তৃণমূল কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় করোনা আবহে ডায়মন্ডহারবার মডেলের কথা বলেছিলেন। এই মডেলের 'ব্যক্তিগত' বক্তব্য নিয়ে সেই সময় বিরোধিতা করেছিলেন তৃণমূলেরই সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়। এবার ডায়মন্ডহারবার মডেলেই কোটি কোটি টাকা দুর্নীতির অভিযোগ তুললেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। বেআইনি সম্পত্তি থাকার অভিযোগ তুললেন দক্ষিণ ২৪ পরগনার চার তৃণমূল নেতার বিরুদ্ধে। এঁরা সবাই অভিষেকের ঘনিষ্ঠ বলেই দাবি করেছেন শুভেন্দু অধিকারী। এদিন বিধানসভায় তৃণমূলের দুর্নীতি ইস্যু বলতে দেওয়া হয়নি বলেও তিনি জানিয়েছেন।
বৃহস্পতিবার বিধানসভায় সাংবাদিক বৈঠকে দক্ষিণ ২৪ পরগনার চার তৃণমূল নেতার নাম করে তাঁদের সম্পত্তি নিয়ে অভিযোগ করেন বিরোধী দলনেতা। শুভেন্দু অধিকারী বলেন, 'পার্থ চট্টোপাধ্যায়হীন বিধানসভা চলছে ২০১১-এর পর এই প্রথম। অপা-সিন্ডিকেট সামনে এসেছে। বিধানসভায় বলতে দেওয়া হয়নি। তৃণমূলের বিরুদ্ধে ধাপে ধাপে দুর্নীতির নথি তুলে ধরা হবে।' তিনি দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলার তৃণমূল নেতাদের সম্পত্তির খতিয়ান দেন।
এদিন প্রথমেই শুভেন্দুর নিশানায় ছিলেন দক্ষিণ ২৪ পরগনার কুলতলীর তৃণমূল বিধায়ক গণেশচন্দ্র মণ্ডল। নন্দীগ্রামের বিধায়ক বলেন, '১০০ দিনের টাকায় রাজ্যের মধ্যে সবচেয়ে বেশি দুর্নীতি হয়েছে এই কুলতলীতে। কুলতলীর বিধায়কের মোট ৩৯টি দলিল। নিজের নামে ১৩টা দলিল, স্ত্রী মৌসুমী মণ্ডলের নামে ১৬, মেয়ের নামে ৪ আরও এক মেয়ের নামেও ৪ টি দলিল, বাবা ও মায়ের নামে মোট ২টো দলিল। ২০১৯-২১-এর মধ্যে কিনেছেন এই সম্পত্তি।' এসব ডায়মন্ড হারবার মডেলের অন্তর্গত বলেই কটাক্ষ করেন বিরোধী দলনেতা।
এরপরই শুভেন্দু ওই জেলারই ফলতা পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি জাহাঙ্গির খানকে নিশানা করেন। তিনি বলেন, 'তোলাবাজ ভাইপোর সবচেয়ে বড় এজেন্ট জাহাঙ্গির খান। তিনি দক্ষিণ ২৪ পরগনার ফলতা পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতির সঙ্গে দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা পরিষদের ভারপ্রাপ্ত পূর্ত কর্মাধক্ষ্যও। এই জাহাঙ্গিরের দলিলের সংখ্যাও ৩৯। তাঁর বাবার নামে ৬, স্ত্রীর নামে ৩১, বোনের নামে ২টি সম্পত্তির দলিল। এরও মূল্য কয়েক কোটি।'
আরও পড়ুন- ‘বন্দরে আটক ২০০ কোটির মাদক তৃণমূল নেতার’, বিস্ফোরক দাবিতে তোলপাড় ফেললেন সুকান্ত
এরপরই ডায়মন্ড হারবারের দুই তৃণমূল নেতা গৌতম অধিকারী ও সামিম আহমেদের সম্পত্তি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন শুভেন্দু। তিনি বলেন, 'ডায়মন্ডহারবার ১ পঞ্চায়েত সমিতির পূর্ত কর্মাধ্যক্ষ ও যুব তৃণমূলের সভাপতি গৌতম অধিকারী। এখনও পর্যন্ত তাঁর ১১টি সম্পত্তি। সবই ২০১৯-২১ এর মধ্যে কেনা। গৌতমের নামে ৬টি, স্ত্রীর নামে ৩টি, আরও আত্মীয়ের নামে ২টি সম্পত্তি। কোনও সম্পত্তি নির্বাচনী হলফনামায় দেখানো হয়নি। সব সম্পত্তি ১০০ দিনের কজের টাকায় কেনা।'
আরও পড়ুন- উত্তাল বিধানসভা, দুর্নীতি ইস্যুতে সোচ্চার BJP, ‘ডোন্ট টাচ মাই বডি’ টিপ্পনিতে তুমুল বিক্ষোভ তৃণমূলের
সামিম আহমেদ প্রসঙ্গে শুভেন্দু বলেন, 'ইনি ডায়মন্ডহারবার ২ নং ব্লকের তৃণমূলের সভাপতি। ভাইপোর আপ্ত সহায়কের টাকায় ১০টি সম্পত্তি কিনিয়েছেন। সব কাগজপত্র শনিবার ইডি অফিসে পৌঁছে দেব। তাঁরা তদন্ত করে দেখবে। এখন একটা জেলা দিয়ে শুরু হল। এটা হিমশৈলের চূড়ামাত্র। ২০১৮-২০২১ এর মধ্যে বেপরোয়া লুঠ চলেছে।'
আরও পড়ুন- কয়লাকাণ্ডে এবার মাঠে CID, দাপুটে এই বিজেপি নেতাকে কালই তলব
শুভেন্দুর অভিযোগ, ডায়মন্ডহারবার মডেলের ফসল এই সম্পত্তির পাহাড়। তাঁর দাবি, ১০০ দিনের কাজে দুর্নীতি, আমফান ও সমস্ত কেন্দ্রীয় প্রকল্প থেকে এই টাকা তুলেছেন দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলার তৃণমূল নেতারা। ভবিষ্যতে প্রামাণ্য ভিডিও প্রকাশ করা হবে বলেও জানিয়ে দিয়েছেন বিরোধী দলনেতা।