Darjeeling Landslide: প্রাকৃতিক দুর্বিপাকে বিপর্যস্ত উত্তরবঙ্গবাসী, চরম হুমকির মুখে দেশের নিরাপত্তা!

Darjeeling Landslide: দার্জিলিঙে অব্যাহত ধস, অতিবৃষ্টির জেরে বিপর্যস্ত 'কুইন অফ হিলস'। জলবায়ু পরিবর্তন, অপরিকল্পিত উন্নয়ন, প্রশাসনিক উদাসীনতা জাতীয় নিরাপত্তাকে ঝুঁকির মুখে ফেলেছে।

Darjeeling Landslide: দার্জিলিঙে অব্যাহত ধস, অতিবৃষ্টির জেরে বিপর্যস্ত 'কুইন অফ হিলস'। জলবায়ু পরিবর্তন, অপরিকল্পিত উন্নয়ন, প্রশাসনিক উদাসীনতা জাতীয় নিরাপত্তাকে ঝুঁকির মুখে ফেলেছে।

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
Rescue Operation

Rescue Operation: এখনও চলছে উদ্ধারকাজ।

Darjeeling Landslide: অক্টোবরের প্রথম সপ্তাহে মাত্র ছয় ঘণ্টার মুষলধারে বৃষ্টিতে আবারও ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে দার্জিলিং। Indian Meteorological Department (IMD)-এর ‘exceptionally heavy rainfall’ সতর্কতার মাত্র ১২ ঘণ্টার মধ্যেই বৃষ্টি এমন মাত্রায় পৌঁছে যে, বালাসন নদীর ওপর দুধিয়া ব্রিজ ভেঙে পড়েছে এবং শিলিগুড়ি-মিরিক সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গিয়েছে। রাজ্য, জাতীয় সড়ক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বহু প্রাণহানি ঘটেছে।

Advertisment

দার্জিলিঙে এই বিপর্যয় নতুন নয়। ১৮৯৯ থেকে শুরু করে ২০১৫ পর্যন্ত প্রায় প্রতিটি দশকেই ছোট-বড় ভূমিধস ও বন্যা আঘাত হেনেছে। ১৯৬৮ সালের ভয়াবহ বন্যায় এক হাজারেরও বেশি মানুষের প্রাণ গিয়েছিল। ইতিহাসের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে ২০২৫ সালের নতুন অধ্যায়। সেটা প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের, যা এবার কেবল পাহাড় নয়, জাতীয় নিরাপত্তার সঙ্গেই ওতপ্রোতভাবে জড়িত। 

আরও পড়ুন- কোজাগরী কি শুধুই বাঙালদের? ঘটিরা অলক্ষ্মী তাড়ান দীপাবলির সন্ধ্যায়!

Advertisment

দার্জিলিংয়ের পরিবর্তিত বাস্তবতা

বিগত কয়েক দশকে দার্জিলিঙের সামাজিক-পরিবেশগত কাঠামো আমূল বদলে গেছে। সমতল ও প্রতিবেশী দেশগুলি থেকে বিপুল জনগণের আগমন ঘটেছে। জমি-বাড়ির চাহিদা বেড়েছে বহুগুণে। মে-সেপ্টেম্বরে ছড়িয়ে থাকা বৃষ্টিপাত এখন অল্প সময়ে প্রবলভাবে নেমে আসছে। স্থানীয়রা একে বলছেন, 'মুষলধারে বর্ষা।' অনিয়ন্ত্রিত উন্নয়ন ও পাহাড় কেটে নির্মাণের ফলে নদী এবং ঝোরার প্রাকৃতিক প্রবাহ বাধাপ্রাপ্ত হচ্ছে। জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র, রেললাইন, রিসোর্ট এবং হোটেলের নির্মাণে পাহাড়ের ভারবহন ক্ষমতা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। প্রাকৃতিক জলনিষ্কাশনের পথে বাড়ি এবং বর্জ্য ফেলে সৃষ্টি হচ্ছে 'আর্তেরিয়াল ক্লগিং'—যা ভূমিধসকে ত্বরান্বিত করছে।

আরও পড়ুন- লক্ষ্মীপুজোয় দেবীর এই প্রিয় মিষ্টি ভোগে রাখছেন তো? চটপট বানান এভাবে!

