বিকেল পাঁচটা। সুসজ্জিত গৃহকোণ। গৃহকর্তা অভিনেতা সুদীপ মুখার্জি নরম গোদি আঁটা সোফায় বসে পা ছড়িয়ে কোলের উপর কড়াই তুলে নিয়ে কাঁটা চচ্চড়ি চিবিয়ে চলেছেন। রসনার রস চলকে পড়ছে চোখে, মুখে, মোটা গোঁফের আড়ালে। আর ঠিক এমন (অ)সময়েই রসনায় ছন্দপতন ঘটিয়ে অন্দরমহলে প্রবেশ করল দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা। আগন্তুক প্রবেশ করার প্রাথমিক চমক কয়েক মুহূর্তে কাটতেই ধেয়ে আসতে শুরু করল প্রশ্ন, আর উল্টো দিক থেকে দক্ষ অভিনেতা জীবনের চিত্রনাট্য থেকে বলতে শুরু করলেন একের পর এক সংলাপ।
এই অবেলায় কাঁটা চচ্চড়ি!
-আরে কী করব, আমি মাছের মুড়ো-কাঁটা খেতে খুব ভালবাসি। (বাক্যটা শেষ করেই ঠোঁটের পাশ থেকে গড়িয়ে থুতনির দিকে নেমে আসা ঘন লালচে ঝোল মুছে নিলেন...) তাছাড়া, রান্নাটাও পারি। অনেকদিন থেকেই ফ্রিজে মাছের মুড়ো জমছিল। বউ বলেছে, সে এসব মুড়োটুড়ো রাঁধতে পারবে না। ফলে, অগত্যা আমিই...
সুদীপ মুখার্জি তার মানে মাথা খেতে ভালবাসে?
-(মুখে চওড়া হাসি) হ্যাঁ, হ্যাঁ। এটা আমার বউ সব থেকে ভাল বলতে পারবে। এমন মাথা খাই যে আমাকে প্রত্যেক দিন জিজ্ঞাসা করে, 'তোমার আজ বেরনো নেই?' উত্তরে আমি যদি বলি 'না', সে অত্যন্ত হতাশ হয়।
কথায় বলে, মাছের মাথা খেলে নাকি মাথা খোলে। আপনার তো মাথার পাশাপাশি চেহারাও খুলেছে।
আমি রোয়িং করতাম। সেই জন্যই শরীরচর্চা করেছি ছোট থেকে। ১৯৮৯ সালে আমার যখন গ্র্যাজুয়েশন পার্ট ওয়ানের পরীক্ষা তখন চন্ডীগড়ে এশিয়ান চাম্পিয়নশিপে আমাকে ভারতীয় দলে ডাকা হয়েছিল। আমি সেখানে যোগ দিই। এই সময়টাতে স্বাভাবিকভাবেই কলেজে যেতে পারতাম না। তখন আমায় ডিসকলিজিয়েট করে দেওয়া হয়।
সেকি, ভারতীয় দলে সুযোগ পাওয়া ছেলেকে ডিসকলেজিয়েট করা হল!
আজ্ঞে হ্যাঁ (মুখে শ্লেষের হাসি)। আমাদের রাজ্যে সে সময় অন্তত এমনটাই চল ছিল। স্পোর্টসের গুরুত্ব কোথায়? ফলে অঙ্ক আমার প্রিয় বিষয় হলেও পরে আমাকে আর্টস নিয়ে পড়তে হল।
এর পাশাপাশি তখন রোয়িং চলছে?
হ্যাঁ। ১৯৯৫ সালে আমার একটা পথ দুর্ঘটনা হয়। তার আগে পর্যন্ত খেলা চলেছে।
আর চাকরি?
চাকরি শুরু করেছি ১৯৯৪ সাল থেকে। একাধিক কোম্পানিতে বিভিন্ন শহরে মার্কেটিং-এর কাজ করেছি। এরপর ১৯৯৯ সালের অক্টোবর মাসে চাকরিতে ইস্তফা দিই এবং অভিনয় করব বলে ডিসেম্বরে পাকাপাকি কলকাতায় ফিরে আসি।
এলেন, দেখলেন আর জয় করলেন?
