East Burdwan politics: শহীদ দিবসের মেগা সমাবেশের আগে চরমে বর্ধমান তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব, কোটি টাকা লেনদেনের বিস্ফোরক অভিযোগ

East Burdwan politics: বাংলায় এখন রাজনীতি আর অর্থনীতির যেন বেশ মিলে মিশে একাকার। শাসক দলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের সৌজন্যে সেই 'মিশেলের' পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া এবারের ২১শে জুলাইয়ের শহীদ স্মরণ সভার প্রাক্কালে পূর্ব বর্ধমান জেলায় প্রগাঢ় ভাবেই দেখা দিয়েছে।

East Burdwan politics: বাংলায় এখন রাজনীতি আর অর্থনীতির যেন বেশ মিলে মিশে একাকার। শাসক দলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের সৌজন্যে সেই 'মিশেলের' পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া এবারের ২১শে জুলাইয়ের শহীদ স্মরণ সভার প্রাক্কালে পূর্ব বর্ধমান জেলায় প্রগাঢ় ভাবেই দেখা দিয়েছে।

author-image
Pradip Kumar Chattopadhyay
New Update
tmc-infighting-east-burdwan-21-july

শহীদ দিবসের মেগা সমাবেশের আগে চরমে তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব চরমে

East Burdwan politics: বাংলায় এখন রাজনীতি আর অর্থনীতির যেন বেশ মিলে মিশে একাকার। শাসক দলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের সৌজন্যে সেই 'মিশেলের' পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া এবারের ২১শে জুলাইয়ের শহীদ স্মরণ সভার প্রাক্কালে পূর্ব বর্ধমান জেলায় প্রগাঢ় ভাবেই দেখা দিয়েছে। সেই দ্বন্দ্বে মন্তেশ্বর বিধানসভা এলাকা অগ্রগণ্যের তালিকায় স্থান করে নিয়েছে। সাড়া ফেলেছে জেলার বর্ধমান দক্ষিণ ও আউশগ্রাম বিধানসভা এলাকার গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব। মন্তেশ্বর বিধানসভার বিধায়ক তথা রাজ্যের মন্ত্রী সিদ্দিকুল্লা চৌধুরী ও তার বিরুদ্ধ গোষ্ঠীর নেতা-নেত্রীরা একে অপরের বিরুদ্ধে 'লাখ-লাখ আর কোটি-কোটি টাকা’ লেনা দেনার বিস্ফোরক অভিযোগ এনে তোলপাড় ফেল দিয়েছেন। বিপুল আর্থিক 'লেন-দেনের’ সেই অভিযোগকে হাতিয়ার করে বিজেপি তৃণমূল কংগ্রেসকে বেকায়দায় ফেলার পরিকল্পনা ছকতে শুরু করে দিয়েছে।

Advertisment

জুলাই কলকাতাকে সচল রাখতে মরিয়া পুলিশ, কোন কোন রাস্তা এড়িয়ে চলার পরামর্শ?

বছর ঘুরলেই বঙ্গে হবে বিধানসভা নির্বাচন। তবুও  তৃণমূল শিবিরে অন্তর্দ্বন্দ্বে যে কোন ভাটা পড়েনি। তা গত ৩ জুলাই গোটা রাজ্যবাসী দেখেছে। ওই দিন রাজ্যের ক্যাবিনেট মন্ত্রী সিদ্দিকুল্লা চৌধুরী নিজের বিধানসভা এলাকা মন্তেশ্বরে গিয়ে নিজেরই দলের লোকজনের হাতে আক্রান্ত হন।কেউ হাতে কালো পতাকা আবার কেউ ঝাঁটা হাতে নিয়ে ওইদিন মন্ত্রীর গাড়ি আটকে মন্ত্রীকে হেনস্থা করেন। মন্ত্রী মশাইয়ের গাড়ির কাঁচও ভেঙে দেওয়া হয়। আক্রান্ত হওয়ার পরেই সিদ্দিকুল্লা চৌধুরী দাবি করেন তাঁকে খুনের চক্রান্ত কষা হয়েছিল। একই সঙ্গে তিনি তাঁর উপর হওয়া হামলার ঘটনার যাবতীয় দায় মন্তেশ্বর পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি আহমেদ হোসেন শেখ ও তার সাঙ্গপাঙ্গদের ঘাড়ে চাপিয়েছেন। তোলাবাজ
গুণ্ডা,সন্ত্রাসী বলে তিনি আহমেদকে আখ্যায়িতও করেছেন। এমনকি মাত্র কয়েক বছরে আহমেদ হোসেনের '৫০০ কোটি’ টাকার সম্পদের অধিকারী হয়ে ওঠা নিয়েও সিদ্দিকুল্লা চৌধুরী সরব হয়েছেন।

Advertisment

তুমুল দুর্যোগের বিরাট আশঙ্কা? ২১ জুলাই দিনভর কেমন থাকবে কলকাতার আবহাওয়া?

