Advertisment

Rabi Hansda: 'ছেলের সাফল্য দেখে যেতে পারল না বাবা', আক্ষেপ সন্তোষ জয়ী রবির মায়ের

Purba Bardhaman News: কোনওদিন পান্তা তা কোনওদিন আধপেটা ভাত খেয়ে খেলার মাঠে দৌড়েছেন রবি। আজ তাঁর বিরাট সাফল্যে অতীতের স্মৃতিতে ডুব মায়ের।

author-image
Pradip Kumar Chattopadhyay
New Update
west bengal news,purba bardhaman news,rabi hansda,santosh trophy,রবি হাঁসদা,পশ্চিমবঙ্গের খবর

স্মৃতিতে ডুব সন্তোষ ট্রফি জয়ী বাংলা ফুটবল দলের গুরুত্বপূর্ণ সদস্য রবি হাঁসদা মায়ের।

Purba Bardhaman News:খেতমজুরের কাজ করে উপার্জন করা টাকা মা তুলসী হাঁসদা তুলে দিতেন মস্ত ফুটবল খেলোয়াড় হওয়ার স্বপ্ন দেখা ছেলে রবি হাঁসদার হাতে। তাঁর মা চাইতেন, ফুটবলে অসামান্য সাফল্য দেখিয়ে ছেলে রবি তাঁর বাবা সুলতান হাঁসদার স্বপ্ন পূরণ করুক। সেই সঙ্গে ছেলের হাত ধরে উজ্জ্বল হোক বাংলার মুখ। ছেলে অবশ্য মাকে নিরাশ করেননি। আধ-পেটা খেয়ে বড় হয়ে ওঠা প্রত্যন্ত গ্রামের ছেলে রবি তাঁর বাবার স্বপ্ন পূরণের পাশাপাশি এখন গোটা বাংলার ফুটবলপ্রেমীদের কাছে নয়নের মণি। ভারতীয় ফুটবলের অন্যতম মর্যাদাপূর্ণ সন্তোষ ট্রফির সর্বোচ্চ স্কোরার এখন রবি হাঁসদা (Rabi Hansda)। শুধু তাই নয়, রবির করা একমাত্র গোলেই সন্তোষ ট্রফিতে জয় পেয়েছে বাংলা। সন্তোষ ট্রফি জয়ী বাংলা দলের সকল খেলোয়াড়দের জন্য মুখ্যমন্ত্রী চাকরির ঘোষণা করেছেন। 

Advertisment

রবি হাঁসদার বাড়ি পূর্ব বর্ধমানের মঙ্গলকোট থানার অন্তর্গত মশারু গ্রামের আদিবাসী পাড়ায়। সেখানে 
রয়েছে রবিদের মাটির দোতলা বাড়ি। সেই বাড়ির তাকে থরে থরে সাজানো রয়েছে রবির পাওয়া ট্রফি ও মেডেল। মাস ছয়েক আগে প্রয়াত হয়েছেন রবির বাবা সুলতান হাঁসদা। রবি বাড়ির একমাত্র ছেলে। তাঁর দিদির বিয়ে হয়ে গিয়েছে। রবিও এখন সংসারি। বাড়িতে তাঁর স্ত্রী ও এক শিশু কন্যা রয়েছে। পায়ে ফুটবল নিয়ে রবি বাংলার অগনিত ফুটবলপ্রেমীর মুখে হাসি ফোটালেও এখনও দারিদ্র্যতা কুরে-কুরে খায় রবির পরিবারকে। 

বেঁচে থাকাকালীন রবির বাবা টোটো চালিয়ে উপার্জন করতেন। এখন সংসার টানার যাবতীয় দায় বর্তেছে রবির মা তুলসী হাঁসদার উপরে। রুটি রুজি জোগাড়ের জন্য তুলসীদেবীকে তাই এখন নিয়মিত খেতমজুরের কাজে যেতে হয়। কষ্ট হলেও ছেলেকে কিছু তিনি বুঝতে দেননি। উল্টে ফুটবল খেলায় ছেলে যাতে সফলতার শিখরে পৌঁছোতে পারে সেটাই তিনি চেয়ে গিয়েছেন। ছেলে রবির দিকে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিতে তুলসীদেবী নিজের উপার্জনের টাকা তুলে দিতেও কোনওদিন কার্পণ্য করেননি। এহেন মা তুলসীদেবী তাই আজ তাঁর ছেলে রবির সাফল্যে বড়ই গর্বিত। 

আরও পড়ুন-West Bengal News Live:'২০২৬-এ হিন্দুরাই ওঁকে প্রাক্তন করবে', মমতাকে বেনজির আক্রমণ শুভেন্দুর