না, না। আমি ১৯৮৯ থেকে গ্রুপ থিয়েটার করি। তখন আমাদের সঙ্গে অভিনয় করতেন বিপ্লব দাশগুপ্ত। তাঁর মাধ্যমেই '৯৪ সালে পরিচালক ইন্দর সেন আমাকে ডেকে পাঠান। আমি একটি কনস্টেবলের চরিত্রে প্রথম অভিনয় করি। বোধ হয় আমার কাজ ভাল লেগেছিল। তারপরদিনই আমাকে আবার ডাকা হয় এবং সরাসরি ইনসপেক্টর করে দেওয়া হয়। রাতারাতি প্রোমোশন আরকি। তখন ক্যাশ পেমেন্ট হত। প্রথম কাজে দেড়শ টাকা পেমেন্ট পেয়েছিলাম। এরপর আমার সেই অ্যাকসিডেন্টটা যখন হয় তখন অনেকগুলি অভিনয়ের সুযোগ আসতে থাকে। কিন্তু আমি তো তখন বিছানায়। কোনো উপায়ই ছিল না। সেরে উঠে ফের চাকরিতে যোগ দিই। কিন্তু ওই যে বিভিন্ন সুযোগ আসছিল, এতেই আমার আত্মবিশ্বাসটা বেড়ে যায়। শেষ পর্যন্ত চাকরিটা ছেড়েই দিই...তারপর থেকে এই তো ২১টা বছর শুধু অভিনয় করেই কাটিয়ে দিলাম।
শুরুটা কেমন ছিল?
আমি প্রথম দু'-একটা সিরিয়ালের পর থেকেই লিড রোল পেয়ে এসেছি। যেমন 'শ্যাওলা'-তে আমি আর অরুণিমা ঘোষ (সেটাই প্রথম কাজ অরুণিমার) জুটি ছিলাম। এরপর 'মনে পড়ে', 'বিবেকানন্দ' সবেতেই আমি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বা প্রধান চরিত্রে। ই-টিভি-তে তখন ভীষণ জনপ্রিয় 'রহস্য গল্প' এবং 'অলৌকিক'-এও তেমন ভূমিকাতেই অভিনয় করেছি। একটা মজার কথা বলি, প্রথমে 'রহস্য গল্পে' আমাকে একদিনের কাজ দেওয়া হয়েছিল। সেই শ্যুটিং শেষ হওয়ার পর পরিচালক দেবাংশুদা' আমাকে সেটে দাঁড়িয়ে বললেন, "তুই আমার পরের দুটো গল্পের লিড রোল করবি"।
আপনি তো ব্যোমকেশ বক্সিও করেছিলেন?
হ্যাঁ করেছিলাম তো। ওটাই প্রথম টিভির কাজ যার জন্য হোর্ডিং পড়েছিল শহরে। কিন্তু আমি ব্যোমকেশ আর দেবদূত ঘোষ যে অজিতের চরিত্রে অভিনয় করেছিল তা পৃথকভাবে টাইটেল কার্ডে দেখানোই হয়নি। তাছাড়া, ৫০০ পর্ব হওয়ার কথা থাকলেও নানা সমস্যার কারণে ৭২ পর্বে তা আটকে যায়।
পরবর্তীতে যখন বড় পর্দায় একাধিকবার ব্যোমকেশ হল, তখন আপনি ডাক পেয়েছিলেন?
নাহ্। ব্যোমকেশ হিসাবে কেউ সেভাবে কখনো উল্লেখই করেনি আমাকে। বরং ইদানীং ফেসবুকে দেখি অনেকে বলেন আমার ব্যোমকেশের কথা। এ ক্ষেত্রে বেণুদা' মানে সব্যসাচী চক্রবর্তীর কথা বলা দরকার। উনি একটি সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, 'সুদীপকে ফেলুদার চরিত্রে মানাতে পারে। হি ইজ ভেরি ট্যালেন্টেড।'
কিন্তু তারপরও তো কিছু হল না। আপনি কি সিরিয়ালের মুখ হয়েই রয়ে গেলেন?
