Paoli Dam-Ganoshotru: বিনোদিনী রামকৃষ্ণদেব-গিরিশ ঘোষের আশীর্বাদ পেয়েছিলেন যেটা ত্রৈলোক্য পায়নি: পাওলি দাম

Paoli Dam-Troilokya Tarini: ভিন্নস্বাদের চরিত্রে জুড়ি মেলা ভার পাওলি দামের। বড় পর্দায় বারবার ছটভাঙা চরিত্রে অভিনয় করে ভার্সেটাইল অভিনেত্রী হিসেবে ইন্ডাস্ট্রিতে নিজের পরিচিতি তৈরি করেছেন। এবার সিরিয়াল কিলারের ভূমিকায় পাওলি দাম। 'ত্রৈলোক্যতারিণী'-র চরিত্রে অভিনয়ের পর কোন আক্ষেপ রয়ে গেল অভিনেত্রীর মনে?

Paoli Dam-Troilokya Tarini: ভিন্নস্বাদের চরিত্রে জুড়ি মেলা ভার পাওলি দামের। বড় পর্দায় বারবার ছটভাঙা চরিত্রে অভিনয় করে ভার্সেটাইল অভিনেত্রী হিসেবে ইন্ডাস্ট্রিতে নিজের পরিচিতি তৈরি করেছেন। এবার সিরিয়াল কিলারের ভূমিকায় পাওলি দাম। 'ত্রৈলোক্যতারিণী'-র চরিত্রে অভিনয়ের পর কোন আক্ষেপ রয়ে গেল অভিনেত্রীর মনে?

author-image
Kasturi Kundu
New Update
cats

বোল্ড শব্দটা তো আমাদেরই সৃষ্টি: পাওলি দাম

অভিনয়ের মাধ্যমে ত্রৈলোক্যতারিণীর জীবনকে কতটা কাছ থেকে চিনলেন?

পাওলি দাম: এটা সত্যি ঘটনা অবলম্বণে তৈরি। ত্রৈলোক্যতারিণী আঠারোশো শতাব্দীর প্রথম মহিলা সিরিয়াল কিলার। ছোটবেলায় বিধবা হওয়ার পর পতিতালয়ে বিক্রি করে দেওয়া হয়। এরপর ওঁর জীবন কী ভাবে বদলে যায়, বেঁচে থাকার জন্য নারী-পুরুষ নির্বিশেষে সকলের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা  করে এবং সেখান থেকে পরিস্থিতির চাপে সে হয়ে ওঠে একজন সিরিয়াল কিলার। যদিও সেটা ওঁর জীবনের লক্ষ্য ছিল না। একটা সময় পর ত্রৈলোক্যতারিণীর জীবনে আসে কালীবাবু (কাস্টোমার)। পরাধীন ভারতে পুরুষতন্ত্রিক সমাজে তীক্ষ্ম বুদ্ধির জেরে ব্রিটিশদের চোখকেও ফাঁকি দিয়েছিলেন। ত্রৈলোক্যতারিণীর সময় কিন্তু, বিনোদিনীর অস্তিত্বও ছিল। কিন্তু, রামকৃষ্ণদেব ও গিরিশ ঘোষের আশীর্বাদ পেয়েছিলেন যেটা ত্রৈলোক্য পায়নি। ব্রিটিশ আমলে ত্রৈলোক্য সাহসীকতার নজির গড়েছিলেন, যা সত্যিই জানার বিষয়। ত্রৈলোক্যর মানসিক পরিস্থিতি কেমন ছিল যে জায়গায় দাঁড়িয়ে এই মারাত্মক ঘটনাগুলো ঘটাত সেটা অন্যতম প্রধান আকর্ষণ। সাইকোলজিক্যালি ভীষণ ইন্টারেস্টিং।

Advertisment

দীর্ঘ অভিনয় কেরিয়ারে ত্রৈলোক্যর মতো চরিত্রকে ফুটিয়ে তোলাটা চ্যালিঞ্জিং মনে হয়েছিল? আলাদাভাবে কোনও প্রস্তুতির প্রয়োজন?

