/indian-express-bangla/media/media_files/2025/10/21/cats-2025-10-21-00-14-32.jpg)
দৈনন্দিন জীবনে স্বার্থপর শব্দটার সঙ্গে আমরা সকলে ভীষণ পরিচিত। সিনেমার মাধ্যমে চোখে আঙুল দিয়ে রূঢ় বাস্তবকে তুলে ধরার প্রয়াস?
অন্নপূর্ণা বসু: মানুষ বরাবরই স্বার্থপর, হঠাৎ করে মানুষ আজ স্বার্থপর হয়ে উঠেছে এমনটা কিন্তু নয়। জীবনের অনেক পথ পেরতেই স্বার্থপর হয়ে উঠতে হয়। এটা অস্বীকার করার উপায় নেই। এই কথাটা যখন কেউ ব্যবহার করে সে কিন্তু, খুব কাছের মানুষের উদ্দেশ্যেই নিক্ষেপ করে। যাঁদের থেকে আমরা স্বার্থপরতা আশা করি না তাঁদের জন্য আমাদের মুখ থেকে এই শব্দটা বেরিয়ে আসে। রাস্তায় অচেনা কেউ ঠকিয়ে দিলে কিন্তু, বলি না ও ভীষণ স্বার্থপর। কাছের মানুষের থেকে আঘাত পেলেই তো আমাদের ব্যথা লাগে আর আমরা এই স্বার্থপর শব্দটা উচ্চারণ করি, এটাই কঠিন বাস্তব। এই পৃথিবী যে স্বার্থপর সেটা জেনেই আমরা এগিয়ে যাচ্ছি। তাই সিনেমার মাধ্যমে আলাদা করে বার্তাবহনের প্রয়োজনীয়তা ফুড়িয়েছে।
আজকাল ভাই-বোনের মধ্যে মনোমালিন্য-সম্পত্তি নিয়ে লড়াই এগুলো চেনা ছবি। দর্শকের মনে আরও গভীর ছাপ ফেলতেই প্রথম ঝলকে ভাইফোঁটার দৃশ্য?
অন্নপূর্ণা বসু: ছোটবেলায় ভাই বোনের মধুর সম্পর্ক তারপর সময়ের সঙ্গে নানা বিষয়ে মতানৈক্য। এটা এই সমাজের ভীষণ চেনা একটা ছবি। চারিদিকে এমন অনেক ঘটনা দেখেছি যা সম্পর্ককে বিষিয়ে দিয়েছে আবার অনেকে এই সমস্যা থেকে উত্তীর্ণ হয়েছে। এই ঘটনাগুলোর সঙ্গে আমরা এতটাই পরিচিত যে দর্শকের মনে প্রভাব ফেলতে ভাইফোঁটার দৃশ্য ব্যবহারের প্রয়োজন নেই। কিন্তু, সিনেমার প্রথম ঝলক তো আকর্ষণীয় হওয়াটা বাঞ্ছনীয়। এমন কিছু হবে যা মানুষের মনে দাগ কাটবে।
বাংলা সিনেমার গল্পে পরিবর্তন এসেছে। আজকাল অন্য ধরনের সিনেমা তৈরি হচ্ছে, যার ফল হল দখলের লড়াই। আপনি কেন পারিবারিক প্রেক্ষাপটে ছবি বানালেন?
অন্নপূর্ণা বসু: আমার কাছে একটা ছবির টার্গেট অডিয়েন্স ছোট থেকে বড় প্রত্যেকে। সিনেমা এমন হবে যেটা সকলে দেখতে পারে। স্বার্থপর এমন একটি ছবি যাঁরা বাণিজ্যিক ছবি দেখতে ভালবাসেন তাঁদের ভাল লাগবে। আবার যাঁরা মেইন স্ট্রিমের বাইরে অন্য ধরনের গল্প পছন্দ করেন তাঁদেরও ভাল লাগবে। সত্যি কথার তো কোনও রং থাকে না। চারিদিকের ঘটে যাওয়া ঘটনা অবলম্বনে যেহেতু সিনেমাটা বানানো হয়েছে, বাস্তবের ছোঁয়া রয়েছে তাই আমার ধারণা প্রতিটি দর্শকের মন ছুঁয়ে যাবে।
আরও পড়ুন 'মিসেস সেন' হয়েছি তবে 'ম্যাডাম সেনগুপ্ত' হব সত্যিই কখনও ভাবিনি: ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত
স্বার্থপরের স্ক্রিপ্ট শোনার পর কোয়েল মল্লিকের প্রথম প্রতিক্রিয়া কেমন ছিল?
