/indian-express-bangla/media/media_files/2025/11/03/cats-2025-11-03-20-14-09.jpg)
উৎসবের মরশুম পেরিয়ে গিয়েছে ঠিকই, তবুও প্রথম কথা তাই শুভ বিজয়ার প্রণাম...
সুস্মিতা মুখোপাধ্যায়: তোমাকেও অনেক আশীর্বাদ।
দুর্গাপুজো কেমন কাটল?
সুস্মিতা মুখোপাধ্যায়: এবারে আমি কিছুই করতে পারিনি কারণ বাড়ি শিফট করেছি। আমার একটা বাংলো বাড়ি ছিল কিন্তু, ছেলের ফেব্রুয়ারিতে বিয়ে হয়েছে। আমাদের একটা অফিসও উদ্ভোধন হয়েছে, তাই সেখানে শিফট করেছি। কলকাতা থেকে আমার দিদিরা শাড়ি পরে সুন্দর সেজেগুজে ছবি পাঠাচ্ছে আর আমি তখন ঘর পরিষ্কারে ব্যস্ত। এবার মা দুর্গার আশীর্বাদে মনের মতো জায়গায় এখন আমার নতুন ঠিকানা। শিফটিং নিয়ে ব্যস্ত থাকায় এবারে পুজোটা অন্যবারের মতো সেলিব্রেট করা হয়নি।
বাঙালি রীতি মেনে মা দুর্গাকে বরণ করেন?
হ্যাঁ, অবশ্যই। আমার বিয়ে হয়েছে উত্তরপ্রদেশের ঠাকুর পরিবারে। শ্বশুরবাড়িতে নবরাত্রি যেমন পালন করি তেমনই আবার দুর্গাপুজোতেও আনন্দ করি। দুর্গা মা আমার ভীষণ প্রিয়। নবরাত্রির ন'দিন পালন করার পরই বাঙালির দুর্গাপুজো উদযাপনে মেতে উঠি।
পুজোর আনন্দের যে ঘাটতি সেটা দীপাবলিতেও গ্র্যান্ড সেলিব্রেশনের মাধ্যমে পুষিয়ে নিয়েছেন?
সুস্মিতা মুখোপাধ্যায়: না না। আমি এখন আর দীপাবলিতে অত কিছু করি না। ছেলের বিয়ের পর প্রথম দীপাবলি ছিল। ওঁরা এসেছিল, ওঁদের জন্য উপহার কিনেছিলাম। ছোট ছেলে বিদেশে, স্বামীও বাইরে থাকেন। আমি নিজের মতোই সুন্দর করে ঘরোয়া আয়োজনে পুজো করি। তবে খুব বেশি নিয়ম পালন এখন আর করতে পারি না। বয়স বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে ঈশ্বরও মনের অনেক গভীরে প্রবেশ করেন। আমারও মনে হয়, মনের মধ্যেই ঈশ্বরের বাস।
নতুন ছবি মিশমি মুক্তির অপেক্ষায়। বাঙালি পরিচালক সুমন অধিকারীর সঙ্গে কাজের অভিজ্ঞতা কেমন?
সুস্মিতা মুখোপাধ্যায়: ভীষণ ভাল। এই ধরনের ছোট কাজের মধ্যে অনাবিল আনন্দ থাকে। বলিউডের মতো বৃহৎ পরিসরে কাজ একরকম আবার এই ধরনের ছবিতে কাজের অভিজ্ঞতা আরেকরকম। এই ধরনের ছবি এত ভাল লাগে ভাষায় প্রকাশ করা যায় না। বাচ্চা মেয়েটি এত কিউট যে ওর সঙ্গে কাজ করতে এমনিই ভাল লাগবে। আমাদের মধ্যে ভাল বন্ডিং তৈরি হয়ে গিয়েছিল। একসঙ্গে ডান্স করতাম, ভিডিও বানাতাম। কম বাজেটের ছবি কিন্তু এত ভাল। সুমন দা অনেকদিন প্রযোজক খুঁজেছেন। তারপর যখন পেয়েছেন ছবিটি তৈরি করেছেন। পুরো টিমটা পরিবারের মতো হয়ে গিয়েছিল।
টিমে কোনও বাঙালি থাকলে জমিয়ে গল্প করেন?
