বিক্ষোভের নামে এ যেন তাণ্ডবলীলা চলল হাওড়ায়। বেপরোয়া ভাঙচুর, আগুনে তপ্ত গোটা এলাকা। হাওড়ার ৬ নম্বর জাতীয় সড়ক সংলগ্ন বিভিন্ন এলাকায় তাণ্ডবের ভয়ঙ্কর ছবি স্পষ্ট। বিজেপির কার্যালয় থেকে সাধারণের দোকানপাট, বাদ যায়নি পাড়ার ক্লাব থেকে থানাও। পুলিশি টহল সত্ত্বেও অশান্তির আঁচে এদিনও দোকান পুড়ে খাক হয়ে গিয়েছে পাঁচলার বিভিন্ন প্রান্ত। কোনও কোনও এলাকা একেবারে শুনশান।
১৪৪ ধারা, একাধিক সিনিয়র আইপিএসকে দায়িত্ব, পুলিশে পুলিশে ছয়লাপ, ইন্টারনেট পরিষেবা বন্ধ, তারপরেও অশান্তি পুরোপুরি আটকানো গেল না। শনিবারও বিক্ষোভকারীরা হাওড়ার পাঁচলায় কাপড়ের দোকানে আগুন ধরিয়ে দিল, পুড়ল আরও কয়েকটি দোকান। শনিবার গিয়ে দেখা গেল, সলপ থেকে নরেন্দ্র মোড় পর্যন্ত জাতীয় সড়কের দিকে দিকে আগের দিনের অশান্তির ছাপ। উলুবেড়িয়ার মনসাতলায় বিজেপির হাওড়া গ্রামীণ সাংগঠনিক অফিস আগুন দিয়ে, ভেঙে নছনছ করা হয়েছে। রঘুদেবপুরে বিজেপির আঞ্চলিক কার্যলয় পুড়ে খাক। বিজেপি নেতৃত্বের দাবি, তাঁদের টার্গেট করেই এই হামলা হয়েছে।
৬ নম্বর জাতীয় সড়কের সলপ থেকে নরেন্দ্র মোড় পর্যন্ত দীর্ঘ ২২ কিলোমিটার রাস্তার বিভিন্ন এলাকায় তাণ্ডব চালিয়েছে প্রতিবাদকারীরা। নরেন্দ্র মোড়ের ট্রাফিক পুলিশের কিয়স্কটি আগুনে পুড়ে কঙ্কালসার চেহারা নিয়েছে। এদিন নরেন্দ্রমোড়, নিমদিঘি, খালসানি মালপাড়া, পাঁচড়া, উলুবেড়িয়া, সলপে দিনভর পুলিশি টহল চলেছে। পুলিশে পুলিশে ছয়লাপ এইসব এলাকা। ফুলেশ্বরের জগন্নাথপাড়ার সোমনাথ মণ্ডল শনিবার মনসাতলার বিজেপির কার্যলায়ের হাল দেখতে এসেছেন। বিজেপি কর্মী সোমনাথ বলেন, 'আমি শারীরিক ভাবে অসুস্থ। হাসপাতালে ভর্তি ছিলাম। ছাড়া পেতেই দলীয় কার্যালয় লণ্ডভণ্ড করে দেওয়ার খবর পেয়ে ছুটে এলাম। অফিসের অবস্থা দেখে খুব খারাপ লাগছে। এভাবেও ধংস করা যায়?'
মনসাতলার বিজেপি অফিসের আশেপাশের দোকানও মাটিতে মিশে গিয়েছে তাণ্ডবে। উল্টোদিকের মিষ্টির দোকানের মালিক ঝন্টু মোদক বলেন, 'দোকানের সাটার নামিয়ে দেওয়ায় কোনওরকমে রক্ষা পেয়েছি। তবে ওই ঝামেলার সময়ও টেনশনে একটু কাছে এসে বারংবার দেখছিলাম পরিস্থিতি।'
এদিকে বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার টুইটে দাবি করেন, "বিজেপির উপর তো রাগটা, যেখানে যেখানে বিজেপি'র গরমেন্ট আছে সেখানে গিয়ে করুন আমাদের পূর্ণ সমর্থন থাকবে। দিল্লিতে গিয়ে করুন, গুজরাতে গিয়ে করুন, উত্তরপ্রদেশে গিয়ে করুন @MamataOfficial মুখ্যমন্ত্রী পদে বসে হিংসার পরামর্শ দেওয়ার পরই হাওড়ার বিভিন্ন এলাকায় তাণ্ডব চালায় দুষ্কৃতীরা।"
যদিও বিজেপির দাবি একেবারে উড়িয়ে দিয়েছেন রাজ্যের মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম। ফিরহাদের কথায়, "নিজেদের অফিস নিজেরা ভেঙে ফায়দা তুলতে চাইছে বিজেপি। ভোটের আগেও একাজ করতে গিয়েছিল। তাতে কোনও লাভ হয়নি।" এদিকে পাঁচরা মোড়ের কাছেই রঘুদেবপুরে বিজেপির আঞ্চলিক অফিসও পুড়ে ছাড়খার। এরই মধ্যে এদিন হাওড়া যাওয়ার পথে গ্রেফতার করা হয়েছে সুকান্ত মজুমদারকে।
আরও পড়ুন- বিক্ষোভের নামে তাণ্ডবে জ্বলছে পাঁচলা, গা শিউরে ওঠার মতো ছবি এলাকাজুড়ে
বৃহস্পতিবার অঙ্কুরহাটি চেকপোস্টের মোড়, ডোমজুড়ে ঘন্টার পর ঘন্টা অবরোধের জেরে নাজেহাল অবস্থা হয় সাধারণ মানুষের। সেদিন পুলিশের দেখা মেলেনি বলে অভিযোগ ওঠে। ওই ঘটনার সময় নবান্ন থেকেই হাতজোড় করে বিক্ষোভকারীদের কাছে আবেদন করেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাতে যে তারা কর্ণপাত করেননি তা তাঁরা বুঝিয়ে দিয়েছেন।
আরও পড়ুন- অশান্তি এড়াতে সতর্ক রাজ্য, বাংলার আরও এক প্রান্তে বন্ধ ইন্টারনেট পরিষেবা
দফায় দফায় জাতীয় সড়ক সংলগ্ন এলাকার নানা স্থানে তাণ্ডব চলে। পথ অবরুদ্ধ হয়ে যায়। অভিযোগ, বিক্ষোভকারীরা আগুন জ্বালিয়ে-ভেঙে তছনছ করে দোকানপাট থেকে বিজেপির অফিস। হামলাকারীদের হাত থেকে রেহাই মেলেনি রঘুদেবপুরের নেতাজি সংঘও। তিনতলা ক্লাবের ভিতরে-বাইরে আক্রমণের চিহ্ন স্পষ্ট। এই জাতীয় সড়কে মোড়ে মোড়ে পোড়া গাড়ির টায়ারের কালো ছাই এখনও পড়ে আছে। হাওড়ার পর মুর্শিদাবাদের রেজিনগরেও নতুন করে অশান্তি শুরু হয়েছে।