Uttam Kumar : চিরবিদায় মহানায়ক: জীবনের শেষ মুহূর্তে উত্তম কুমারের সাথে যা ঘটেছিল...

Uttam Kumar Untold Story : উত্তম কুমারের মৃত্যুর ঠিক আগে কী ঘটেছিল? তাঁর শেষ শুটিং, শেষ কথা এবং অপূর্ণ ইচ্ছা — জানুন এক হৃদয়স্পর্শী সব অজানা তথ্য। মহানায়কের বিদায়ে আজও আমাদের মন ভারাক্রান্ত হয়ে যায়।

Uttam Kumar Untold Story : উত্তম কুমারের মৃত্যুর ঠিক আগে কী ঘটেছিল? তাঁর শেষ শুটিং, শেষ কথা এবং অপূর্ণ ইচ্ছা — জানুন এক হৃদয়স্পর্শী সব অজানা তথ্য। মহানায়কের বিদায়ে আজও আমাদের মন ভারাক্রান্ত হয়ে যায়।

author-image
Shashi Ghosh
আপডেট করা হয়েছে
New Update
 mahanayak graphics

চিরবিদায় মহানায়ক Photograph: (গ্রাফিক্সঃ সন্দীপন )

Uttam Kumar Untold Story Tollywood News Update : কলকাতার আকাশটা সেদিন কিছু জানত। অদ্ভুত নির্লিপ্ত ছিল চারপাশ। শহর যেন জানত, আজ কিছু একটা ঘটবে। আজ কোনও দৃশ্যের রিটেক হবে না। আজ ক্যামেরা থেমে যাবে। লাইট, সাউন্ড, ক্যামেরা এই ধরনের শব্দরা আজ স্টুডিওতে স্তব্ধ হয়ে পড়বে। সালটা ১৯৮০, ২৩ শে জুলাই। 'ওগো বধূ সুন্দরী', ছবির শুটিংয়ে ব্যস্ত ছিলেন নায়ক। শুটিং চলছিল। চলছে শুটিং ফ্লোরে হইহুল্লোড়। তাঁর হাসি, অভিনয়, অঙ্গভঙ্গি—সবই ছিল স্বাভাবিক, প্রাণবন্ত! কিন্তু হঠাৎ নায়ক বুকে হাত রাখেন। কেউ বুঝতে পারেননি তখনও, এটায় ক্যামেরার সামনে অভিনয়ের তাঁর শেষ মুহূর্ত।

Advertisment

'এখনও বুড়ি হইনি...', যশ-নুসরতের 'আড়ি'-র প্রিমিয়ারে জমজমাট জন্মদিন সেলিব্রেশন মৌসুমীর

যমদূত ( Bengali films) শেষ দৃশ্যের চিত্রনাট্য নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। শুটিংয়ের আগে পর্যন্ত কেউকে টেরও পেতে দেননি। তিনি অসুস্থ বোধ করছেন। সেই সময় খবরে এসেছিল, 'ওগো বধূ সুন্দরী'র (Ogo Bodhu Shundori) শুটিং ফ্লোর থেকেই হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার সময় কিছু একটা বিরবির করছিলেন মহানায়ক। তবে সেদিন মহানায়কের কথা বুঝতে পারেননি কেউ। বেলভিউতে নিয়ে যাওয়ার পর ডাক্তার সুনীল সেনের তত্ত্বাবধানেই দ্রুত শুরু হয় চিকিৎসা। তখনও অস্পষ্টভাবে কিছু একটা বলে চলেছিলেন উত্তম। সালটা ১৯৮০। তারিখ ২৩ জুলাই। মহানায়ককে বাঁচাতে লড়ে যাচ্ছেন বেলভিউের চিকিৎসকরা। কলকাতা সেদিন দেখেছিল অঝোর বৃষ্টি। আর তার পরের দিনই সেই দুঃসংবাদ। যা শুনে কেঁপে উঠেছিল গোটা বাংলা। ২৪শে জুলাই, ১৯৮০। মহানায়কের মহাপ্রস্থান।

