swimmer sayani das will get Tenzing Norgay National Adventure Award: সপ্তসিন্ধুর পঞ্চম সিন্ধু জয়ের ইতিহাস তৈরি করে এখন 'বিশ্ববন্দিতা' বঙ্গকন্যা সায়নী দাস (Sayani Das)। বাংলার এই 'জলকন্যা' এবার পেতে চলেছেন ভারতের সর্বোচ্চ অ্যাডভেঞ্চার স্পোর্টস সন্মান। আগামী ১৭ জানুয়ারি ভারতের রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মুর (Draupadi Murmu) হাত থেকে 'তেনজিং নোরগে ন্যাশনাল অ্যাডভেঞ্চার অ্যাওয়ার্ড' নেবেন সায়নী। ভারত সরকারের যুব বিষয়ক বিভাগ ও ক্রীড়া মন্ত্রক এই সন্মানের জন্য সায়নী দাসকেকে নির্বাচিত করেছে। সেই সংক্রান্ত পত্র ইতিমধ্যেই সায়নী দাসের বাড়িতে এসে পৌঁছেছে। বুলা চৌধুরীর পর বাংলার একমাত্র সাঁতারু কন্যা সায়নী দা’ই জাতীয় এই সন্মান লাভের জন্য বিবেচিত হলেন। সায়নীর এই সাফল্যে তাই গর্বিত বাংলা ও বাঙালি।
সায়নী দাসের বাড়ি পূর্ব বর্ধমান (Purba Bardhaman) জেলার কালনা পুরসভার বারুইপাড়ায়। রটনেষ্ট, ক্যাটালিনা, ইংলিশ চ্যানেল, মালোকাই চ্যানেল ও কুক স্ট্রেইট চ্যানেল জয়ের পর সায়নী দাস সপ্ত সিন্ধুর পঞ্চম সিন্ধু জর করে ফেলেছেন। গত বছরের আগষ্ট মাসের শেষের দিকে সপ্তসিন্ধুর পঞ্চম সিন্ধু জয় করে সায়নী গোটা বিশ্বের সাঁতারু মহলে তাক লাগিয়ে দেন। তারপর থেকেই বঙ্গতনয়া সায়নী দাস কার্যত 'বিশ্ববন্দিতা' বনে যান ।
সায়নী দাসের বাবা রাধেশ্যাম দাস অবসরপ্রাপ্ত স্কুল শিক্ষক। মা রূপালীদেবী সাধারণ গৃহবধূ। বাবা রাধেশ্যাম দাসের হাত ধরে সায়নীর সাঁতারে হাতেখড়ি হয়। তারপর থেকে কঠিন অনুশীলনের মধ্য দিয়ে সায়নী নিজেকে কার্যত 'জলকন্যা' বানিয়ে ফেলেন। হাওয়ার গতিবেগ ,জলের স্রোত এবং দীর্ঘ সময় সাঁতার কেটে এগিয়ে চলার যোগ্য হিসাবে নিজেকে তিনি তৈরি করেন। সেই যোগ্যতাকে কাজে লাগিয়ে বঙ্গতনয়া সায়নী রটনেষ্ট ও ক্যাটলিনা চ্যানেল জয়ের পর ২০১৭ সালে ইংলিশ চ্যানেল (English Channel) জয় করেন। এরপর ২০২২ সালে তিনি মার্কিন মুলুকের মালোকাই চ্যানেল জয় করে ইতিহাস সৃষ্টি করেন। শুধু ভারত নয়, এশিয়া মহাদেশের মহিলা সাঁতারু হিসাবেও সায়নী প্রথম মালোকাই চ্যানেল জয়ের নজির সৃষ্টি করেন। গত বছরের এপ্রিল মাসে সপ্তসিন্ধুর এক সিন্ধু নিউজিল্যাণ্ডের কুক স্ট্রেইট চ্যানেল তিনি জয় করেন। এরপর ওই বছরেই সায়নী নর্থ চ্যানেল জয় করে ফেলেন। বাকি আর রয়েছে সুগারু ও জিব্রাল্টার প্রণালী জয়। তাহলেই ইতিহাস সৃষ্টি করে ফেলবেন বঙ্গতনয়া সায়নী। তাঁর মাথায় উঠবে 'ওশেন সেভেন' চ্যালেঞ্জের মুকুট।
আরও পড়ুন- Best Places to Visit Bengal in January: ভরা শীতে বেড়াতে যাবেন? রইল বাংলার তাকলাগানো ৫ পর্যটন কেন্দ্রের হালহদিশ