সুস্মিতা মুখোপাধ্যায়: হ্যাঁ, খুব ভাল লাগে। বাংলায় কথা বলার সুযোগ পেলে আনন্দ হয়। উত্তরপ্রদেশে বিয়ে হয়েছে, দীর্ঘ জীবন কিন্তু বাংলা আমার একদম ঝরঝরে। এখানে বাঙালি বন্ধু খুব কম। কলকাতা থেকে একজন এসেছেন, তিনি বাঙালি। দেখা হলে বাংলায় কথা বলি। বাঙালি খাবার, মাছের চচ্চড়ি, ভাত মানে যেটা বাঙালির সংস্কৃতি সেটা পেলে ভীষণ আনন্দ হয়। আমি নিজের সংস্কৃতিকে ছেড়েও দিইনি। আমার পরিবার বাঙালি, তাই আমিও মনেপ্রাণে বাঙালিয়ানায় বিশ্বাসী।
পছন্দের বাঙালি খাবার কোনটা?
সুস্মিতা মুখোপাধ্যায়: ইদানিং আমি মাছটা খাই না। তবে একটা সময় খুব মাছ খেতাম। এখন প্রায় নিরামিষাশী হয়ে গিয়েছি, সেটা অবস্য সম্পূর্ণ শারীরিক কারণে অন্য কিছু নয়। আমাদের বিল্ডিংয়ে একজন বাঙালি কুক আছেন যিনি হোম ডেলিভারি দেন। যখনই টিপিক্যাল বাঙালি খাবার যেমন চিকেন-মটন কষা করেন আমাকে দিয়ে যায়। ট্রাডিশনাল বাঙালি খাবার আমার ভীষণ প্রিয়। তারপর চাইনিজ, ইতালিয়ান। আমরা তো ছয়-সাতমাস কোর্স ফুড খাই। যখন শুটিংয়ে যাই তখন অবশ্য সেটা খাই না। অন্যরকম কিছু খেতে ইচ্ছে হলে রেস্তোরাঁয় চলে যাই।
মিশমির মতো স্বল্প বাজেট ছবিতে রাজি হওয়ার নেপথ্যে বিশেষ কী কারণ?
সুস্মিতা মুখোপাধ্যায়: চরিত্রটা এতটাই স্ট্রং যে না বলার প্রশ্নই আসেনি। শুনেই ভাল লেগেছিল। ইন্ডাস্ট্রিতে ৪৫ বছরের কেরিয়ার। আগে যখন কাজ করেছি তখন মাথায় অনেক চিন্তা ছিল। সংসার চালানোর দায়ভার ছিল। তাই যে কোনও চরিত্রে রাজি হয়ে যেতাম। নির্দিষ্ট সময় আর্থিক জোগানোর জন্য টেলিভিশন বা সিনেমা সবেতেই রাজি হয়ে যেতাম। চরিত্রের গুণমান সেভাবে বিচার করতাম না। তবে এখন আমি চরিত্রকে গুরুত্ব দিই। আমি সবসময় মনপসন্দ চরিত্রেরই প্রস্তাব পাই। মিশমি-তে বাচ্চা মেয়েটির জীবনে দিদার একটা বিরাট ভূমিকা আছে। এই চরিত্রটা গুরুত্বপূর্ণ। আমার চরিত্র সিনেমার গল্পে ভ্যালু অ্যাড করছে কিনা সেটাই ফার্স্ট প্রায়োরিটি। তাই স্ক্রিপ্ট শুনে হ্যাঁ বলেছি।
বাচ্চাদের সঙ্গে কাজ করে আনন্দ পান?
সুস্মিতা মুখোপাধ্যায়: হ্যাঁ, ভীষণ আনন্দ পাই। মিশমি-র বাচ্চাটা মারাত্মক দুষ্টু তেমনই সুইট। এত চমৎকার পারফরম্যান্স। বাচ্চাদের মধ্যে যে প্রতিভা থাকে সেটা চাক্ষুস করার সুযোগ থাকে। আমি অনেকদিন আগে টেলিভিশনে একটা শো করেছিলাম। সেখানেও একটা বাচ্চা ছিল ভীষণ কিউট। এখন তো অনেক বড় হয়ে গিয়েছে। ছোট থেকে ওদের প্রতিভায় শান দিলে আগামীতে সফল হওয়ার রাস্তা মসৃণ হয়। অভিনয়ের জার্নিতে সন্তানদের ভবিষ্যৎ গড়তে মা-বাবারও একটা বিরাট অবদান প্রয়োজন।
শিশুশিল্পীদের জন্য এই গ্ল্যামার দুনিয়া উপযুক্ত? অল্প বয়স থেকে টাকার স্বাদ পেয়ে বেপথে চালিত হওয়ার সম্ভবনা থাকে?
