সবে সাবালিকা, কিন্তু, এই অল্প বয়সেই তাঁর লড়াই সমাজের কাছে দৃষ্টান্ত। সেখানেই থেমে থাকেননি হুগলির জনাইয়ের শরণ্যা ঘোষ। এবারের উচ্চমাধ্যমিকের তাক লাগানো সাফল্য শরণ্যাকে স্মরণীয় করে রাখবে। দ্বাদশের মেধা-তালিকায় ৪৯০ নম্বর পেয়ে এবার সপ্তম স্থান অধিকার করেছেন এই অষ্টাদশী। ভাবছেন আর পাঁচজন কৃতীর মতই শরণ্যাও একজন। এখানেই সে আলাদা। কারণ, শরণ্যা রূপান্তরকামী।
ছোট থেকেই নিজের শরীরের পরিবর্তনটা বুঝতে পেরেছিলেন শরণ্যা ঘোষ। বুঝেছিলেন ছেলের শরীরে জন্ম নিলেও তিনি মন, মানসিকতার দিক থেকে একজন নারীই। বড় হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তারও বিকাশও ঘটে। একাদশ শ্রেণিতে রূপান্তরিত হন তিনি। শরণ্য থেকে ক্রমেই হয়ে ওঠেন শরণ্যা।
শরণ্যার উত্তরণ গল্পের মত। কেমন ছিল সে লড়াই? প্রাথমিক স্কুলের শিক্ষক সৌরভ ও গৃহবধূ দেবস্মিতা ঘোষর প্রথম সন্তান শরণ্য। ছোট থেকে আর পাঁচটা ছেলের মতোই চলছিল শরণ্যের জীবন। হুগলির জনাই ট্রেনিং স্কুলের খাতাতেও তাঁর নাম ছিল শরণ্য। তাঁর কথায়, 'আমার জন্ম হয়েছিল পুরুষের শরীরে। তবে আমি জানতাম যে আমি নারীই। প্রাথমিক স্কুলে মেয়েদের সঙ্গেই বেশি মিশতাম, খেলতাম। পুররষ শরীর হলেও নারী অভিব্যক্তি আমার মধ্যে ছিল। মাধ্যমিক দেওয়ার পর পুর বিষয়টা উপলব্ধি করলাম। আমি বুঝলাম যে নারী হয়েই আমি বাঁচতে চাই। তারপর একাদশ শ্রণিতে শরীরের রূপান্তর ঘটে।'
তবে এ জন্য মধ্যবিত্ত ঘোষ পরিবারে কারোর মাথায় আকাশ ভেঙে পড়েনি। বরং শরণ্যকে সমর্থনের হাত বাড়িয়েছিলেন শিক্ষক বাবা, ঘরক্যার কাজ সামলানো মা ও পরিবারের অ্যান্য়রা। পাশ ছিলেন আত্মীয়, শিক্ষক ও বন্ধিরাও। ফলে সমাজের বাঁকা চোখ এই মেয়েকে গ্রাস করেনি। উল্টে রূপান্তরকামী হিসাবে শরণ্যাকে আকাশের রামধনু ছোঁয়ার কাজে এগিয়ে দিয়েছে। তাই তো এই মেয়ে অনায়াসে বলতে পারে, 'আমার মুখে উপর কেই আমাকে তাচ্ছিল্য করেনি। আর করতে এলে যুতসই জবাব কাচে আমার কাছে। আর আজকের পর তো আমার মেধাই আমার হাতিয়ার।'
মনের তাগিদে শরীরে বদল এল। কিন্তু, তাতে থেমে থাকেনি লেখাপড়া। সেটাও শরণ্যা চালিয়ে গিয়েছে
মন দিয়ে। ফলে ধরা দিয়েছে সাফল্য। উচ্চমাধ্যমিকের সপ্তম স্থানাধিকারী সে। সাফল্যের সবে শুরু, জীবনজুড়ে লড়াই বাকি। জানেন শরণ্যা। তাঁর কথায়, 'আমি নিজে সিভিল সার্ভেন্ট হতে চাই, অথবা অধ্যাপনা করব।'
সমাজের দৃষ্ঠান্ত শরণ্যারা। সিভিল সার্ভেন্ট হয়ে মানুষের সেবা করে হোক, বা অধ্যাপনা করে আগামী প্রজন্মকে পথ দেখিয়ে- শরণ্যার কৃতীত্ব স্মরণীয় হয়ে থাক।
আরও পড়ুন- WBCHSE WB HS Result 2023: ‘পড়াশোনাকেই প্যাশন করেছি’, জানালেন প্রথম স্থানাধিকারী শুভ্রাংশু সর্দার
আরও পড়ুন- WBCHSE HS Result 2023 Declared: কলকাতা থেকে প্রথম যাদবপুরের শ্রীজা, স্বপ্ন ডেটা সাইন্টিস্ট হওয়ার
আরও পড়ুন- তাক লাগানো সাফল্য, উচ্চমাধ্যমিকের মেধা তালিকায়ও ছক্কা হাঁকাল নরেন্দ্রপুর রামকৃষ্ণ মিশন