হল না তো (মুখে আক্ষেপের হাসি)! হ্যাঁ, আমি ছোট-বড় মিলিয়ে ৫০টা সিনেমা করলেও দর্শক আমাকে সিরিয়ালের মুখ হিসাবেই মনে রেখেছেন।
একটা কারণটা বোধ হয়, আপনি সিরিয়াল যতটা করেছেন, তার থেকে অনেক কম সিনেমা করেছেন?
হ্যাঁ, তা তো বটেই। তাছাড়াও বলব, সিরিয়ালে ক্রমাগত লিড রোল করে গিয়েছি। ফলে দর্শকের মনে দাগ কাটতে পেরেছি কিছুটা। তবে সিরিয়ালে পরপর লিড রোল করে গেলেও, আমার যে স্বীকৃতি পাওয়ার কথা ছিল তা পাইনি।
এই তো পরপর লিড রোল করে যাচ্ছেন। এটাই তো স্বীকৃতি!
না, আমি ঠিক সেইটা বলছি না।
তাহলে?
এখনকার ছেলেমেয়েদের চ্যানেল বা প্রোডাকশন হাউজ যতটা প্রোমোট করে সেটা আমাদের সঙ্গে হয়নি, অন্তত আমার সঙ্গে হয়নি।
'এরাও শত্রু' তো আপনার কেরিয়ারে বড় বাঁক?
অবশ্যই।
অঞ্জন চৌধুরীর চোখে পড়লেন কীভাবে?
এনটি ওয়ান স্টুডিও-তে তখন আমার একটা শ্যুটিং চলছিল। সেই সময় অঞ্জনবাবু বুম্বাদা'কে নিয়ে 'একাই একশ' নামের একটা ছবি করছিলেন। সেই সিনেমায় পুলিশের একটা ছোট্ট চরিত্র ছিল। অঞ্জনবাবুর সহকারী বাবু রায় আমাকে ডেকে পাঠান। আমি দেখা করতেই উনি বলেন, অঞ্জনবাবু আমাকে ডেকেছেন। আমি অঞ্জনবাবুর কাছে যাই, তখন উনি বলেন, 'একটা ছোট রোল আছে, দুটো সিন। আপনি করবেন?' আমি বলি, 'হ্যাঁ, করব।' সেই দুটি শট দেওয়ার পরই ফ্লোরের মধ্যে অঞ্জনবাবু আমাকে জড়িয়ে ধরেন। উনি বলেন, "তোকে কিন্তু ঠিকভাবে ব্যবহার করা হচ্ছে না। দাঁড়া, আমি তোকে এত বড় ভিলেন বানিয়ে দেব যে হিরোদের থেকে বেশি টাকা রোজগার করবি।" এরপরই অঞ্জনবাবুর নির্দেশনায় শুরু হল 'দেশদ্রহী'। ছবিটার প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত আমার পাঠ ছিল। ফার্স্ট পার্টে ভিক্টর ব্যানার্জী ছিলেন, সেকেন্ড পার্টে বুম্বাদা' হিরো। কিন্তু আমার দুর্ভাগ্য, ছবিটির প্রযোজক মানি মার্কেটে যুক্ত থাকায় গ্রেফতার হল, আর সিনেমাটি আজও রিলিজ হল না।
আর 'এরাও শত্রু'র গল্পটা শুনি...
এখান থেকেই 'এরাও শত্রু'র সূচনা বলা যায়। এই ছবিটা না হওয়ায়, অঞ্জনবাবু আমাকে নিয়ে 'এরাও শত্রু' তৈরি করবেন বলে ঠিক করলেন। প্রথমে 'পাইলট প্রজেক্ট' তৈরি করে নিয়ে চ্যানেলের সঙ্গে কথা বললেন। প্রথমে ই-টিভি-তে 'এরাও শত্রু' হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু, ই-টিভি তখন নাম্বার ওয়ান চ্যানেল হওয়ায় একটু সুবিধা নেওয়ার চেষ্টা করছিল। অঞ্জনবাবু এতে রেগে গেলেন এবং শেষ পর্যন্ত জি বাংলা-কে সিরিয়ালটা দিয়ে দিলেন। আমি তখন জি-এর 'ফেস'। সারা বাংলা জুড়ে সবক'টা টাউনশিপে আমার ৮০/১০০ হোর্ডিং পড়ল। শুরু হল 'এরাও শত্রু'।
তারপর রাতারাতি হিট!
