/indian-express-bangla/media/media_files/2025/05/28/ZKZ0XvDbsZxSVOiK5di2.jpg)
তৃণমূলের বিরুদ্ধে সরব রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী।
Suvendu Adhikari: রাজ্যে শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতিকে কেন্দ্র করে ফের তৃণমূলের বিরুদ্ধে সরব রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। তিনি বলেন, "নির্বাচিত সরকারের উচিত সংবিধান মেনে কাজ করা। কোনও নির্বাচিত সরকার অবৈধভাবে চাকরি দিতে পারে না। এত দিন আমরা দাবি করেছিলাম মমতা সরকার চাকরি চুরি করেছে। আজ সুপ্রিম নির্দেশের পর গোটা দেশ দেখেছে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার দুর্নীতি করেছেন। যদি ১৮০৪ জন দাগি প্রার্থী হয়ে থাকেন তাহলে এই সরকার “মহাদাগি সরকার”। পাশাপাশি শুভেন্দু বলেন, শাসক দল নিজেই স্বীকার করেছে তারা “চাকরি চোর”। এই দুর্নীতির সম্পূর্ণ দায় মুখ্যমন্ত্রীর। প্রকাশিত তালিকাও অসম্পূর্ণ—সেখানে প্রার্থীদের ঠিকানা, সাবজেক্ট ও ক্যাটাগরির উল্লেখ নেই। এখানেও সরকারের অস্বচ্ছতা স্পষ্ট।
সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে প্রায় ১৪০০ জন প্রার্থীর অ্যাডমিট বাতিল হওয়ার বিষয়ের উল্লেখ করে শুভেন্দু অভিযোগ, এই ঘটনায় প্রমাণিত হয়েছে যে সরকার দুর্নীতিগ্রস্ত প্রার্থীদের পাশে দাঁড়িয়েছে। জীবনকৃষ্ণ সাহার মতো অনেকেই প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় ও অভিষেকের এজেন্ট হয়ে কাজ করতেন। এই দুর্নীতির ৮০ শতাংশ টাকা গিয়েছে মুখ্যমন্ত্রীর বাড়িতে।” তিনি আরও অভিযোগ করেন মমতার হাত ধরেই শিক্ষাক্ষেত্রে কার্যত বেসরকারিকরণ চলছে এবং রাজ্যের ভবিষ্যৎ প্রশ্নের মুখে পড়ছে"।
শনিবার সন্ধ্যায় সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে প্রকাশিত হয় ‘দাগি’ প্রার্থীদের নাম। মোট ১,৮০৪ জন অযোগ্য প্রার্থীর নাম এই তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। তালিকা প্রকাশের পরই দেখা যায়, সেই তালিকায় শাসক দলের ঘনিষ্ঠ একাধিক প্রার্থীর নাম তাতে জ্বলজ্বল করছে। আর এনিয়েই সরব বিরোধীরা। তাদের অভিযোগ, শুরু থেকেই এই নিয়োগ নিয়ে দুর্নীতি করেছে শাসক দল। নাম জড়িয়েছে প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়েরও।
সবচেয়ে চাঞ্চল্য তৈরি করেছে হুগলির খানাকুলের তৃণমূল নেত্রী সাহিনা সুলতানার নাম। বর্তমানে তিনি হুগলি জেলা পরিষদের সদস্যা। টানা তিনবার জেলা পরিষদে দায়িত্বে রয়েছেন সাহিনা। ২০১৩ থেকে ২০১৮ পর্যন্ত শিক্ষা কর্মাধ্যক্ষও ছিলেন তিনি। অভিযোগ, সেই সময়ই এসএসসি চাকরি পান সাহিনা। পরে খানাকুলের রাজহাটি-বন্দর হাইস্কুলে শিক্ষকতা করতেন তিনি। তবে স্থানীয়দের দাবি, জেলা পরিষদের কাজে ব্যস্ত থাকায় স্কুলে প্রায় দেখাই যেত না তাকে। সাহিনার দাদা মইনুল হকও খানাকুলের প্রভাবশালী নেতা। এদিন প্রকাশিত তালিকায় নাম উঠে এসেছে মইনুলের স্ত্রী নমিতা আদকেরও। বিরোধীদের দাবি, এ থেকেই স্পষ্ট যে দুর্নীতি শাসকের রন্ধ্রে রন্ধ্রে ছড়িয়ে গিয়েছিল।
শুধু সাহিনা বা তাঁর পরিবারের নাম নয়, তালিকায় উঠে এসেছে শাসক দলের আরও বেশ কয়েকজন জনপ্রতিনিধি ও আত্মীয়-পরিজনের নাম। পানিহাটির তৃণমূল বিধায়ক নির্মল ঘোষের পুত্রবধূ শম্পা ঘোষের নামও রয়েছে। নৈহাটির এক স্কুলে শিক্ষকতা করতেন তিনি। তালিকায় ১২৬৯ নম্বরে তাঁর নাম। এছাড়াও রাজপুর-সোনারপুর পুরসভার ১৮ নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূল কাউন্সিলর কুহেলি ঘোষের নামও রয়েছে।
এসএসসি জানিয়েছে, এই তালিকায় যাদের নাম রয়েছে, তারা কেউই আগামী ৭ ও ১৪ সেপ্টেম্বর নির্ধারিত নিয়োগ পরীক্ষায় অংশ নিতে পারবেন না। কমিশনের তরফে আরও জানানো হয়েছে, আদালতের নির্দেশে যাদের চাকরি বাতিল হয়েছে, কেবলমাত্র তাদের নামই প্রকাশিত হয়েছে। তবে প্রকাশিত তালিকায় প্রার্থীদের নাম ও রোল নম্বর থাকলেও, স্কুল বা বিষয়ের তথ্য উল্লেখ করা হয়নি। সেই কারণে স্বচ্ছতা নিয়ে প্রশ্ন তুলছে বিরোধীরা।
এদিকে নিয়োগ দুর্নীতি ইস্যুতে তৃণমূলকে নিশানা করেছেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী তথা রাজ্য বিজেপির প্রাক্তন সভাপতি সুকান্ত মজুমদার। তিনি এক্স হ্যান্ডেলে এক পোস্টে লিখেছেন, "কিছু দাগী চোর আর লুটেরাদের প্রাণপণ রক্ষা করতে ‘দাগী অযোগ্যদের’ তালিকায় সুকৌশলে আড়াল করা হয়েছে তাদের তথ্য! মাননীয়া ব্যর্থ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশে পশ্চিমবঙ্গ SSC চাতুর্যের সঙ্গে চাপা দিতে চেয়েছে - কে কোথা থেকে পরীক্ষা দিয়েছে, কোন জেলার বাসিন্দা সবকিছুই। এটার নেপথ্যে উদ্দেশ্য একটাই, যাতে সংবাদমাধ্যম তো বটেই, প্রকৃত যোগ্য প্রার্থীরাও এই দাগীদের পরিচয় সহজে না জানতে পারে। এটা আসলে সুপ্রিম কোর্টের সঙ্গেই লুকোচুরি! প্রকৃত যোগ্যদের মেধা ও কষ্টার্জিত শিক্ষার সঙ্গে এমন বেইমানি করে আর কতদিন আড়াল করবেন মাননীয়া? যদি সত্যিই সৎ সাহস থেকে থাকে, তাহলে অবিলম্বে বিস্তারিত তথ্য প্রকাশ করুন"।