Advertisment

Purba Bardhaman News: আবাস প্রকল্পের বাড়িতেই তৃণমূলের 'উন্নয়ন ভবন', হঠাৎ উধাও তৃণমূলনেত্রীর ছবি!

Purba Bardhaman News: মারাত্মক এই অভিযোগ নিয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর দফতরে চিঠি লিখবেন বলে জানিয়েছেন স্থানীয় বিজেপি নেতা।

author-image
Pradip Kumar Chattopadhyay
আপডেট করা হয়েছে
New Update
Purba Bardhaman News,Burdwan News,West Bengal News,পূর্ব বর্ধমানের খবর,পশ্চিমবঙ্গের খবর

আবাস প্রকল্পের বাড়িতে তৃণমূলের কার্যালয়।

Purba Bardhaman News: আবাস প্রকল্পের তালিকা যাচাই প্রক্রিয়া শুরু হতেই বাংলার জেলায়-জেলায় ক্ষোভ-বিক্ষোভ। তারই মধ্যে প্রশাসনের অস্বস্তি  বাড়িয়েছে পূর্ব বর্ধমানের জামালপুরে হওয়া বেনজির আবাস 'হাইজ্যাক কাণ্ড'। এক গরিব উপভোক্তার প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনার বাড়ি কার্যত হাইজ্যাক করে নিয়ে বানিয়ে ফেলা হয়েছে তৃণমূলের 'উন্নয়ন ভবন'। তৃণমূল সুপ্রিমোর হাসি মুখের দুটি ছবি দীর্ঘদিন ধরে ওই উন্নয়ন ভবনের ভিতরে শোভা বর্ধন করতো। কিন্তু বিশ্ব বাংলা লোগো এখনও সেখানে জ্বলজ্বল করলেও তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ছবি দুটি আর দেখতে পাওয়া যায়নি। এর কারণ নিয়েও ঘোর রহস্য তৈরি হয়েছে। 'বাংলার বাড়ি' প্রকল্প নিয়ে বঙ্গের শাসকদলকে খোঁচা দিতে এখন আবাস হাইজ্যাকের এই ঘটনাকেই হাতিয়ার করেছে BJP। তবে জেলাশাসক আয়েশা রাণি এই আবাস কাণ্ড নিয়ে পূর্ণাঙ্গ তদন্ত করে পদক্ষেপ গ্রহণের আশ্বাস দিয়েছেন। 

Advertisment

জামালপুর ২ গ্রাম পঞ্চায়েত অফিসের সন্নিকটে রয়েছে কাঠুরিয়াপাড়া গ্রাম। শঙ্কর মাঝি ও তাঁর পরিবার মূলত এই গ্রামেরই বাসিন্দা। ২০১৮-১৯ অর্থবর্ষে গরিব শঙ্কর মাঝির নামে ’প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনার’ ঘর অনুমোদন হয়। যার আইডি নম্বর পিএমএওয়াই - ডাব্লু বি ১৬৮৫৩৩২। ঘর তৈরির জন্য উপভোক্তা শঙ্কর মাঝির নামে ১ লক্ষ ২০ হাজার টাকা বরাদ্দ হয়। সেই টাকায় পাকা বাড়ি তৈরি হয়ে যাওয়ার পর নিয়ম মেনে তার 'জিও ট্যাগিং'ও হয়।

কিন্তু এত কিছুর পরেও ওই বাড়িতে শঙ্কর মাঝি বা তাঁর পরিবারের কারও ঠাঁই হয়নি। কারণ, খাতায়-কলমে সরকারি আবাস যোজনার ওই বাড়িটির মালিক শঙ্কর মাঝি হলেও সেটিকে নীল সাদা রঙে রাঙিয়ে বিলাসবহুল তৃণমূল কংগ্রেসের উন্নয়ন ভবন বানিয়ে ফেলা হয়। সাথে সাথে সেখানে তৃণমূল সুপ্রিমোর ছবিও লাগিয়ে দেওয়া হয়। 
এই ঘটনা প্রথমে ধামাচাপা থাকলেও পরে তা প্রকাশ্যে চলে আসে। ২০১৯ সালের লোকসভা ভোটের পর এ নিয়ে জোরদার আন্দোলনে নামে জামালপুরের বিজেপি শিবির। তাতে চাপে পড়ে যায় শাসকদলের ব্লক নেতৃত্ব এবং জামালপুর ২ নম্বর গ্রাম পঞ্চায়েত কর্তৃপক্ষ।

