বিগত কয়েক বছর ধরেই রামনবমী উৎসবে মেতেছে বাংলা। গেরুয়া শিবিরের তত্ত্বাবধানেই এই রাজ্যে রামনবমী উৎসবের জৌলুস বেড়েছে তা নিয়ে বিতর্কের অবকাশ নেই। আবার এই উৎসবকে ঘিরে প্রশাসনিক তৎপরতা, কয়েকটি জায়গায় অশান্তিও ঘটেছে। তবে রামনবমী উৎসব এখানে একেবারে নতুন করে হয়েছে, তা কিন্তু নয়। আনেক জায়গাতে আগেও প্রচলন ছিল। এবার তৃণমূল কংগ্রেসের দৌলতে প্রভু জগন্নাথের রথযাত্রা বাড়তি মাত্রা পেয়েছে। ২০২৬-এর বিধানসভা নির্বাচনের আগে বাংলার রাজনীতি জমজমাট জয় শ্রীরাম থেকে জয় জগন্নাথে।
পূর্ব মেদিনীপুরের দিঘায় সমুদ্র সৈকতে জগন্নাথ মন্দিরে প্রথম রথযাত্রা উপলক্ষ্যে সেখানে হাজির হয়েছেন স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সাংসদ, বিধায়ক থেকে কাউন্সিলররাও রথযাত্রা উপলক্ষ্যে বাড়তি উদ্যোগ নিয়েছেন রাজ্যের বিভিন্ন জায়গায়।
রাজ্য পরিবহণ দফতর দক্ষিণবঙ্গ থেকে উত্তরবঙ্গ, জঙ্গলমহল থেকে সরাসরি দিঘা যাওয়ার একাধিক বাস পরিষেবা চালু করে করেছে। এমনকী দিঘা রুটে বেসরকারি বাস পরিবহণকে উৎসাহ দিচ্ছে রাজ্য সরকার। মোদ্দা কথা এখন দিঘার জগন্নাথ মন্দিরকে কেন্দ্র করে রাজ্য-রাজনীতি তোলপাড়। আর দিঘার জগন্নাথ মন্দির থেকে বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর কাঁথির বাড়ির দূরত্ব মেরেকেটে ৩৫ কিলোমিটার।
আরও পড়ুন- Kolkata college gang rape: কলকাতার নামজাদা কলেজের মধ্যেই ছাত্রীকে 'গণধর্ষণ', গা শিউরে ওঠার মতো কাণ্ডে গ্রেফতার ৩
রামনবমী উৎসব, হনুমান জয়ন্তী বা স্বামী বিবেকানন্দের জন্মদিবস পালনকে কেন্দ্র করে গেরুয়া পতাকায় ছেয়ে যায় রাজ্য। এর পিছনে ভূমিকা থাকে BJP-র। বিশ্ব হিন্দু পরিষদ হোক হিন্দুত্ববাদী যে কোনও সংগঠনের শোভাযাত্রায় বিজেপি নেতৃত্বকে দেখা যায়। তাঁরা সরাসরি অংশ নেন এই উৎসবগুলিতে। এমনকী তৃণমূল কংগ্রেস নেতৃত্বের একাংশও রামনবমীতে শোভাযাত্রা করে থাকেন।
আরও পড়ুন- Weekend getaway:বর্ষায় কলকাতার কাছের এপ্রান্ত যেন ক্যালেন্ডারে টাঙানো ছবি! একদিনের ছুটিতেই বেরিয়ে আসতে পারেন
কিন্তু ২০২৬-এর নির্বাচনের আগে প্রভু জগন্নাথ ও রথযাত্রাকে পুরোপুরি আঁকড়ে ধরেছে তৃণমূল কংগ্রেস, মত রাজনৈতিক মহলের। এবার দেখা যাচ্ছে হলুদ পতাকায় ভরেছে রাজ্য। যদিও রাজ্যের বিভিন্ন জায়গায় রথযাত্রা উৎসবে হাজির থাকছেন নন্দীগ্রামের বিধায়ক শুভেন্দু অধিকারী থেকে অন্য বিজেপি নেতৃত্বও।
একদিকে বিজেপি সমর্থকরা বলছেন জয় শ্রীরাম, সামনেই তৃণমূল সমর্থকরা বলছেন জয় জগন্নাথ। তারস্বরে দুপক্ষই চিৎকার করে স্লোগান দিচ্ছে। এই ভাইরাল ভিডিও-র দৃশ্য শুধু মজাদার নয়, তা যথেষ্ট ইঙ্গিতবাহী বলেও মনে করছে রাজনৈতিক মহল। অভিজ্ঞ মহলের মতে, সামনেই ২০২৬-এর বিধানসভা নির্বাচন। বিজেপি ও তৃণমূলের কাছে সব থেকে বড় চ্যালেঞ্জ। বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর বক্তব্য অনুযায়ী মুসলিম ভোটের ভরসা না করে ৭০ শতাংশের বেশি হিন্দু ভোটের ওপর জোর দিয়েছে বিজেপি। অর্থাৎ হিন্দু ভোটেই ২০২৬-এর বিধানসভা ভোটে তৃণমূলকে কুপোকাৎ করার কৌশল নিয়েছে বিজেপি। এবার তৃণমূলের কাছে সব থেকে বড় চ্যালেঞ্জ হিন্দু ভোট ধরে রাখা।
আরও পড়ুন-West Bengal News Live Updates: পাকিস্তানের পর এবার চিনকে নিশানা, সীমান্ত সংঘর্ষ নিয়ে ড্রাগনের দেশকে কড়া বার্তা দিল্লির
দিঘার জগন্নাথ মন্দির নির্মাণ নিয়ে নানা বিতর্ক হয়েছে। বঙ্গ বিজেপির প্রাক্তন সভাপতি দিলীপ ঘোষ মন্দিরের উদ্বোধনের দিন সেখানে হাজির হওয়ায় রাজ্য বিজেপি নেতৃত্বের তোপের মুখে পড়তে হয়েছিল তাঁকে। এখন দিঘার জগন্নাথ মন্দিরের প্রসাদ বিতরণ নিয়েও বিতর্ক চলছে। সরকারি ব্যবস্থাপনার সঙ্গে সঙ্গে পুর এলাকায় তৃণমূল কাউন্সিলররা সরাসরি প্রসাদ নিয়ে বাড়ি বাড়ি হাজির হচ্ছেন। অন্যত্র তৃণমূলের জনপ্রতিনিধিরা প্রসাদ বিতরণে বেশ সক্রিয়। শুক্রবার রথের রশি টানায় তাঁরাও উদ্যোগী। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দিঘায় রথের দড়ি টানবেন।
প্রভু জগন্নাথের রথের দড়ি নিয়ে বিজেপি ও তৃণমূলের টানাটানি আসলে ২০২৬-এর বিধানসভার মহড়া বলেই মনে করছে রাজনৈতিক মহল। জগন্নাথ ধাম ওড়িশার পুরীতে। পাশের রাজ্য ওড়িশায় ক্ষমতায় এখন বিজেপি। নির্বাচন এলে বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব তথা ভিন রাজ্যের নেতারাও বাংলায় জনসভা করতে হাজির হন। তাহলে কি এবার ওড়িশার বিজেপি শীর্ষ নেতৃত্বকে এখানকার জনসভার মঞ্চে দেখা যেতে পারে? সেই সম্ভাবনা উড়িয়ে দেওয়ার নয়। তবে ২০২৬-এর বিধানসভা নির্বাচনে জয় শ্রীরামের সঙ্গে জয় জগন্নাথও যে রাজনীতির ময়দানে পুরোদমে থাকছে তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না।