হ্যাঁ, সে আর বলতে। 'এরাও শত্রু'-র টিআরপি-র ধারে কাছে অন্য কোনো বাংলা সিরিয়াল ছিল না। তখনই সবে টিআরপি-র ধারণাটা এসেছে। সে সময়, বাকি সব সিরিয়াল ১ বা ১.৫। আর 'এরাও শত্রু'র ৫+ টিআরপি। কিন্তু, দুর্ভাগ্য সিরিয়াল শুরু হওয়ার কিছুদিনের মধ্যেই অঞ্জনবাবু চলে গেলেন। ওঁর পুত্র সন্দীপ খুবই ভাল পরিচালক, ৫ বছর টেনে নিয়ে গিয়েছিল। কিন্তু তিনি তো আর অঞ্জন চৌধুরী নয়। আমার মাঝেমধ্যে মনে হয়, উনি বেঁচে থাকলে ১০ বছরও চলতে পারত 'এরাও শত্রু'। কারণ, টিআরপি এতটাই স্ট্রং ছিল।
অঞ্জন চৌধুরীর কোন বিশেষ গুণ আপনাকে অবাক করেছে?
ডায়লগ। উনিই বাংলার শেষ ডায়লগ রাইটার। মানে চরিত্রের জন্য সংলাপ লিখতেন। ওর হাতে চরিত্রেরা কথা বলত। হিরোর জন্য ডায়লগ অনেকেই লেখেন, কিন্তু বাংলায় চরিত্রের জন্য সংলাপ শেষ লিখে গিয়েছেন অঞ্জন চৌধুরীই।
একদিকে যখন 'এরাও শত্রু'-তে আপনি সৎ-আদর্শবান পুলিশ-নায়ক, তখনই অন্য চানেলের 'কুরুক্ষেত্রে' আবার দুর্নীতিগ্রস্থ বিধায়ক-অ্যান্টি হিরো সুবীর গুহ। কেমন সাড়া পেতেন দর্শকদের?
দারুণ, দারুণ। জি বাংলায় সাড়ে সাতটায় 'এরাও শত্রু', আর আকাশ বাংলায় রাত ৮টা থেকে 'কুরুক্ষেত্র'। অনেকেই বলতেন, 'এই ভাল মানুষটাই চ্যানেল পাল্টালে হাড় বজ্জাত হয়ে যায়!' আমি খুব উপভোগ করতাম। আমার ভীষণ পছন্দের এবং মনের খুব কাছের সিরিয়াল 'কুরুক্ষেত্র'। এটাই একমাত্র বাংলা সিরিয়াল যেখানে কাঁচা খিস্তি দিতাম আমি এবং সেটা টেলিকাস্টও হত। 'হাতখিস্তি'ও চলত। পরে রাজনৈতিক চাপে সেসব বন্ধ হয়। রাজ্যের রাজনৈতিক পালা বদলে এই সিরিয়ালটিরও একটা ভূমিকা ছিল।
আপনার পছন্দের সিরিয়ালের একটা তালিকা তৈরি করুন।
'এই তো জীবন', 'নীল সীমানা', 'সময়', 'কানামাছি', 'ব্যোমকেশ', 'এরাও শত্রু', 'করুক্ষেত্র' এবং অবশ্যই 'শ্রীময়ী'।
শ্রীময়ী করতে কেমন লাগছে?
খুব সমস্যা হচ্ছে। আমাদের হাত-পা বেঁধে ফেলে দেওয়া হয়েছে। করোনায় নানা রকম বিধি নিষেধের জন্য কাছাকাছি গিয়ে (ক্লোজ প্রক্সিমিটি শট) অভিনয় করা যাচ্ছে না। হয়ত কাউকে ঝাঁকিয়ে একটা সংলাপ বলতে হবে, কিন্তু সেটা করা যাবে না। অথচ, পারফর্মেন্সের এক্সিলেন্সও বজায় রাখতে হবে। এটাই এখন বড় চ্যালেঞ্জ। এমন সিন করতে হচ্ছে, যেখানে আমার সহঅভিনেতা নেই, তিনি তাঁর অংশটা আগেই করে দিয়েছেন। আর আমাকে তিনি রয়েছেন এমনটা মনে করে নিয়ে শট দিতে হচ্ছে। পরে পুরোটা এডিট হচ্ছে।
টোটা রায়চৌধুরীর সঙ্গে অনেকদিন পর অভিনয় করছেন। কেমন লাগছে?
