/indian-express-bangla/media/media_files/2025/10/20/puja-2025-10-20-09-38-50.jpg)
Bidyasundar Kali: বর্ধমানের তেজগঞ্জের বিদ্যাসুন্দর কালী।
Kali Puja:নরবলি এখন আর হয় না।তবুও বিদ্যাসুন্দর কালী আজও শিহরণ জাগায়।বর্ধমানের তেজগঞ্জের নির্জন নিভৃত স্থানে পূজিত হন পাষাণ মূর্তির বিদ্যাসুন্দর কালী। কার্তিকের আমাবসাতেও জন কোলাহল,আলোর রোশনাই,বাদ্যির শব্দ,এসব থেকে বিদ্যাসুন্দর কালী অন্তরালেই রয়ে থাকেন । তবে অন্তরালে রয়ে থাকলেও দেবীর প্রতি বর্ধমানবাসীর ভক্তিভাবে বিন্দুমাত্র ভাটা পড়েনি। নিজ মাহাত্মেই দেবী তাঁর ভক্তদের কাছে শ্রদ্ধার দেবী রুপেই জায়গা করে নিয়ে আছেন।
বিদ্যাসুন্দর কালীর পুজো নিয়ে নানা কাহিনী প্রচলিত আছে। রায়গুনাকার ভরতচন্দ্রের কব্যগ্রন্থে উল্লেখিত রয়েছে বিদ্যাসুন্দর কালীর কথা। কথিত আছে, ’একদা দামোদর তীরবর্তী তেজগঞ্জে ছিল জঙ্গল আবৃত।সেখানেই ছিল প্রাচীন কালী মন্দির।তদানিন্তন বর্ধমানের রাজারা ওই মন্দিরে পুজো দিতে আসতেন’। এও শোনা যায়,’ ওই সময়ে এই মন্দিরে দেবীর সামনে নরবলি হত। মন্দিরের আশেপাশে সুড়ঙ্গও নাকি ছিল।তবে সেই সুড়ঙ্গ কোথায়ছিল তা অবশ্য আজ আর কেউ বলতে পারেন না। তবে ওই সুড়ঙ্গের সঙ্গে আজও জড়িয়ে রয়েছে এক প্রেম কাহিনী ।
জনশ্রুতি রয়েছে,ওই সুড়ঙ্গ দিয়েই নাকি সেই সময়ে রাজকন্যা বিদ্যার সাথে গোপনে দেখা করতেন সুন্দর।দক্ষিণ মশান কালীর গরিব পুজারীর সন্তান ছিলেন সুন্দর। রাজবাড়ি থেকে মন্দিরে পুজোর ফুল দিতে আসতেন মালিনী মাসি। তার কাছেই একদিন একটা সুন্দর মালা দেখতে পান সুন্দর।মালাটি কে গেঁথেছে তা মালিনী মাসির কাছে জানতে চায় সুন্দর । মালিনী মাসি জানান মালাটি গেঁথেছে রাজকন্যা বিদ্যা। সুন্দর এর পরেই রাজকন্যার সাথে দেখা করার জন্যে ব্যাকুল হয়ে উঠলে বিদ্যা সেদিন ভয়ে পালিয়ে যায়।
আরও পড়ুন- Kali Puja 2025 weather:কালীপুজোয় ঝলমলে আকাশ, রাজ্যজুড়ে মনোরম আবহাওয়া, কোথাও কোথাও বৃষ্টির ইঙ্গিত
কিন্তু পালিয়ে গেলে কি হবে।সুন্দরের মন উদগ্রীব হয়ে ওঠে বিদ্যার জন্যে।ধরা পড়লে একেবারে নিশ্চিৎ মৃত্যু জেনেও সুন্দর রাজবাড়ি অবধি সূড়ঙ্গ কেটে ফেলে।সুড়ঙ্গ পথ ধরেই সুন্দর রাজকন্যা বিদ্যার কাছে পৌছে যায়। সময় গড়ানোর সাথে সাথে গভীর প্রণয়ের সম্পর্ক গড়ে ওঠে বিদ্যা আর সুন্দরের মধ্যে । বিদ্যা আর সুন্দরের প্রণয় সম্পর্কে আবদ্ধ হবার কথা রাজার কানে পৌছে দেন তার চরেরা।
একথা জানার পরেই রাজা তেজগঞ্জের মন্দিরেই দেবী মায়ের সামনে নিজের মেয়ে আর তার প্রেমিককে বলির নির্দেশ দেন। হাঁড়িকাঠে তাদের দু’জনকে বলি করার ঠিক আগের মুহূর্তে দেবী মাকে প্রণামের অনুরোধ করে সুন্দর। তখনই মূর্ছিত হন কাপালিক।সেই মুহুর্তেই অন্তর্ধান করে বিদ্যা আর সুন্দর।তার পর থেকে তাদের আর কোন খোঁজ মেলে নি। এরপর থেকে রাজার আদেশে মন্দিরে নরবলি বন্ধ হয়ে যায়।
আরও পড়ুন-Kali Puja 2025:ভক্তিস্রোতে ভেসে নৈহাটি! বড়মা'র কালীপুজোয় নজিরবিহীন সমাগম,জেনে নিন পুজোর নির্ঘণ্ট
ভরতচন্দ্রের সেই বিদ্যাসুন্দর কালী আজও রয়েছেন বর্ধমানের তেজগঞ্জে। এখানে এখনও রয়েছে সেই মূর্তি।আর রয়েছে ভৈরব আর পঞ্চানন্দ এই দুই মন্দির।কথিত আছে রাজনির্দেশে বাঁকুড়া থেকে এসে এই মন্দিরে পুজার ভার পেয়েছিলেন বর্তমান সেবায়েত বংশের পূর্ব পুরুষ ।একসময় এখানকার ভোগের প্রসাদ খেয়ে অনেকেই বেঁচে থাকতেন।সেই জাঁকজমক আজ আর নেই।তবুও শ্যামাপুজোর দিন এই মন্দিরে নিষ্ঠা সহকারে পুজো হয়।পুজো শেষে নির্জনেই থেকে যান বিদ্যাসুন্দর কালী।