হইচই-এ আসছে সৌরভ চক্রবর্তী পরিচালিত ওয়েব সিরিজ 'শব্দ জব্দ'। 'ট্রিকস্টার অ্যান্ড স্প্যান' প্রযোজিত এই সিরিজের স্ট্রিমিং শুরু হবে ২১ ফেব্রুয়ারি। সিরিজের কেন্দ্রীয় চরিত্রে রয়েছেন বিখ্যাত অভিনেতা রজত কাপুর। এই ওয়েব সিরিজের কেন্দ্রীয় চরিত্রটি একজন লেখকের যে অ্যালজাইমারে আক্রান্ত এবং ক্রমাগতই সে বাস্তব থেকে ঢুকে পড়ে তার চরিত্রদের জগতে।
তার এই দুই পৃথিবীতে বিচরণ বেশ খানিকটা ভারসাম্যহীনতা তৈরি করে দিয়েছে। এমন একটা সময়েই তার জীবনে ঘটে যায় অপ্রত্যাশিত একটি ঘটনা আর জন্ম নেয় একটি থ্রিলার। সম্প্রতি সিরিজের গান 'বোকা পাহাড়'-এর লঞ্চ অনুষ্ঠান উপলক্ষ্যে কলকাতায় এসেছিলেন রজত কাপুর। তাঁর সঙ্গে ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা-র একান্ত কথোপকথনের নির্বাচিত অংশ রইল--
আরও পড়ুন: রজত কাপুর-মুমতাজ-পায়েল অভিনীত ‘শব্দজব্দ’! মুক্তি পেল ট্রেলার
এই সিরিজের চরিত্রটি তো দুটি জগতে বিচরণ করে ক্রমাগত-- একটি বাস্তবের এবং একটি তার কল্পনার। আপনার কী মনে হয়, যে কোনও সৃজনশীল মানুষ অথবা কল্পনাপ্রবণ মানুষ বাস্তব জগতে কতটা বিপন্ন বোধ করেন?
কতটা বিপন্ন বোধ করে, সেটা নিয়েই তো সিরিজের গল্পটা।
এই চরিত্রটার কথা নয়, সাধারণভাবে আপনার কি মনে হয় যে একজন কল্পনাপ্রবণ মানুষ বাস্তব জীবনে একটু বিপন্ন?
আমার তা মনে হয় না। যদি না কেউ কোনও কারণে অসুস্থ হয় আর সেটা যে কোনও মানুষের ক্ষেত্রেই ঘটতে পারে। এমনটা নয় যে তার জন্য সৃজনশীল হতে হবে। যদি কেউ সিজোফ্রেনিক হয়, তার দুটো জগৎ থাকে-- বাস্তবের আর কল্পনার। যদি কেউ এই দুটোর মাঝখানে পড়ে যায়, তাহলে বলতে হবে সে খুবই বিপদের মধ্যে আছে... বিষয়টা একেবারেই ভাল কিছু নয়। আমি তেমন কিছু মানুষকে জানি যাঁরা সারাক্ষণ উদ্বেগের মধ্যে থাকেন... তাঁদের ওভাবে দেখতে ভাল লাগে না। আমার মনে হয় এর সঙ্গে সৃজনশীলতার কোনও সম্পর্ক নেই। সবার কথা বলতে পারব না। আমি আমার কথা জানি। আমি নিজের শিকড়টা ভুলি না। অভিনয় করার সময় মনে থাকে যে আমি অভিনয় করছি আর যখন লিখি তখন মাথায় থাকে যে এটা আমার তৈরি করা একটা কল্পনার জগৎ। কখনোই একটা অন্যটার সঙ্গে জড়িয়ে যায় না। যখন কেউ কিছু সৃষ্টি করেন, তখন তিনি নিজে আসলে যা, সেই জায়গায় দাঁড়িয়েই কিন্তু তৈরি করেন। আমি নিজে যেমন, সেখান থেকেই উঠে আসে। অভিনয়ের সময় চরিত্রও আমার ভিতর থেকে উঠে আসে। এটা একটা প্রক্রিয়া-- অন্তর থেকে বাইরে আসার। কিন্তু এটা কখনোই হয় না যে আমি একটা চরিত্র লিখলাম আর সেটা আমার মধ্যে চলে এল। না... তেমনটা ঘটলে সেটা ভয়ঙ্কর। আমার মনে হয় এটা আদৌ হওয়া উচিত নয়।
আরও পড়ুন: কমল হাসানের শুটিংয়ে ভয়াবহ দুর্ঘটনা, নিহত ৩
এই সৌগত সিনহা চরিত্রটা আপনার কতটা পছন্দের?
