়েত নির্বাচন কড়া নাড়ছে। সম্প্রতি দু'তিনজন গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান বা উপপ্রধানকে পদ থেকে অপসারিত করেছেন তৃণূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। অভিজ্ঞ মহল মনে করছে, প্রথমত গত কয়েক বছর ধরে তাঁরা যা করার করে ফেলেছে। টিকিট না পেলে এমনতিই তাঁরা সদস্যই হতে পারবে না। এটাও স্বচ্ছ ভাবমূর্তি ফেরানোর কৌশল।
আবাস যোজনার প্রকল্প নিয়ে পথে নেমে পড়েছে বিরোধী শিবির। বিক্ষোভ কর্মসূচির পাশাপাশি কেন্দ্রীয় পঞ্চায়েত মন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করেছিলেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকরী। তাঁর বক্তব্য, তাঁর দাবির জন্যই কেন্দ্রীয় প্রতিনিধিদল এই রাজ্যে এসেছে। আরও ১৫ জেলায় তাঁরা আসবে। এই পরিস্থিতিতে পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগে ভাবমূর্তি উদ্ধারে মরিয়া তৃণমূল কংগ্রেস। পর্যবেক্ষক মহলের মতে, প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনার দুর্নীতির ক্ষেত্রে স্থানীয় নেতৃত্বের বড় বড় অট্টালিকা স্বচক্ষে দেখতে পাচ্ছে বাড়ির পাশের দলকে সমর্থন করা গরিব মানুষগুলো। এটাই তৃণমূল কংগ্রেসের কাছে সব থেকে বড় বিড়ম্বনা।