হাসপাতালের বেডে কাতরাচ্ছেন বর্ষীয়ান অভিনেত্রী, চিন্তিত ভক্তরা

Advertisment

বাংলা সিনেমার ইতিহাসে (Bengali cinema history) একটি শোকের দিন। চলে গেলেন সেই মানুষটি, যাঁর অভিনয়ে চরিত্র জন্ম নিত। প্রেমে পড়ত কিশোর থেকে প্রৌঢ় সকলে। যাঁর হাঁটায়, হাসিতে, কণ্ঠে ধরা পড়ত এক জাদুকরের ছোঁয়া। তিনি আর কেউ নন বাঙালির অন্যতম সেন্টিমেন্ট, উত্তম কুমার (Uttam Kumar)। এই বাংলার মহানায়ক। যিনি ছুঁয়ে দিলে এক কালে পাথর ও সোনা হয়ে যেত। 

জীবনের শেষ কয়েকটি বছর উত্তম কুমার খুব বেশি চুপচাপ হয়ে পড়েছিলেন। চারপাশে ছিল পরিচিত মুখ, কিন্তু আপন ছিল না কেউ। অনেক রাত তিনি নিঃশব্দে জানালার পাশে বসে থাকতেন—এক কাপ চা, টেপরেকর্ডার আর অজস্র না বলা কথা নিয়ে। মৃত্যু যে তাঁর দরজায় কড়া নাড়ছে তা হয়তো বুঝতে পেরেছিলেন মহানায়ক! রেকর্ড করে রাখতেন তার গলার স্বর। মৃত্যুর আগে শেষ গলার স্বরও গেল চুরি হয়ে।

পহেলগাঁও হত্যাকাণ্ডে মর্মাহত আমির, বড় সিদ্ধান্ত নিলেন মিস্টার পারফেক্টশনিস্ট

উত্তম কুমারের মৃত্যুর আগে এমন কিছু ঘটনা তুলে ধরা হল যা অনেকের অজানা কিংবা জেনেও হয়তো স্মৃতির পাতায় ধুলোর আস্তরণ পড়ে গিয়েছে 

শেষ অভিনয়, যার কোনো দর্শক নেই

‘ওগো বধূ সুন্দরী’র সেটে তিনি ছিলেন প্রতিদিনকার মতন স্বাভাবিক। শরীর যে জবাব দিচ্ছে তা বেশ কয়েকদিন ধরেই বুঝতে পারছিলেন। এর মাঝেও শুটিং চালিয়ে যাচ্ছিলেন। অসুস্থতা নিয়েই শট দেওয়া শেষ করেছিলেন তিনি। কাউকে টেরও পেতে দেননি। সহ-অভিনেতা, লাইট, সাউন্ড, ক্যামেরা—সব ছিল প্রস্তুত। হঠাৎ করে তিনি বুকে হাত রাখলেন। কেউ বুঝতে পারল না, যে দৃশ্য তাঁরা দেখছে, তা অভিনয় নয়। তা ছিল জীবনের সঙ্গে লড়াইয়ের শেষ দৃশ্য। জীবন আর মৃত্যুর লড়াইয়ের সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে আছেন নায়ক। মৃত্যুর সঙ্গে ডুয়েল খেলা চলছে। নিয়ে যাওয়া হল বেল ভিউ হাসপাতালে নেওয়ার সময়ও কেউ ভাবেনি, তাঁকে আর ফিরে পাওয়া যাবে না।

সবটাই দেখনদারি, আর ইন্ডাস্ট্রিতে খাপ খাওয়াতে পারছেন না স্বস্তিকা! নিলেন বড় সিদ্ধান্ত...

ধোঁয়ার রিং আর একটুকরো...