অন্নপূর্ণা বসু: স্ক্রিপ্টের আগে গল্পটা শুনেছিলেন। আর তাতেই ভীষণ উত্তেজিত ছিলেন। আমরা অনেকবার একসঙ্গে স্ক্রিপ্ট নিয়ে আলোচনা করেছি। তবে প্রথমদিন কনসেপ্ট শুনেই সম্মতি দিয়েছিলেন। আসলে বিষয়টা ভীষণ কমন অথচ কোনওদিন কাজ হয়নি। তাই আমরা প্রত্যেকে ভীষণ এক্সসাইটেড ছিলাম। পরবর্তীতে কাজ করতে গিয়ে বুঝেছি কোয়েলদি একটা আলাদা অনুভূতি দিয়ে সিনেমাটায় কাজ করেছেন।
ব্যক্তিগতজীবনে এমন কোনও ঘটনা রয়েছে যার থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে এমন বাস্তবধর্মী গল্প নিয়ে কাজ করার পরিকল্পনা?
অন্নপূর্ণা বসু: হ্যাঁ, অবশ্যই আছে। আমার জীবনের পাঁচ থেকে ছ'টা এমন ঘটনা রয়েছে আবার অনেক ঘটনা চাক্ষুস করেছি। এমন কিছু সম্পর্ক আছে যেটা নষ্ট হওয়ায় অত্যন্ত খারাপ লেগেছে। আবার এমন কিছুও আছে যা নিয়ে প্রচণ্ড জলঘোলা হয়েছে। স্বার্থপর এমন একটা সিনেমা যা কম-বেশি সকলেই নিজের জীবনের সঙ্গে রিলেট করতে পারবে। আমার বাড়ির পরিচারিকা চা-বিস্কুট দেওয়ার সময় যে গল্প বলছেন আবার নাম করা এক সার্জেনের জীবনেও সেই একই ঘটনা ঘটেছে। ভাই-বোনের সম্পর্ক তো জন্মগত, পরবর্তীতে সেটা ভাল বা খারাপ হয়। কিন্তু, স্বামী-স্ত্রীর মতো ডিভোর্স করা তো সম্ভব নয়।
রঞ্জিত মল্লিক-কোয়েল মল্লিক একসঙ্গে অভিনয় করেছেন। এটা এই ছবির USP?
অন্নপূর্ণা বসু: তা বলা যেতে পারে। এই ছবিতে ওঁরা যেভাবে আছেন সেটা দর্শকের ভাল লাগবে। মজার ব্যাপার বাস্তবে যাঁরা বাবা-মেয়ে তাঁরাই পর্দায় একেবারে ভিন্ন অবতারে। একে অপরকে কী ভাবে চিনলেন সেটা দেখলে মনেই হবে না কোয়েল মল্লিক রঞ্জিত মল্লিকের মেয়ে। এটা দর্শকের কাছে ইন্টারেস্টিং হতে পারে বলে আমার মনে হয়।
শুটিং সেটে কখনও মেয়েকে কোনও কারণে বাবার মতো বকাঝকা করেছেন?
অন্নপূর্ণা বসু: ওঁরা দুজনেই ভীষণ পেশাদার। তাই এই ধরনের ঘটনা ঘটবে সেটা কাম্যও নয়। শটের মাঝে বসে গল্প করতেন। আমি একজন নবগতা পরিচালক হওয়া সত্ত্বেও প্রতিটি শটের পর আমার থেকে সম্মতি নিয়েছেন। এটা সত্যিই আমার বিরাট প্রাপ্তি। কখনও মনে হয়নি ওঁরা এত অভিজ্ঞ হয়েও আমাকে খাটো করছেন। এই ধরনের শিল্পীদের সঙ্গে কাজ করা যে কত বড় আশীর্বাদ সেটা যে কাজ করে সেই বোঝে।
বাংলার সিনেমার হাড্ডাহাড্ডি লড়াই-বক্স অফিস কালেকশন নিয়ে চিন্তিত?
অন্নপূর্ণা বসু: সে তো একটু চিন্তিত বটেই। এতগুলো মানুষ সিনেমাটা দেখবেন। তাঁদের কেমন লাগবে সেটা নিয়ে একটু ভাবিত। তবে বক্স অফিস লড়াইয়ের অভিজ্ঞতা আগে কখনও হয়নি। তাই আমার কাছে নতুন জিনিস উপভোগ করার মতো একটা বিষয়। তাই ভয় পাওয়ার বিষয়টা আপাতত কাজ করছে না, যেটা মনের ভিতর চলছে সেটা হল একটা চাপা উত্তেজনা।
আরও পড়ুন সঞ্জয়জি দ্বারভাঙার মানুষ বলেই হয়ত মফঃস্বল থেকে শহুরে জার্নির স্ক্রিপটা পছন্দ হয়েছে: পৃথা চক্রবর্তী
/indian-express-bangla/media/agency_attachments/2024-07-23t122310686z-short.webp)

Follow Us