চিটফান্ড খুলে কোটি কোটি টাকা প্রতারণার ঘটনা এক সময়ে তোলপাড় ফেলে দিয়েছিল বঙ্গে। গ্রেপ্তার হয়েছিল বহু চিটফান্ড কর্তা। একই রকম প্রতারণার অভিযোগে নাম জড়ায় ভারতীয় ডাক বিভাগের। পূর্ব বর্ধমানের জামালপুর উপ-ডাকঘরের আমানতকারীদের লক্ষ লক্ষ টাকা প্রতারণা কাণ্ডে এবার সিআইডির হাতে গ্রেপ্তার হলেন এক পোস্টাল এজেন্ট। ধৃতের নাম হৃদয় রঞ্জন মাইতি। জামালপুর উপ ডাকঘরের কাছেই বিশ্বাস পাড়ায় ধৃতের বাড়ি।
CID অফিসারদের একটি দল মঙ্গলবার বিকালে হৃদয় রঞ্জন মাইতির বাড়িতে হানা দিয়ে তাকে গ্রেপ্তার করে কলকাতার ভবানী ভবনে নিয়ে যায়। বুধবার ধৃতকে বর্ধমান আদালতে পেশ করা হবে বলে সিআইডি সূত্রে জানা গিয়েছে। এবার সিআইডি মূল অভিযুক্ত পোস্ট মাস্টার বিদ্যুৎ সুরকে গ্রেপ্তার করুক, এমনটাই চাইছেন প্রতারিতরা।
জামালপুর উপ-ডাকঘরে সঞ্চয়েয় টাকা গচ্ছিত রেখে প্রতারিত হওয়া পরিবাটি জামালপুর হটতলা এলাকার বাসিন্দা।পরিবারের ষাটোর্ধ্ব কর্তা রণজিত পাল, মাটির কলসি, হাঁড়ি তৈরি করে জামালপুর হাটে বসে বিক্রি করেন। তাঁর স্ত্রী রাধারাণী পাল কঠিন রোগে আক্রান্ত। দীর্ঘদিন ধরে তিনি চিকিৎসাধীন রয়েছেন। রণজিত পালের এক মেয়ে মধুমিতা বিবাহিত। দুই ছেলের মধ্যে বড় ছেলে অভিজিৎ ইলেকট্রিকের কাজ করেন। ছোট ছেলে সুরজিৎ জামালপুর বাজারে ফল বিক্রির পাশাপাশি অন্য কায়িক পরিশ্রমের কাজও করেন।
আরও পড়ুন- West Bengal live news Live Updates: প্রবল শক্তিশালী ভূমিকম্পের পরই আছড়ে পড়ল সুনামি! রাশিয়া-জাপান উপকূলে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা!
সুরজিৎ পাল বলেন, "তাঁদের পরিবারের সকলেই পরিশ্রম করে রোজগার করা অর্থ থেকে কিছু কিছু করে জমিয়ে রাখতেন। জমানো অর্থ জামালপুর সাব-পোস্ট অফিসে গচ্ছিত রাখার জন্য তিনি এবং তাঁর বাবা, মা,দিদি ও জামাইবাবু আলাদা আলাদা অ্যাকাউন্ট খোলেন। ২০২১ সালে ১ বছরের ’ফিক্সড ডিপোজিট’ স্কিমে তাঁরা নিজের নিজের অর্থ অ্যাকাউন্টে জমা করেন। তাঁদের সবার মিলিয়ে জমা করা টাকার পরিমাণ ১২ লক্ষ ২০ হাজার টাকা। সেই সময়ের জামালপুর সাব-পোস্ট অফিসের পোস্ট মাস্টার বিদ্যুৎ সুর ওই টাকা নিয়ে সিল-স্ট্যাম্প দিয়ে তাঁদের সবার অ্যাকাউন্ট বই ইস্যু করে দেন।"
আরও পড়ুন- Kolkata rain forecast:আজ বর্ষার রুদ্র মেজাজ দেখবে বাংলা! জেলায়-জেলায় ভারী বৃষ্টির পূর্বাভাস, দুর্যোগ চলবে কতদিন?
