/indian-express-bangla/media/media_files/2025/08/02/modi-trump-2025-08-02-15-16-19.jpg)
Narendra Modi-Donald Trump: নরেন্দ্র মোদী ও ডোনাল্ড ট্রাম্প।
Dead Economy: সম্প্রতি মার্কিন প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ভারত সম্পর্কে একটি বিস্ফোরক মন্তব্য করেছেন। তিনি ভারতের অর্থনীতিকে 'Dead Economy' বলে দাবি করেছেন। মার্কিন প্রেসিডেন্টের এই মন্তব্য শুধু রাজনৈতিক আলোচনার টেবিলেই নয়, অর্থনৈতিক বিশ্লেষণেও ঝড় তুলেছে। অনেকেই প্রশ্ন তুলেছেন, ভারতের অর্থনীতি কি সত্যিই ‘মৃত’? না কি এটি কেবল ট্রাম্পের রাজনৈতিক মন্তব্য?
এতদিন পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এবং কেন্দ্রের শাসক দল বিজেপি মোদী সরকারের জমানায় দেশের আর্থিক অগ্রগতির হয়ে গলা ফাটাচ্ছিল। বিশ্বের একনম্বর দেশের রাষ্ট্রপ্রধান ঠিক তার বিপরীত মন্তব্য করায়, মোদী এবং বিজেপির সেই দাবি নিয়েই প্রশ্ন উঠেছে।
আরও পড়ুন- ফেসওয়াশ কেনেন? দরকারই হবে না! জানুন দুর্দান্ত ঘরোয়া পদ্ধতি
ট্রাম্প ঠিক কী মন্তব্য করেছেন?
৩০ জুলাই ট্রাম্প ভারত থেকে পণ্যে ২৫% শুল্ক আরোপের কথা ঘোষণা করেছেন। আর, রাশিয়া থেকে ভারতীয় সামরিক সরঞ্জাম কেনা নিয়ে 'জরিমানার' হুমকি দিয়েছেন। পরদিন সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করে মার্কিন প্রেসিডেন্ট বলেছেন, 'Let India and Russia destroy their dead economies together।'
আরও পড়ুন- স্নানের আগে এই জিনিসটি লাগান, চুল হবে রেশমের মত মসৃণ ও নরম
তাঁর এই মন্তব্য নিয়েই ভারতের রাজনীতি তোলপাড়। রাহুল গান্ধী যেমন ট্রাম্পকে সমর্থন করেছেন। তেমনই কেন্দ্রীয় মন্ত্রী পীযূষ গোয়েল সমালোচনা করেছেন। গোয়েল তাঁর নিজের সরকারের পিঠ চাপড়ে বলেছেন, 'ভারত এখন বিশ্বের দ্রুততম বর্ধনশীল অর্থনীতি। আমরা শীর্ষ পাঁচে, এবং খুব শীঘ্রই তৃতীয় স্থানে পৌঁছব।'
আরও পড়ুন- বানিয়ে ফেলুন এই মাছের ঝুরো, শিশু থেকে বৃদ্ধ, খাবে একেবারে চেটেপুটে
জিডিপি বৃদ্ধিতে ভারত কোথায় দাঁড়িয়ে?
আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (IMF)-এর ডেটা অনুযায়ী—
ভারতের অর্থনীতি ১৯৯৫ সালের তুলনায় ইতিমধ্যেই ১২ গুণ বড় হয়েছে।
২০২৫ সালে ভারতের জিডিপি হবে ৪.১ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলার। যেখানে ২০১৪ সালে তা ছিল ২.১ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলার।
তুলনায়, জাপানের অর্থনীতি গত ৩০ বছরের মধ্যে সবচেয়ে কমেছে।
ব্রিটেন, জার্মানির মত দেশের জিডিপি বাড়লেও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের তুলনায় তাদের জিডিপি অনেক পিছিয়ে।
চীন ও রাশিয়া বাদ দিলে, ভারতই একমাত্র বড় অর্থনীতি, যার আকার আমেরিকার তুলনায় দ্রুতগতিতে বেড়েছে।
আরও পড়ুন- ভাতের সঙ্গে মেখে খেতে এভাবে বানান এই সবজি, মুখে লেগে থাকবে!
তাহলে সমস্যা কোথায়?
ভারতের অর্থনীতি ‘মৃত’ না হলেও, কিছু গুরুতর দুর্বলতা রয়েছে:
১. রপ্তানি অংশীদারিত্ব কম
বিশ্ববাজারে ভারতের পণ্যের রপ্তানি মোট রপ্তানির মাত্র ১.৮%
পরিষেবা রপ্তানি, মোট রপ্তানির মাত্র ৪.৫%
২. বৃদ্ধির গতি ধীর
২০১১-১২ সালের পর থেকে ভারতের অর্থনীতির বৃদ্ধির হার গড়ে ৬%
২০০৪-০৮ সালের চীনের মতো ৯-১০% বৃদ্ধি ভারত ধরে রাখতে পারেনি
৩. বেকারত্ব ও দক্ষতার ঘাটতি
উচ্চশিক্ষিত বেকারদের সংখ্যা বেড়েছে
শ্রমবাজারে নারীর অংশগ্রহণ বিশ্বের মধ্যে অন্যতম কম
৪. দারিদ্র্য এবং বৈষম্য
২০২৪ সালে এখনও ভারতের ২৪% মানুষ দারিদ্র্যসীমার নীচে রয়েছেন
২০১১-১২ সালের তুলনায় উন্নতি সামান্যই হয়েছে
আয় ও সম্পদের বৈষম্য আশঙ্কাজনক হারে বেড়েছে
৫. মানব উন্নয়ন সূচক
স্বাস্থ্য ও শিক্ষার মানে ভারত এখনও বিশ্বমানের চেয়ে পিছিয়ে
ডোনাল্ড ট্রাম্পের মন্তব্য রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত হলেও, তা পুরোপুরি ভুল নয়। কারণ, ভারতের অর্থনীতি এখনও বহু চ্যালেঞ্জের মুখে। তবে একে ‘মৃত’ বলা বেশি হয়ে যাবে। আর, তা সঠিক নয়। কারণ, হাজারো সমস্যার মধ্যে থাকলেও ভারত বিশ্বের সবচেয়ে দ্রুত বর্ধনশীল অর্থনীতিগুলির মধ্যে অন্যতম। বিশ্ব অর্থনীতিতে ভারতের অবদান মোট অবদানের প্রায় ১৬%। যা অনেক উন্নত দেশের থেকেও বেশি।
তবে ভারতের আর্থিক বৃদ্ধির মান ঠিকঠাক রাখতে হলে— শিক্ষা, স্বাস্থ্য, দক্ষতা, কর্মসংস্থান এবং নারীশ্রমের অংশগ্রহণে মৌলিক পরিবর্তন আনতে হবে। নয়তো কেবল জিডিপি বাড়িয়ে, সাধারণ মানুষের অর্থনৈতিক উন্নয়ন নিশ্চিত করা সম্ভব হবে না। আর, ইতিমধ্যে সেদিকেই মার খাচ্ছে মোদী সরকার।