মধ্য চিনের উহান শহর আপাতত সরকারের যুদ্ধকালীন তৎপরতার ফলে দুর্গে পরিণত হয়েছে। এই শহরই মারাত্মক নভেল করোনাভাইরাসের (2019-nCoV) কেন্দ্রস্থল, যে ভাইরাসের প্রকোপে গত মাস থেকে শুরু করে এখন পর্যন্ত মৃত ১০৬, আক্রান্ত কয়েক হাজার। এমনকি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র অবধি পৌঁছে গেছে এই ভাইরাস, বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
এছাড়া এখন পর্যন্ত নিশ্চিতভাবে 2019-nCoV সংক্রমণের খবর পাওয়া গেছে জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, ভিয়েতনাম, সিঙ্গাপুর, অস্ট্রেলিয়া, থাইল্যান্ড, নেপাল, ফ্রান্স, মালয়েশিয়া, এবং ক্যানাডা থেকে।
করোনাভাইরাস কী?
করোনাভাইরাস কোনও একটি ভাইরাস নয়, বরং একটি ভাইরাস গোষ্ঠী, যার থেকে মানুষের মধ্যে ছড়ায় একাধিক অসুখ, সাধারণ সর্দি থেকে শুরু করে অতি জটিল এবং প্রায়শই প্রাণঘাতী SARS বা MERS পর্যন্ত। এই ভাইরাসের নাম এসেছে তার আকার থেকে, যা কিনা একটি মুকুটের (corona) মতো, যেটিকে কেন্দ্র করে প্রসারিত হয় অসংখ্য বাহু।
আরও পড়ুন: করোনা ভাইরাসের হানা! চিনে ঘরবন্দি বর্ধমানের যুবক, চরম উৎকন্ঠায় পরিবার
কীভাবে ঘটল এই সাম্প্রতিক প্রাদুর্ভাব?
মনে করা হচ্ছে, উহানের অবৈধ বন্যপ্রাণীর বাজার থেকেই ছড়িয়েছে করোনাভাইরাস। চিনের স্বাস্থ্য আধিকারিক এবং বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ওয়ার্ল্ড হেলথ অর্গানাইজেশন বা WHO) এখনও তদন্ত চালাচ্ছেন, ঠিক কীভাবে এই ভাইরাসের সংক্রমণ ঘটল, তা নিশ্চিত করতে।
সংক্রমণ মানেই কি মৃত্যু?
এখন অবধি প্রাণ হারিয়েছেন ১০৬ জন আক্রান্ত ব্যক্তি, যদিও আক্রান্ত হয়েছেন ৪,৫০০ জনের বেশি। যেহেতু এই ভাইরাস সমষ্টির এটি একটি নতুন রূপ, সেহেতু এখনও এটির বিরুদ্ধে কোনও নির্দিষ্ট ভ্যাকসিন অথবা প্রতিষেধক টীকা আবিষ্কৃত হয় নি। তবে WHO-এর একটি বিবৃতি অনুযায়ী, "একাধিক উপসর্গেরই চিকিৎসা সম্ভব, অতএব চিকিৎসা হবে আক্রান্তের শারীরিক অবস্থা বিবেচনা করে"।
এখন পর্যন্ত এর প্রসার রুখতে কী করা হয়েছে?
চিনা নববর্ষের ছুটি থাকায় এই ভাইরাস ছড়ানোর আশঙ্কা বেড়েছে, যেহেতু অনেকেই ছুটিতে দেশের বাইরে যাচ্ছেন। তা সত্ত্বেও করোনাভাইরাসের প্রসার রোধে উহান শহরকে একরকম তালাবন্দি করে ফেলেছে চিনের সরকার। উহান থেকে বন্ধ করা হয়েছে সমস্ত বহির্গামী উড়ান, এবং অচল করে দেওয়া হয়েছে শহরের জন পরিবহণ ব্যবস্থা।
আরও পড়ুন: করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত কলকাতাও? বেলেঘাটা আইডিতে ভর্তি চিনা তরুণী
ভারত কী করছে?
দেশের স্বাস্থ্যমন্ত্রক জানিয়েছে, এখন পর্যন্ত প্রায় ১০ হাজার বিমানযাত্রীর পরীক্ষা করা হয়েছে করোনাভাইরাসের কোনও চিহ্ন পাওয়া যায় কিনা তা দেখতে। এখন পর্যন্ত ভারতে একটিও সংক্রমণ প্রকাশ্যে আসে নি। চিন থেকে ভারতে আসা যে কোনও ব্যক্তিকে অসুস্থ বোধ করলে নিকটতম স্বাস্থ্যকেন্দ্রে খবর দেওয়ার পরামর্শ দিয়েছে স্বাস্থ্যমন্ত্রক। এখন পর্যন্ত দিল্লি, মুম্বই, কলকাতা, চেন্নাই, বেঙ্গালুরু, হায়দরাবাদ এবং কোচিন, এই সাতটি বিমানবন্দরে যাত্রীদের পরীক্ষা করার নির্দেশ রয়েছে বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষের কাছে।
এছাড়াও ভারতের জাতীয় স্বাস্থ্য পোর্টালে (National Health Portal of India) ১০-স্তরীয় একটি প্রক্রিয়া দেওয়া রয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে ফিল্ড ওয়ার্ক, মহামারীর অস্তিত্ব নিশ্চিত করা, নিশ্চিতভাবে রোগ নির্ণয় করা, সংক্রমণ চিহ্নিত করা, এবং সে সংক্রান্ত তথ্য প্রকাশ করা।
আপাতত ভারতের নাগরিকদের চিন সফরে না যেতে বলা হয়েছে, এবং ব্যক্তিগত স্বাস্থ্যবিধি ও পরিচ্ছন্নতার দিকে বিশেষ নজর দিতে বলা হয়েছে।
অর্থনীতির ওপর কী প্রভাব পড়েছে এই ভাইরাসের?
খবরে প্রকাশ, করোনাভাইরাসের আতঙ্ক ছড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে চিন এবং হংকংয়ের শেয়ার বাজারে ধ্বস নেমেছে। এর কারণ, বিনিয়োগকারীরা ভয় পাচ্ছেন যে 2019-nCoV বা নভেল করোনাভাইরাসের প্রভাবে বদলে যেতে পারে ক্রেতাদের আচরণ। WHO যদি এই ভাইরাসের ভিত্তিতে বিশ্বস্বাস্থ্যে জরুরি অবস্থা ঘোষণা করে, তবে আরও নেতিয়ে পড়তে পারে বিনিয়োগের বাজার, বিশেষত ভ্রমণ, বিনোদন, এবং অতিথি পরিষেবার ক্ষেত্রে।