Indian Banks: ভারতের ব্যাংক কিনতে উঠেপড়ে লেগেছে বিদেশি সংস্থাগুলো, বিনিয়োগের নামে ভয়ংকর অভিসন্ধি?

Global Giants & Indian Banks: ভারতের ব্যাংকিং খাতে কেন বিদেশি কোম্পানির বিনিয়োগ হঠাৎ বেড়ে গেল? দেশ কি বড় আর্থিক বিপর্যয়ের মুখে? জল্পনা বিভিন্ন মহলে।

Global Giants & Indian Banks: ভারতের ব্যাংকিং খাতে কেন বিদেশি কোম্পানির বিনিয়োগ হঠাৎ বেড়ে গেল? দেশ কি বড় আর্থিক বিপর্যয়ের মুখে? জল্পনা বিভিন্ন মহলে।

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
Holi Bank Holiday 2025: হোলির দিন ছাড়াও, ১৩ ও ১৫ তারিখও বন্ধ ব্যাঙ্ক? জেনে নিন কেন ছুটি ঘোষণা RBI-এর ? i

Indian Banks: বিনিয়োগকারীদের টার্গেট ভারতীয় ব্যাংকগুলো।

Global Giants & Indian Bank: ভারতের আর্থিক খাত আজ এমন এক সময়ের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে, যা কয়েক বছর আগেও কল্পনা করা যায়নি। একসময় অতিরিক্ত নিয়ন্ত্রিত ও সীমিত বিদেশি মালিকানার কারণে ভারতের ব্যাংকিং ও বীমা খাতকে তুলনামূলক ধীরগতির মনে করা হত। কিন্তু, তার স্টেবিলিটি বা নিরাপত্তা নিয়ে কারও সন্দেহ ছিল না। 

Advertisment

আর্থিক দুর্দশায় থাকা দেশের সংস্থাগুলোই ক্রেতা

বর্তমানে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ চরম আর্থিক সমস্যায় ভুগছে। আর, এই পরিস্থিতিতে সেই সব দেশের আর্থিক সংস্থাগুলোর কাছে বিনিয়োগ টানার নামে ভারতের ব্যাংকগুলো বিক্রির পরিকল্পনা করছে কেন্দ্র। এমন অভিযোগ উঠেছে। সুযোগ হাতছাড়া করতে নারাজ বিদেশি সংস্থাগুলোও জানিয়ে দিয়েছে  ভারতের ব্যাংকগুলোর মালিকানা এবং শেয়ার কিনতে তারা আগ্রহী। এতে প্রাথমিক কিছু মূলধন বাড়লেও ব্যাংকগুলোর নিরাপত্তা ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে বলে আশঙ্কা অনেকেরই।

আরও পড়ুন- পাহাড়ের ধারে ঝুলে! কোথায় আছে বিশ্বের এই ভয়ংকরতম টয়লেট?

কেনা শুরু হয়ে গেছে

ইতিমধ্যেই গত দুই বছরে Blackstone, Emirates NBD, Zurich Insurance, Sumitomo Mitsui Banking Corporation (SMBC) এবং Abu Dhabi’s IHC— সবাই ভারতের ব্যাংক, বিমা সংস্থা ও নন-ব্যাংকিং ফাইনান্স কোম্পানিগুলিতে (NBFC) বড় বিনিয়োগ করেছে। সর্বশেষ উদাহরণ হিসেবে দেখা যাচ্ছে, Blackstone Federal Bank-এর প্রায় ১০ শতাংশ মালিকানা কিনেছে।

Advertisment

আরও পড়ুন- বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো এবার ভারতে, এদেশে থেকেই বিদেশে শিক্ষালাভের দুরন্ত সুযোগ!

এছাড়া Emirates NBD ৩ বিলিয়ন ডলারে RBL Bank-এর ৬০ শতাংশ শেয়ার অধিগ্রহণ করেছে। জাপানের SMBC ২৫ শতাংশ Yes Bank-এ বিনিয়োগ করেছে। Zurich Insurance ৭০ শতাংশ Kotak General Insurance-এর মালিকানা নিয়েছে। এমনকি Abu Dhabi-র IHC প্রায় ১ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করেছে Sammaan Capital-এ (আগের Indiabulls Housing)।

আরও পড়ুন- শুধু নিষিদ্ধ বাজিই নয়, গ্রিন ক্র্যাকারেও ছড়ায় ভয়ংকর দূষণ, চমকে দেবে সত্যিটা!

