/indian-express-bangla/media/media_files/2025/10/10/maria-corina-machado-2025-10-10-23-43-01.jpg)
Maria Corina Machado: মারিয়া করিনা মাচাদো।
Nobel Prize 2025 fof Peace: ২০২৫ সালের নোবেল শান্তি পুরস্কার লাভ করেছেন ভেনেজুয়েলার প্রখ্যাত রাজনীতিবিদ Maria Corina Machado। ভেনেজুয়েলার গণতন্ত্র রক্ষায় তাঁর অসীম সাহস এবং নৈতিক নেতৃত্বকে নোবেল কমিটি বিশেষভাবে স্বীকৃতি দিয়েছে। কমিটির বিবৃতিতে বলা হয়েছে, 'মারিয়া করিনা মাচাদো লাতিন আমেরিকার সাম্প্রতিক সময়ের অন্যতম অসাধারণ নাগরিক সাহসের উদাহরণ।'
মাচাদোর পুরস্কারের গুরুত্ব
ভেনেজুয়েলার ইতিহাসকে বোঝা ছাড়া মাচাদোর পুরস্কারের গুরুত্ব বোঝা যাবে না। ১৯৯০-এর দশকের আগে, দেশটি ছিল লাতিন আমেরিকার দীর্ঘস্থায়ী গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রগুলোর মধ্যে একটি। কিন্তু হুগো চাভেজ-এর ১৯৯৯ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের পর গণতন্ত্রের অবনতি শুরু হয়। চাভেজ নতুন সংবিধান প্রণয়ন করেন এবং জাতীয় সংস্থার ক্ষমতা কেন্দ্রীয়ভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে শুরু করেন।
আরও পড়ুন- ইজরায়েল ও হামাস প্রথম ধাপের শান্তি পরিকল্পনায় রাজি, কূটনৈতিক সাফল্য ট্রাম্পের!
মাচাদো শুরু থেকেই গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার রক্ষা ও স্বচ্ছ ভোটাধিকার নিশ্চিত করার কাজে নিজেকে নিয়োজিত করেছিলেন। ১৯৯২ সালে তিনি প্রতিষ্ঠা করেন এটিনিয়া ফাউন্ডেশন (Atenea Foundation), যা কারাকাসের পথশিশুদের কল্যাণে কাজ করা শুরু করে। পরবর্তীতে ২০০২ সালে তিনি প্রতিষ্ঠা করেন সুমেট (Súmate) নামে একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা। যা নির্বাচনের পর্যবেক্ষণ ও গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার সঠিক দিক নিশ্চিত করার জন্য কাজ করে।
আরও পড়ুন- ইমিউন সিস্টেমের নিরাপত্তারক্ষীর সন্ধান, পুরস্কৃত করল নোবেল
২০০৪ সালের নির্বাচনী ফেরাল রেফারেনডামে চাভেজ (Chávez) ক্ষমতায় থাকলেও মাচাদো (Machado)-এর নেতৃত্বে সুমেট (Súmate) ভোট প্রক্রিয়ার স্বচ্ছতার জন্য কাজ করেছে। চাভেজ (Chávez) সেই সময় মাচাদো এবং সুমেটের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র এবং দেশদ্রোহের অভিযোগ এনেছিলেন। যদিও আন্তর্জাতিক সমর্থন ছিল মাচাদোর পক্ষে। কিন্তু, দেশীয় রাজনৈতিক মহলে তাঁকে বিভাজন সৃষ্টিকারী হিসেবে দেখা হত।
আরও পড়ুন- প্রাকৃতিক দুর্বিপাকে বিপর্যস্ত উত্তরবঙ্গবাসী, চরম হুমকির মুখে দেশের নিরাপত্তা!
মাচাদোর রাজনৈতিক কেরিয়ার কখনও সহজ ছিল না। ২০১৩ সাল থেকে নিকোলাস মাদুরো (Nicolás Maduro)-এর শাসনের বিরুদ্ধে তাঁর নেতৃত্ব আরও সোচ্চার হয়েছে। তিনি বন্দি হওয়ার হুমকি, শারীরিক হামলার আশঙ্কা এবং অন্যান্য হয়রানির মুখোমুখি হয়েছেন। কিন্তু তিনি দেশে থেকে জনগণের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন এবং শান্তিপূর্ণ, ভোটাধিকার ভিত্তিক আন্দোলন চালিয়ে গিয়েছেন।
আরও পড়ুন- দার্জিলিং, ডুয়ার্সে ভয়াবহ বৃষ্টি ও ভূমিধসে মৃত্যু, ভারতে ধস কেন এত বেশি হচ্ছে?
ব্যালটস ওভার বুলেটস (Ballots over bullets) ভোটের মাধ্যমে পরিবর্তন আনার নীতি মাচাদো (Machado)-র রাজনৈতিক দর্শনের মূল। তিনি সবসময় বিশ্বাস করেছেন, হিংসার পরিবর্তে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে জনগণের অধিকার নিশ্চিত করা সম্ভব। তাঁর এই সাহসী অবস্থান দেশের বিপর্যস্ত রাজনৈতিক দৃশ্যপটেও নতুন আশা জাগিয়েছে।
২০২৪ সালের নির্বাচনে যদিও মাচাদো (Machado) নিজে অংশগ্রহণ করতে পারেননি, কিন্তু তাঁর নেতৃত্বে বিরোধী গোষ্ঠী ভোট গণনা এবং তদারকিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকরা এটিকে গণতান্ত্রিক প্রচেষ্টার এক নতুন উদাহরণ হিসেবে দেখেছেন। এই নোবেল শান্তি পুরস্কার মাচাদোর দীর্ঘমেয়াদি সংগ্রামকে স্বীকৃতি দিয়েছেন। তিনি শুধুমাত্র ভেনেজুয়েলার গণতন্ত্রের রক্ষক নয়, বরং লাতিন আমেরিকার স্থিতিশীল ও শান্তিপূর্ণ ভবিষ্যতের প্রতীক।