Ritwik Ghatak Birthday: আমার পিছনে জোরে লাথি মারলেন! আমি তো স্তম্ভিত হয়ে বললাম ঋত্বিকদা: গৌতম ঘোষ

Ritwik Ghatak: ঋত্বিক ঘটকের জন্মশর্তে প্রকাশিত হয়েছে Unmechanical: Ritwik Ghatak in 50 Fragments। তাঁর জীবনের অজানা গল্প শুনলে হাসতে বাধ্য।

Ritwik Ghatak: ঋত্বিক ঘটকের জন্মশর্তে প্রকাশিত হয়েছে Unmechanical: Ritwik Ghatak in 50 Fragments। তাঁর জীবনের অজানা গল্প শুনলে হাসতে বাধ্য।

author-image
Kasturi Kundu
New Update
dwqqwe

জন্মদিনে অজানা গল্প

Ritwik Ghatak Unknown Facts: ঋত্বিক ঘটক, জন্ম ১৯২৫ সালের ৪ নভেম্বর। তিনি ছিলেন একাধারে অসামান্য চলচ্চিত্রকার, নাট্যকার, শিক্ষক ও চিন্তাবিদ। ভারতীয় সিনেমার ইতিহাসের এক অনন্য বিপ্লবী শিল্পী। তাঁর সৃষ্টির প্রতিটি ফ্রেমে যেন ধ্বনিত হয়েছে মানুষের বেদনা, বিভাজনের ক্ষত এবং স্বপ্নভঙ্গের ক্রন্দন। তাঁর জন্মশর্তে প্রকাশিত হয়েছে  Unmechanical: Ritwik Ghatak in 50 Fragments, বইটির লেখক শান্তনু রায়চৌধুরী আর এডিটর সাম্য দাশগুপ্ত। কিংবদন্তি পরিচালক ঋত্বিক ঘটকের জীবনের অনেক অজানা গল্প উঠে এসেছে এই বইতে। ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলার তরফে যোগাযোগ করা হয়েছিল এডিটর সাম্য দাশগুপ্তের সঙ্গে। কয়েকটি মজার ঘটনা শেয়ার করেছেন। দেখে নিন এক নজরে। 

Advertisment

ভাস্কর চন্দ্রভারকর, এফটিআইআই-এর সংগীত শিক্ষক: এপ্রিলের এক ভোরের গল্প। ঘড়ির কাঁটায় তখন সাড়ে তিনটে। পুণে শহরে প্রচণ্ড গরম কিন্তু সেই ভোরের হিমেল হাওয়া ছিল ঠান্ডা। যার মধ্যে ছিল এক অদ্ভুত প্রশান্তি। এক লম্বা মানুষ, ছ’ফুটেরও বেশি। সাদা ধুতি  পঞ্জাবি পরে এফটিআইআই-এর রেকর্ডিং স্টুডিওতে বিভিন্নরকম বাদ্যযন্ত্র নিয়ে প্রাণ খুলে বাজিয়ে চলেছেন। সেই যন্ত্রগুলো থেকে অবিরাম বেরিয়ে আসছিল একের পর এক অদ্ভুত শব্দ। কখনও বাঁশিতে ফুঁ দিয়ে শিসের মতো আওয়াজ তুলছেন তো কখনও বার্মিজ গং বাজাচ্ছেন। একটানা এইভাবে চলছিল তাঁর পরীক্ষা। তিনি আর কেউ নন, খ্যাতনামা বাঙালি চলচ্চিত্রকার ঋত্বিক কুমার ঘটক। আমাদের গানের রেকর্ডিং সেশন আর তাঁর মদ্যপান, দুটোই শুরু হয়েছিল আগের সন্ধ্যায়। রাত ন’টার মধ্যে তিনি ঘুমিয়ে পড়েছিলেন কারণ নিজের ক্ষমতার বাইরে গিয়ে মদ্যপান করেছিলেন। কিন্তু ভোরবেলা খুব আশ্চর্যজনকভাবে পুনর্জীবিত হয়ে উঠলেন। রেকর্ডিস্ট, অর্কেস্ট্রার আর আমি সবাই হতভম্ব! কিছুই বুঝে উঠতে পারছিলাম না। দুই মাস পরে আমরা বুঝতে পারলাম, সেই অদ্ভুত শব্দগুলোর অর্থ। যখন ছবিটা সম্পূর্ণ হল আর আমরা দেখলাম, ভাষা হারিয়ে ফেলেছিলাম। সেই এপ্রিলের সকালে ঋত্বিকদা যে সব অচেনা শব্দ সৃষ্টি করেছিলেন সেগুলো জীবন্ত হয়ে উঠেছিল ভয় ছবিটিতে। 