টোটা আমার বহু পুরানো বন্ধু। সেই 'ইঙ্গিত'-এর সময় থেকে একসঙ্গে কাজ করছি। ইন্ডাস্ট্রিতে দু'-তিনজন ঘনিষ্ঠ বন্ধু রয়েছে, টোটা তাঁদের মধ্যে অন্যতম। তবে আমার মনে হয়, ইন্ডাস্ট্রিতে টোটা এক জন 'আন্ডার রেটেড' অভিনেতা।
তবে শ্রীময়ীতে কাজ করতে গিয়ে দেখলাম টোটা অনেকটা পাল্টে গিয়েছে। এরমধ্যে টোটা বম্বে গিয়ে সুজয় ঘোষের সঙ্গে কাজ করেছে, অন্যান্যদের সঙ্গেও বোধ হয় কাজ করেছে। এখন অভিনয়ে একটা অন্য দিক খুলে গিয়েছে, ওঁর অভিনয় আগের থেকে অনেক নিয়ন্ত্রিত হয়েছে। সবমিলিয়ে আমি অভিভূত। তাই ওঁর ফেলুদা দেখার জন্য মুখিয়ে আছি।
কী মনে হয় টোটাকে ফেলুদার চরিত্রে মানিয়েছে?
সত্যি বলতে, প্রথমে আমার মনে সংশয় ছিল টোটাকে কেমন লাগবে এ নিয়ে। কিন্তু মানতেই হবে, সৃজিত মুখার্জির 'ভিশন' আছে। টোটা যখন ফেলুদার চরিত্রে ওর 'লুক'-এর স্টিল ছবি দেখাল, আমি জাস্ট অবাক হয়ে গেলাম। ওকে পুরোপুরি সত্যজিৎ রায়ের ফেলুদার যে স্কেচ সেটার সঙ্গে মানিয়ে গিয়েছে। এখানেই সৃজিতের 'ভিশন'।
ইন্ডাস্ট্রিতে 'আন্ডার রেটেড'দের একটা তালিকা করুন।
টোটা রায়চৌধুরি, দেবযানী চ্যাটার্জী, অভ্রজিৎ সরকার, সাগ্নিক। পড়ুন বিস্তারিত- ‘দেবযানীর মতো গ্ল্যামারাস মেয়ে দেখিনি, খারাপ লাগে’
অপরাজিতা আঢ্য না ইন্দ্রানী হালদার, কে বেশি ভাল অভিনয় করেন?
ইন্দ্রানী হালদার। কারণ, ইন্দ্রানী চরিত্রের মধ্যে বৈচিত্র আনতে পারে। বিভিন্ন চরিত্রে আলাদা আলাদা রঙ ধরাতে পারে। আর অপা (অপরাজিতা আঢ্য) যা চরিত্র করে সেটা খুবই কনভিনশিংভাবে করে, কিন্তু শেষ পর্যন্ত চরিত্রটা অপরাজিতা আঢ্যই থেকে যায়। আমি অপার সঙ্গে বহুদিন কাজ করছি। অপা দারুণ অভিনেত্রী। কিন্তু ইন্দ্রানী যে চরিত্রটা করে সেটাই হয়ে উঠতে পারে।
উষসী চক্রবর্তীকে কেমন লাগছে?
আগের থেকে অনেকটা ভাল কাজ করছে এখন। খুব উন্নতি করেছে। তবে পেশাদার অভিনেতা হিসাবে আরও দায়িত্বজ্ঞান থাকা দরকার।
দায়িত্বজ্ঞানের কথা কেন বলছেন?
সেটা ফ্লোরে উপস্থিত থাকলেই বোঝা যায়। (এ বিষয়ে আর বিশেষ কথা বাড়ালেন না)।
আপনাদের ইন্ডাস্ট্রির যে কোনো সমস্যায় মমতা সরকারের ভূমিকা কেমন লাগে আপনার?
