/indian-express-bangla/media/media_files/2025/09/11/cats-2025-09-11-08-16-18.jpg)
কলেজে টিএমসিপির 'দাদাগিরি', প্রতিবাদে জুটল মার
ফের দাদাগিরি টিএমসিপির। এবার পূর্ব বর্ধমানের মেমারিরর সরকারি পলিটেকনিক কলেজের ভিতরে ঢুকে 'দাদাগিরির’ অভিযোগ উঠলে টিএমসিপির বিরুদ্ধে। ঘটনার প্রতিবাদ করতে গিয়ে বহিরাগতদের হাতে মার খেয়ে অসুস্থ হয়ে পড়ে কলেজের দুই সিনিয়র ছাত্র।চিকিৎসার জন্য বুধবার সন্ধ্যা নাগাদ তাদের ভর্তি করা হয় মেমারি গ্রামীণ হাসপাতালে।বহিরাগতদের হুমকি ও মারধরের হাত থেকে কলেজের শিক্ষক পর্যন্ত রেহাই পাননি। পুলিশ এই ঘটনায় দু’জনকে আটক করেছে।তাতে বেশ অস্বস্তিতে পড়ে গিয়েছে জেলা এবং মেমারি ১ ব্লকের টিএমসিপি ও তৃণমূল নেতৃত্ব। মেমারি পলিটেকনিক কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ লক্ষ্মীপদ চট্টোপাধ্যায় জানিয়েছেন,“ঘটনার পরেই তিনি কলেজের পরিচালন সমিতির চেয়ারম্যান এসডিও-র (বর্ধমান দক্ষিণ) সঙ্গে যোগাযোগ করেন। এসডিও কে গোটা ঘটনা সবিস্তার এবং দু’জন ছাত্রের জখম হওয়ার বিষয়ে জানান। এসডিও-র পরামর্শ মেনেই তিনি পুলিশকে ঘটনা বিষয়ে জানিয়েছে।”
আরও পড়ুনঃ সেনাকে নিয়ে মমতার অবমাননাকর মন্তব্য! বিরোধীতায় আসরে প্রাক্তন আধিকারিকরা
এদিনের ঘটনার নেপথ্য রাজনীতির যোগ স্পষ্ট । জানা গিয়েছে,মেমারি পলিটেকনিক কলেজে কোনও রাজনৈতিক দলেরই ছাত্র সংগঠন নেই। কলেজের বেশিরভাগ পড়ুয়াও কলেজের ভিতর রাজনৈতিক ছাত্র সংগঠন চাইছে না। কিন্তু তৃণমূল ছাত্র পরিষদ (টিএমসিপি) স্থানীয়দের সহায়তায় মেমারি পলিটেকনিক কলেজে ছাত্র সংগঠন তৈরি করতে মরিয়া। সেই উদ্দেশ্য সাধনের জন্য তারা কলেজের কমন রুম, ইউনিয়ন রুম ‘দখল’ করার চেষ্টা চালাচ্ছিল বলে অভিযোগ। কলেজের তৃতীয় বর্ষের কয়েকজন ছাত্রের কথা অনুযায়ী,“অনুত্তীর্ন প্রথম বর্ষের কয়েকজন ছাত্র মেমারির মহেশডাঙা ক্যাম্প,পাল্লা ও লাগোয়া এলাকার বহিরগতদের সঙ্গে নিয়ে এদিন কলেজে ঢোকে। তারা কলেজে প্রবেশ করে কমন রুমে ঢুকেই গোলমাল অশান্তি বাধায়। তা নিয়ে প্রতিবাদ হতেই বহিরাগতরা আক্রমণ শুরু করে দেয়।
কলেজের ছাত্রদের আরও অভিযোগ, মেমারি পলিটেকনিক কলেজের নাম দিয়ে একটি ’হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ’ খোলা হয়েছে। সেই গ্রুপে রাজনৈতিক লোকেদের যুক্ত করা হয়েছে। সেটা নিয়ে কয়েকজন সমালোচনা করায় গত মঙ্গলবার রাতে তাদের হুমকি দেওয়া হয়।”