আরও পড়ুন- West Bengal News: 'মুখের কথায় চলছে মেডিক্যাল কাউন্সিল', কটাক্ষ চিকিৎসক নেতার! আন্দোলন ফের পুরনো পথেই?

এমন পরিস্থিতিতে বিষয়টি ধামাচাপা দেওয়ার কোনও উপায় থাকে না পঞ্চায়েতের পূর্বতন বোর্ডের প্রধান মণিকা মুর্মু ও উপ-প্রধান উদয় দাসের। তাঁরা 'জিও ট্যাগিং’ হয়ে থাকা সরকারি অনুদানের ওই বাড়ির দরজা খোলার চাবি তুলে দেন বাড়িটির উপভোক্তা শঙ্কর মাঝির হাতে। শুধু চাবি তুলে দেওয়াই নয়, নীল-সাদা রঙের পার্টি অফিসের দেওয়ালে উপভোক্তা শঙ্কর মাঝির নাম ও সরকারি কোড নম্বরও লিখে দেন পঞ্চায়েত কর্তৃপক্ষ। তবে এত কিছুর পরেও উপভোক্তা শঙ্কর মাঝি ও তাঁর পরিবারকে ওই বাড়ি থেকে বিতাড়িত করেই রাখা হয়। মৃত্যুর আগে পর্যন্ত নিজের নামে থাকা আবাস যোজনার বাড়িতে থাকার সৌভাগ্য শঙ্কর মাঝির হয়নি। 

এহেন ঘটনার যাবতীয় দায় বিরোধীরা চাপিয়েছেন কাঠুরিয়াপাড়া এলাকার তৃণমূল নেতা রামরঞ্জন সাঁতরা ওরফে বুটে ও তার সাগরেদদের ঘাড়ে। রামরঞ্জনের স্ত্রী মিতালিদেবী বর্তমানে জামালপুর পঞ্চায়েত সমিতির তৃণমূলের সদস্য। উপভোক্তা শঙ্কর মাঝির সরকারি আবাসের ঘর নিয়ে পূর্বে রামরঞ্জন সাঁতরা পঞ্চায়েতের পূর্বতন বোর্ডের দিকে আঙুল তুলে অনেক কথাই বলেছিলেন।কিন্তু এখন তিনি এবিষয়ে মুখে একেবারেই কুলুপ এঁটে ফেলেছেন। আরও বড় আশ্চর্য্যের বিষয় হল, শঙ্কর মাঝির মতো তৃণমূল সুপ্রিমোও তৃণমূলের ওই উন্নয়ন ভবনে ব্রাত্য হয়ে গিয়েছেন। কয়েকদিন আগে ওই 'উন্নয়ন ভবনে’ পৌঁছে আর দেখতে পাওয়া যায়নি তৃণমূল সুপ্রিমোর ছবি দুটি। কী কারণে তৃণমূল সুপ্রিমোর ছবি দুটি ওই 'উন্নয়ন ভবন' থেকে সরানো হল, তা নিয়েও তৈরি হয়েছে রহস্য । 

আরও পড়ুন- Success Story: অভাবনীয় সাফল্যের শিখরে বঙ্গতনয়! ইস্পাতকঠিন সংকল্পে শ্রেষ্ঠত্বের দুরন্ত নজির দেবার্ঘ্যর

