/indian-express-bangla/media/media_files/2025/08/15/cats-2025-08-15-10-23-08.jpg)
কেমন হল ধূমকেতু?
Dhumketu Review: 'ভানু...ভানু...ভানু...'! 'ওনাকে বলবেন ইন্দ্রবাবু এসেছিল মর্নিং ওয়াকের পার্টনার'। কখনও ভানু তো কখনও ইন্দ্রবাবু। ছকভাঙা চরিত্রে অভিনয় করতে করতে 'চ্যালেঞ্জ', 'পরাণ যায় জ্বলিয়া রে'-তে দেবের সেই চকোলেট বয় ইমেজটা একপ্রকার বিলুপ্তই হয়ে গিয়েছিল। আজ দেবের নামের সঙ্গে জুড়েছে 'মেগাস্টার', 'সুপারস্টার' তকমা। তবে ৯-১০ বছর আগে তৈরি হওয়া ধূমকেতু-র হাত ধরে দেব যেন 'ওল্ড ওয়াইন ইন আ নিউ বোতল'-এর মতো দর্শকের দরবারে ধরা দিলেন। পরিচালক কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায়ের ভাবনায় আরও একবার ভানুর চরিত্রে প্রিয় নায়কের 'রোম্যান্টিজিম'-এ তৃপ্ত হল দেব ভক্তদের কলিজা।
বহুদিন সমস্যার বেড়াজালে আটকে থাকা 'ধূমকেতু' ছবিটা নিয়ে দেব বারবার বলেছেন এই ছবিতে তিনি নিজের সেরার সেরাটা দেওয়ার চেষ্টা করেছেন। স্থূলকায় চেহারা, সাদা লম্বা চুল, মোটা গোঁফ, হাই-পাওয়ারের চশমা পরা ইন্দ্রবাবুর চরিত্রটা দেখলে সত্যিই মনে হবে দেব নিজেকে সম্পূর্ণ ভেঙেচুরে চরিত্রের মধ্যে নিজেকে সম্পূর্ণ নিমজ্জিত করে দিয়েছেন। দ্বৈত চরিত্রে দেব! ১০ বছর আগে এত সাবলীল অভিনয়! তিনি নাকি ঠিক মতো কথা বলতে পারতেন না, অভিনয়টাও ঠিকঠাক জানেন না! কিন্তু, সুযোগ পেলে নিজেকে প্রমাণ করা যায় তার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত 'ধূমকেতু'। তাই বোধহয় একাধারে প্রেমিক, বাবা, দেশদ্রোহী এই তিন চরিত্রেই দেবের কিস্তিমাৎ।
কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায়ের মতো পরিচালকের হাতে পড়েই বোধহয় ভানু হোক বা ইন্দ্রবাবু, সিনেমাজুড়ে দেবের প্রতিভার বিচ্ছুরণ ঘটেছে। দেব ভক্তরা এখন তাঁকে সিনেমার পর্দায় ভিন্ন অবতারে দেখতে অভ্যস্ত। ১০ বছর আগে তৈরি হলেও কাকতালীয়ভাবে ধূমকেতু যেন লেটেস্ট ট্রেন্ড ছুঁয়ে গেল। এবার আসা যাক আজকের 'লেডি সুপারস্টার' শুভশ্রী গঙ্গোপাধ্যায় প্রসঙ্গে। দুজনের অন স্ক্রিন কেমেস্ট্রি দেখার জন্যই তো এই দীর্ঘ প্রতীক্ষা। পাহাড়ি সৌন্দর্যের মাঝে হিমেল হাওয়া গায়ে মেখে দেব-শুভশ্রীর প্রেমের উষ্ণ আলিঙ্গন যেন দর্শকের গায়ে শিহরণ জাগাবে।
