২০২১ বিধানসভা নির্বাচনের পর মুকুল রায়-সহ বেশ কয়েকজন বিজেপি বিধায়ক তৃণমূল কংগ্রেসে যোগ দিয়েছিলেন। দলীয় বিধায়কদের ধরে রাখতে হিমশিম অবস্থা হয়েছিল বিজেপির। তারপর ২০২২-এ বগটুই গণহত্যার পর একের পর এক ইস্যুতে জেরবার অবস্থা তৃণমূল সরকারের। পরবর্তীতে রোজদিন বারংবার রাজ্য সরকারের ডেডলাইন ডিসেম্বর বলে হইচই বাধিয়ে দিয়েছেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। এই প্রসঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মন্তব্য করে জল্পনা আরও বাড়িয়ে দিয়েছেন। রাজ্য-রাজনীতিতে এখন একটাই চর্চা ডিসেম্বরে কি হতে চলেছে।
সবে দেড় বছর হয়েছে রাজ্যে তৃতীয়বারের জন্য তৃণমূল সরকার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। এরইমধ্যে মহারাষ্ট্রে শিবসেনা বিরোধীরা সরকার ফেলে দিয়ে বিজেপির সঙ্গে হাত মিলিয়ে সরকার গঠন করেছে। সেই সময় বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী হুংকার ছেড়েছিলেন এরপর ছত্তিশগড়, ঝাড়খন্ড ও পরবর্তীতে একই দশা হবে বাংলায়। যদিও এখনও এরাজ্যে তেমন কিছু ভেল্কি দেখা যায়নি। বরং ঝাড়খন্ডের তিন কংগ্রেস বিধায়কের থেকে লক্ষ লক্ষ টাকা উদ্ধার করেছে এরাজ্যের পুলিশ।
কংগ্রেস সেই বিধায়কদের দল থেকে বহিস্কারও করে দিয়েছে। তখনও অভিযোগ উঠেছিল ঝাড়খন্ড সরকার ফেলে দেওয়ার চক্রান্ত করছে বিজেপি। যদিও সেই ঘটনার পর ঝাড়খন্ড বা বাংলার সরকার চলছে বহাল তবিয়তে। শুভেন্দুর সেই হুংকার বাস্তবে রূপায়িত হয়নি তারই মধ্যে ডিসেম্বরের পর আর তৃণমূল সরকার থাকবে না সেকথা বলতে থাকেন শুভেন্দু অধিকারী। তখন ছিল শিন্ডের দশা হবে রাজ্যে এবার ডিসেম্বরে কী হবে?
আরও পড়ুন- ‘ট্রাফিক পুলিশ দিয়ে রাজস্ব বৃদ্ধির ছক রাজ্যের’, ‘চালান’ পোস্ট করে বিস্ফোরক শুভেন্দু
ভবিষ্যৎবানী বলতে বলতে একটা ইমপ্যাক্ট তৈরি হয়ে গিয়েছে। তাহলে ডিসেম্বরে কী হবে? ১০০ দিন-সহ নানা কেন্দ্রীয় প্রকল্পের টাকা কেন্দ্রীয় সরকার দিচ্ছে না বলে লাগাতার অভিযোগ করে চলেছে রাজ্য সরকার। আবার সরকারের দেনার পরিমানও ক্রমশ বাড়ছে। বাম সরকার চলে যাওয়ার সময়ও দেনা রেখে গিয়েছিল। তা এখন প্রায় তিন গুণ হয়েছে। শুভেন্দুর দাবি, রিজার্ভ ব্যাংকের কাছে রাজ্য ১০ হাজার কোটি টাকা চেয়েছে। ইতিমধ্যেই বিজেপি, নেতৃত্ব মমতার সরকারকে দেউলিয়া সরকার বলে তোপ দাগছে। রাজনৈতিক মহলের প্রশ্ন, সেক্ষেত্রে কি দেউলিয়া ঘোষণা করার কোনও পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। ডিসেম্বরে কি কি হতে চলেছে তা নিয়ে নানা ভাবনা উঁকি মারছে অভিজ্ঞ মহলে।
এখন বিজেপির প্রায় ৭০ জন বিধায়ক রয়েছেন। শুভেন্দু অধিকারী ঘোষণা করেছেন, অনৈতিক ভাবে সরকার ফেলার অভিপ্রায় বিজেপির নেই। সরকার ফেলতে গেলে বিজেপির যে সংখ্যক বিধায়ক রয়েছেন তার থেকেও বেশি সংখ্যক বিধায়ক তৃণমূল থেকে আসতে হবে। রাজনৈতিক মহলের মতে, এখানে যতই দুর্নীতি বা জ্বলন্ত ইস্যু থাকুক বঙ্গ রাজনীতিতে এই মুহূর্তে পদ্মশিবিরের প্রয়োজন আরও ৭৮ জন বিধায়ক। এই সংখ্যক বিধায়ক ভেঙে এনে সরকার গঠন করা অনেকটা কঠিন কাজ। তবে এটাও ঠিক রাজনীতিতেও অসম্ভব বলে কিছু নেই। তবে ডিসেম্বর নিয়ে বিজেপি নেতৃত্বের অন্দরমহলের অনেকের কাছেই কোনও খবর জানা নেই।
আরও পড়ুন- সীমান্তের পাচার-রাশ কার হাতে? মদের আসরে বচসায় যুবককে কুপিয়ে খুন
শুভেন্দুর ডিসেম্বর বানী নিয়ে চর্চা বাড়িয়ে দিয়েছে মমতার সাম্প্রতিক মন্তব্য। তিনিও নভেম্বর ও ডিসেম্বর মাসে সতর্ক থাকতে বলেছেন। কোথাও কোনও অশান্তি ঘটাতে পারে বিজেপি, তাই সতর্ক থাকতে বলেছেন দলীয় নেতৃত্বকে। এটা যেন আগুনে ঘি দেওয়ার মতো কাজ করেছে। তাহলে কী সত্যিই ডিসেম্বরে তৃণমূল সরকার নিয়ে বিজেপির বিশেষ কোনও পরিকল্লনা আছে? এই জল্পনাই ঘুরপাক খাচ্ছে রাজনৈতিক মহলে।
তবে প্রথম ধাপে মহারাষ্ট্রে শিবসেনা সরকার ফেলে দেওয়ার পর শুভেন্দুর হুংকার, তারপর ডিসেম্বর বিল্পব, এসবের পর বিজেপির কোনও বিধায়ক কিন্তু আর তৃণমূলে পা বাড়াননি। এটাই শুভেন্দুর বক্তব্যের সব থেকে বড় সার্থকথা বলে মনে করছে পর্যবেক্ষক মহল। শুভেন্দুর হুংকারের পরও কোনও বিধায়ক পদ্মশিবিরে পা বাড়ায়নি। ক্ষমতার দড়ি টানাটানি ডিসেম্বরে কোথায় গিয়ে দাঁড়ায় তা দেখার অপেক্ষায় রাজনৈতিক মহল।