পাওলি দাম: মাল্টিলেয়ার একটি চরিত্র। আমি বহুবছর ধরে ত্রৈলোক্য করতে চেয়েছি। শুধু আমি না, অনেকেই চেয়েছেন কিন্তু হয়ে ওঠেনি। তবে আমি খুশি যে ত্রৈলোক্যতারিণীকে নিয়ে অবশেষে একটা কাজ হল। পরিচালক আর আমি দুজনেই একটা কথা বলছিলাম, ত্রৈলোক্য অভিশপ্ত। যখনই যে এই চরিত্র নিয়ে কাজ করতে চেয়েছে বাধা পেয়েছে। ইছাপুর রাজবাড়িতে শুট করেছি। বহুবছর আগে এলার শুটিং করেছিলাম। দুটো সম্পূর্ণ ভিন্ন ধারার চরিত্র, তাই আমার কাছে এটা নস্ট্যালজিক একটা মুহূর্তও। প্রতিদিন নয় থেকে সাড়ে ন'ঘণ্টার শুটিং হয়েছে। 

Advertisment

এইরকম চরিত্রে আগে কখনও দর্শক পাওলিকে দেখেনি। কিন্তু অন্যরকম চরিত্র হলেই বোল্ড তকমা জুড়ে দেওয়া হয়। চরিত্র না ভাবনা, কোনটার সঙ্গে 'বোল্ডনেস' কথাটা পারফেক্ট ম্যাচ বলে মনে হয়?

পাওলি দাম: কারণ পোশাকেই শুধু বোল্ড হয় না, ভাবনাতেও বোল্ডনেস থাকে। টলিউডে বাঙালি নায়িকাদের মধ্যে এই তকমাটা আমিই প্রথম পেয়েছিলাম যেহেতু আমি একটু অন্য ধরনের চরিত্রে কাজ করতে পছন্দ করি। তারপর সেই রাস্তায় অনেকে হেঁটেছেন। তাই এখন এটা স্বাভাবিক হয়ে গিয়েছে। বোল্ড শব্দটা তো আমাদেরই সৃষ্টি। গতানুগতিক কিছু না হলেই বোল্ড পদক্ষেপ, বোল্ডনেস এই উপমাগুলো চলে আসে। আমি তো বরাবরই ধারাবাহিকতা ভেঙে কাজ করতে চেয়েছি। কোনওদিনই একই ফুটস্টেপে হাঁটিনি। আমাকে বোল্ড বলতে বলতে এখন বোধহয় সবাই ক্লান্ত হয়ে গিয়েছে। শব্দগুলো বদলানোর সময় এসে গিয়েছে। যখন কোনও পুরুষকে বলে, বোল্ড সিদ্ধান্ত নিয়েছে তখন আমার ভাল লাগে এটা ভেবে যে কিছু মানুষ এই শব্দটার যথার্থ ব্যবহারটা বুঝেছেন।

আরও পড়ুন গয়নার লোভে যৌনকর্মীর ছদ্মবেশে পাওলির নারীহত্যা, ZEE 5-এ আসছে শিহরণ জাগানো বাস্তবের গল্প 'গণশত্রু'

আরও একটি সিরিজ জুলি, সেখানেও তো যৌনকর্মীর চরিত্রে। বারবার এই চরিত্রে অভিনয় করতে অস্বস্তি হয়? এক যৌনকর্মীর রাজনীতিবিদ হয়ে ওঠার গল্প সমাজে কোনও নেগেটিভ প্রভাব ফেলে?

পাওলি দাম: আমরা যখন ইক্যুয়ালিটির কথা বলি তখন একজন মানুষকে এই সমাজ কেন ব্রাত্য করবে? প্রত্যেকটি মানুষের নিজের মতো করে বাঁচার অধিকার আছে, স্বপ্ন দেখারও অধিকার আছে। পতিতাপল্লীতে যে মেয়েটা কাজ করছে সেটা তাঁর পেশা। সেই জন্য কেউ তাঁকে কোনও কিছু থেকে ব্রাত্য করে রাখতে পারে না। ২০২৫-এ দাঁড়িয়ে এ কথা আমরা ভাবব কেন? এই জন্যই জুলি-র স্ক্রিপ্ট আমার পছন্দ হয়েছিল। ছোটবেলা থেকে একটা মেয়ে যা দেখে বড় হয়েছে, যে কঠিন পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে হেঁটেছে সে এই সমাজের মানুষের জন্য প্রকৃত অর্থে কিছু করতে পারবে। যাঁরা প্রিভিলেজড জায়গা থেকে আসে তাঁরা সমাজ ও সাধারণ মানুষের জন্য কতটা ভাবে সেটা নিয়ে আমার মনে প্রশ্ন আছে।

সমাজে যৌনকর্মীদের তো খারাপ নজরে দেখা হয়। এই চরিত্রে অভিনয়ের প্রস্তাব পেলে অস্বস্তিকর মনে হয়?