আয়ারল্যান্ডে গিয়ে সায়নীর সপ্ত সিন্ধুর পঞ্চম সিন্ধু জয় করাটা কিন্তু খুব একটা সহজ ছিল না। সায়নীর কথায়, “আগের চারটি চ্যানেল জয়ের থেকেও নর্থ চ্যানেল জয়ের জন্য কঠিন লড়াই চালাতে হয়েছিল। পরিস্থিতির প্রতিকূলতার কারণে ৬ মাইলের ক্ষেত্রে দীর্ঘক্ষণ এক জায়গায় থাকতে হয়েছে। কখনও তিন ঘণ্টায় মাত্র ১ কিলোমিটার পথ অতিক্রম করেছি। আবার জলের টান ও জেলিফিসের জন্যেও কঠিন পরিস্থিতির মধ্যে পড়তে হয়েছে। জলে এভাবে লড়াই চালিয়ে ১৩ ঘন্টা ২২ মিনিটে ৪৮ কিলোমিটার পথ সাঁতারে পঞ্চম সিন্ধু জয়ের রেকর্ড গড়েছি। এর আগে সব প্রতিকূলতাকে কাটিয়ে ১১ ঘন্টা ৫১ মিনিটে ২৯,৫ কিলোমিটার দুর্গম জলপথ অতিক্রম করে কুক প্রণালী জয় করেছি।"
আরও পড়ুন- West Bengal News Live: গলায় নেই রেডিও কলার, রয়্যাল আতঙ্কে সন্ধে নামলেই ঘরবন্দি, ভয়ে কাঁটা বাসিন্দারা
এদিকে পশ্চিমবঙ্গ সরকার আগেই 'খেলশ্রী' সন্মানে ভূষিত করেছে সায়নীকে। এছাড়াও 'মাদার টেরিজা ইন্টারন্যাশনাল অ্যাওয়ার্ড' সায়নী পেয়ে গিয়েছেন। এবার সায়নী দেশের রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মুর কাছ থেকে গ্রহণ করবেন ভারতের সর্বোচ্চ অ্যাডভেঞ্চার স্পোর্টস সম্মান 'তেনজিং নোরগে ন্যাশনাল অ্যাডভেঞ্চার অ্যাওয়ার্ড'। সায়নীর বাবা রাধেশ্যাম দাস বলেন, “ভারত সরকারের যুব বিষয়ক বিভাগ ও ক্রীড়া মন্ত্রক তেনজিং নোরগে ন্যাশনাল অ্যাডভেঞ্চার অ্যাওয়ার্ড ২০২৩-এর জন্য আমার মেয়েকে নির্বাচিত করেছে। এই নির্বাচন সংক্রান্ত চিঠি ইতিমধ্যেই আমাদের কালনার বাড়িতে এসে পৌঁছেছে। চিঠিতে উল্লেখ রয়েছে আগামী ১৭ জানুয়ারি বেলা ১১ টার মধ্যে দিল্লির রাষ্ট্রপতির ভবনের গণতন্ত্র ভবনে সায়নীকে উপস্থিত হতে হবে। সেখানেই দেশের রাষ্ট্রপতি এই সন্মান সায়নীর হাতে তুলে দেবেন। পুরস্কার বাবাদ ১৫ লক্ষ টাকা সায়নীকে দেওয়া হবে।"
আরও পড়ুন- Dev: তৃণমূলের ২১ জুলাইয়ের মঞ্চে 'পাগলু' গান, ১৪ বছর পর দেব বললেন 'ভুল হয়েছিল'...
রাধেশ্যাম দাসের কথায়, "বাংলার বুলা চৌধুরী ২০০২ সালে তেনজিং নোরগে ন্যাশনাল অ্যাডভেঞ্চার অ্যাওয়ার্ড পেয়েছিলেন। তার পর থেকে প্রায় ২৩ বছর বাদে বাংলা থেকে একমাত্র সায়নী দাস এই সন্মান পাচ্ছেন। সায়নীর বাবা হিসাবে এটা আমার কাছে অত্যন্ত গর্বের। আমার মতোই গর্বিত কালনার সকল বাসিন্দারা।" সায়নীর মা রূপালীদেবী বলেন, “দেশের রাষ্ট্রপতি আমার মেয়েকে সন্মানিত করবেন। আমি আর আমার স্বামী মা-বাবা হিসাবে তার সাক্ষী থাকব। এর থেকে গর্বের আর কী হতে পারে!" পূর্ব বর্ধমানের জেলাশাসক আয়েষা রাণী এ জানিয়েছেন, জেলার মেয়ে সায়নী দাস বাংলাকে গর্বিত করেছেন। সায়নী পূর্ব বর্ধমান জেলার গর্ব। তাঁর পাশে থাকবে পূর্ব বর্ধমান জেলা প্রশাসন।