Child marriage: পশ্চিমবঙ্গে বাল্যবিবাহ আরও কমানোর লক্ষ্যে রাজ্য সরকার মেয়েদের পাশাপাশি ছেলেদেরও এই সামাজিক কুপ্রথার ক্ষতিকারক দিক সম্পর্কে সচেতনতা তৈরির উপর জোর দেবে। নারী ও শিশুবিকাশ এবং সমাজকল্যাণ দপ্তরের মন্ত্রী ডাঃ শশী পাঁজা বলেন, "এখন শুধু মেয়েদের নয়, ছেলেদেরও বাল্যবিবাহের কুফল সম্পর্কে সচেতন করতে হবে। ছেলেরা যাতে তাদের বিবাহের বৈধ বয়সের আগে বিয়ে না করে সেজন্য তাদের উৎসাহিত করতে হবে।"
সম্প্রতি কিশোর-কিশোরীদের ক্ষমতায়ন সম্পর্কিত রাজ্য স্তরের এক আলোচনাচক্রে অংশগ্রহণকারী রাজ্য সরকারি আধিকারিকদের নিয়ে একটি অনুষ্ঠান হয়। কলকাতায় UNICEF আয়োজিত ওই বিশেষ আলোচনায় রাজ্যের বিভিন্ন দফতরের আধিকারিকরা যাঁরা বাল্যবিবাহ রোধে জেলায়-জেলায় কাজ করছেন তাঁরা উপস্থিত ছিলেন। সেই সঙ্গে অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন রাজ্যের মন্ত্রী ডাঃ শশী পাঁজা।
UNISEF-এর তরফে দেওয়া একটি প্রেস বিবৃতিতে জানানো হয়েছে, গত তিন বছর ধরে ইউনিসেফ ও রাজ্য সরকারের যৌথ উদ্যোগে তৈরি জেলাভিত্তিক বাল্যবিবাহ রোধের কর্ম পরিকল্পনার উপর কাজ চলছে। জাতীয় পরিবার স্বাস্থ্য সমীক্ষা-৫ (NFHS-5)-এর তথ্য অনুযায়ী, রাজ্যে প্রায় ৪১ শতাংশ মেয়ের অপ্রাপ্তবয়স্ক অবস্থায় বিয়ে হয়ে যায়। তার মধ্যে সবচেয়ে বেশি বাল্যবিবাহ হয় পূর্ব মেদিনীপুর (৫৭%), এরপর পূর্ব বর্ধমান (৫০%)। সবচেয়ে কম বাল্যবিবাহ হয় জলপাইগুড়িতে (১৮%)।
আরও পড়ুন- Kolkata News Live Updates: ফের হাইকোর্টে চাকরিহারা শিক্ষকদের একাংশ, 'বড় পর্যবেক্ষণ' উচ্চ আদালতের!
অনুষ্ঠানে উপস্থিত অতিরিক্ত জেলাশাসক ও অন্যান্য কর্মকর্তারা জানিয়েছেন যে রাজ্যে এখন অনেক ছেলে ২১ বছরের কম বয়সে বিয়ে করছে। মন্ত্রী শশী পাঁজা বলেন, "এই ঘটনা বন্ধ করতে সমাজে সচেতনতা তৈরি করাই একমাত্র উপায়। মেয়ে ও মহিলাদের সাথে বাল্যবিবাহ সম্পর্কিত বিষয় নিয়ে আলোচনা সভাগুলিতে পুরুষ এবং ছেলেদের আরও বেশি করে অন্তর্ভুক্ত করুন।" আলোচনা সভায় 'পশ্চিমবঙ্গ বাল্যবিবাহ নিষিদ্ধকরণ আইন ২০০৬ বাস্তবায়নের নির্দেশিকা' (Guidelines for Implementation of the Prohibition of Child Marriage Act 2006 in West Bengal) প্রকাশ করেন মন্ত্রী।
আরও পড়ুন- Cyber crime : সূত্রের খবরে দুরন্ত অভিযান, মুর্শিদাবাদ থেকেই বিরাট গ্রেফতারি, কী বাজেয়াপ্ত হল জানেন?
রাজ্য সরকার, ইউনিসেফের সহযোগিতায়, বাল্যবিবাহ প্রতিরোধের জন্য ২০২২ সালে একটি জেলা কর্মপরিকল্পনা তৈরি করে এবং ২০২৩ সালে অনলাইন-ভিত্তিক 'বাল্যবিবাহ রিপোর্টিং এবং ট্র্যাকিং প্রক্রিয়া’ (Child Marriage Reporting and Tracking Mechanism) চালু করে। সেই প্রকল্পের অগ্রগতিও এদিনের আলোচনায় উঠে আসে।
অনুষ্ঠানে রাজ্যের নারী ও শিশুবিকাশ এবং সমাজকল্যাণ দপ্তরের মন্ত্রী ডাঃ শশী পাঁজা আরও বলেন, "আজকের কিশোর-কিশোরীরা মোবাইল, সোশ্যাল মিডিয়ার প্রভাবে নানা রকম প্রলোভনে পড়ছে। ওদের সঙ্গে আরও সহানুভূতির সঙ্গে কাজ করতে হবে।" তাঁর মতে, কন্যাশ্রী প্রকল্প আজ মেয়েদের শুধু স্কুলে রেখে তাদের অসময়ে বিয়ে প্রতিরোধ করছে তাই নয়, তাদেরকে অনলাইন নিরাপত্তা শেখাতেও সাহায্য করছে। দপ্তরের সচিব সংঘমিত্রা ঘোষ অনলাইন-ভিত্তিক 'বাল্যবিবাহ রিপোর্টিং এবং ট্র্যাকিং প্রক্রিয়া’ টিকে নিয়মিত ব্যবহার করার জন্য সকলকে আহ্বান জানান।
আরও পড়ুন- Modi: ছোটবেলার এই অত্যন্ত প্রিয় খাবারই মোদীর পাতে? কাল বঙ্গ সফরে প্রধানমন্ত্রী
এই মতবিনিময়কে "আরও উৎসাহের সাথে কাজ শুরুর এক পদক্ষেপ" বলে বর্ণনা করে, পশ্চিমবঙ্গে ইউনিসেফের প্রধান ডঃ মঞ্জুর হোসেন বলেন যে কিশোর-কিশোরীদের সামগ্রিক বিকাশের জন্য সংশ্লিষ্ট সকল ব্যক্তিদের সমন্বিত এবং বহু-ক্ষেত্রীয় পদক্ষেপ প্রয়োজন। তিনি আরও বলেন, "বাল্যবিবাহের মত কুপ্রথাগুলোকে রোধ করার জন্য এবং কিশোর-কিশোরীদের ক্ষমতায়নকে আরো এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য সমাজের প্রভাবশালী ব্যক্তি, পঞ্চায়েত সদস্য, স্বনির্ভর গোষ্ঠী সমূহ, ধর্মীয় নেতা, শিক্ষক, ছাত্র, যুবক এবং কিশোর-কিশোরীদের আরো বেশি করে এই কাজে যুক্ত হতে হবে।"