/indian-express-bangla/media/media_files/2025/07/19/police-2025-07-19-09-54-39.jpg)
প্রতীকী ছবি।
অবৈধ বাংলাদেশী অভিবাসী ও অবৈধ অনুপ্রবেশ ইস্যু নিয়ে ত্রিপুরার রাজনীতি রীতিমতো সরগরম হয়ে উঠেছে। গত রবিবারই শাসক জোটশরিক তিপ্রা মথা সুপ্রিমো প্রদ্যোৎ কিশোর মানিক্য দেববর্মা বিহারে চলমান ভিতর তালিকার স্পেশাল ইনটেনসিভ রিভিসন অথবা SIR মডেলের ভিতর তালিকা সংশোধন ত্রিপুরায় চালু করার দাবি তুলেছিলেন।
সম্প্রতি তিনি এও অভিযোগ তুলেছিলেন রাজ্যের গোমতী জেলার উদয়পুর মহকুমায় ০.২২ একর একটি জমি সরকারি ভূমি রাজস্ব দপ্তরের নথিতে বাংলাদেশের এক নাগরিকের দখলকার হিসেবে লিপিবদ্ধ করা আছে। অভিযোগের স্বপক্ষে নথিতির একটি ছবি তিনি সামাজিক মাধ্যমে তুলেও ধরেন, যেখানে দেখা যাচ্ছে বাংলাদেশের কোন এক বাদশা মিঞার পুত্র দিলু মিঞার নাম উক্ত জমির দখলদার হিসেবে নথিভুক্ত রয়েছে।
সরকারি তরফে এব্যাপারে অবশ্য কোনও প্রতিক্রিয়া জানানো হয়নি। তিপ্রা মথা সুপ্রিমো প্রদ্যোৎ কিশোর মানিক্য দেববর্মার তোলা অভিযোগের মধ্যেই তাঁর দলের নেতা তথা ত্রিপুরা উপজাতি এলাকা স্বশাসিত জেলা পরিষদের সদস্য উমাশঙ্কর দেববর্মা আজ অভিযোগ করেন, ১৫০-২০০ বাংলাদেশী বংশোদ্ভূত পরিবার বসবাস করছেন রাজ্যের সিপাহিজলা জেলায়। রাজ্য সরকারের পক্ষে এবিষয়ে কোন বিবৃতি পাওয়া যায়নি। তবে এমাসের ১৫ তারিখে পশ্চিম ত্রিপুরা পুলিশ সুপার কিরন কুমার একটি নির্দেশে জানিয়েছিলেন যে অবৈধ বাংলাদেশী ও রোহিঙ্গা অভিবাসীদের চিহ্নিত, শনাক্ত ও নির্বাসিত করার জন্যে পশ্চিম ত্রিপুরা জেলা পুলিশের অধীনে ১৫ সদস্যের একটি স্পেশাল টাস্ক ফোর্স গঠন করা হয়েছে।
তাতে বলা হয়, যদি তদন্তের পর কোনও ব্যক্তিকে অবৈধ বাংলাদেশী ও রোহিঙ্গা অভিবাসী হিসেবে চিহ্নিত করা হয়, তাহলে এই বিশেষ দলটি ঐসকল ব্যক্তিদের বায়োমেট্রিক পরিচয়াদি ফরেনার্স আইডেন্টিফিকেশন পোর্টালে যুক্ত করার দায়িত্বে থাকবেন।
চিহ্নিত করা হলে পর এদের ভারত থেকে তাদের স্বভূমে নির্বাসিত করার জন্যে বিএসএফের হাতে তুলে দেবার কথা রয়েছে।
এদিকে একটি অডিও বার্তায় প্রদ্যোৎ কিশোর তাঁর সমর্থকদের, বিশেষ করে অনুপজাতি অংশের জনগণকে উদ্দেশ্য করে বলেছেন, "বাংলাদেশ কখনোই ভারতের বন্ধু ছিল না, এবং শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর থেকেই সে'দেশে আবারও নতুন করে গত বছর থেকে ভারত-বিরোধী জিগির তোলা হচ্ছে।"
তিনি আরও বলেন, "৮০-'৯০-এর দশক এবং এই শতাব্দীর প্রথম দশকে বাংলাদেশে প্রচুর (জঙ্গি) শিবির, অস্ত্রশস্ত্র ইত্যাদি দিয়ে তিপ্রাসা (ত্রিপুরী) উপজাতি যুবকদের খেপিয়ে তোলা হয়েছিল। শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর থেকে আবার ভারতবিরোধী জিগির উঠছে সেদেশে (বাংলাদেশে)। আগামী বছর সেখানে নির্বাচন হবার কথা রয়েছে। সম্ভবত: সেখান ম: ইউনুস, খালেদা জিয়া অথবা জামাতের সরকার প্রতিষ্ঠিত হবে, সেই ভারতবিরোধী জিগির চলবে। পরিস্থিতিতে অবৈধ অভিবাসনের বিরুদ্ধে শুধু উপজাতি নয়, সকলকে এক হয়ে লড়তে হবে।"