Advertisment

পরিবার পরিজন ও এলাকাবাসীর কথায় জানা গিয়েছে, আর পাঁচটা বাঙালির মত রবি হাঁসদার বাবা সুলতান হাঁসদাও অসম্ভব ফুটবলপ্রেমী ছিলেন। তাই রবিও খুব ছোট বয়স থেকে ফুটবল খেলায় আকৃষ্ট হয়ে পড়ে। তখন পায়ে ফুটবল নিয়ে গ্রামের মাঠেই সে দৌড়াদৌড়ি করত রবি। ১০ বছর  বয়সে ভাতারের বলগোনার স্কুলে ক্লাস ফাইভে পড়ার সময়েই রবি ফুটবলে পুরোপুরি মজে যায়। সারাদিন তাঁর মুখে মুখে শুধুই ঘুরতো ফুটবলের কথা। একটু বড় হতেই ফুটবল খেলায় দক্ষতা অর্জনের জন্য রবি বলগোনা থেকে ভাতারে গিয়ে ফুটবল খেলা শুরু করে। প্রশিক্ষণ নেওয়া শুরু করে ভাতার একাদশ ক্লাবের তৎকালীন ফুটবল প্রশিক্ষক মুদরাজ সেডেনের কাছে। তারপর থেকে সেডেনের হাত ধরেই রবির ফুটবল জীবনের ভাগ্য বদলাতে শুরু করে। 

আরও পড়ুন- India-Bangladesh Relation: টানটান উত্তেজনার মধ্যে ভারত-বাংলাদেশ নিয়ে বড় খবর, বিদেশমন্ত্রকের বিরাট ঘোষণা

মুদরাজ সেডেনের কাছে কয়েক বছর প্রশিক্ষণ নিয়ে রবি হাঁসদা ফুটবল খেলায় বেশ দক্ষ হয়ে ওঠে। কাস্টমসের হয়ে খেলে সাফল্য দেখিয়ে ২০১৭ সালে অনুর্ধ্ব ১৯ বাংলা দলের হয়ে খেলার জন্য ডাক পান রবি। ট্রায়ালে তিনি নির্বাচিত হন। পরে অধিনায়কত্বও তিনি পান। ২০২২ সালে ন্যাশনাল গেমসে পাঁচ গোল করে রবি তাক লাগিয়ে দেয়। চ্যাম্পিয়ন হয় বাংলা। তারপর ২০২৩ সালে সন্তোষ ট্রফির বাছাই পর্বে খেলতে গিয়ে শুরুতে হাঁটুতে চোট পান তিনি। চোটের কারণে ওই বছরটা রবিকে মাঠের বাইরেই রয়ে থাকতে হয়। চোট সারলে ২০২৪ সালের শুরু থেকে মাঠে ফেরার লড়াইয়ে নামেন রবি হাঁসদা। কিন্তু সময়টা তাঁর ভালো যায় না।

আরও পড়ুন- West Bengal Weather:নতুন বছরের শুরুতেই ঠান্ডার ঝোড়ো ব্যাটিং! কনকনে শীতেই বৃষ্টির পূর্বাভাস কোথায়?

 হঠাৎই হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে তাঁর বাবা সুলতান হাঁসদা মারা যান। পিতৃশোক কাটিয়ে ফের মাঠে নেমে কোচ সঞ্জয় সেনের কথা মতো অনুলীলন চালিয়ে গিয়ে রবি হাঁসদা নিজেকে আগের মতো দক্ষ করে তোলে। ২৪-এর সন্তোষ ট্রফিতে রবি কার্যত বাজিমাত করে ফেলেন। বাংলার ফুটবল দল ভারত সেরা হতেই ফুটবলপ্রেমীদের মুখে মুখে এখন শুধুই ঘুরছে রবি হাঁসদার নাম। বাংলার তাবড় ফুটবলকর্তারাও এখন রবির প্রশংসায় পঞ্চমুখ।

রবি হাঁসদার মা তুলসীদেবী বলেন,"ছেলের সাফল্যে আমি আনন্দিত, গর্বিতও বটে। তবে দুঃখ লাগছে একটা করণে, যে রবির বাবা তাঁর ছেলের এই সাফল্য দেখে যেতে পারলেন না। তুলসীদেবী বলেন,“আমাদের পরিবারে নুন আনতে পান্তা ফুরানো অবস্থা। তাই আমাকে এখনও খেতমজুরের কাজে যেতে হয়। তা সত্ত্বেও আমার ছেলে রবি যাতে মস্ত ফুটবলার হয়ে তাঁর বাবার স্বপ্ন পূরণ করতে পারে তার জন্য সব কষ্ট হজম করে গিয়েছি। কোনওদিন পান্তা ভাত আবার কোনওদিন আধপেটা ভাত খেয়ে ভোরে আমার ছেলে রবি কলকাতায় রওনা দিয়েছে। শত কষ্ট সহ্য করে খেলে গিয়ে রবি নিজের যোগ্যতার প্রমাণ দিয়ে গিয়েছে।"

news of west bengal news in west bengal Bangla News Bengali News Today
Advertisment