/indian-express-bangla/media/media_files/2025/01/29/Df16LWAFMh1LwLYKenE8.jpg)
প্রতীকী ছবি।
Underage marriage: বয়স মাত্র ১৬ বছর ৩ মাস। এই বয়সের এক ছাত্রীর সিঁথি রাঙিয়ে গিয়েছে সিঁদুরে। শাঁখা ও পলায় শোভিত হাতে কলম তুলে নিয়ে ওই ছাত্রী এই বছর মাধ্যমিক পরীক্ষা দিয়েছে। বিষয়টি প্রকাশ্যে আসতেই জোরদার চর্চা ছড়িয়েছে। ঘটনাটি জেনে নড়েচড়ে বসেছেন পূর্ব বর্ধমান জেলা প্রশাসনের কর্তারাও। 'কন্যাশ্রী ক্লাব' থাকা স্কুলের এক ছাত্রীর ১৮ বছর বয়সের আগেই বিয়ে হয়ে যাওয়া নিয়ে প্রশ্ন উঠে গিয়েছে।
মাধ্যমিক পরীক্ষা দেওয়া ওই নাবালিকা ছাত্রীটি পূর্ব বর্ধমান জেলার একটি স্কুলে পড়াশোনা করেন। পরীক্ষার অ্যাডমিট কার্ডে ছাত্রীটির জন্ম তারিখ ২০০৮ সালের ৮ নভেম্বর বলে উল্লেখ রয়েছে। সেই অনুযায়ী ছাত্রীটির বয়স এখন সবেমাত্র ১৬ বছর ৩ মাস অতিক্রম করেছে। তারই মধ্যে মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী ওই ছাত্রীটির বিয়ে হয়ে যাওয়ার কোনও খবরই ছিলনা ব্লক প্রশাসন বা স্কুল কর্তৃপক্ষের কাছে। গত ১৭ ফেব্রুয়ারি ইতিহাস পরীক্ষার দিন ছাত্রীর বিয়ে হয়ে যাওয়ার বিষয়টি জনসমক্ষে চলে আসে। তারপরেই হুলস্থুল পড়ে যায়।
ইতিহাস পরীক্ষার দিন পরীক্ষাকেন্দ্রে আসার জন্য ছাত্রীটি তাঁর স্বামীর সঙ্গে বাইকে চেপে শ্বশুরবাড়ি থেকে রওনা হয়। পথে মেমারি-তারকেশ্বর রোডে জামালপুর থানার অন্তর্গত চৌবেড়িয়া এলাকায় ছাত্রীটি দুর্ঘটনার কবলে পড়ে। তাকে ও তাঁর স্বামীকে উদ্ধার করে ভর্তি করা হয় জামালপুর ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে। পরে স্বাস্থ্যকেন্দ্রে বসেই ছাত্রীটি পরীক্ষা দেয় । সেই খবর পেয়ে ছাত্রীর শারীরিক অবস্থার খোঁজ খবর নিতে ব্লকের বিডিও ও পুলিশ আধিকারিকেরা হাসপাতালে পৌঁছোন। একই সময়ে ছাত্রীর স্কুলের এক পার্শ্বশিক্ষকও হাসপাতালে পৌঁছে যান। ওই পার্শ্বশিক্ষক তাঁর স্কুলের ছাত্রীকে বিবাহিত অবস্থায় দেখেও বিষয়টি নিয়ে কোনও মন্তব্য করেননি।
নাবালিকা ছাত্রীর বিয়ে রুখতে বাংলার মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক স্কুলে রয়েছে 'কন্যাশ্রী ক্লাব'। ১৬ বছর ৩ মাস বয়সে বধূ বনে যাওয়া মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী যে স্কুলের ছাত্রী সেই স্কুলেও 'কন্যাশ্রী ক্লাব' রয়েছে। তারপরেও কীভাবে ওই নাবালিকার বিয়ে হয়ে গেল তার কোনও যুক্তিগ্রাহ্য ব্যাখ্যা স্কুলের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক দেবাশিষ মালিক দিতে পারেননি।
ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক দেবাশিষ মালিক বলেন, “মাধ্যমিক পরীক্ষার আগে আ্যাডমিট কার্ড দেওয়ার দিন বিদ্যালয় থেকে নির্দিষ্ট করা হয়।ওই দিন অন্য সকল ছাত্রীরা আ্যাডমিট কার্ড নিতে স্কুলে এলেও শুধুমাত্র ১৬ বছর ৩ মাস বয়সী ওই ছাত্রীটি স্কুলে আসেনি। ছাত্রীটির পরিবর্তে তার মা এসেছিলেন। তিনি জানান তার মেয়ে অসুস্থ, বাড়িতেআছে। ছাত্রীটি না আসায় তার মায়ের হাতে আ্যাডমিট কার্ড দেওয়া হয়নি। ছাত্রীটির আ্যাডমিট কার্ড স্কুলেই পড়েছিল।"
তিনি আরও বলেন, "এভাবে বেশ কিছুদিন যাওয়ার পর মাধ্যমিক পরীক্ষা শুরুর দিন এগিয়ে আসে। তখন ছাত্রীটির বিষয়ে খোঁজ নেওয়া শুরু করি। জানতে পারি ছাত্রীটির বিয়ে হয়ে গিয়েছে।" তিনি জানিয়েছেন, তবুও ছাত্রীটি যাতে পরীক্ষাটা দিতে পারে তাই স্কুলের কন্যাশ্রী ক্লাবের ’নোডাল টিচারকে’ জানিয়ে তিনি ১০ ফেব্রুয়ারি মাধ্যমিক পরীক্ষা শুরুর দিন ছাত্রীটির হাতে আ্যাডমিট কার্ড তুলে দেন। ছাত্রীটি পরীক্ষা দেওয়া শুরু করে। কিন্তু ইতিহাস পরীক্ষার দিন পরীক্ষা কেন্দ্রের উদ্দেশ্যে যাওয়ার পথে ছাত্রীটি দুর্ঘটনার কবলে পড়ে। তখনই তার বিয়ে হয়ে যাওয়ার বিষয়টি সর্বসমক্ষে চলে আসে। তাই ছাত্রীর বিয়ে হয়ে যাওয়ার বিষয়টি ওই দিন ব্লকের বিডিও’কে মৌখিকভাবে জানান বলে দেবাশিষ মালিক দাবি করেছেন। এরই পাশাপাশি তিনি জানান, নাবালিকা অবস্থায় তাঁর স্কুলের মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীর বিয়ে হয়ে যাওয়ার বিষয়ে তিনি ব্লকের বিডিওকে লিখিত ভাবে সবিস্তার জানাবেন’।
বিডিও (জামালপুর) পার্থসারথী দে জানান, নাবালিকা মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীর বিয়ে হয়ে যাওয়া সম্পর্কিত বিষয়ে ওই স্কুলে চিঠি পাঠিয়ে তিন রিপোর্ট তলব করেছেন। জামালপুর পঞ্চায়েত সমিতির শিক্ষা কর্মাধ্যক্ষ শ্রীমন্ত রায় জানান, এই ঘটনায় রাজ্য সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন হয়েছে। জেলা বিজেপির সহ-সভাপতি মৃত্যুঞ্জয় চন্দ্র খানিকটা কটাক্ষের সুরেই বলেন, “কন্যাশ্রী প্রকল্প থাকলেও বাংলায় নাবালিকার বিয়ে হয়েই চলেছে। নাবালিকা প্রসূতির ভিড়ও বাড়ছে হাসপাতালে।”
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলার’ প্রতিনিধির কাছ থেকে বিষয়টি জেনে জেলাশাসক (পূর্ব বর্ধমান ) আয়েষা রাণী এ বলেন, ’এমনটা হওয়া কাম্য ছিল না। নাবালিকার বিয়ে বন্ধ করার ব্যাপারে প্রশাসন বদ্ধপরিকর। তারপরেও কী করে মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী নাবালিকার বিয়ে হয়ে গেল তার রিপোর্ট আমি চাইব।" জেলার সমাজ কল্যাণ আধিকারিক ( DSWO ) সৌরভ কোলে বলেন, “এ বিষয়ে আমার কিছুই জানা নেই। এই ঘটনাটির ব্যাপারে খোঁজ নেব।"