তবে শুধু আহমেদ হোসেন’ই নয়,সিদ্দিকুল্লা চৌধুরী আক্রান্ত হওয়ার পর জেলা তৃণমূলের সভাপতি রবীন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায়কেও ছেড়ে কথা বলেন নি।  জেলা তৃণমূলের সভাপতিকে কাটোয়ার 'বুড়ো বাবু' বলে অবিহিত করা ছড়াও নানা তীর্যক ভাষাতেও তিনি বিঁধেছেন। জেলা পুলিশ সুপার সহ মুখ্যমন্ত্রীর কাছে অভিযোগ জানিয়ে সিদ্দিকুল্লা চৌধুরী এখন আহমেদ হোসেন শেখ ও তার সাঙ্গপাঙ্গদের 'শবক' শেখানোর  প্রহর গুনছেন।যদিও সিদ্দিকুল্লা চৌধুরীর আনা কোনঅভিযোগকেই পাত্তা দেননি আহমেদ হোসেন শেখ।উল্টে কিছু উদাহরণ দিয়ে আহমেদ দাবি করেছেন,“মন্ত্রী সিদ্দিকুল্লা চৌধুরী হলেন সবথেকে বড় তোলাবাজ।“

২১ জুলাইয়ের 'মেগা মিছিল' থেকেই মোদীকে 'আগুনে আক্রমণ'? বাংলা কাঁপিয়ে কী বার্তা দেবেন মুখ্যমন্ত্রী?

একই ভাবে মেমারি ২ ব্লকের পঞ্চায়েতে সমিতির সভাপতি  ময়না হালদার টুডুও বিস্ফোরক আর্থিক অভিযোগ এনেছেন মন্ত্রী সিদ্দিকুল্লা চৌধুরীর বিরুদ্ধে। ময়নার অভিযোগ, গত  পঞ্চায়েত  ভোটের পর তাঁকে পঞ্চায়েত সমিতির  সভাপতি করার জন্যে সিদ্দিকুল্লা চৌধুরী তিন খেপে তাঁর কাছ থেকে ’৪০ লক্ষ’ টাকা নিয়েছে’। শুধু তাই নয়, অনুগামীদের দিয়ে মন্ত্রী তাঁকে খুন করাতে পারেন, এমন অভিযোগও ময়না হালদার টুডু করেছেন। তা নিয়ে আবার বেজায় চটেছে মেমারি ২ পঞ্চায়েত সমিতির সকল কর্মাধ্যক্ষরা। তারা দাবি করেছেন,
ময়না হালদার টুডু মন্ত্রী সিদ্দিকুল্লা চৌধুরীকে ৪০ লক্ষ টাকা দেওয়ার মিথ্যা অভিযোগ করেছে। একই সাথে তারা এও জানিয়েছেন,’সভাপতি ময়না হালদার টুডু মিথ্যা করে এস সি-এস টি অ্যাক্টে মামলা করে ফাঁসিয়ে দিচ্ছে। ইতিমধ্যেই সভাপতি কয়েকজন কর্মাধ্যক্ষের নামে মিথ্যা মামলা করেছেন। সেই কারণে তাঁরা কর্মাধ্যক্ষরা পঞ্চায়েত সমিতিতে যেতে পারছেন না, কাজও করতে পারছেন না বলে জানিয়েছেন’। 

বর্ধমান দক্ষিণ বিধানসভার বিধায়ক খোকন দাস ও জেলা তৃণমূল যুব সভাপতি রাসবিহারী হালদার গোষ্ঠীর দন্দ্ব এখন প্রকাশ্যে চলে এসেছে। ২১ শে জুলাইয়ের প্রস্তুতি সভাতেও সেই সংঘাত প্রকাশ্যে এসেছে। খোকন দাসের পাশে অবশ্য জেলা তৃণমূলের সভাপতি রবীন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায় দাঁড়িয়েছেন। ২৬-শের বিধানসভা ভোটেও খোকন দাস তৃণমূলের প্রার্থী হবেন বলে কয়েকদিন আগে রবীন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায় আবার ঘোষণাও করে বসেন। তার পর থেকে বর্ধমান শহরে তৃণমূলের বিভিন্ন শাখা সংগঠনের নেতা নেত্রী এমনকি  পৌরসভায় শাসক দলের জনপ্রতিনিধিদের মধ্যেও এখন আড়াআড়ি বিভাজন তৈরি হয়ে গিয়েছে। প্রকাশ্যে এখন এক গোষ্ঠী অপর গোষ্ঠীকে পর্যদস্ত করতে শুরু করে দিয়েছেন। তা নিয়ে খোকন দাস বা রাসবিহারী হালদার, দুজনেই রাজনৈতিক চতুরতা বজায় রেখে কোন মন্তব্য শনিবার পর্যন্ত করেন নি। সংবাদ মাধ্যমের কাছে কোন বিবৃতি দেন নি। রাসবিহারী হালদার ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলাকে শনিবার শুধুমাত্র জানান, প্রতি ভোটে দলের সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং দলের সেকেন্ড ইন-কমাণ্ড অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় দলীয় প্রার্থিদের নাম ঘোষণা করেন। দলের একজন সৈনিক হিসাবে তিনি যেমন এটা জানেন ,তেমনই বর্ধমান সহ গোটা বাংলার তৃণমূল কর্মী,সমর্থকরাও তাই জানেন। বাকি কারুর কোন ঘোষণার কি মূল্য আছে সেটাও তৃণমূলের কর্মীরা জানেন।

