/indian-express-bangla/media/media_files/2025/09/10/nepal-situation-2025-09-10-15-12-54.jpg)
Nepal Situation: নেপালের পরিস্থিতি। (ছবি-এএনআই)
Nepal Gen Z Protests: নেপালের রাজধানী কাঠমান্ডু মঙ্গলবার (৯ সেপ্টেম্বর) রণক্ষেত্রে পরিণত হয়েছিল। কয়েক সপ্তাহ ধরে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়াতে থাকা তরুণদের ক্ষোভ রাস্তায় আছড়ে পড়েছিল। পুলিশের গুলিতে কমপক্ষে ১৯ জন যুবক নিহত হওয়ার পর থেকেই কাঠমান্ডু-সহ বিভিন্ন শহরে আগুন জ্বলছে, পুড়ছে সরকারি ভবন, রাজনৈতিক দলের অফিস পুড়ছে। এমনকী প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রীদের বাড়িও জনরোষের হাত থেকে ছাড় পাচ্ছে না।
কয়েক মাস আগে Next Generation Nepal—এর মত কিছু ফেসবুক পেজ নেপালের দুর্নীতি এবং রাজনৈতিক অচলাবস্থা নিয়ে তরুণদের ক্ষোভ প্রকাশ করতে শুরু করেছিল। পোস্টগুলির মূল চালিকাশক্তি ছিল ১৯৯৬ থেকে ২০১২ সালের মধ্যে জন্ম নেওয়া প্রজন্মের যুবক-যুবতীরা। যাঁদের বলা হয় Gen Z। তরুণদের অভিযোগ, ২০০৮ সালে নেপাল প্রজাতন্ত্র হওয়ার পরও রাজনীতিবিদরা ক্ষমতার অপব্যবহার এবং দুর্নীতি চালিয়ে গিয়েছেন। অথচ, এতকিছুর পরও তাঁরা তদন্ত অথবা জবাবদিহি থেকে কার্যত রেহাই পেয়েছেন।
আরও পড়ুন- এই ৫ জিনিস কাছে থাকলে, কয়েক দিনের মধ্যেই খুশকি হবে দূর!
নেপো বেবিজ (Nepo Babies)
শুধু তাই নয়, রাজনীতিবিদদের সন্তানদের বিলাসী জীবনযাত্রাও তরুণ সমাজের রোষ বাড়িয়েছে। 'Nepo Babies' শব্দটি সোশ্যাল মিডিয়ায় ট্রেন্ড হতে শুরু করেছিল। কিন্তু আন্দোলনের আসল বিস্ফোরণ ঘটে সরকার ২৬টি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম— ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম, হোয়াটসঅ্যাপ, ইউটিউব নিষিদ্ধ করে দেওয়ার পর। এতে Gen Z তরুণদের অভিব্যক্তি প্রকাশের মূল মাধ্যম বন্ধ হয়ে যায়। ক্ষোভ জমে ৮ সেপ্টেম্বর তা রাস্তায় ফেটে পড়ে। সেই ক্ষোভ সামলাতে গিয়েই গুলি চালায় পুলিশ। যাতে বিক্ষোভকারীদের মৃত্যু হয়।
আরও পড়ুন- পিতৃপুরুষের দোষে পরিবারে অশান্তি? শাস্ত্রমতে দোষ কাটান এভাবে!