ইসরোর ধস মানচিত্র সংকলন (ISRO's Landslide Atlas 2023)-এ দার্জিলিংকে ১৪৭ জেলার মধ্যে ৩৫তম সর্বাধিক ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। তবুও প্রশাসনিক উদাসীনতা এবং দুর্বল পরিকাঠামো পাহাড়ের মানুষকে অসহায় অবস্থায় ফেলে রাখছে। স্থানীয় সংগঠন যেমন সেভ দ্য হিলস (Save The Hills, Col. Praful Rao) বছরের পর বছর সোশ্যাল মিডিয়া ও সেমিনারে এই বিপদ সম্পর্কে সতর্ক করে আসছেন। কিন্তু সরকারি পদক্ষেপ প্রায় নেই বললেই চলে। ২০২৩ সালের অক্টোবরে সিকিমের হিমবাহ হ্রদ ফাটা বন্যা (Glacial Lake Outburst Flood, GLOF) বিপর্যয়ের মত ঘটনা পূর্বাভাস দিয়েছিল। তবু যথাযথ প্রস্তুতির অভাবে হাজারো কোটি টাকার ক্ষতি এবং প্রাণহানি ঘটেছে। এই জলস্রোত দার্জিলিং এবং জলপাইগুড়িতে ধ্বংস ডেকে এনেছে।

আরও পড়ুন- কোজাগরী লক্ষ্মীপুজো কেন রাতেই করা হয়? কারণ জানলে আশ্চর্য হবেন! 

পরিস্থিতি এখন এমন যে পাহাড়ে প্রশাসন এখন অনেকাংশে অচল। গোর্খাল্যান্ড আঞ্চলিক প্রশাসন (Gorkhaland Territorial Administration, GTA), স্থানীয় পুরসভা ও পঞ্চায়েত—কারও যথাযথভাবে দুর্যোগ মোকাবিলার সক্ষমতা নেই। একসময় পাহাড়ের পৌরসভাগুলো সুশাসনের দৃষ্টান্ত ছিল। আজ তাদের কাছে নেই কঠিন বর্জ্য নিষ্কাশন ব্যবস্থাপনা কেন্দ্র (solid waste management unit) পর্যন্ত নেই। ফলে প্লাস্টিক ও বর্জ্য মিশে যাচ্ছে নদী ও ঝোরায়। যা, ভূমিধসের গতি আরও বাড়াচ্ছে। 

আরও পড়ুন- কোজাগরী লক্ষ্মীপুজো, পুজোর সময় এগুলো মিলিয়ে নেবেন ঠাকুরমশাই! কিছু বাদ পড়ল না তো?

দার্জিলিং কেবল পর্যটন কেন্দ্র নয়। এটি ভারতের পূর্বমুখী নীতি (Act East Policy)-এর অন্যতম কৌশলগত অঞ্চলও। এলাকা অবস্থিত ভারতের চিকেন'স নেক 'Chicken's Neck' বা শিলিগুড়ি করিডরের পাশে। এর মাধ্যমেই ভারতের উত্তর-পূর্বের রাজ্যগুলোর যোগাযোগ নির্ভর করে। এই অঞ্চলে যদি ভূমিধস বা নদী পরিবর্তনে পরিকাঠামো ভেঙে পড়ে, তা ভারতের প্রতিরক্ষা এবং বাণিজ্য উভয়ক্ষেত্রেরই বিপুল ক্ষতি ডেকে আনতে পারে। দার্জিলিঙের চা, পর্যটন, ওষুধ এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠান — সবই ভারতের বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের মূল উৎসগুলোর অন্যতম। ভূমিধস ও জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে এর অর্থনৈতিক ভিত্তি ক্রমশ দুর্বল হচ্ছে। 

আরও পড়ুন- কোজাগরী লক্ষ্মীপুজোয় মানুন এই ১০ টোটকা, ঘরে উথলে উঠবে সুখ

পরিস্থিতি এমন যে, পাহাড়ি এলাকার জন্য এখন একটি জাতীয় জলবায়ু পরিবর্তন ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ইনস্টিটিউট গঠন করা জরুরি। যা ভারত, নেপাল, ভুটান, মায়ানমার এবং তিব্বতের সংযোগ অঞ্চলে মিলিতভাবে কাজ করবে। দার্জিলিং ডুয়ার্স যৌথ উন্নয়ন ফাউন্ডেশন (Darjeeling Dooars United Development Foundation) দীর্ঘদিন ধরে প্রস্তাব করছে, কুরসিওং-এর ঐতিহাসিক ফরেস্ট রেঞ্জার্স কলেজ (Forest Rangers College)-কে পূর্ব হিমালয়ের প্রথম জলবায়ু পরিবর্তন গবেষণা এবং ব্যবস্থাপনা কেন্দ্র 'Climate Change Research and Management Centre' হিসেবে গড়ে তোলা হোক।

দার্জিলিঙের ভূমিধস কেবল পাহাড়ি সমস্যা নয়—এটি এক গভীর ধস সংকট (Darjeeling Landslide Crisis) যা ভারতের জাতীয় নিরাপত্তা, অর্থনীতি এবং মানবিক অস্তিত্বের প্রশ্ন তুলে ধরেছে। এখন সময় এসেছে প্রশাসন, নীতিনির্ধারক এবং নাগরিক সমাজের একসঙ্গে এগিয়ে এসে পাহাড়কে রক্ষা করার, কারণ দার্জিলিং রক্ষা মানেই ভারতের উত্তর-পূর্বের নিরাপত্তা সুরক্ষিত রাখা। 

darjeeling Landslide