গৌতম ঘোষ, চলচ্চিত্র পরিচালক:  আমি নিজেকে খুব ভাগ্যবান মনে করি কারণ ঋত্বিকদার সান্নিধ্যে আসার সুযোগ পেয়েছিলাম। ১৯৭৪ সালে আমি 'হাঙ্গরি অটাম' নামের একটি ছবি তৈরি করেছিলাম। প্রচণ্ড কষ্ট করে কাজটা শেষ করতে হয়েছিল আর মৃণাল সেন আমাদের প্রচুর সাহায্য করেছিলেন। তিনি ব্যাংক থেকে ঋণ পাওয়ার যাবতীয় বন্দোবস্ত করে দিয়েছিলেন। ছবিটা সম্পূর্ণ হওয়ার পর আমরা ইন্ডিয়া ল্যাবসে একটি বিশেষ প্রদর্শনীর আয়োজন করেছিলাম। উপস্থিত ছিলেন মৃণালদা, ঋত্বিকদা, তরুণ মজুমদার, ভূপেন হাজরিকা, হরিসাধন দাসগুপ্ত। প্রদর্শনী শেষ হয়ে যখন আমরা বাইরে বেরোচ্ছি হঠাৎ ঋত্বিকদা আমার পিছনে জোরে লাথি মারলেন! আমি তো স্তম্ভিত, ঋত্বিকদা! প্রচণ্ড উচ্ছ্বসিত হয়ে বললেন, 'শালা, ফাটিয়ে দিয়েছিস! এখানে এত বড় বড় সিনেমা-নির্মাতা আছে তাদের বল, বল, বল, ও কী করেছে! এই ছিল ঋত্বিকদার ভালোবাসা। রাগ, উচ্ছ্বাস, আর স্নেহের এক মিশ্র রূপ। আজও সেই লাথিটার অনুভব আমি ভুলতে পারিনি। ওটা ছিল ভালোবাসার লাথি।'

Advertisment


হাবিবুর রহমান খান 'তিতাস একটি নদীর নাম'-এর প্রযোজক: প্রথম দিনের শুটিংয়ে আমরা ঢাকার কাছাকাছি একটি জায়গায় গিয়েছিলাম। আমাদের ইউনিটে প্রায় একশো জন ছিল। ঋত্বিকদা ভিউফাইন্ডার দিয়ে তিনবার চারপাশে তাকিয়ে বললেন, 'প্যাক আপ' আমি অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলাম, 'এটা কী ব্যাপার?' তিনি বললেন, 'এই লোকগুলো গরিব। আজ কিছু না করেও ওরা টাকা পাবে। তোমার কিছু টাকা খরচ হবে। সবাই লাভবান হবে।' আরেকদিন সন্ধ্যায় তিনি বললেন, 'চাইনিজ খাবার খেতে ইচ্ছে করছে।' আমি তাঁকে রেস্তোরাঁয় নিয়ে গেলাম। সাত-আট রকমের খাবার অর্ডার করলেন যদিও তিনি ভোজনরসিক মানুষ ছিলেন না। খানিকটা এটা, খানিকটা ওটা খেলেন কিন্তু প্রায় সবটাই অপচয় হল। আমি জিজ্ঞেস করলাম, এটা কী করলেন, ঋত্বিকদা? তিনি বললেন, 'তুমি বুর্জোয়া শ্রেণির মানুষ তোমার একটু টাকা খরচ করলাম। সমস্যা কী?'

