Durga Puja 2024: দুর্গাপুজোয় এ যেন অবাক করা ছন্দপতন। পণ্ডিতমশাই সঠিক ভাবেই পুজো করাচ্ছিলেন।
কিন্তু আকন্ঠ 'কারণ সুধা' পান করে পুজো করতে বসে পূর্ব পুরুষ বলে যাচ্ছিলেন বামে গনেশায় নমঃ , দক্ষিণে কার্তিকেয় নমঃ। তা শুনে পণ্ডিতমশাই প্রতিবাদ করেন ঠিকই। কিন্তু তন্ত্রসাধক ওই পূর্ব পুরুষ বাস্তবেই তখন সবাইকে দুর্গা প্রতিমায় গণেশ ও কার্তিকের স্থানবদল চাক্ষুষ করিয়ে দেন। সেই থেকে ৩০০ বছরেরও বেশি সময় ধরে বামে গণেশ ও দক্ষিণে কার্তিককে রেখেই পূর্ব বর্ধমানের জামলপুরের সাদিপুর গ্রামের সভাকর বাড়িতে তৈরি হয় দুর্গা প্রতিমা। দেবী পক্ষে তন্ত্রমতে সেই প্রতিমারই পুজো পাঠ হয়। সভাকর বাড়ির এই পুজো ঘিরেই দুর্গোৎসবের কটা দিন মাতোয়ারা থাকেন সাদিপুর গ্রামের বাসিন্দারা ।
দামোদর নদ লাগোয়া জামালপুরের বেরুগ্রাম পঞ্চায়েতের প্রত্যন্ত গ্রাম সাদিপুর। সনাতন ঐতিহ্য মেনে এই গ্রামের সভাকর বাড়ির সাবেকি মন্দিরে হয় দেবী দুর্গার আরাধনা। সভাকর পরিবারের বর্তমান বংশধর দেবাশীষ চট্টোপাধ্যায় জানান, তাঁদের পূর্ব পুরুষ ছিলেন বল্লাল সেন,লক্ষণ সেনের আমলের লোক। বর্গিদের অত্যাচারে নিজ ভূমি ছেড়ে পূর্ব পুরুষরা পালিয়ে চলে আসেন সাদিপুর গ্রামে। সেখানেই তাঁরা বসবাস শুরু করেন ।
দেবাশীষবাবুর কথায় জানা যায়, তাঁদের বংশের আদি অধিষ্ঠাত্রী দেবী হলেন কালী। বংশে কালীপুজোর সূচনা কাল আরও প্রাচীন । তবুও মা দুর্গার স্বপ্নাদেশ মেনে তাঁদের বংশের পূর্বপুরুষ উমাচরণ চট্টোপাধ্যায় কালী বেদিতেই দুর্গাপুজো শুরু করেছিলেন। হতদরিদ্র সাধক ব্রাহ্মণ উমাচরণ বনের পুকুরের জল, বনের ফুল,চালতার আচার আর থোড়ের নৈবেদ্য দিয়ে দুর্গা মায়ের পুজো করতেন। সেই একই রীতি মেনে বাংলার ১১১১ সাল থেকে আজও বর্তমান বংশধররা পুজো করে আসছেন ।
আরও পড়ুন- Kalyan Banerjee: মা দুর্গার সামনে আরতির সময় হাপুস নয়নে কান্না কল্যাণের, ঝড়ের বেগে ভাইরাল সেই ভিডিও
সভাকর বাড়ির দুর্গা পুজোর অনেক কাহিনী আজও বংশের লোকজনের মুখে মুখে ঘুরে বেড়ায়। কথিত আছে বহুকাল আগে বন্যার সময়ে দামোদরে পাটাতন সহ দুর্গা প্রতিমার একটি কাঠামো ভেসে আসে। স্থানীয় নাকড়া গ্রামের বর্গক্ষত্রিয় ধারা পরিবারের কয়েকজন সদস্য দামোদর থেকে সেই কাঠামোটি তুলে আনেন। তারা সেই প্রতিমা কাঠামোটি দূরের দেবীপুর এলাকায় বিক্রি করতে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। কিন্তু মা দুর্গার স্বপ্নাদেশ মেনে তারা ওই কাঠামো আর দেবীপুরে বিক্রী করতে যাননি।। তারা পাটাতন সহ ওই কাঠামোটি হতদরিদ্র সভাকর পরিবারের বিধবা বধূ রতনমণি দেবীকে দিয়ে দেন। শুধু তাই নয়,পূর্ব পুরুষ উমাচরণবাবুর সময়কালে একদল ডাকাত এক রাতের মধ্যে কাঁচা মাটির দেওয়াল ও খড়ের চালার একটি মন্দিরও তৈরি করে দেয়। ওই কাঠামোতে দুর্গা প্রতিমা তৈরি করে মাটির দেওয়াল আর খড়ের চালার মন্দিরে উমাচরণ দুর্গা পুজো শুরু করেন।