সুস্মিতা মুখোপাধ্যায়: সেই সম্ভবনা সম্পূর্ণ উড়িয়ে দেওয়া যায় না। তবে ওরা তো মা-বাবার পরমার্শ নিয়েই এই ইন্ডাস্ট্রিতে আসছে। আবার আমাদের ইন্ডাস্ট্রিতে এমন অনেক শিশুশিল্পী ছিলেন যাঁরা সংসারের প্রয়োজনে অভিনয়ে এসেছিলেন। আজকের মা-বাবাদের মধ্যে আবার টাকার চেয়ে বেশি গ্ল্যামারটা আকর্ষণীয় হয়ে উঠেছে। এখন ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মের যুগ। ইনফ্লুয়েন্সারের ছাড়াছড়ি, অনেক নতুনত্ব রয়েছে। সেখানে দাঁড়িয়ে ছোট থেকে টাকার নেশা হওয়াটা খুবই স্বাভাবিক। মা-বাবাকে সেই দিকটা কড়া হাতে সামলাতে হবে। এই ইন্ডাস্ট্রিতে কখনও অঢেল টাকা তো কখনও আবার টাকার অভাব। অনেককে দেখেছি টাকার জন্য টেলিভিশনে কাজ করছেন। যদি কখনও অর্থের জোগান বন্ধ হয়ে যেত EMI দিতে পারত না। অনেক সমস্যায় পড়ত। এত বছরের অভিজ্ঞতা থেকে আমি বুঝেছি মা লক্ষ্মী কখনও এক জায়গায় স্থির থাকেন না। এই জন্যই তো বলে লক্ষ্মী চঞ্চলা। তাই নিজের ভিত শক্ত করার পাশাপাশি এটাও মানতে হবে টাকা আজ আছে কাল নেই। নিজের কাজ করে সঠিক পথে জীবনকে এগিয়ে যাওয়ার শিক্ষায় যদি মা-বাবা সন্তানকে শিক্ষিত করেন তাহলে ভয়ের কোনও কারণ নেই।
আরও পড়ুন 'গিল্ড-ফেডারেশনের ঝামেলা এড়াতেই বাংলায় কাজ করি না', 'Murderbaad' মুক্তির আগে অকপট অর্ণব
অনেক শিল্পীই বয়স বৃদ্ধির সঙ্গে ইন্ডাস্ট্রিতে গুড বাই বলে দেন। আপনি সেখানে অভিনয়-থিয়েটার সমানতালে চালিয়ে যাচ্ছেন। এটা মনের জোর নাকি অনুপ্রেরণা?
সুস্মিতা মুখোপাধ্যায়: কাজের মধ্যে আনন্দ খুঁজে পাই। যদি অনেকদিন কাজ না করি তাহলে মন খারাপ হয়ে যায়। আমি নাটক লিখি, বই লিখি। পাঁচটা বই প্রকাশিত হয়েছে। নিজের কাজ নিজে করতে ভালবাসি। আমার একটা NGO আছে। ওখানে বাচ্চাদের পড়াই। অভিনেত্রী মানে আমি অন্য কিছু করব না এই ধারনায় আমি বিশ্বাসী নই। অভিনেত্রীর পাশাপাশি আমি একজন মা, কারও স্ত্রী আরও অনেক রোল আছে। কোনও পুরস্কারের জন্য একটা কাজ করলাম এটা আমার ভাবনাচিন্তা নয়। আমি মধ্যবিত্ত পরিবারের মেয়ে। আমার বাবা দিল্লিতে সরকারি চাকরি করতেন। বাবা-মা আমাকে ভাল জায়গা থেকে পড়াশোনা করিয়েছেন। তাই আমার একটা স্টেবিলিট আছে। আমি কোনও ইঁদুর দৌঁড়ে সামিল হই না। কাজ করি, বাড়ি এসে গল্প করি, কফি খাই, বই পড়ি এভাবেই জীবন কাটে। একটা সিনেমা করে একদম মাতামাতি করব সেটা আমার পছন্দ নয়।
ইন্ডাস্ট্রির কোনও পার্টিতেও আপনাকে দেখা যায় না...
সুস্মিতা মুখোপাধ্যায়: হ্যাঁ, একদমই তাই। আসলে আমার মনে হয় ইন্ডাস্ট্রির ওই জমকালো পার্টিতে আমি একদম বেমানান। কোনও প্রিমিয়ার হলে যদি নিমন্ত্রণ পাই তখন যাই। কারণ আমার ছবির প্রচারে থাকাটা আমার পেশাগত দায়িত্ব। মজা করতে বা খাওয়াদাওয়া করার জন্য পার্টিতে যাওয়া আমার কাছে অর্থহীন।
করমচাঁদ-এ কাজের পর প্রায় সাত বছরের বিরতি কেন ছিল? চরিত্র নিয়ে খুব চুজি হয়ে উঠেছিলেন?
