বাংলা নয়, বন্দে ভারত এক্সপ্রেসে দ্বিতীয়বার পাথর ছোঁড়া হয় বিহার থেকেই। ট্রেনে হামলার সিসিটিভি ফুটেজ প্রকাশ করে এমনই দাবি রেলের। আর রেলের এই দাবি নিয়ে বঙ্গ রাজনীতিতে তেলাপাড় পড়ে গিয়েছে।
এতদিন বন্দে ভারতে হামলা নিয়ে তৃণমূলকেই নিশানা করেছিল বিজেপি। তবে এবার খোদ রেলই জানিয়ে দিল সম্ববত ট্রেনে হামলা বিহার থেকেই। এই তথ্য সামনে আসার পর বিজেপিকে তুলোধনা করে ময়দানে নেমে পড়েছে জোড়াফুল। বাংলার বদনাম করা বিজেপি নেতাদের নিঃশর্ত ক্ষমা চাওয়া উচিত বলে তোপ দেগে সোচ্চার কুণাল ঘোষ। তবে এত কিছুতেও দমতে নারাজ বিজেপি। বন্দে ভারতে হামলা নিয়ে এখনও তৃণমূলকেই দায়ী বলে সুর সপ্তমে চড়িয়ে রেখেছেন রাহুল সিনহা।
যাত্রা শুরুর তিন দিনের মধ্যে দু'বার বন্দে ভারত এক্সপ্রেসে পাথর ছোঁড়ার ঘটনা ঘটেছে। হাওড়া-নিউ জলপাইগুড়ি দ্রুত গতির এই ট্রেনে পাথর ছোঁড়ার ঘটনায় রীতিমতো তোলপাড় পরিস্থিতি বঙ্গ রাজনীতিতে। ট্রেনে পাথর ছোঁড়ার প্রথম ঘটনাটির পর থেকেই শুরু তীব্র রাজনৈতিক কাদা ছোঁড়াছুঁড়ি। বিজেপি রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার থেকে শুরু করে বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী, দিলীপ ঘোষরা নিশানা করে চলেছিলেন তৃণমূলকেই।
এতদিন অভিযোগ ওড়ালেও এবার খোদ রেলের বিবৃতি ঢাল করে বিজেপিকে পাল্টা তুলোধনা করে ময়দানে জোড়াফুল। আজ রেলের তরফে জানিয়ে দেওয়া হল বন্দে ভারত এক্সপ্রেসে দ্বিতীয়বার পাথর ছোঁড়ার ঘটনা বিহারে ঘটেছে। রেলের তরফে একটি সিসিটিভি ফুটেজ প্রকাশ করা হয়েছে। ৩ জানুয়ারি বন্দে ভারত এক্সপ্রেস হাওড়া থেক এনজেপির দিকে যাচ্ছিল।
আরও পড়ুন- থাকুন রাজার হালে, বেড়ানোর চরম তৃপ্তি নিন! কলকাতার ঢিল ছোঁড়ে দূরত্বে নজরকাড়া আয়োজন
১২.৫৫ মিনিট নাগাদ বিহারের ধূলাবাড়ি ও মানগুরজান স্টেশনের মাঝে ছোড়া হয় পাথর। দুটি স্টেশনই বিহারের কিষাণগঞ্জ জেলার মধ্যে পড়ে। বন্দে ভারত এক্সপ্রেসের বাইরে থাকা সিসি ক্যামেরার ফুটেজ দেখে দাবি রেলের। ফুটেজে স্পষ্ট দেখা গিয়েছে, ওই সময় রেললাইনের ধারে বেশ কয়েকজন জমায়েত করেছিলেন।
ইতিমধ্যেই থানায় এফআইআর দায়ের করা হয়েছে রেলের তরফে। সিসিটিভি ফুটেজ দেখে দুষ্কৃতীদের চিহ্নিত করার চেষ্টা শুরু হয়েছে। বন্দে ভারত এক্সপ্রেস ১ জানুয়ারি থেকে যাত্রা শুরু করে। প্রথমবার ট্রেনটি লক্ষ্য করে পাথর ছোঁড়া হয়েছিল। ওই দিন সন্ধেয় পাথর ছোড়ার ঘটনা ঘটে। প্রথমবারের হামলা ঠিক কোন জায়গা থেকে হয় তা এখনও জানা যায়নি। তবে দ্বিতীয়বার ট্রেনে পাথর ছোঁড়ার ঘটনা বিহারেই হয়েছে বলে দাবি রেলের।
এপ্রসঙ্গে পূর্ব রেলের সিপিআরএও একলব্য চক্রবর্তী বলেন, ''বিহারের লোকাশনে এটা হয়েছে। দোষীদের রেয়াত করা হবে না। যাত্রীদের যাত্রার বিঘ্ন ঘটানোর কোনও প্রয়াস বরদাস্ত করা হবে না। জিআরপি-আরপিএফ এব্যাপারে কাজ করছে।''
আরও পড়ুন- আগামী ৪ মাস মিড-ডে মিলের খাদ্য তালিকায় বড় বদল, পঞ্চায়েত ভোটের আগেই পদক্ষেপ রাজ্যের
এদিকে, রেলের তরফে এই তথ্য জানানোর পরেই উত্তাল বঙ্গ রাজনীতি। এতদিন বন্দে ভারতে পাথর ছোঁড়া নিয়ে তৃণমূলকে দায়ী করছিলেন বিজেপি নেতারা। এবার পালা জোড়াফুলের। তৃণমূলের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষ বলেন, ''রেলই বলছে পাথর ছোঁড়া হয়েছে কিষাণগঞ্জের স্টেশন থেকে। যেটা বিহারে পড়ে। অথচ কিছু না জেনে বাংলাকে বদনাম করেছে ওরা। বিজেপি নিজেরাই পাথর ছুঁড়ে অশান্তির চেষ্টা করছে না তো? এখন তো রেল নিজেই বলছে বিহারে এই ঘটনা ঘটেছে। বিজেপির যে যে নেতা কুৎসা করেছেন তাঁদের উচিত ক্ষমা চাওয়া।''
যদিও বিজেপি নেতা রাহুল সিনহা কিন্তু এখনও দমতে নারাজ। তাঁর জোরালো দাবি, এই ঘটনার পিছনে দায়ী তৃণমূলই। রাহুল সিনহা এদিন বলেন, ''তৃণমূলই দায়ী, তদন্তে সত্য সামনে আসবে। বিহার মানেটা কি? ওই এলাকা বিহারের আওতায় পড়ছে বলে দায় এড়িয়ে যাওয়া যায় না। তৃণমূলই এর জন্য দায়ী।''
আরও পড়ুন- আতঙ্ক চরমে! উদ্বেগ বাড়াচ্ছে BF.7, রাজ্যে চার আক্রান্তের হদিশ
অন্যদিকে বিজেপির সর্বভারতীয় সহ সভাপতি দিলীপ ঘোষ বলেন, ''বাংলায় তো এই ঘটনা নতুন নয়। তাই বিজেপি বলেছে। এর আগে তো পুরুলিয়া এক্সপ্রেসেও ঢিল মেরেছিল। গোটা পশ্চিমবঙ্গে এমন ঘটনা ঘটেই চলেঠে। নাগরিকত্ব আইন নিয়ে বিক্ষোভের সময় রেলের আড়াইশো কোটির সম্পত্তির ক্ষতি হয়েছিল এই বাংলাতেই।''