TMC leader: দোর্দন্ডপ্রতাপ তৃণমূল নেতার বিরুদ্ধে অভিযোগের বহরে আঁতকে উঠবেন! মনে পড়তে পারে সন্দেশখালির শাহজাহানের কথাও

Burdwan News: দলের জেলা সভাপতি রবীন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায়ের বক্তব্য ,’’বেরুগ্রামের ঘটনা বিষয়ে আমি কিছু জানি না। আমাকে খোঁজ নিয়ে জানতে হবে।তবে যেসব অভিযোগের কথা শুনছি তা সত্য হলে দল নিশ্চই ব্যবস্থা নেবে"!

Burdwan News: দলের জেলা সভাপতি রবীন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায়ের বক্তব্য ,’’বেরুগ্রামের ঘটনা বিষয়ে আমি কিছু জানি না। আমাকে খোঁজ নিয়ে জানতে হবে।তবে যেসব অভিযোগের কথা শুনছি তা সত্য হলে দল নিশ্চই ব্যবস্থা নেবে"!

author-image
Pradip Kumar Chattopadhyay
New Update
21 july TMC hording

ভয়ঙ্কর অভিযোগ

TMC leader: তৃণমূল নেতার হাড়হিম করা সন্ত্রাস। অত্যাচারে সন্দেশখালির প্রতিচ্ছবি এবার বর্ধমানে। 

Advertisment

এক বছর আগের ঘটনা হলেও জনমানসে এখনো টাটকা হয়ে আছে সন্দেশখালির সন্ত্রাস কাহিনী। জমি কেড়ে নেওয়া,তোলাবাজি ও নারী নির্যাতন চালানোর অভিযোগে সন্দেশখালির তৃণমূল নেতা শেখ শাহজাহানের বিরুদ্ধে গর্জে উঠে ছিলেন সেখানকার বাসিন্দারা।সেই শাহজাহান এখন জেলে বন্দি। তারই মধ্যে সন্দেশখালির ছায়া এবার পূর্ব বর্ধমানের জামালপুরে ! শাহজাহানের মতো সন্ত্রাস,অত্যাচার,জুলুমবাজি চালানোর অভিযোগে শেখ ফিরোজ নামে এক তৃণমূল নেতার বিরূদ্ধে গর্জে উঠেছেন জামালপুরের বেরুগ্রাম অঞ্চলের বাসিন্দারা। তাঁদের অভিযোগ,’নিজেকে রাজ্যের প্রভাবশালী নেতা,বিধায়ক, সাংসদ ও মন্ত্রীদের ঘনিষ্ট বলে দাবি করা শেখ ফিরোজের সন্ত্রাস ’তালিবানি’ সন্ত্রাসকেও হার মানিয়ে দিয়েছে’। 

তৃণমূল কংংগ্রেস নেতা শেখ ফিরোজের বাড়ি বেড়ুগ্রাম অঞ্চলের চক্ষণজাদি গ্রামে।এলাকার বাসিন্দাদের কথা অনুযায়ী,“কোনরকমে প্রাথমিক স্তরের গণ্ডী পার হওয়া শেখ ফিরোজ,বড় কোন পদে থাকা তৃণমূল নেতা নয়।তবে তাঁর স্ত্রী হাসনারা বেগম ২০১৮ সাল থেকে একটানা বেরুগ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান পদে অধিষ্ঠিত রয়ে আছেন’। গ্রামবাসীদের অভিযোগ,’স্ত্রী পঞ্চায়েত প্রধান হওয়ার পর থেকেই ফিরোজ নিজেকে বেরুগ্রাম অঞ্চলের ’বেতাজ বাদশা’ প্রতিপন্ন করা শুরু করে দেন। তারই সাথে তিনি তাঁর বাহিনী নিয়ে এলাকায় সন্ত্রাস কায়েম করা ও অত্যাচার চালানো শুরু করেন। ২১শের বিধানসভা ভোটে জিতে তৃণমূল দল ফের রাজ্যে ক্ষমতায় আসলে ফিরোজ আরও বেপরোয়া হয়ে ওঠে। সময় গড়ানোর সাথে সাথে ফিরোজের সন্ত্রাস ও অত্যাচার সব সীমা ছাড়ায়।এমনকি মহিলা নিয়ে ’ফুর্তি’ করার ব্যাপারেও ফিরোজ পিছুপা থাকেননি বলে গ্রামবাসীরা জানিয়েছেন। 