কাঠুরিয়াপাড়া গ্রামের অদূরে দামোদরের গা ঘেঁষে রয়েছে সেচ দফতরের বাঁধের জায়গা। সেখানে কয়েকটি কুঁড়ে ঘরের মাঝে মাথা তুলে দাঁড়িয়ে আছে ইটের দেওয়াল আর অ্যাসবেস্টসের ছাউনির একটি বাড়ি। ওই বাড়িটির দেওয়ালের দিকে তাকালেই দেখা যায়, বাড়িটির উপভোক্তা হিসাবে শঙ্কর মাঝির নাম ও প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনার একই কোড নম্বর লেখা রয়েছে। ওই বাড়িতে গিয়ে শঙ্কর মাঝির পরিবারের সদস্য গীতা মাঝির দেখা মেলে। তিনি বলেন, "শঙ্কর মাঝি বেঁচে থাকাকালীনই কাঠুরিয়াপাড়া গ্রামের আবাসের বাড়িতে আমাদের স্থান হয়নি। আমাদের বাঁধের ধারের এই বাড়িতে থাকতে বাধ্য করা হলেও প্রশাসন এ নিয়ে কিছুই করেনি।" প্রশাসন কিছু করেনি বলে গীতা মাঝি যে দাবি করেছেন তাকে সর্বাংশে সত্য অবশ্য বলা যাবে না। ২০২৩ সালের পঞ্চায়েত নির্বাচনের সময় শঙ্কর মাঝির আবাস যোজনার বাড়ি নিয়ে ফের বিরোধীরা সোচ্চার হলে তদন্তে নামে ব্লক প্রশাসন। সেই তদন্তে শঙ্কর মাঝির আবাসের বাড়ি নিয়ে একাধিক অনিয়ম হওয়ার কথা জানতে পারে প্রশাসন। কিন্তু সেই সব অনিয়ম ও বেআইনি কাজ নিয়ে এখনও পর্যন্ত প্রশাসনিক পদক্ষেপ অধরাই রয়ে গেছে। সেই কারণে প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনার ঘর পেয়েও বঞ্চনার শিকার হয়েই রয়ে গেছেন উপভোক্তা শঙ্কর মাঝি ও তাঁর পরিবার। 

আরও পড়ুন- West Bengal News Live Updates: পিছিয়ে গেল জামিনের শুনানি, একমাস জেলেই কাটাতে হবে চিন্ময় কৃষ্ণ দাসকে

এ নিয়ে জেলা বিজেপির সহ-সভাপতি মৃত্যুঞ্জয় চন্দ্র জানান, 'বাংলা বাড়ি' প্রকল্প নিয়ে তৃণমূলের নেতা ও মন্ত্রীরা বড়াই করলেও এই প্রকল্প নিয়েও অনিয়মের অভিযোগ ওঠা শুরু হয়ে গিয়েছে। শঙ্কর মাঝির আবাস যোজনার বাড়ি নিয়ে নানা কায়দায় দুর্নীতি হয়েছে জেনেও প্রশাসনের নীরব থাকাটা সবথেকে বড় আশ্চর্য্যের বিষয়। আর নজিরবিহীন বিষয়টি হল, প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনার বাড়ি হাইজ্যাক করে নিয়ে বানানো তৃণমূলে উন্নয়ন ভবন থেকে তৃণমূল সুপ্রিমোর ছবি গায়েব হয়ে যাওয়াটা। দামোদরের বাঁধের জায়গায় ভুয়ো প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনার বাড়ির অস্তিত্ব জানান দেওয়াটা দুর্নীতির অনেক রেকর্ডকেও হার মানিয়ে দিয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরে চিঠি লিখে নজিরহীন এই দুর্নীতি কাণ্ডের তদন্তের জন্য আবেদন করবেন বলে মৃত্যুঞ্জয় চন্দ্র জানিয়েছেন। 

Bangla News Purba Bardhaman Bengali News Today Bengali News West Bengal News PM Awas Yojana
Advertisment