/indian-express-bangla/media/media_files/2025/10/30/odisha-model-2025-10-30-13-46-07.jpg)
Odisha Model: ঘূর্ণিঝড় মোকাবিলায় ওড়িশার সাফল্যের কারিগররা।
Cyclone Model Odisha: ভারতের পূর্ব উপকূলে ৪৮০ কিলোমিটার দীর্ঘ সমুদ্রতট নিয়ে ওড়িশা এমন এক রাজ্য, যাকে প্রায়ই তছনছ করে দেয় বঙ্গোপসাগরের ঘূর্ণিঝড়। ১৮৯১ থেকে ২০২০ সালের মধ্যে প্রায় ১১০টি ঘূর্ণিঝড়ের আঘাত সহ্য করেছে এই রাজ্য।
কিন্তু, আজ ওড়িশা এমন এক মডেল রাজ্যে পরিণত হয়েছে, যেখানে প্রাকৃতিক দুর্যোগের আগে থেকেই তৈরি থাকে সরকার, প্রশাসন এবং সাধারণ মানুষ।
২০২৫ সালের অক্টোবরে যখন বঙ্গোপসাগরে ঘূর্ণিঝড় মন্থার আশঙ্কা তৈরি হয়, তখনই সক্রিয় হয়ে গিয়েছিল ওড়িশা সরকারের বিপর্যয় মোকাবিলা কেন্দ্র (State Emergency Operations Centre, SEOC)। যদিও ঘূর্ণিঝড়টি শেষ পর্যন্ত অন্ধ্রপ্রদেশ উপকূলে আঘাত হেনেছে, তবু ওড়িশা প্রশাসন দক্ষিণ ও অভ্যন্তরীণ ৮টি জেলায় যাবতীয় ব্যবস্থা করে রেখেছিল। এই ৮ জেলা হল— মালকানগিরি, কোরাপুট, নবরংপুর, রায়গড়া, গজপতি, গঞ্জাম, কন্ধমাল এবং কালাহান্ডি।
'জিরো ক্যাজুয়ালটি পলিসি'
সরকারের লক্ষ্য ছিল একটাই— 'জিরো ক্যাজুয়ালটি পলিসি' (Zero Casualty Policy), অর্থাৎ একটি প্রাণহানিও যাতে না ঘটে। সেই পরিকল্পনার অংশ হিসেবে প্রায় ৩২,০০০ মানুষকে ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা থেকে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল নিরাপদ স্থানে। ২,৬০০ গর্ভবতী মহিলাকে হাসপাতালে স্থানান্তরিত করা হয়েছিল। স্কুল ও আঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্র বন্ধ রাখা হয়েছিল। এনডিআরএফ (NDRF), ওডিআরএএফ (ODRAF) এবং ফায়ার সার্ভিস মিলিয়ে ১৬০টিরও বেশি দলকে ঝড়ের ক্ষয়ক্ষতি মোকাবিলায় প্রস্তুত রাখা হয়েছিল।
আরও পড়ুন- এসআইআর নিয়ে আতঙ্কে? ভোটার তালিকায় নাম রাখতে কী করবেন, জানুন ধাপগুলো
বঙ্গোপসাগরের আকৃতি ফানেলের মত হওয়ায় এখানে বায়ুমণ্ডলীয় চাপ ও তাপমাত্রার তারতম্য বেশি হয়। এর ফলে অক্টোবরে প্রায়ই গভীর নিম্নচাপ ও সাইক্লোন তৈরি হয়, যা ভারতীয় উপকূলের দিকে ধেয়ে আসে। বিশেষজ্ঞদের মতে, বঙ্গোপসাগরের গড় জল তাপমাত্রা আরব সাগরের তুলনায় অনেক বেশি। এই তাপমাত্রা ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টির আদর্শ পরিবেশ। আর, সেই কারণেই বঙ্গোপসাগরে এত বেশি ঘূর্ণিঝড় তৈরি হচ্ছে।
আরও পড়ুন- ORS যুদ্ধে ডা. শিবরঞ্জনীর বিরাট জয়! রক্ষা পেল কয়েক কোটি শিশু
১৯৯৯ সালের ২৯ অক্টোবর ওড়িশা ইতিহাসের ভয়াবহতম ঘূর্ণিঝড়ের মুখোমুখি হয়েছিল। সেই সুপার সাইক্লোনে ১০,০০০-এরও বেশি প্রাণহানি হয়েছিল। ধ্বংস হয়ে গিয়েছিল অর্ধেক ওড়িশা। সেই সময় ওড়িশাতে যথেষ্ট তথ্য এবং সঠিক সময়ে সতর্কবার্তা পাওয়া ছিল কঠিন ব্যাপার। কিন্তু, এরপরই বিপর্যয় মোকাবিলায় বিশেষ সংস্থা তৈরি করে ওড়িশা সরকার। তা হল- ওড়িশা বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনি (Odisha State Disaster Management Authority, OSDMA)। ভারতের প্রথম রাজ্যস্তরের দুর্যোগ মোকাবিলা সংস্থা।
আরও পড়ুন- ভারতের ব্যাংক কিনতে বিদেশি সংস্থাগুলো উঠেপড়ে লেগেছে, বিনিয়োগের নামে ভয়ংকর অভিসন্ধি?