কিন্তু, ভানু-রূপার পর্দার প্রেমকাহিনি-বিয়ের শেষ পরিণতি যেন বাস্তবের দেব-শুভশ্রীর সঙ্গে হুবহু এক। ছবির স্বার্থে যেমন দীর্ঘ কয়েক বছর পর একসঙ্গে দুজনে কিন্তু, আলাদা-আলাদা। ধূমকেতুর দ্বিতীয়ভাগটা যেন বাস্তবে দেব-শুভশ্রীর অসমাপ্ত প্রেমকাহিনির এক নিখুঁত বুনোটে তৈরি চিত্রনাট্য। ধূমকেতু মানেই দেব-শুভশ্রী, ছবি দেখার আগে পর্যন্ত এটাই ছিল প্রতিটি দর্শকের ভাবনা-আবেগ।
আরও পড়ুন হৃত্বিক-রজনীকান্তকে ছাপিয়ে 'দেশু' ম্যাজিক, বাজনা বাজিয়ে কেক কেটে 'ধূমকেতু'-র মুক্তি উদযাপন
চোখের জল যেন 'দেশু' জুটির জন্যই তুলে রেখেছিলেন ভক্তরা। কিন্তু, দেব-শুভশ্রীর প্রেমের সঙ্গে দেব-রুদ্রনীলের বন্ধুত্বের 'ওভার বাউন্ডারি' গুলো কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায় এমনভাবে খেলেছেন যে রুদ্রনীল বুঝিয়ে দিয়েছেন, 'শো মাস্ট গো অন'। একটা প্রশ্ন নিশ্চয়ই মনে ঘুরপাক খাচ্ছে, ভানু তো রূপার প্রেমিক, তাহলে ইন্দ্রবাবু দেব কোন চরিত্রে?
এটা কিন্তু, সিনেমার পর্দায় উপভোগ করাটাই 'বেটার'। কারণ একজন মানুষকে যখন একসঙ্গে দুটো জীবনে বাঁচতে হয় তখন কতটা কঠিন পথ পেরতো হয় সেটাই দেখিয়েছে কৌশিকের ইন্দ্রবাবু। পরিস্থিতি, কমিটমেন্টের জন্য ইচ্ছে হলেও ফেলে আসা অতীতে আর ফেরা যায় না। শুধু স্মৃতি আঁকড়ে বাঁচতে হয়। মায়ের আঁচলের গন্ধ দূর থেকেই অনুভব করতে হয়। তরুণ থেকে বৃদ্ধ দেবের এই রূপ ১৩ থেকে ৮৩-এর হৃদয় ছুঁয়ে যাবে।
আরও পড়ুন 'ধূমকেতু রাজার মতো এসেছে', অগ্রিম টিকিট বুকিংয়ে শো হাউজফুল হতেই উচ্ছ্বসিত দেব
এই ছবিতে প্রেমিক ভানুর থেকেও 'দেশদ্রোহী' ইন্দ্রবাবু শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত দর্শককে সিটে বসিয়ে রাখতে বাধ্য করবে। আর এই ভানু থেকে ইন্দ্রবাবু হয়ে ওঠার নেপথ্যে রয়েছেন চিরঞ্জিৎ চক্রবর্তী। স্বল্প সময়ের স্ক্রিন টাইম হলেও করতালিটা কুঁড়িয়ে নিয়েছেন। লাস্ট বাট নট ইন লিস্ট, ধূমকেতু ফিরিয়ে আনল হিন্দি ছবি 'বাবুল'-এর নস্ট্যালজিয়া।
ভানু রূপার থেকে আলাদা হয়ে যাওয়ায় তাদের একমাত্র মেয়ে তিতলির ভবিষ্যৎ-এর কথা ভেবে শ্বশুরমশাই পুত্রবধূকে তুলে দেয় পরমব্রত চট্টোপাধ্যায়ের হাতে। ঠিক যেভাবে অমিতাভ বচ্চন রানি মুখোপাধ্যায়কে জন আব্রাহামের হাতে তুলে দিয়েছিলেন। সব মিলিয়ে প্রেম-বিচ্ছেদ-বন্ধুত্বের এক অদ্ভুত সমাপতন 'ধূমকেতু'।
আরও পড়ুন সমপ্রেমের গল্প 'কলঙ্কিনী রাধা' শুভশ্রী! ঋতুস্মরণে ইন্দ্রদীপের অনন্য সৃষ্টি 'গৃহপ্রবেশ'