হাসপাতালের শয্যায় শুয়ে থাকা উত্তম কুমার সিগারেট চাইলেন। ডাক্তাররা বিস্মিত। অনুমতি দেওয়া হল। তিনি ধীরে ধীরে দু-একটা টান দিলেন, ধোঁয়ার রিং ছাড়লেন উপরের দিকে তাকিয়ে। হাসপাতালে মহানায়ককে দেখার ভিড়। কেউ কেউ বলাবলি করছে, "একেই বলে অভিনেতা, শেষ মুহূর্তেও যেন ক্যামেরার সামনে...", উত্তম যেন নিভে যাওয়ার আগে পর্যন্ত কোনও অভিনয়ের সংলাপ তৈরি করে যাচ্ছেন এখুনি ডাক পড়বে দৃশ্যের শুটিংয়ে।

সুচিত্রা আর এলেন না...

সুচিত্রা সেন (Suchitra Sen)। উত্তম কুমারের জীবনের এক অলিখিত অধ্যায়। উত্তম কুমার মৃত্যুর চেনা গণ্ডির মধ্যেই ঘুরপাক খাচ্ছিল শেষ ক’দিনে বন্ধুদের বলেছিলেন, “ওকে আর একবার দেখতে চাই... শুধু একবার…” কিন্তু সে দেখা আর হল না। সুচিত্রা আসেননি। হয়তো পারেননি। হয়তো ভেঙে পড়ার ভয় ছিল তাঁর। অভিমানে নয়, যেন শেষ দৃশ্যের সমাপ্তি যেন নিজের চোখে দেখতে না হয়!

শেষ কথাগুলো, যেগুলো আজও কাঁদায়

উত্তম কুমারের মেকআপম্যান বশির আহমেদ। এই বশিরের কাঁধে মাথা রেখে বলেছিলেন, “মানুষ আমাকে ভুলে যাবে, বশির…” এই একটা কথায় যেন যেন বাংলা চলচ্চিত্রের সবচেয়ে মর্মান্তিক সংলাপ হয়ে রয়ে গেল। কিন্তু কে বলবে, উত্তম কুমারকে মানুষ ভুলে গেছে?
প্রতিটি রেডিওর পুরনো গানে, প্রতিটি সাদা-কালো ফ্রেমে, প্রতিটি দর্শকের বুকের গভীরে তিনি আজও আছেন থাকবেন হৃদয় জুড়ে।

শেষ রাতে 'শেষের কবিতা'

হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে শেষ রাতে পড়ছিলেন রবীন্দ্রনাথের শেষের কবিতা (Rabindranath Tagore Poem)। পাশে পড়ে থাকা খোলা বইটা যেন বলে যাচ্ছিল, এই জীবনেরও কোনও শেষ নেই, যতদিন প্রেম আছে, স্মৃতি আছে, বাংলা সিনেমা আছে, ততদিন তার সাথে আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে আছে উত্তম।

“এই পথ যদি না শেষ হয়...”

সেই পথ শেষ হয়নি। শেষ হবে না। কারণ উত্তম কুমার বেঁচে থাকেন, শুধু রিলের ভেতর নয়, আমাদের চোখে, কান্নায়, আবেগে, অনুভূতিতে এবং এক অনন্ত ভালোবাসায়। বাংলার প্রতিটি ঘরে আজও মিশে রয়েছে উত্তমের স্মৃতি। এখনও কোথাও বেজে ওঠে,  'সূর্য ডোবার পালা আসে যদি আসুক, বেশ তো বেশ তো...'

তথ্যসূত্র:

  • আনন্দবাজার পত্রিকা, জুলাই ২৪-২৬, ১৯৮০ — উত্তম কুমারের মৃত্যু সংক্রান্ত বিশেষ প্রতিবেদন ও স্মরণ সংখ্যা।
  • "উত্তম কুমার: মহানায়কের জীবন ও মৃত্যু" — গৌতম ভট্টাচার্য 
  •  সলিল দত্তের সাক্ষাৎকার — ওগো বধূ সুন্দরী সিনেমার শেষ শুটিংয়ের অভিজ্ঞতা 
tollywood bengali films Uttam Kumar