এরই সঙ্গে ১৯৯৯-এর পর থেকে ওড়িশায় তৈরি হয়েছে একের পর এক মাল্টি-পারপাস সাইক্লোন শেল্টার। আজ তার সংখ্যা ১,০০০-রও বেশি। গড়ে উঠেছে ওড়িশা ডিজাস্টার ব়্যাপিড অ্যাকশন ফোর্স (Odisha Disaster Rapid Action Force, ODRAF)। প্রশিক্ষিত, আধুনিক প্রযুক্তিতে সজ্জিত এই উদ্ধারকারী বাহিনি। স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, স্বাস্থ্যকর্মী, যুব ও স্বেচ্ছাসেবকদের নিয়ে গঠিত হয় বিকেন্দ্রীকৃত দুর্যোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থাও।
আরও পড়ুন- পাহাড়ের ধারে ঝুলছে! বিশ্বের ভয়ংকরতম এই টয়লেট কোথায় আছে?
২০১৩ সালের ফাইলিন সাইক্লোন ছিল ওড়িশার কাছে বড় পরীক্ষা। প্রায় ১০ লক্ষ মানুষকে কয়েক ঘণ্টার মধ্যে সরিয়ে এনে ওড়িশা সরকার রক্ষা করেছিল অগণিত প্রাণ। ২০১৯ সালের ফণী সাইক্লোন আবারও প্রমাণ করে দেয়— প্রযুক্তি, পরিকল্পনা আর মানুষ একযোগে কাজ করলে প্রাকৃতিক দুর্যোগের ক্ষয়ক্ষতি কমানো সম্ভব। যেভাবে তারা জিরো ক্যাজুয়ালটি (zero casualty) নীতি বাস্তবায়িত করেছে, রাষ্ট্রসংঘও প্রশংসা করেছে ওড়িশার এই সাফল্যের।
আজ ওড়িশা শুধু ঘূর্ণিঝড়ে বিপর্যস্ত রাজ্য নয়। এটি এখন দুর্যোগ মোকাবিলার মডেল রাজ্য। প্রতিটি সাইক্লোনের আগে সতর্কতামূলক প্রচার, সাইক্লোনের পর উদ্ধার, আর পরে পুনর্গঠন — এই ত্রিস্তরীয় ব্যবস্থাই ওড়িশাকে অন্যদের থেকে আলাদা করেছে। এর সুবাদে যেখানে একসময় ঘূর্ণিঝড় মানেই মৃত্যু ও ধ্বংস ছিল, আজ সেখানে বইছে জীবনের জয়গান। ওড়িশা দেখিয়েছে— প্রস্তুতি, পরিকল্পনা ও মানুষের সহযোগিতা থাকলে, প্রকৃতির রোষও জয় করা সম্ভব।
/indian-express-bangla/media/agency_attachments/2024-07-23t122310686z-short.webp)
Follow Us