ত্রিপুরায় বিহার মডেলে ভোটার তালিকার স্পেশাল ইন্টেন্সিভ রিভিশন এবং অবৈধ বাংলাদেশি ও রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশকারীদের চিহ্নিত করতে দিল্লিতে নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে এক বৈঠকে জোরালো দাবি রাজ্যের শাসকদল BJP-র জোট শরিক তিপ্রা মথা দলের প্রধান প্রদ্যুৎ কিশোর মানিক্য দেববর্মার। বৈঠক শেষে তিনি সামাজিক মাধ্যমে এক পোস্টে জানান, নির্বাচন কমিশনের পক্ষে সারা দেশে ভুয়ো ভোটারদের চিহ্নিত করতে এবং ভোটার তালিকার বিশ্বাসযোগ্যতা নিশ্চিত করতে বিহার মডেলের স্পেশাল ইনটেন্সিভ রিভিশন অথবা স্যার চালু করা হবে।
যদিও এখনও পর্যন্ত নির্বাচন কমিশন সূত্রে তাঁর এই দাবির যথার্থতা নিশ্চিত করা যায়নি। নির্বাচন কমিশনের কাছে প্রদ্যুৎ কিশোর এবং তার দল জানিয়েছে ত্রিপুরায় বাংলাদেশের সাথে যে ৮৫৬ কিলোমিটার লম্বা আন্তর্জাতিক সীমান্ত রেখা রয়েছে তার অনেকটাই অসুরক্ষিত এবং বহু রন্ধ্রে অবৈধ অনুপ্রবেশের বিপদে ভুগছে। এর ফলে নিরন্তর অবৈধ অনুপ্রবেশ রাজ্যের ভোটার তালিকার বিশ্বাসযোগ্যতার প্রতি প্রশ্ন তুলছে এবং উপজাতি জনসংখ্যার নির্বাচক মন্ডলীর গণতান্ত্রিক অধিকার বিপদের মুখে ঠেলে দিচ্ছে। প্রদ্যুৎ আরও দাবি করেন যে অনেক অবৈধ অনুপ্রবেশকারীরা অসৎ উপায় এ ভারতীয় ভোটার পরিচয় পত্র আধার কার্ড প্যান কার্ড ড্রাইভিং লাইসেন্স এমনকি পাসপোর্ট ও পেয়ে যাচ্ছে।
এসবের পেছনে স্থানীয় দালাল, অসৎ আধিকারিক এবং রাজনৈতিক বাহুবলিদের হাত রয়েছে বলে অভিযোগ করেন প্রদ্যুৎ কিশোর এবং তার অনুগামীরা। গোটা বিষয়টিকে ত্রিপুরার স্থানীয় সমস্যা নয় বলে তিপ্রা মথা দল আজ দাবী করেছে ত্রিপুরার আন্তর্জাতিক সীমানা পেরিয়ে অবৈধ অনুপ্রবেশ একটি রাষ্ট্রীয় সমস্যায় পরিণত হয়েছে। ২০১২ সালে বামফ্রন্ট জমানায় ১ লাখ ৪৮ হাজার অবৈধ ভোটার ত্রিপুরায় চিহ্নিত হয়েছিল। তৎকালীন নির্বাচন কমিশনার বিনোদ সাক্সেনা তখন ত্রিপুরায় সফর করে সংশ্লিষ্ট আধিকারিকদের এ বিষয়ে নজর দেওয়ার জন্য নির্দেশ দিয়ে যান। সেই নির্দেশ কখনোই ফলপ্রসু হয়নি বলে আজ প্রদ্যুৎ কিশোর রাজ্যের অবৈধ অনুপ্রবেশ সমস্যা নতুন নয় বলে দাবি করেন।
আরও পড়ুন- West Bengal News live updates:UGC-এর নোটিশ রাজ্যের আট স্বনামধন্য বিশ্ববিদ্যালয়কে, অনুদান বন্ধের হুঁশিয়ারি