পাওলি দাম: না, একেবারেই অস্বস্তি হয় না। আমি তো ওভাবে ভাবি না। ওঁরাও মানুষ, কোনও না পরিস্থিতিতেই এই জায়গায় তাঁরা আসেন। সমাজ উন্নত হচ্ছে, ভাবনাচিন্তাতেও বদল আসা প্রয়োজন। আমার ভাবনায় বদল অনেক আগে এসেছিল বলেই তো ইন্ডাস্ট্রিতে আমাকে সর্বপ্রথম বোল্ড অভিনেত্রী বলা হয়েছিল। সকলে উইমেন এমপাওয়ামেন্টের কথা বলে, আমি বলি হিউম্যান এমপাওয়ারমেন্টের কথা।

আরও পড়ুন 'নতুনদের আরও বেশি সুযোগ দিতে হবে', IFFI-র মঞ্চে 'ছাদ' সমাদৃত হতেই বললেন পাওলি

নতুন সিরিজের নাম গণশত্রু আর শত্রু শব্দটা আমাদের জীবনের সঙ্গে ওতোপ্রতোভাবে জড়িয়ে। পাওলি দামের জীবনে কোনও শত্রু আছে যে চেনা শত্রুর অজানা গল্প বলতে চায়?

পাওলি দাম: না, আমি সত্যিই জানি না। তবে যদি কেউ থাকে সেটা আমি জানতে চাই। 

টিজারে একটা জায়গায় লেখা, 'খুনি মনের ময়নাতদন্ত'। সমাজের চারপাশে কত অন্যায় ঘটছে। সেই ঘটনার বিচারই ঠিক মতো হয় না, সুস্থ সমাজ গড়ে তুলতে মানুষের সাইকোলজি নিয়ে ভাবার সময় আছে?

পাওলি দাম: সচেতন করাটাই তো দরকার। যে কোনও মাধ্যমেই মানুষের মধ্যে এই সচেতনবোধটা জাগিয়ে তুলতে হবে। একজন অভিনেত্রী হিসেবে সমাজের প্রতি আমারও একটা দায়বদ্ধতা আছে, কাজের মাধ্যমে মানুষকে সচেতন করা। যা মানুষের মনে প্রশ্ন তৈরি করবে যে কোনটা ঠিক আর কোনটা ভুল। আসলে হ্যামারিংটা চালিয়ে যেতে হবে। আমাদের বুঝতে হবে সুস্থ সমাজের জন্য কোন প্রয়োজন আর কোনটা অপ্রয়োজন। শিক্ষাই তো মানুষের মধ্যে সেই বোধ জাগ্রত করতে সাহায্য করে। 

ত্রৈলোক্যতারিণী-র মতো আর কোনও স্বপ্নের চরিত্র আছে যেখানে সুযোগ পেলে ফের বলতে পারবেন 'ড্রিম কামস ট্রু'?

পাওলি দাম:  প্রথমবার আমরা ত্রৈলোক্যকে নিয়ে কিছু করতে পারলাম সেটা নিঃসন্দেহে বিরাট প্রাপ্তি। তবে স্বপ্নপূরণ যদি বলতে হয় তাহলে বলব আরও বড় পরিসরে ত্রৈলোক্যতারিণীকে নিয়ে কাজ হলে সেটা সম্ভব। ৪০-৪৫ মিনিটে আমরা আমাদের সাধ্যমতো চেষ্টা করেছি। তবে এই চরিত্রটা এমন যে একটা সিনেমা দাবি রাখে। 

পরবর্তী কাজ কী?

পাওলি দাম: আমার আগামী সিনেমা লক্ষ্মীকান্তপুর লোকাল। ২১ নভেম্বর মুক্তি পাবে। লক্ষ্মীকান্তপুর লোকাল নামটা শুনলেই মনে হয় গ্রামবাংলা থেকে শহরে কাজ করতে আসা কিছু মহিলার কথা। যারা ট্রেনে চেপে আসে, সারাদিন কাজ করে চলে যায় তাঁদের জীবনেও গল্প থাকে। আমরা যে সমাজ, সময় এবং যুগে বাস করি সেখানের উল্লেখযোগ্য বিষয়গুলো তুলে ধরা প্রয়োজন বলে আমার মনে হয়। সবসময় সিনেমার মাধ্যমে বার্তাই দিতে হবে এমনটা নয়। কিছু সামাজিক চিত্রও তুলে ধরতে হয়।  

আরও পড়ুন 'ডিসটেন্স রিলেশনশিপ'-এ ভালবাসার মোহ কেটে যায়? প্রেমদিবসে প্রকৃত প্রেম নিয়ে অকপট পাওলি

paoli dam