/indian-express-bangla/media/media_files/2025/10/11/indias-economic-interests-2025-10-11-16-25-16.jpg)
India’s economic interests: ভারতের আর্থিক লাভ-ক্ষতির দিকটি খতিয়ে দেখছে নয়াদিল্লি।
Israel–Hamas Ceasefire: ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে বহু প্রতীক্ষিত যুদ্ধবিরতি ও বন্দিমুক্তি চুক্তি বিশ্বের রাজনৈতিক অঙ্গনে যেমন বড় খবর, তেমনই বিশ্ব অর্থনীতির ক্ষেত্রেও এর সম্ভাব্য প্রভাব বিরাট। প্রায় দুই বছর ধরে চলা সংঘাত শুধু মানবিক বিপর্যয়ই সৃষ্টি করেনি, বরং আন্তর্জাতিক বাণিজ্যকেও নাড়া দিয়েছে।
রেড সি বা লোহিত সাগর অঞ্চলে ইয়েমেনের হুথি বিদ্রোহীরা বাণিজ্যিক জাহাজে আক্রমণ চালানোর ফলে আন্তর্জাতিক শিপিং কোম্পানিগুলো বাধ্য হয়েছিল সুয়েজ খালের পরিবর্তে কেপ অফ গুড হোপ ঘুরে পণ্য পরিবহণে। এতে করে জাহাজ চলাচলের সময় এবং খরচ দুই-ই বেড়ে গিয়েছিল।
আরও পড়ুন- এমনি এল শান্তির নোবেল? গোটা ভেনেজুয়েলা মাতিয়ে দিয়েছেন মারিয়া মাচাদো, জানেন সেসব?
বিশ্ব বাণিজ্যে সরাসরি প্রভাব
বিশ্বের সবচেয়ে বড় শিপিং কোম্পানি মায়ারস্ক (Maersk)-এর শেয়ার সম্প্রতি তিন মাসের সর্বনিম্ন স্থানে নেমেছে, যুদ্ধবিরতি ঘোষণার পর। কারণ, বিনিয়োগকারীরা ধরে নিচ্ছেন শিপিং কোম্পানিগুলো আবার সুয়েজ খাল ব্যবহার শুরু করবে, ফলে ফ্রেইট রেট বা পরিবহণ খরচ কমে যাবে। ২০২৩ সালের শেষ দিক থেকে যে বিশ্বব্যাপী ফ্রেইট রেট প্রায় তিনগুণ বেড়ে গিয়েছিল, তা এখন ধীরে ধীরে স্থিতিশীল হতে পারে। এর ফলে ইউরোপ এবং আমেরিকার সঙ্গে ভারতের পণ্যবাণিজ্য সহজ হবে।
আরও পড়ুন- ইজরায়েল ও হামাস প্রথম ধাপের শান্তি পরিকল্পনায় রাজি, কূটনৈতিক সাফল্য ট্রাম্পের!