Advertisment

publive-image

এসব নিয়েই ফিরোজের বিরুদ্ধে এখন তৈরি হয়েছে তীব্র জনরোষ।শাহজাহানের মতো শেখ ফিরোজকেও ’জেলে বন্দি’ করার দাবিতে এখন এককাট্টা হয়েছেন বেরুগ্রাম অঞ্চলের চক্ষণজাদী, চককৃষ্ণপুর,শম্ভুপুর,জামুদহ সহ একাধীক গ্রামের বাসিন্দারা।তার জন্য তাঁরা জেলার পুলিশ সুপারের কাছেও সেই আর্জি কথা জানিয়েছেন। তার সাথে সাথে তাঁরা সন্দেশখালির ন্যায় আন্দোলনেও একপ্রকার শুরু করে দিয়েছেন। 

 পুলিশ সুপারকে বেরুগ্রাম অঞ্চলের বাসিন্দারা জানিয়েছেন,’সন্ত্রাস,অত্যাচার ও লুটপাট চালিয়ে সেখ ফিরোজ প্রভূত অর্থ, ধন- দৌলত ও সম্পত্তির অধিকারী বনে গিয়েছেন। অর্থ বলে বলিয়ান হয়ে যাওয়ায় ফিরোজ দেশের আইন কানুন,প্রশাসন,কোন কিছুকেই তোয়ক্কা করেন না’। গ্রামবাসী জহিদ মল্লিক,ওসমান মল্লিক ও সফিউর রহমান চৌধুরী জানিয়েছেন,“বর্গাদারের জমি কেড়ে নেওয়া থেকে শুরু করে চক্ষণজাদী গ্রামের মসজিদ ও স্কুলের সম্পত্তি পর্যন্ত ফিরোজ জবর দখল করে নিয়েছে। মসজিদ তহবিলের অর্থ হাতিয়ে নিতে ও মসজিদের জমিতে ’জিম সেন্টার’ গড়ে তুলতেও ফিরোজ কুন্ঠাবোধ করেননি।“

গ্রামবাসীদের আরও অভিযোগ,ফিরোজ শুধুমাত্র স্কুল ও মসজিদের জমি দখল করেই খান্ত থাকে নি। এলাকার বাসিন্দা বাদল মল্লিক,রফিক উদ্দিন মল্লিক ও জামাল উদ্দিন মল্লিকরা জানান,“নিরীহ গ্রামবাসীদের ছাড়াও ক্যানসার আক্রান্ত গ্রামবাসী শাহ আলম মল্লিক ও তার ভাইদেরকেও ফিরোজ রেহাই দেয়নি। তাদের জমিজমাও ফিরোজ জোর জবরদস্তি দখল করে নিয়েছে।কারুর হাতে সামান্য কিছু অর্থ ধরিয়ে দিয়ে,আবার কাউকে কোন অর্থ না দিয়েই তাদের জমিজমা, ফিরোজ নিজের নামে তিনি লিখিয়ে নিয়েছেন“।এলাকার অনেক ব্যবসায়ীও ফিরোজের সন্ত্রাস ও জুলুমবাজির শিকার হয়ে আর্থিক ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন।কাজ পাইয়ে দেওয়ার টোপ দিয়েও ফিরোজ অনেকের কাছ থেকে মোটা টাকা নিয়েছে বলে গ্রামবাসীরা পুলিশ ও প্রশাসনকে জানিয়েছেন’।এহেন তৃণমূল নেতা শেখ ফিরোজের বিরুদ্ধে কি আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে তা জানতে জেলার পুলিশ সুপার সায়ক দাসকে একাধিকবার ফোন করা হয় ।কিন্তু তিনি ফোন রিসিভ না করায় কোন উত্তর পাওয়া যায় নি।