সুস্মিতা মুখোপাধ্যায়: হ্যাঁ, আসলে আমি চরিত্রে বদল আনতে চেয়েছিলাম। আর কিটি-র মতো চরিত্র ভাল লাগছিল না। আমার যেতেহু থিয়েটার ব্যাকগ্রাউন্ড, অনেক নাটক করেছি। তাই ফিল্মি হিরোইনের প্রতি অমোঘ আকর্ষণ ছিল না। আসলে তখন বয়সও কম ছিল। সন্তানও হয়নি। তাই নিজের ইচ্ছেকে কদর করতে পেরেছি। যখন প্রয়োজন ছিল তখন করেছি। এখন খুব বাছাই করে কাজ করি। আমি তো একজন অভিনেত্রী, ঘরে বসে থাকতে মোটেই ভাল লাগে না। আবার পছন্দের মতো চরিত্র না হলে কাজের ইচ্ছেও হয় না।
আরও পড়ুন ৪ বছর বয়স থেকে সিনেমা দেখি তাই নায়িকার মুখ না দেখেও এক্সপ্রেশন দিতে পারি: সায়নী পালিত
আপনার তো আর্ট ফিল্ম খুব পছন্দ...
সুস্মিতা মুখোপাধ্যায়: হ্যাঁ, হান্ড্রেড পার্সেন্ট। ছোট বয়স থেকেই স্মিতা পাটিল, শাবানা আজমির মতো চরিত্রে কাজ করতে ইচ্ছে করত। সিরিয়াল চরিত্র করব যেখানে অনেক লেয়ার থাকবে এগুলোই ভাবতাম কিন্তু কিটি-টা এত ফেমাস হয়ে গেল যে ৪০ বছর পরও আমাকে অনেকেই কিটি বলে ডাকে। ফেম, ভালবাসা সবটাই পেয়েছি। তার জন্য এখন কোনও আপশোস নেই যে কেন পাচ্ছি না। তখন ভাল সময় ছিল পেয়েছি।
আজকের প্রজন্মের শিল্পীদের সঙ্গে কাজ করার ইচ্ছে আছে?
সুস্মিতা মুখোপাধ্যায়: অবশ্যই। আমি তো এমন নয় একটানা সিনেমায় কাজ করেছি। তবে আজকের প্রজন্মে অনেক প্রতিভাবান শিল্পী আছে। ওঁদের সঙ্গে কাজ করার ইচ্ছে আছে। ওঁদের কাজ আমি দেখি। আমি এখন যে প্রজেক্টে কাজ করছি সেখানে ইন্ডাস্ট্রির দুজন ট্যালেন্টেড অভিনেতা আছেন। সবচেয়ে বড় পরিচালকের সঙ্গে কাজ করছি। এখন সিনেমার নাম বলতে পাকরছি না, তবে নতুন বছরে দেখতে পাবেন। ওঁরা ভীষণ পেশাদার, কাজের প্রতি একাগ্রতা দেখে আমি মুগ্ধ। সময়জ্ঞান, হোমওয়ার্ক দারুণ।
বাংলা সিনেমায় কাজ করতে ইচ্ছে করে না?
সুস্মিতা মুখোপাধ্যায়: ভীষণ ইচ্ছে করে কিন্তু কেউ ডাকেই না। সবাই বলে ম্যাম আমাদের ওত বাজেট নেই। আমি হাসতে হাসতেই বলে, একটু বাড়িয়ে দিও আর একটা ভাল চরিত্র দাও। সুযোগ পেলে নিশ্চয়ই করব। 'মহাশয়' বলে একটা ছবি করেছিলাম। মুনমুনদি ফার্স্ট লিড আর আমি সেকেন্ড। অপর্ণা সেনের ;গয়নার বাক্স' দেখেছি। আমার রক্তে বাঙালি। মা-বাবা দুজনেই বাঙালি।
আরও পড়ুন কুমারী পুজোর মাধ্যমে মহিলাদের দেবীর স্থানে বসানোর পরই আবার বলা হয় ঋতুমতীরা অপবিত্র: অনীক চৌধুরী
/indian-express-bangla/media/agency_attachments/2024-07-23t122310686z-short.webp)

Follow Us