আরও পড়ুন 'অসাধারণ প্রতিভা ও ক্যারিশ্মা দিয়ে...', শাহরুখের ৬০তম জন্মদিনে উষ্ণ শুভেচ্ছা মুখ্যমন্ত্রী মমতার

মহাশ্বেতা দেবী: আমরা যখন ওই বাড়িতে থাকতাম, তখন ঋত্বিক একবার খুব বোকামি করেছিল। তুতুল (মণীশ ঘটক, মহাশ্বেতার বাবা এবং ঋত্বিক ঘটকের জ্যেষ্ঠ ভ্রাতা)  জিনিসপত্র সংগ্রহ করতে ভালোবাসত। দরকার না থাকলেও নানা ফ্যান্সি জিনিস কিনত। তার মধ্যে একটি ছিল গাঢ় নীল রঙের সাঁতারের পোশাক। কেন কিনেছিল কে জানে? আমরা তাকে কখনও ওটা পরে সাঁতার কাটতে দেখিনি। মাঝে মাঝে বলত ভোবার সাঁতার শেখা দরকার, এটা খুব জরুরি। ভোবা (ঋত্বিক ঘটক) সেই ট্রাঙ্কসটির দিকে অনেক দিন ধরেই নজর রাখছিল। ১৯৩৯ সালের কোনও এক ভোরে সে সেটি চুরি করে নিয়ে গেল হ্রদের ধারে। কী করবে জানত না, তাই স্রেফ ট্রাঙ্কস পরে গিয়ে ডাইভিং বোর্ডে দাঁড়াল, হাতে হাত গুটিয়ে ঠিক স্বামী বিবেকানন্দের বিখ্যাত ভঙ্গিতে। ঠিক তখনই কেউ পেছন থেকে হিন্দিতে চিৎকার করে উঠল, অরে বাচ্চু, কী দেখছো? ডাইভ মার! বলে ধাক্কা মেরে ফেলল জলে।

ভোবা সোজা নিচে তলিয়ে গেল। কোনোমতে ভেসে উঠে চিৎকার করল, আমি তো সাঁতার জানি না, বাঁচাও! সেই ভদ্রলোক তৎক্ষণাৎ জলে ঝাঁপিয়ে পড়ে তাঁকে তুলে আনলেন। দু’জনেই ভেজা অবস্থায় একসঙ্গে বসে পড়ল। ভদ্রলোক বারবার বলছেন, আমি বড় পাপ করেছি। তিনি প্রতিদিন সকালে নিজের ছোট ভাইকে সাঁতার শেখাতে আনতেন। ভাই সাঁতার শিখেছে কিন্তু ডাইভ দিতে ভয় পায়। ভোবাকে নিজের ভাই ভেবে ভুল করেছিলেন। পরে তিনি গাড়িতে করে ভোবাকে বাড়ি পৌঁছে দিলেন। ভোবার মুখে বিজয়ের হাসি সঙ্গে অনেক মিষ্টি আর চকোলেট। সব শুনে তুতুল চেঁচিয়ে উঠল, ভোবা আজ মরেই যাচ্ছিল! এটা ভয়ানক!

আরও পড়ুন রণজয়ের সঙ্গে সম্পর্কের গুঞ্জন, প্রি বার্থডে সেলিব্রেশন পোস্টে চর্চায় সিলমোহর? জন্মদিনে শ্যামৌপ্তি বললেন...

তারপর সে ভোবাকে জিজ্ঞেস করল, তুই যখন সাঁতার জানিস না তখন হ্রদে গেলি কেন? ভোবা মুখ কুঁচকে কান্নাভেজা গলায় বলল ভাবছিলাম ট্রাঙ্কসটা পরলে আমি সাঁতার কাটতে পারব। মা শান্তভাবে ট্রাঙ্কসের দিকে ইশারা করে তুতুলকে বললেন, তুমি যদি এমন বাজে জিনিস বাড়িতে রাখো ছোট ছেলেরা তাতে আকৃষ্ট হবেই। ভোবা তার ব্যতিক্রম নয়। এরপর মা আর তুতুলের মধ্যে শুরু হল ঝগড়া। দশ বছর আগের কথা টেনে আনলেন মা। তুতুল যে হান্টিং বুট কিনেছিল তা কখনও ব্যবহারই হয়নি আর এখন সেটা নাকি ইঁদুরের বাসা হয়ে গেছে ইত্যাদি ইত্যাদি।

আরও পড়ুন রাত ১২ কেক কেটে সেলিব্রেশন, কৃষভির প্রথম জন্মদিনে আবেগে ভাসলেন শ্রীময়ী-কাঞ্চন

Ritwik Ghatak