আন্দোলনকারীদের তেমন নির্দিষ্ট দাবি না থাকলেও মূল দাবি ছিল— ১) সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার (যা পরে আংশিকভাবে উঠিয়ে নেওয়া হয়), ২) দুর্নীতি বন্ধ, ৩) সামাজিক বৈষম্যের অবসান, ৪) কর্মসংস্থানের সুযোগ বৃদ্ধি। ৯ সেপ্টেম্বর বিক্ষোভ চরম আকার নেয়। পুড়িয়ে দেওয়া হয় প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী কে পি শর্মা ওলি, পুষ্পকমল দাহাল ‘প্রচণ্ড’, মাধবকুমার নেপাল, ঝালানাথ খানাল ও শেরবাহাদুর দেউবার বাড়ি। প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী দেউবা ও তাঁর স্ত্রী অর্জু দেউবা (বিদায়ী বিদেশমন্ত্রী) গুরুতর আহত হন। ঝালানাথ খানালের স্ত্রী রাজ্যলক্ষ্মী ছবিত্রকার দগ্ধ হয়ে মারা যান। অর্থমন্ত্রী বিষ্ণুপ্রসাদ পাওডেল ও সাংসদ একনাথ ঢাকালকে প্রকাশ্যে রাজপথে মারধর করা হয়। কাঠমান্ডুর ললিতপুরে নাখু সেন্ট্রাল জেল ভেঙে বিক্ষোভকারীরা ওলির কট্টর সমালোচক
রবি লামিচ্ছানেকে মুক্ত করে।
আরও পড়ুন- মৃত্যুশয্যাতেও ছিলেন আপসহীন! বাঘা যতীন মুগ্ধ করেছিলেন চার্লস টেগার্টকেও
গুরুতর পরিস্থিতির মধ্যে প্রধানমন্ত্রী ওলি পদত্যাগ করেছেন। প্রেসিডেন্ট রামচন্দ্র পৌডেল সেনাবাহিনীর নিরাপত্তায় অজ্ঞাত স্থানে আশ্রয় নিয়েছেন। সেনাপ্রধান অশোকরাজ সিগদেল নেপালবাসীকে শান্ত হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। সেনাবাহিনী নিরাপত্তার দায়িত্ব নিয়েছে, তবে তাদের সরাসরি রাজনৈতিক ভূমিকা নেওয়ার সম্ভাবনা কম। তারা রাজনৈতিক পক্ষগুলির মধ্যে সংলাপ ও স্থিতিশীলতা ফেরাতে ভূমিকা নেবে বলে আশা করা হচ্ছে।
আরও পড়ুন- আপনার বাড়ির কোথায় জলের ট্যাংক? ভুল জায়গায় বসালেই কিন্তু চরম সমস্যা!
বিক্ষোভকারীরা প্রায় সব বড় রাজনৈতিক নেতাকেই টার্গেট করেছে। তবে কাঠমান্ডুর তরুণ মেয়র ব্যালেন শাহ এবং রবি লামিচ্ছানে প্রকাশ্যে আন্দোলনকারীদের পাশে দাঁড়িয়েছেন। রাজতন্ত্রপন্থী দল রাষ্ট্রীয় প্রজাতন্ত্র পার্টি (আরপিপি) সাংসদরা সংসদ থেকে একযোগে ইস্তফা দেওয়ার হুমকি দিয়েছেন। প্রাক্তন রাজা গিয়ানেন্দ্র শাহ নিহতদের পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানিয়েছেন এবং সব পক্ষকে আলোচনার টেবিলে বসার আহ্বান জানিয়েছেন। এতে বোঝা যাচ্ছে যে সংকট গভীর হলে রাজতন্ত্রপন্থীরা আবার সক্রিয় ভূমিকা নিতে চাইতে পারে।
নেপালের অস্থিরতা ভারতকেও চিন্তিত করেছে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ভারতে মন্ত্রিসভার বৈঠক ডেকেছেন। তিনি বলেছেন, 'নেপালের স্থিতি, শান্তি ও সমৃদ্ধি আমাদের কাছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।' নেপালের ইতিহাসে এই বিক্ষোভ অভূতপূর্ব। Gen Z তরুণরা দুর্নীতি, বৈষম্য ও রাজনৈতিক অব্যবস্থার বিরুদ্ধে যে ক্ষোভ প্রকাশ করেছে তা একদিনে থেমে যাওয়ার নয়। সামনে নেপালের জন্য এটা হয়তো এক নতুন রাজনৈতিক অধ্যায়।