কলেজ সূত্রে জানা গিয়েছে,’ যাঁরা বুধবার বিকালে কলেজে ঢুকে হামলা মারধোর চালিয়েছে তাঁরা যে বহিরাগত সেই ব্যাপারে নিশ্চিত হয়েছে কলেজ কর্তৃপক্ষ। তারা পুলিশকে সেটাই জানিয়েছেন। তবে যাঁরা কলেজে ঢুকে হামলা ও মারধরের ঘটনা ঘটিয়েছে তাদের প্রকৃত নাম পরিচয় কলেজ কর্তৃপক্ষ এখনো পুলিশকে জানাতে পারে নি। কলেজের শিক্ষকের আক্রান্ত হওয়ার বিষয়টিও কর্তৃপক্ষ পুলিশকে জানিয়েছে।কলেজের সিসি ক্যামেরার ফুটেজ় থেকে পুলিশ বহিরাগতদের চিহ্নিত করার প্রক্রিয়া চালাচ্ছে। ঘটনা নিয়ে উত্তেজনা থাকায় কলেজে পুলিশ পিকেট বসানোর দাবি উঠেছে।
আরও পড়ুনঃ উপরাষ্ট্রপতি নির্বাচনে কয়েকশো কোটি টাকার খেলা! ভয়ঙ্কর অভিযোগ অভিষেকের, SIR নিয়েও লড়াই জারির বার্তা
আক্রান্ত ছাত্র-ছাত্রীরা জানান,বুধবার বিকেল ৪টে নাগাদ মহেশডাঙা ক্যাম্প এলাকা নিবাসী প্রথম বর্ষের এক ছাত্রের নেতৃত্বে জনা ২০ বহিরাগত বাঁশ,লাঠি নিয়ে কলেজের ভিতর ঢুকে পড়ে।তা নিয়ে ছাত্র-ছাত্রীরা প্রতিবাদ শুরু করতেই বহিরাগতরা মারধর শুরু করে দেয় ।মারধোরে কলেজেরতৃতীয় বর্ষের ছাত্র সন্দীপন ভৌমিক রক্তাক্ত হয়। সন্দীপনের বাড়ি বর্ধমানের ছোট নীলপুরে।জখম হয় আরো এক ছাত্র রবিউল খান। তার বাড়ি কাটোয়ার অগ্রদ্বীপের।মারধোর ছাত্রদের জখম হতে দেখে তাদের বাঁচাতে ছুটে যান কলেজের মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার বিভাগের এক শিক্ষক। তিনিও বহিরাগতদের হাতে আক্রান্ত হন। রবিউল বলেন,’ বাইরের রাজনৈতিক নেতাদের নিয়ে কলেজের নামে ’হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ’খোলা নিয়ে প্রতিবাদ করার জন্যে আমাকে আগেই হুমকি দেওয়া হয়েছিল। এদিন বহিরাগতরা কলেজে ঢুকে আমায় ব্যাপক মারধোর করে“।
টিএমসিপির জেলা সভাপতি স্বরাজ ঘোষ ও মেমারি ১ ব্লকের তৃণমূল সভাপতি নিত্যানন্দ বন্দ্যোপাধ্যায়, দু’জনেই অবশ্য গোটা ঘটনায় দায় এবিভিপির ঘাড়ে চাপিয়েছেন। দাবি করেন,তৃণমূল ছাত্র পরিষদের প্রতিষ্ঠা দিবস ২৮ অগস্টের জন্যে সংগঠনের পতাকা,ফেস্টুন টাঙানো হয়েছিল । এবিভিপির কয়েকজন সে সব ছিঁড়ে দেয়। সেটা নিয়েই সাধারণ ছাত্রছাত্রীরা প্রতিবাদ করেছে।” যদিও পাল্টা জবাবে এবিভিপির জেলা সম্পাদক পবিত্র কর বলেন,“মেমারি পলিটেকনিক কলেছে এবিভিপির কেউ নেই। তৃণমূল মিথ্যাচার করছে। টিএমসিপির এদিন মেমারি পলিটেকনিক কলেজে দাদাগিরি করতে গিয়েছিল। দাদাগিরি করেছে। কলেজের পড়ুয়া ও শিক্ষক কাউকেই তারা রেয়াত করে নি।"