তিনি আরও জানান, ১৯৭১ থেকে ১৯৯১ পর্যন্ত রাজ্যের জনসংখ্যা জাতীয় গড়ের চাইতে অনেক বেশি হারে বৃদ্ধি পেয়েছিল। প্রসঙ্গত পূর্বতন পূর্ব পাকিস্তান তথা অধুনা বাংলাদেশ থেকে যারা ত্রিপুরায় শরণার্থী হিসেবে এসে পরে স্থায়ীভাবে বসবাস করতে থাকেন, তাদের জন্য ১৯৭১ সালে সর্বশেষ গ্রহণযোগ্য দিনক্ষণ ঠিক করা হয় দু'দেশের মধ্যে সই করা ইন্দিরা মুজিব চুক্তিতে।
এই প্রসঙ্গে প্রদ্যুৎ কিশোর আজ বলেন, অবৈধ অনুপ্রবেশ্যের এই চল রাজ্যের জনসংখ্যার আনুপাতিক হার এবং ভোটারদের এলাকাভিত্তিক গুরুত্ব পরিবর্তন করে চলেছে।
আরও পড়ুন-Heavy rainfall alert :নিম্নচাপের জেরে কাঁপানো দুর্যোগের আশঙ্কা বাংলায়, অতি ভারী বৃষ্টির সতর্কতা কোন জেলাগুলিতে?
বৈঠকের পর সামাজিক মাধ্যমে একটি পোস্ট করে প্রদ্যুৎ কিশোর লিখেছেন, "আজ ত্রিপুরায় বিশেষ নিবিড় সংশোধন (SIR) বাস্তবায়নের জন্য চাপ দেওয়ার জন্য তিপ্রা মথা প্রতিনিধিদল দিল্লিতে নির্বাচন কমিশনের কর্মকর্তাদের সাথে দেখা করেছে। অবৈধ অভিবাসন আমাদের রাজ্য এবং উত্তর-পূর্বকে প্রভাবিত করছে এবং আজ যদি আমরা অবৈধ ভোটারদের চিহ্নিত না করি তাহলে আমাদের পরবর্তী প্রজন্মের জন্য আগামীকাল থাকবে না। ভাল খবর হল যে নির্বাচন কমিশন ত্রিপুরাসহ সারা দেশে ভোটার তালিকার বিশেষ নিবিড় সংশোধন করা হবে বলে প্রতিনিধিদলকে আশ্বস্ত করেছে।"
আরও পড়ুন- Mamata Banerjee: নজরে '২৬! 'বাম্পার' প্রকল্প ঢাল করেই BJP-কে 'ঘোল খাওয়াতে' ময়দানে তৃণমূল
পরবর্তী সময়ে সামাজিক মাধ্যমে একটি লাইভ ভিডিও বার্তার মাধ্যমে প্রদ্যুৎ কিশোর জানান, যে তার দল কোনও ধর্মাবলম্বী বৈধ ভারতীয় নাগরিকদের বিরুদ্ধে নয়। তিনি বলেন, "ত্রিপুরা যখন ভারতের সাথে অন্তর্ভুক্ত হয় তখন এই পূর্বতন রাজন্য শাসিত রাজ্যটি বাংলাদেশের অংশ হতে চায়নি। সুতরাং বাংলাদেশ অথবা মায়ানমার থেকে অবৈধ অনুপ্রবেশকারীরা ত্রিপুরা দিয়ে এ দেশে প্রবেশ করলে ক্ষতি এখানকার মানুষ দেরি হবে।" অসম ও পশ্চিমবঙ্গের উদাহরণ দিয়ে প্রদ্যুৎ জানান, অবৈধ প্রবেশ রোধ না করা গেলে খুব শিগগিরই ত্রিপুরার অবস্থা ওই রাজ্যগুলির মত হবে। শাসক দল বিজেপির পক্ষে অসম পশ্চিমবঙ্গ সহ বিভিন্ন রাজ্যের প্রভূত পরিমাণ অবৈধ অনুপ্রবেশকারী এবং অভিবাসীদের উপস্থিত থাকার কথা বিভিন্ন সময়েই অভিযোগে তোলা হয়েছে।