publive-image

যদিও শেখ ফিরোজ তাঁর বিরুদ্ধে ওঠা সমস্ত অভিযোগ অস্বীকার করে পাল্টা তৃণমূলের অঞ্চল সভাপতিকেই কাঠগড়ায় তুলেছেন।ফিরোজ জনিয়েছেন, “বেরুগ্রাম অঞ্চল তণমূলের সভাপতি শেখ সাহাবুদ্দিন ওরফে দানি ২০১৩ সালের আগে গ্রামে গ্রামে ঘুরে কাঁচ ভাঙা,লোহা ভাঙা কিনতেন।তখন কোন রকমে ওদের দিন চলতো।২০১৩ সালে তৃণমূল কংগ্রেস দলে যোগ দিয়ে ওই দানি নানা অনৈতিক উপায়ে অর্থ রোজগার করা শুরু করে।দামোদরে অবৈধ খাদান খুলে বালি চুরি করাতেও দানি হাত পাকিয়ে ফেলে।লুটের সাম্রাজ্য চালিয়েই দানি এখন কোটি কোটি টাকার সম্পত্তি, গাড়ি ও বাড়ির মালিক হয়ে গিয়েছে। ফিরোজ এও বলেন , দানির নানা অনৈতিক কাজের প্রতিবাদ আমি করেছিলাম। তার বদলা নিতে দানি পরিকল্পনা করে এলাকার লোকজনকে আমার বিরুদ্ধে খেপিয়ে তোলে। তাদেরকে দিয়েই দানি আমার বিরুদ্ধে প্রশাসনের কাছে মিথ্যা অভিযোগ জমা করিয়েছে। কারুর জমি,বাড়ি ,সম্পত্তি কেড়ে নেন নি বলে শেখ ফিরোজ দাবি করেছেন“।

বেরুগ্রাম আঞ্চলের তৃণমূলের সভাপতি শেখ সাহাবুদ্দিন আবশ্য ফিরোজের এইসব বক্তব্যকে চোরের বড় গলা বলে কটাক্ষ করেছেন।পাশাপাশি ফিরোজের বিরুদ্ধে একরাশ ক্ষোভ উগরে দিয়ে সাহাবুদ্দিন বলেন,’ওর সব অন্যায় ও অপকর্মের কথা আমি দলের জেলা ও ব্লক সভাপতিকে জানিয়ে দিয়েছি’।তা নিয়ে ব্লক তৃণমূলের সভাপতি মেহেমুদ খাঁণকে ফোন করাহলে তিনি বলেন,“আমি গ্রামবাসীদেরকে পুলিশের কাছে গিয়ে ফিরোজের বিরুদ্ধে অভিযোগ জানাতে বলে ছিলাম।গ্রামের বাসিন্দাদের সেই অভিযোগের ভিত্তিতে কি ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে সেটা পুলিশ’ই বলতে পারবে“। আর দলের জেলা সভাপতি রবীন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায়ের বক্তব্য ,’’বেরুগ্রামের ঘটনা বিষয়ে আমি কিছু জানি না। আমাকে খোঁজ নিয়ে জানতে হবে।তবে যেসব অভিযোগের কথা শুনছি তা সত্য হলে দল নিশ্চই ব্যবস্থা নেবে। 

এদিকে শাসক নেতার সন্ত্রাস ও অত্যাচার নিয়ে জামালপুরের বেরুগ্রাম অঞ্চলের মানুষজনের সন্দেশখালির কায়দায় গর্জে ওঠার খবর চাউর হতেই রাজনৈতিক মহলে শোরগোল পড় গিয়েছে। জেলা বিজেপি নেতা মৃত্যুঞ্জয় চন্দ্র বলেন, তৃণমূলের রাজত্বে গোটা বাংলাই এখন সন্দেশখালি। আমি খোঁজ নিয়ে জেনেছি,“জামালপুরের বেরুগ্রাম অঞ্চলকে সন্দেশখালি বানানোর নেপথ্য কারিগর শুধু একা ফিরোজ নয়। বেরুগ্রাম অঞ্চল তৃণমূলের সভাপতি দানি সহ ব্লক তৃণমূলের দায়িত্বে থাকা নেতারাও সমান দোষী।বেরুগ্রাম অঞ্চলে চলা নেরাজ্য নিয়ে ব্লকের পূর্বতন পঞ্চায়েত বোর্ডের অনেক জনপ্রতিনিধি ২০২২সালের আগষ্ট মাসে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী ও জেলার পুলিশ সুপারের দফতরে লিখিত ভাবে জানিয়ে ছিলেন।তখন যদি প্রশাসন ব্যবস্থা নিত তাহলে বেরুগ্রাম অঞ্চল আজ আর হয়তো সন্দেশখালির রুপ নিত না’।

tmc burdwan