খুব পছন্দের, খুব ভালভাবে লেখা একটি চরিত্র... আর আমি এই লোকটাকে বেশ পছন্দ করে ফেলেছি। এই সৌগত সিনহা খুব ইন্টারেস্টিং একটা মানুষ। তবে তার কিছু সমস্যা রয়েছে, কিছু দুর্ভোগও রয়েছে। কিছুটা অহঙ্কারি মানুষ আবার অন্যদিকে, নিজের পায়ের তলার জমিটা খুঁজতে চাইছে... এই প্রসঙ্গে আর একটা জিনিস বলব। প্রচুর মানুষ রাইটার্স ব্লক নিয়ে অনেক কিছু বলেন। একজন ফিল্মমেকার হিসেবে বা লেখক হিসেবে আমার কোনওদিন এমন কিছু ঘটেনি। রাইটার্স ব্লক ব্যাপারটা কী, সেটা আমি জানিই না বলতে পারেন। যখন লিখতে বসি, তখন লিখি। যদি কোনও নতুন স্ক্রিপ্ট লেখার ব্যাপার থাকে, তার আগে ৪-৫ দিন লেখার ছন্দটা ধরতে সময় লাগে। ওটা একটা প্রক্রিয়া। একবার ছন্দটা ধরে ফেললেই ব্যাপারটা বেশ সহজ। এমন নয় যে... এবার কী লিখি বলে পনেরো দিন ধরে কেউ বসে, কিছুই নাকি মাথায় আসছে না। এমনটা হয় না। কেউ যদি লিখতে পারে, সে লেখে। তবে হ্যাঁ, এটা ঠিক যে আমি তো ঔপন্যাসিক নই। সেভাবে দেখতে গেলে আমি লেখকই নই। আমি লিখি শুধুমাত্র এইজন্য যে কোনওদিন ওই লেখাগুলি থেকে কোনও ফিল্ম বানাব। হয়তো সেটা আলাদা ব্যাপার।
আরও পড়ুন: ‘শ্রীময়ী’-র জীবনে আসছে বিশেষ কোনও মানুষ
'শব্দ জব্দ' ইউনিট বেশ তরুণ। এদের সঙ্গে কাজ করে কেমন লাগল আপনার, বিশেষ করে পরিচালকের সঙ্গে কাজ করে...
দারুণ! বয়সে তরুণ হওয়ার সবচেয়ে ভাল দিক হল আলস্য থাকে না, একটা খিদে থাকে। ভাল কাজের জন্য খিদে, একটা কিছু ছাপ ফেলে যাওয়ার খিদে। তারুণ্য মানেই এগিয়ে যাওয়ার একটা প্রবল ইচ্ছে থাকবে, কিছুটা অহঙ্কার (তবে ভাল অর্থে), কিছু একটা জয় করার ইচ্ছে থাকে। নিজেকে প্রমাণ করার তাগিদ থাকে একটা, যা খুব ভাল লক্ষণ। সৌরভ, ওর সিনেম্যাটোগ্রাফার... ওর পুরো টিমের সঙ্গে কাজ করার অভিজ্ঞতাটা সত্যিই দারুণ ছিল। খুব ভাল সময় কেটেছে। শুটিংয়ে কখনও কোনও আপোষ করেনি কেউ। যে শটটা চাইছে, যে শটটা দরকার, তার জন্য যা দরকার তাই করেছে। তার জন্য পাহাড়ের মাথায় বাথটব তুলে নিয়ে যেতে হলে সেটাই করেছে। এই প্যাশনটা দর্শক পর্দায় ঠিক ধরতে পারবেন।
চরিত্রটা তো একজন বাবার, তার মেয়ের সঙ্গে একটা সুন্দর জার্নি আছে যার খানিকটা ঝলক দেখেছি আমরা 'বোকা পাহাড়' গানটিতে। চরিত্রের এই বিশেষ জার্নিটা কেমন? (শুনে নিতে পারেন গানটি নীচের লিঙ্কে ক্লিক করে)
আসলে এখানে গোটা পরিবারটাই ভাঙনের মুখে। একটা সময় সবাই থাকত নিউ ইয়র্কে। এখন কলকাতায় চলে এসেছে কারণ সৌগত সিনহা একটা বিশেষ সমস্যার মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে। সৌগতর মনে হয় যে কলকাতায় থাকলে সে সেরে উঠবে। কিন্তু সে আর তার স্ত্রী ক্রমশ পরস্পরের থেকে দূরে সরে যাচ্ছে। মেয়েও কেমন যেন নিজের জগতে হারিয়ে যাচ্ছে, ড্রাগস নিচ্ছে। মেয়ে তার সম্পর্কগুলোর জায়গায় ঠিক কী ভাবছে তা অনেক সময়েই ধরা যাচ্ছে না। কিন্তু এই অদ্ভুত একটা সময়ের মধ্যেও তিনটি চরিত্রই একটা বন্ডিং খুঁজে পায়, ভারি সুন্দর ভাবে পরস্পরের কাছে ফিরে আসে।
আরও পড়ুন: কপিল দেব ও রোমি দেব, রণবীর-দীপিকা’র ৮৩
আপনি যখন বাবার চরিত্রে অভিনয় করেন, একটু হলেও কি আবেগপ্রবণ লাগে?
হ্যাঁ, আমি কিছুটা তো রিলেট করতে পারি। আমার মেয়ের বয়স ২২ আর ছেলের বয়স ১৬। আমার মনে হয় ছেলেমেয়ের দায়িত্ব নেওয়াটা খুব সুন্দর একটা ব্যাপার। একটু আগে যেমন বললাম যে আমি নিজে যা, তার খানিকটা আমার অভিনীত চরিত্রগুলোর মধ্যে এসে পড়ে। তাই আমি যখনই কোনও বাবার চরিত্রে অভিনয় করি, আমার ছেলেমেয়েরা ঠিক চলে আসে আমার মাথার মধ্যে।
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন