Teacher Protest: আগামী ২১ মে চাকরিহারা আন্দোলনরত শিক্ষকদের থানায় হাজিরার নির্দেশ। বিধান নগর উত্তর থানায় হাজিরার নির্দেশ দিয়ে ইতিমধ্যে ১৫ জনকে নোটিস পাঠানো হয়েছে বলেই পুলিশ সূত্রে খবর। গত বৃহস্পতিবার আক্রান্ত শিক্ষকদের বিরুদ্ধে একাধিক ধারায় মামলা দায়ের করা হয়। সেই মামলার প্রেক্ষিপ্তেই মোট ১৫ জন শিক্ষককে নোটিস পাঠানো হয়েছে। নোটিস না মানলে গ্রেফতারির হুঁশিয়ারিও দেওয়া হয়েছে। উল্লেখ বিকাশ ভবনের সামনে অবস্থান বিক্ষোভ চলাকালীন বেশ কয়েকজন আন্দোলনকারীদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়। সরকারি সম্পত্তি নষ্ট, ভাংচুর, সরকারি কর্মীদের কাজে বাঁধাদান সহ একাধিক অভিযোগ আনা হয়েছে চাকরিহারাদের বিরুদ্ধে। এপ্রসঙ্গে চাকরিহারা আন্দোলনকারী শিক্ষকরা বলেন, "পুলিশের মারে রক্তাক্ত শিক্ষকরা, তাও আন্দোলনকারীদের বিরুদ্ধেই মামলা দায়ের। ভয় দেখিয়ে আন্দোলন বন্ধ করা যাবে না। এমন ভাবে বিষয়টা তুলে ধরা হয়েছে যেন আমরা ড্রোন ছুঁড়ে পুলিশের উপর হামলা চালিয়েছি। ইতিমধ্যে এই বিষয়ে আইনজীবীদের সঙ্গে কথা হয়েছে। অনেকেই ইতিমধ্যে নোটিস পেয়েছেন। যারা নোটিস পেয়েছেন তাদের সকলের পাশেই সকল আন্দোলনকারীরা রয়েছেন"।
চাকরি ফিরিয়ে দেওয়ার দাবিতে লাগাতার বিকাশ ভবনের সামনে চলছে অবস্থান বিক্ষোভ। বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই আন্দোলনের ঝাঁঝ বাড়তে থাকে। বিকাশ ভবনের গেট ভেঙে ফেলে জোর করে ভিতরে ঢুকে পড়েন আন্দোলনকারীরা। সন্ধ্যার পর পরিস্থিতি রীতিমত উত্তপ্ত হয়ে পড়ে। আন্দোলনকারীদের হটাতে লাঠিচার্জ করা হয়। পুলিশের মারে গুরুতর জখম হয়েছেন বেশ কয়েকজন শিক্ষক। অভিযোগ, শিক্ষকদের লাথি, ঘুষি এমনকী জুতো দিয়েও মারা হয়। সকাল থেকে অবস্থানে বসা শিক্ষকদের হটাতে রাত আটটা নাগাদ সাইরেন বাজিয়ে অ্যাকশন শুরু করে পুলিশ।
একদিকে হকের চাকরি যাওয়ার যন্ত্রনা। অপরদিকে পুলিশের লাঠির আঘাত। কান্নায় ভেঙে পড়েন চাকরিহারা শিক্ষকরা। বিধাননগর পুলিশের পক্ষ থেকে আন্দোলনকারী শিক্ষকদের বিরুদ্ধে স্বতঃ প্রণোদিত মামলাও রুজু করা হয়। চাকরিহারা যোগ্য শিক্ষকদের বিরুদ্ধে সরকারি সম্পত্তি ভাঙচুর, সরকারি কাজে বাধা দেওয়া এবং সরকারি কর্মীদের হেনস্থা সহ একাধিক অভিযোগ আনা হয়েছে। তার প্রেক্ষিপ্তেই এদিন ১৫ জনকে নোটিস পাঠিয়ে আগামী ২১ তারিখ বিধাননগর উত্তর থানায় সকাল ১১ টায় হাজিরার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
ঠিক কী কারণে কোন পরিস্থিতিতে লাঠিচার্জ করেছে পুলিশ? তার ব্যাখ্যায় এডিজি দক্ষিনবঙ্গ সুপ্রতিম সরকার জানিয়েছেন, "গত ১০ দিন ধরে আন্দোলনকারীরা শান্তিপূর্ণ অবস্থানে ছিলেন, পুলিশ কোনও হস্তক্ষেপ করেনি। তবে বৃহস্পতিবার পরিস্থিতি হঠাৎ করেই পাল্টে যায়"। তিনি আরও জানান, “বিকাশ ভবনের মূল গেটে জোর করে ব্যারিকেড ভেঙে ঢুকে পড়েন বিক্ষোভকারীরা। গেট ভেঙে ভিতরে প্রবেশ করে তাঁরা অবস্থান শুরু করেন এবং ঘোষণা করেন কাউকে বেরোতে দেওয়া হবে না। একাধিকবার মাইকিং করে সতর্ক করা হলেও তাঁরা অনড় থাকেন।”
পুলিশের তরফে বলা হয় "বিকাশ ভবন প্রাঙ্গণে ৫৫টি অফিস এবং ৫০০-৭০০ কর্মী কাজ করেন। সাত ঘণ্টা ধরে তাঁরা অবরুদ্ধ ছিলেন। একজন গর্ভবতী মহিলা সহ অনেকেই আতঙ্কিত হয়ে পড়েন। পুলিশ বহুবার অনুরোধ করেছিল ভিতরে যাঁরা কর্মরত, তাঁদের বাইরে বেরোতে দেওয়ার জন্য। কিন্তু আন্দোলনকারীরা তাতে কর্ণপাত করে নি"। পরিস্থিতি সামাল দিতে গিয়ে ধাক্কাধাক্কির ঘটনা ঘটে এবং বাধ্য হয়ে পুলিশ বলপ্রয়োগ করে"। এডিজি দক্ষিনবঙ্গ আরও বলেন, “আন্দোলনের অধিকার যেমন আন্দোলনকারীদের আছে, তেমনই যারা সারাদিন কাজ করেছেন, তাঁদেরও বাড়ি ফেরার অধিকার রয়েছে।”
যদিও পুলিশের তরফে যাবতীয় অভিযোগ অস্বীকার করেছেন আন্দোলনকারীরা । কোনও রকম অসহযোগিতার অভিযোগ রীতিমত উড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। আন্দোলনকারীদের সাফ দাবি, বিভিউ পিটিশন নিয়ে তাদের কোর কমিটির সঙ্গে আলোচনা করতে হবে সরকারকে। শিক্ষামন্ত্রী যতক্ষণ পর্যন্ত না এসে সরকারের অবস্থান স্পষ্ট করবেন ততক্ষণ আদোলন চলবে বলেও জানিয়েছেন চাকরিহারা আন্দোলনকারীরা। শিক্ষকদের নোটিস প্রসঙ্গে রাজ্য বিজেপি সভাপতি তথা কেন্দ্রীয় মন্ত্রী সুকান্ত মজুমদার বলেন, "মমতা পুলিশ এর থেকে বেশি কিছু পারবে না, "শিক্ষা ব্যাবস্থাকে ভেঙে ফেলতে যা যা করার তাই করছেন। আগামী মঙ্গলবার পুলিশকে ঘেরাও, যুবমোর্চা রাস্তায় নেমে আন্দোলনে নামবে। শিক্ষকদের আন্দোলনে ভারতীয় জনতা পার্টি সব সময় ছিল আগামী দিনেও থাকবে"।