New Update
Malda TMC Leader Murder Update: মালদার তৃণমূল নেতা দুলাল সরকার (Dulal Sarkar) ওরফে বাবলা সরকার খুনের 'মাস্টারপ্ল্যান' চলেছে দেড় বছর ধরেই। কীভাবে খুনের ছক কষা হয়েছে, কার কার বাড়িতে দুষ্কৃতীরা কতবার গিয়েছে, অগ্রিম কত টাকা দেওয়া হয়েছিল, কীভাবে রেইকি করেছিল, এসবই উঠে এসেছে পুলিশি তদন্তে।
মালদার তৃণমূল নেতা বাবলা সরকার খুনের ঘটনায় পুলিশের একটি সূত্র থেকে জানা গিয়েছে, গত দেড় বছর ধরে এই তৃণমূল কংগ্রেস নেতাকে খুন করার জন্য মাস্টারপ্ল্যান তৈরি করেছিল ধৃত স্বপন শর্মা। তার হাত দিয়েই ছয় জনের পেশাদার খুনির একটি টিম তৈরি করা হয়। পুরো অপারেশন চালানোর ক্ষেত্রে মোট ৫০ লক্ষ টাকার লেনদেন হয়। যে টাকাটি নরেন্দ্রনাথ তেওয়ারি বিভিন্নভাবে গত দেড় বছর ধরে জোগাড় করেছিল।
এই নরেন্দ্রনাথ তেওয়ারি ২০০৬ সালে ইংরেজবাজার পুরসভার চেয়ারম্যান থাকাকালীন মহানন্দাপল্লী এলাকার বিভিন্ন রেলের ঠিকাদার, বিহার, উত্তরপ্রদেশেরও বেশ কিছু ঠিকাদারের সঙ্গে সম্পর্ক তৈরি হয়েছিল। পুরনো সেই সব ঠিকাদারের একাংশের কাছেও বিভিন্ন কাজের ক্ষেত্রে টাকার সাহায্য চেয়েছিল বলে পুলিশের অনুমান। এই ৫০ লক্ষ টাকা নরেন্দ্রনাথ তেওয়ারি সম্পূর্ণটা দেয়েছিল কন্টাক্ট কিলার স্বপন শর্মাকে।
আরও পড়ুন- Calcutta High Court: সৌরভের ১ টাকায় জমির লিজ পাওয়া অথৈ জলে! রাজ্যকে বড় নির্দেশ হাইকোর্টের
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, ২ জানুয়ারি মহানন্দাপল্লী এলাকায় দুষ্কৃতীদের গুলিতে যখন খুন হয় বাবলা সরকার, তারপরেই অপরাধীদের একজন প্রথম ফোন করেছিল নরেন্দ্র তেওয়ারিকে। বাবলা সরকারকে খুন করার ১৫ দিন আগেই অপরাধীদের হাতে অগ্রিম হিসাবে ১০ লক্ষ টাকা দেওয়া হয়েছিল। সেই টাকা দেওয়ার মাধ্যম ছিল পলাতক বাবলু যাদব এবং কৃষ্ণ রজক ওরফে রোহান। তারা যে নরেন্দ্রনাথ তেওয়ারির বাড়িতে গত কয়েক মাসের ব্যবধানে যাতায়াত বাড়িয়েছিল সেটি সংশ্লিষ্ট এলাকার সিসিটিভি ফুটেজ থেকে পুলিশ জানতে পেরেছে। এছাড়াও স্বপন শর্মার বাড়িতেও বাবলু যাদব এবং কৃষ্ণ রজকের যাতায়াত ছিল।
আরও পড়ুন- West Bengal News Live: বিরাট বিপাকে 'কালীঘাটের কাকু', ভয়েস স্যাম্পেল দিতেই হবে সুজয়কৃষ্ণ ভদ্রকে
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, বাবলা সরকারকে প্রাণে মারার জন্য সম্পূর্ণ ব্লু প্রিন্ট তৈরি করেছিল ধৃত স্বপন শর্মা। পেশাদার খুনিরা যাতে মৃত্যু নিশ্চিত করে বাবলা সরকারের, সেই হিসাবেই ব্লু প্রিন্ট তৈরি হয়েছিল। কারণ ২ জানুয়ারি মহানন্দাপল্লীতে বাবলা সরকারের ওপর প্রথম গুলিটা চালিয়েছিল মোটরবাইক চালক আশরাফ খান। তার বাড়িও বিহারে। ঘটনার পর থেকে সে পলাতক। সেই আশরাফের ছোঁড়া প্রথম গুলি বাবলার পিঠে লেগেছিল। এরপর দৌড়াতে গিয়েই মহানন্দাপল্লীর প্লাইবোর্ডের দোকানের ভিতর মুখ থুবড়ে পড়ে বাবলা সরকার। সেখানে পয়েন্ট জিরো ব্ল্যাঙ্ক রেঞ্জ থেকে টিংকু ঘোষ এবং মহম্মদ সামি আক্তার মাথায় পরপর তিনটা গুলি করে। ঘটনাস্থলে মৃত্যু হয় বাবলা সরকারের।
খুনের কারণ হিসাবে পুলিশ জানতে পেরেছে, নরেন্দ্রনাথ তেওয়ারির ওপর ২০২২ সালে পুর নির্বাচনের পর বাবলা সরকারের নেতৃত্বে হামলা চালানো হয়। সেই সময় নরেন্দ্রনাথ তেওয়ারি মেডিক্যাল কলেজে ভর্তি হয়েছিলেন। অত্যন্ত আদুরে ভাই বীরেন্দ্রনাথ তেওয়ারিকেও সেই সময় মারধর করেছিল বাবলার অনুগামীরা। এরপর নরেন্দ্রনাথ তেওয়ারি পুরসভা নির্বাচনে হেরে রীতিমতো এক ঘরে হয়ে গিয়েছিল। এলাকায় একসময় দাপিয়ে বেড়ানো নরেন্দ্রনাথ তেওয়ারির পরিবারকেও মাঝে মধ্যেই নানা কটু কথা শুনতে হচ্ছিল বলে অভিযোগ।
পুলিশ জানিয়েছে, গত পুরসভা নির্বাচনের পর ইংরেজবাজার শহরে বাবলা সরকারের কার্যালয়ের কানিমোড়ের সামনে জমি সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে বাবলু যাদব এবং কৃষ্ণ রজককে ব্যাপক মারধর করা হয়েছিল। বাবলা সরকারের বিরুদ্ধে একটা বড় শত্রু তলে তলে যে সংগঠিত হয়ে খুন করার চক্র তৈরি করেছিল তা কোনভাবেই আঁচ করতে পারেনি কেউ। এরপর ১৫ দিন ধরে পেশাদার খুনিরা বাবলা সরকারের গতিবিধির ওপর নজর রাখে। ২ জানুয়ারি দুষ্কৃতীদের গুলিতে ঝাজরা হয় খুন হন বাবলা সরকার।
বৃহস্পতিবার নিজের বাড়িতে বসেই মৃত বাবলা সরকারের স্ত্রী চৈতালি সরকার বলেন, "মূল দুই চক্রী ধরা পড়েছে। কিন্তু আমি এখনও বলতে পারছি না যে এখানেই ঘটনা ইতি কিনা। পুলিশ তদন্ত করে দেখছে। আরও কোনও মাথা থাকলে অবশ্যই গ্রেফতার হবে। পুলিশের তদন্তে আমার ভরসা রয়েছে। তাই অপেক্ষা করে রয়েছি।"