কিছুক্ষণের মধ্যে সভাস্থলে মমতা, খতিয়ে দেখবেন প্রস্তুতি

একই রকম গোষ্ঠীদ্বন্দ্বে এখন জেরবার পূর্ব বর্ধমানের আউশগ্রাম ও জামালপুর বিধানসভা। এই আউশগ্রাম বিধানসভার বিধায়ক অভেদানন্দ থাণ্ডারের সঙ্গে আউশগ্রাম ২ ব্লকের তৃণমূল সভাপতি শেখ আব্দুল লালনের দ্বন্দ্ব এখন চরমে উঠেছে। সেই দ্বন্দ্বের প্রকাশ এখন অহরহই ঘটছে। কিছুদিন আগে সেই দ্বন্দ্বের রেশ আছড়ে পড়েছিল ব্লকের বিডিও’র অফিসে। ব্লকে হওয়া ২১ শে জুলাইয়ের প্রস্তুতি সভাতেও বিধায়ক ও ব্লক সভাপতির দন্দ্ব জনসমক্ষে এসেছে। আলাদা আলাদা ভাবে ২১ শে জুলাইয়ের প্রস্তুতি সভা করেছেন বিধায়ক ও ব্লক তৃণমূলের সভাপতি। আউশগ্রামের মতো জামালপুর বিধানসভাতেও ২১ শে জুলাইয়ের প্রস্তুতি সভায় প্রকাশ্যে চলে এসেছে তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব।ব্লক তৃণমূলের প্রাক্তন কার্যকরী সভাপতি প্রদীপ পাল কোন রাখঢাক না রেখেই জামালপুর বিধানসভায় তৃণমূলের ভোটে জেতা নিয়েই প্রশ্ন তুলে দিয়েছেন। সঠিক ভাবে ভোট হলে এবারের বিধানসভা নির্বাচনে তৃণমূল প্রার্থীর জেতা অসম্ভব হয়ে পড়বে বলে প্রদীপ পাল একপ্রকার ঘোষনাই করে দিয়েছেন। প্রদীপ পালের 
এই ঘোষণা রাজনৈতিক মহলে শোরগোল ফেলে দিয়েছে। জামলপুরের পাশের বিধানসভা রায়নাতে একই রকম ভাবে বিধায়ক শম্পা ধারা এবং ব্লক তৃণমূলের সভাপতি বামদেব মণ্ডল গোষ্ঠীর আড়াআড়ি বিভাজন হয়ে রয়েছে। সেই বিভাজন যে কোন সময়ে চরম বিরোধের রুপ নিতে পারে, এমন আশঙ্কা দলের অন্দরেই তৈরি হয়েছে। 

এদিকে ২৬-এর বিধানসভা নির্বাচনের আগে পূর্ব বর্ধমান জেলায় তৃণমূল শিবিরে গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব প্রগাঢ রুপ নেওয়ায় খুশি বাম ও বিজেপি শিবির। জেলা সিপিএম নেতা বিনোদ ঘোষ বলেন,“ লাখ লাখ ,কোটি কোটি টাকা কামানির বখরা নিয়ে তৃণমূলে এখন দ্বন্দ্ব চরমে উঠেছে। সেই দ্বন্দ্বের জেরে মরছে তৃণমূল,মারছে তৃণমূল, এই সত্যাটা বাংলার মানুষ এখন খুব ভালভাবেই বুঝে গিয়েছেন।“ আর জেলা বিজেপির সহ-সভাপতি মৃত্যুঞ্জয় চন্দ্র বলেন,“শুধু পূর্ব বর্ধমান জেলা নয়,গোটা রাজ্যে তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব এখন চরমে উঠেছে।এই দ্বন্দ্বের নেপথ্যে রয়েছে শুধু অর্থ।এই দ্বন্দ্বই এখন ২৬ শের বিধানসভা নির্বাচনে তৃণমূলের বিনাশ ঘটাবে বলে মৃত্যুঞ্জয় চন্দ্র দাবি করেছেন’। 

যদিও  দলে কোনও গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব নেই বলে জেলা তৃণমূলের সভাপতি রবীন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায় দাবি করেছেন। তিনি দাবি করেছেন,“গণতান্ত্রিক দলে মতের পাল্টা মত থাকতে পারে। তার মানে সেটা দ্বন্দ্ব নয়।গোটা জেলায় তৃণমূল ঐক্যবদ্ধ’ই রয়েছে।এনিয়ে সিপিএম ও বিজেপি যতই অপপ্রচার করুক তাতে ওদের লাভ কিছু হবে না। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় চতুর্থ বারের জন্যেও বাংলার মুখ্যমন্ত্রী হবেন বলে রবীন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায় দাবি করেছেন।“

২১ জুলাই 'শহিদ দিবস' কেন, কী ঘটেছিল সেদিন?

tmc 21 July Shahid Diwas