তাঁর কথায়, "একাংশ ভারতীয় আধিকারিকদের অসততার জন্যে অবৈধ অভিবাসীরা আধার কার্ডের মতো নকল নথি হাতে পেয়ে যায়, ভারতীয় নাগরিক সেজে বিহার, মহারাষ্ট্র, উত্তরপ্রদেশ, আসাম ইত্যাদি রাজ্যে চলে যায়। গোটা দেশের রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা ঝুঁকির মুখে চলে আসে। যখন আমি অবৈধ অভিবাসীদের বিরুদ্ধে কথা বলি আমি তাদের বিরুদ্ধে কথা বলি, যারা এদেশে ঢুকে এই দেশকেই দুর্বল করতে চায়। আমি আপনাদের বিরুদ্ধে কথা বলছি না। তিপ্রাসা এই লড়াই একা লড়তে পারবে না। তার জন্যে আপনাদের সকলের সাহায্য চাই।"
এদিকে, রাজনৈতিক সমালোচকদের মতে, রাজ্যের বাঙালি অংশের সংখ্যাগুরু মানুষকে তাঁর এই অবৈধ অভিবাসী বিরোধী আন্দোলনে কাছে পেতে চাইছেন প্রদ্যোৎ কিশোর। যদিও এবিষয়ে বিরোধী CPIM এবিষয়ে প্রদ্যোত কিশোরকেই ঠুকে বলেছে, "প্রদ্যোৎ কিশোরের দল যেখানে অবৈধ অভিবাসীদের বিরুদ্ধে আন্দোলনে ব্যস্ত, সেখানে তাদেরই শরিকদল BJP নেতৃত্বাধীন কেন্দ্রীয় সরকারের আমলে নাগরিকত্ব সংশোধনী আইনের মাধ্যমে কীভাবে অবৈধ অভিবাসীদের বৈধতা প্রদান করা হচ্ছে, এবিষয়ে তাদের অবস্থান স্পষ্ট করা দরকার।"
আরও পড়ুন-Malda Murder:মাথা থেঁতলে ভয়ঙ্কর খুন! দেহ দেখে আঁতকে উঠল পরিবার
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে একটি সাক্ষাৎকারে সিপিআইএম পলিটব্যুরো সদস্য তথা ত্রিপুরার বিরোধী দলনেতা জিতেন্দ্র চৌধুরী বলেন, "একদিকে প্রদ্যোৎ কিশোরের দল যেখানে অবৈধ অভিবাসীদের বিরুদ্ধে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে। অন্যদিকে বিজেপি নেতৃত্বাধীন কেন্দ্রীয় সরকারের আমলে নাগরিকত্ব সংশোধনী আইনের মাধ্যমে কীভাবে অবৈধ অভিবাসীদের বৈধতা প্রদান করছে। প্রদ্যোৎ তো আগে বলেছিলেন, দরকার হলে তিনি সুপ্রিম কোর্টে যাবেন, নাগরিকত্ব সংশোধনী আইনের বিরোধিতা করবেন। তারই বা কি হলো? তাছাড়া অবৈধ অভিবাসী তো কেবল মুসলমান ধর্মাবলম্বীরা নন। বাকিরা যাঁরা নাগরিকত্ব সংশোধনী আইনের আওতায় আসেন, তাদের কী হবে? অনেক বিষয়ে তাদের (প্রদ্যোৎ কিশোর) স্পষ্টিকরণ দেওয়া দরকার।"
২০২৩ সালের ত্রিপুরা বিধানসভা নির্বাচনেও তাঁর দল বেশ কয়েকটি আসনে বাঙালি প্রার্থীদের মনোনীত করে ভোটে লড়েছিল।
যদিও কোন অনুপজাতি প্রার্থী তাঁর দলের হয়ে নির্বাচনে জয়লাভ করেননি, ১৩ বিধায়ক নিয়ে তিপ্রা মথা দল প্রধান বিরোধী দল হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছিল। এক বছর পেরোতেই অবশ্য বিজেপির সাথে জোটশরিক হয়ে সরকার যোগ দিয়েছিল মথা।
তবে উপজাতিদের জন্যে পৃথক গ্রেটার তিপ্রাল্যান্ড দাবি তোলা তিপ্রা মথা দলের সাথে অনুপজাতিদের সমর্থন কতদূর দেখা যায়, সেটি সময়ই বলে দেবে।
১০,৪৮৬ বর্গ কিমির এই ছোট্ট পাহাড়ি রাজ্যের প্রায় ৭০ শতাংশ জনগণ ৩০ শতাংশ ভূখণ্ডে বাস করে। অবশিষ্ট ৭০ শতাংশ অঞ্চল ত্রিপুরা উপজাতি এলাকা স্বশাসিত জেলা পরিষদের আওতায় পড়ে। সেখানে ১৯ টি উপজাতি সম্প্রদায়ের মানুষের বসবাস রয়েছে। তবে ১৯৭১-এর বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধের পূর্বে যে বিশাল অংশের অনুপজাতি অংশের মানুষ পশ্চিমবঙ্গ, আসামের পাশাপাশি ত্রিপুরায় শরণার্থী হিসেবে আশ্রয় নিয়েছিল, তার একটি অংশ পরবর্তী সময়ে ইন্দিরা-মুজিব চুক্তির শর্ত অনুযায়ী এই রাজ্যেই পাকাপাকিভাবে থেকে যান। এর ফলে রাজ্যের জনসংখ্যার বিশেষ পরিবর্তন দেখা দেয়, যার কারণে ত্রিপুরী উপজাতিরা নিজেদের রাজ্যেই সংখ্যালঘু হয়ে পড়ে।