ভারতের মোট পণ্য রফতানির প্রায় ৯০–৯৫ শতাংশই বিদেশি শিপিং কোম্পানির ওপর নির্ভরশীল। ফলে লোহিত সাগর রুটে সমস্যা দেখা দেওয়ায় ভারতীয় রফতানিকারকদের মুনাফায় ব্যাপক প্রভাব পড়েছিল। টেক্সটাইল, ফুটওয়্যার, কৃষিজ পণ্য ও সামুদ্রিক পণ্যের মত নিম্ন মুনাফার রফতানি খাতগুলো সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। জাহাজ ঘুরে যেতে বাধ্য হওয়ায় একদিকে খরচ বেড়েছিল, অন্যদিকে সময় লেগেছে অনেক বেশি।
আরও পড়ুন- ইমিউন সিস্টেমের নিরাপত্তারক্ষীর সন্ধান, পুরস্কৃত করল নোবেল
যদিও যুদ্ধবিরতি ঘোষণার ফলে কিছুটা আশার আলো দেখা যাচ্ছে, তবু পরিস্থিতি পুরোপুরি নির্ভর করছে ইয়েমেনের হুথি বিদ্রোহীদের অবস্থানের ওপর। তারা যদি এই চুক্তি মেনে চলে, তবে সুয়েজ খালের নিরাপত্তা নিশ্চিত হবে, নইলে শিপিং কোম্পানিগুলো এখনও ঝুঁকি নিতে চাইবে না। এই মুহূর্তে মায়ারস্ক এবং এমএসসি-র মত শিপিং জায়ান্টরা লোহিত সাগর দিয়ে চলাচল পুনরায় শুরু করার আগে নিরাপত্তার গ্যারান্টির অপেক্ষায় রয়েছে।
আরও পড়ুন- প্রাকৃতিক দুর্বিপাকে বিপর্যস্ত উত্তরবঙ্গবাসী, চরম হুমকির মুখে দেশের নিরাপত্তা!
রেড সি সংকটের পর ভারত সরকার এখন নিজস্ব জাহাজ নির্মাণ শিল্প পুনরুজ্জীবিত করতে বিশেষ জোর দিচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি সম্প্রতি বলেছেন, 'ভারত প্রতিবছর প্রায় ৭৫ বিলিয়ন ডলার বিদেশি শিপিং কোম্পানিগুলিকে দেয়।' যা, আত্মনির্ভরতার পথে বড় বাধা। এই প্রেক্ষিতে কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভা ৬৯,৭২৫ কোটি টাকার অনুমোদন দিয়েছে 'ন্যাশনাল শিপবিল্ডিং মিশন' (National Shipbuilding Mission) প্যাকেজকে। এতে রয়েছে আর্থিক ভাতা, নতুন শিপব্রেকিং ক্রেডিট নোট এবং মার্চ ২০৩৬ পর্যন্ত শিপবিল্ডিং ফিনান্সিয়াল অ্যাসিস্ট্যান্স স্কিম (Shipbuilding Financial Assistance Scheme)-এর মেয়াদ বৃদ্ধি। এই প্যাকেজের লক্ষ্য—দেশে ৪.৫ মিলিয়ন গ্রস টনেজ জাহাজ নির্মাণ ক্ষমতা গড়ে তোলা এবং প্রায় ৩০ লক্ষ কর্মসংস্থান তৈরি।
যুদ্ধবিরতির আরেকটি বড় সুফল হতে পারে ইন্ডিয়া মিডল ইস্ট ইউরোপ ইকোনমিক করিডর (India–Middle East–Europe Economic Corridor, IMEC)-এর অগ্রগতি। এই প্রকল্পটি চীনের নেতৃত্বাধীন বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ (Belt and Road Initiative, BRI)-এর বিকল্প হিসেবে গড়ে তোলা হচ্ছে। এতে ভারত থেকে উপসাগরীয় অঞ্চল ও সেখান থেকে ইউরোপে সংযোগ স্থাপন করা হবে রেল এবং সমুদ্রপথে। সুয়েজ খালের ওপর নির্ভরতা কমাতে এবং প্রায় ৪০ শতাংশ দ্রুত পরিবহণ নিশ্চিত করাই এর লক্ষ্য।
ইজরায়েল–হামাস সংঘর্ষবিরতি যদি দীর্ঘমেয়াদে স্থায়ী হয়, তবে সেটা শুধু মানবিক স্বস্তিই নয়, বিশ্ব অর্থনীতিতেও তার ইতিবাচক প্রভাব পড়বে। ভারতের জন্য এটি হতে পারে নতুন সম্ভাবনার দরজা। যা খুলে যাবে রফতানি পুনরুজ্জীবন, নতুন শিপবিল্ডিং বিনিয়োগ এবং কৌশলগত করিডরের বিকাশের মাধ্যমে।