অনেকে অবশ্য আশার আলো দেখছেন

কেন বিদেশি বিনিয়োগ বাড়ছে, এই প্রসঙ্গে আশাবাদীরা জানিয়েছেন, ভারতের অর্থনীতি বর্তমানে বিশ্বের দ্রুততম বর্ধনশীল অর্থনীতিগুলির একটি। দেশটির জিডিপি বৃদ্ধির হার ৬.৮ শতাংশের কাছাকাছি, এবং মধ্যবিত্ত শ্রেণির সম্প্রসারণের সঙ্গে ব্যাংকিং ও বিমা খাতে পণ্যের চাহিদা বহুগুণে বেড়েছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, ভারত এমন একটি বাজার যেখানে প্রায় ৪০০ মিলিয়ন মানুষ এখনও ব্যাংকিং ব্যবস্থার বাইরে। ফলে, এই অপ্রবেশ্য ক্ষেত্রটাই বিদেশি সংস্থাগুলির কাছে 'গোল্ডেন অপরচুনিটি'। RBI ও সরকারের নীতিগত পরিবর্তনও এক্ষেত্রে বড় ভূমিকা রেখেছে। এখন বেসরকারি ব্যাংকে ৭৪ শতাংশ পর্যন্ত বিদেশি মালিকানা অনুমোদিত, এবং বিমা সংস্থায় ১০০ শতাংশ বিদেশি মালিকানা সম্ভব। ফলে বিনিয়োগকারীরা সহজেই প্রবেশ করতে পারছেন ভারতীয় বাজারে।

আরও পড়ুন- আদানি কি শেষমেশ সাহারা সাম্রাজ্যের মালিকানা পাবে?

ভারতের ব্যাংকিং খাতের রূপান্তর

McKinsey & Company-এর সাম্প্রতিক রিপোর্টে বলা হয়েছে, ২০২৪ সালে ভারতের ব্যাংকিং খাত ৪৬ বিলিয়ন ডলার আয় করেছে, যা বছরে ৩১% হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে। দেশীয় ব্যাংকগুলির মূলধন বেড়েছে। ঋণের ঝুঁকি কম এবং ভারতে ডিজিটাল পেমেন্ট ব্যবস্থাও বিশ্বমানের। গত এক দশকে IL&FS, DHFL ও Yes Bank সংকটের পর, RBI-এর কঠোর মনিটরিং ও ইনসলভেন্সি কোডের মাধ্যমে ব্যাংকিং সিস্টেমে স্বচ্ছতা ফিরেছে। ফলে এখন অনেক মধ্যম মানের প্রাইভেট ব্যাংক ও NBFC বিদেশি সংস্থার অধিগ্রহণের যোগ্য অবস্থায় আছে।

আন্তর্জাতিক প্রেক্ষাপটে ভারতের অবস্থান     

বিশ্লেষকরা বলছেন, এশিয়ার মধ্যে ভারতের মত এত বড়, স্থিতিশীল ও প্রযুক্তি-চালিত অর্থনীতি আর নেই। ইউরোপ ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে অর্থনৈতিক স্থবিরতা বাড়ছে, আর চিনে বাড়ছে ভূরাজনৈতিক চাপ। এই প্রেক্ষিতে ভারত এখন আন্তর্জাতিক পুঁজির সবচেয়ে আকর্ষণীয় গন্তব্য। বিদেশি বিনিয়োগকারীদের জন্য ভারত কেবল নতুন আয়ের উৎস নয় বরং কৌশলগতভাবে দীর্ঘমেয়াদি নিরাপদ আশ্রয়ও বটে।

ঝুঁকিও রয়েছে

তবে বিশ্লেষকদের মতে, অতিরিক্ত বিদেশি মালিকানা ভারতের আর্থিক সার্বভৌমত্বের জন্য একটি সূক্ষ্ম চ্যালেঞ্জ। যখন বিদেশি সংস্থা কোনও ব্যাংকে সংখ্যাগরিষ্ঠ শেয়ার ধরে রাখে, তখন সিদ্ধান্ত গ্রহণে প্রভাব বিদেশ থেকে আসতে পারে। এছাড়াও, বৈশ্বিক সুদের হার বৃদ্ধি বা আর্থিক সংকট হলে, এই সংস্থাগুলি ভারতীয় বাজার থেকে মূলধন সরিয়ে নিতে পারে — যা ক্রেডিট প্রবাহে চাপ সৃষ্টি করবে। তাই, RBI ও SEBI এখনও সতর্ক পদক্ষেপ নিচ্ছে। প্রতিটি বিনিয়োগের আগে, 'fit and proper' নীতিমালা ও পূর্ণ মালিকানা প্রকাশ বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।

ভবিষ্যৎ দিকনির্দেশ

২০২৭ সালের মধ্যে RBI বিদেশি তহবিলের জন্য আরও সহজলভ্য ঋণনীতি আনার পরিকল্পনা করছে। দেশের অর্থনীতি যখন $৭ ট্রিলিয়ন জিডিপির দিকে এগোচ্ছে, তখন ব্যাংকিং, বিমা ও ক্রেডিট ডেলিভারির জন্য বিশাল পরিমাণ মূলধন প্রয়োজন হবে। বিদেশি সংস্থাগুলির জন্য এটি কেবল বিনিয়োগ নয়— ভারতের অর্থনীতির ভবিষ্যতে একটি কৌশলগত অবস্থান তৈরি করার সুযোগও প্রয়োজন।

মনে রাখবেন

ভারতের ব্যাংকিং খাতে বিদেশি বিনিয়োগের প্রবাহ একদিকে দেশের আর্থিক সক্ষমতা বাড়াচ্ছে, অন্যদিকে নিয়ন্ত্রকদের জন্য নতুন দায়বদ্ধতাও তৈরি করছে। ভারসাম্য রক্ষা করাই এখন ভারতের সবচেয়ে বড় পরীক্ষা।

Indian bank