এটা একটা খুবই বড় ব্যাপার। সরকার যেভাবে মধ্যস্ততা করতে এগিয়ে এসেছে সেটা খুবই ভাল।
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তো টেলি সিরিয়ালের একজন আটপৌরে দর্শক। আপনার কাজের প্রশংসা করেছেন কখনো?
হ্যাঁ, উনি সত্যিই আমাদের একজন দর্শক। বহুবার উনি আমার প্রশংসা করেছেন। আমার অভিনীত 'অগ্নিজল' বা 'কানামাছি'র কথা বলেছেন। আমাকে উনি খুবই পছন্দ করেন। তাছাড়া, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে আমার একটা অতীত যোগসূত্রও আছে, সেটা খুব মজার গল্প।
অতীত যোগসূত্র বলতে? গল্পটা শুনি-
(মুখে হাসি) সেটা আটের দশকের শেষ। উনি তখন কংগ্রেসে। কলকাতায় আমাদের বাড়িটা যেখানে, সেটা কোণের দিকে, মানে একটা কর্ণার প্লট। ফলে, এলাকার যাবতীয় রাজনৈতিক মিটিং হত ওখানেই। সেখানেই মমতাদি' একাধিকবার এসেছেন। এমনকি আমাদের বাড়িতে এসে চা খেয়ে গিয়েছেন অনেকবার। চা খেতে এসে উনি আমার বাবার সঙ্গে (সুদীপের বাবা সেনাবাহিনীতে চাকরি করতেন) গল্পও করতেন। সব থেকে বড় ব্যাপার হচ্ছে, মমতাদি' আজও সেসব কথা স্মরণে রেখেছেন। আমার সঙ্গে একটা অনুষ্ঠানে দেখা হওয়ায় সে কথা তিনি আমাকে বলেছিলেন। তাঁর মতো ব্যস্ত মানুষের এ কথা মনে আছে জেনে আমি আপ্লুত হয়েছি। এটা সত্যিই খুব বড় ব্যাপার।
আপনিই তো এই সাক্ষাৎকারের সব থেকে ভাল শিরোনামটা দিয়ে দিলেন দেখছি...
(চোখ বড় বড় করে অভিনেতার এক মুখ হাসি...)
শ্রীলেখা মিত্র সম্প্রতি টলিগঞ্জ ইন্ডাস্ট্রির 'নেপটিজম' নিয়ে সরব হয়েছেন। এ বিষয়ে আপনার কী মত?
আমার মনে হয়, শ্রীলেখা নেপটিজম এবং ফেভারিটিজমকে গুলিয়ে ফেলেছে। আমাদের ইন্ডাস্ট্রিতে নেপটিজম তেমন হয় বলে মনে হয় না। যেটা হয়, সেটা ফেভারিটিজম।
যাই বলুন, আদতে বিষয়টা তো হল প্রতিভা বা যোগ্যতাকে অগ্রাধিকার না দিয়ে বিশেষ কাউকে কাজের সুযোগ দেওয়া বা বঞ্চিত করা, সেটা কতটা হয়?
হ্যাঁ। এটা তো আছেই। একমাত্র বোধহয় সত্যজিৎ রায়ই ছিলেন যিনি চরিত্রের স্কেচ এঁকে সেই অনুযায়ী অভিনেতা খুঁজতেন। তবুও তাঁর পছন্দের অভিনেতা ছিল, যেমন সৌমিত্রবাবু, রবি ঘোষ, কামু মুখার্জি।
যাঁদের নাম করছেন, তাঁদের সঙ্গে কি ইন্ডাস্ট্রির আজকের সমস্যার তুলনা চলে?
না, তা নয়। আমি বলছি এই ব্যাপারটা আছে। কাস্টিং কাউচও আছে। আমার কাছে যেসব জুনিয়ররা আসে, আমি তাঁদের ঠিকভাবে গাইড করার চেষ্টা করি। তবে অনেককেই ফাঁদে পড়তে দেখলে খারাপ লাগে। কিন্তু পরিস্থিতি অনেক সময় এমন থাকে যে সবকিছু বুঝলেও কিছু বলা যায় না।