কেন্দ্রীয় সরকারের অধীনে জামালপুর সাব পোস্ট অফিসে সঞ্চয়ের টাকা ফিক্সড ডিপোজিট করে নিশ্চিন্তেই ছিলেন পাল পরিবারের সদস্যরা। কিন্তু ফিক্সড ডিপোজিটের মেয়াদ ১ বছর উত্তীর্ণ হওয়ার আগেই কঠিন রোগে আক্রান্ত হয়ে গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন সুরজিতের মা রাধারাণী দেবী। তাঁকে চিকিৎসার জন্য কলকাতা-সহ ভিনরাজ্যের হাসপাতালে নিয়ে যেতে হয়। তখন টাকার খুব প্রয়োজন পড়লে পাল পরিবারের সদস্যরা অগ্রিম ফিক্সড ডিপোজিট ভাঙিয়ে টাকা তুলে নেওয়ায় জন্য জামালপুর সাব পোস্ট অফিসে যান। তখনই পোস্ট মাস্টারের কথা শুনে তাঁদের মাথায় হাত পড়ে যায়।
পাল পরিবারের সদস্যদের কথা অনুযায়ী, পোস্ট অফিস থেকে দেওয়া ফিক্সড ডিপোজিটের সমস্ত 'নথি' নিয়ে তাঁরা পোস্ট অফিসে টাকা তুলতে যান। কিন্তু পোস্ট অফিসের একই পোস্ট মাস্টার বিদ্যুৎ সুর তখন সেই নথি হাতে নিয়ে দেখেই তাঁদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করা শুরু করে দেন। সুরজিৎ পাল বলেন, "ওই দিন শুধু দুর্ব্যবহার করাই নয়, বিদ্যুৎ সুর আঙুল উঁচিয়ে আমাদের বলে দেন, আমরা নাকি কোনও টাকা পোস্ট অফিসে ফিক্সড ডিপোজিট’ই করিনি।"
আরও পড়ুন- TMC:তৃণমূল কাউন্সিলরদের 'ঝগড়া'র মাশুল গুনছেন সাধারণ নাগরিকরা!শেষমেষ বড় পদক্ষেপ
সুরজিতের কথায়, “এমন প্রতারণার বিহিত চেয়ে তাঁরা জামালপুর সাব পোস্ট অফিসের সেই সময়ের পোস্ট মাস্টার বিদ্যুৎ সুরের বিরুদ্ধে বর্ধমান আদালতে মামলা রুজু করি। জেলা পুলিশ সুপার সহ জেলা ও রাজ্যের প্রধান ডাক বিভাগ, এমনকী CBI দফতরেও গোটা ঘটনা সবিস্তারে লিখিতভাবে জানাই। কিন্তু কোন সুরাহা না মেলায় ন্যায় বিচার পেতে গত বছরের শেষের দিকে কলকাতা হাইকোর্টে মামলা করি।"
তিনি জানিয়েছেন, সেই প্রতারণার মামালায় বিচারপতি তীর্থঙ্কর ঘোষ সিআইডি তদন্তের নির্দেশ দেন। হাইকোর্টের সেই নির্দেশ মেনে সিআইডি জোরদার তদন্তে নামে। সিআইডি অফিসাররা জামালপুর সাব পোস্ট অফিসে গিয়ে তদন্ত চালান। এছাড়াও হৃদয় রঞ্জন মাইতি সহ একাধিক পোস্টাল এজেন্টকে একপ্রস্থ জিজ্ঞাসাবাদ সারে সিআইডি। এসবের মধ্যেই কলকাতা হাইকোর্ট বিদ্যুৎ সুরের জামিনের আবেদনও খারিজ করে দেয়। পোস্ট অফিসের আর্থিক প্রতারণা মামলায় সিআইডি প্রথম জালে পুরলো পোস্টাল এজেন্ট হৃদয় রঞ্জন মাইতিকে।
তাঁকে হেফাজতে নিয়ে সিআইডি মূল অভিযুক্ত সহ বাকি অভিযুক্তদের নাগাল পেতে চাইছে বলে মনে করছে প্রতারিতরা।
আরও পড়ুন- Mamata Banerjee:বীরভূমের বুকে নতুন ইতিহাসের সূচনা মুখ্যমন্ত্রীর, তারাপীঠের কাছেই বিরাট কর্মযজ্ঞ!
সিআইডি-র এক অফিসারের কথায় জানা গিয়েছে, জামালপুর পোস্ট অফিসে সঞ্চয়ের টাকা জমা করে নিয়ে আমানতকারীদের পাস বই ও অন্য নথি পোস্ট অফিস থেকে দেওয়া হয়েছিল। ওই নথিতে থাকা হাতের লেখার সঙ্গে পোস্টাল এজেন্ট হৃদয় রঞ্জন মাইতির হাতের লেখা এক বলে হ্যান্ড রাইটিং টেস্টে ধরা পড়েছে। এর থেকেই প্রতারণা কাণ্ডে হৃদয় রঞ্জন মাইতির যোগ স্পষ্ট হয়ে যায়। তার পরেই তাকে গ্রেপ্তারের সিন্ধান্ত নেওয়া হয়। প্রতারণা কাণ্ডের আরও তথ্য উদ্ধার এবং বাকি অভিযুক্তদের নাগাল পেতে ধৃত হৃদয় রঞ্জন মাইতিকে বুধবার বর্ধমান আদালতে পেশ করে সিআইডি হেফাজতে নেওয়ার আবেদন জানাবে বলে জানা গিয়েছে।