/indian-express-bangla/media/media_files/2025/10/13/pakistan-afganistan-border-situation-2025-10-13-13-27-46.jpg)
Pakistan-Afganistan Border Situation: পাকিস্তান-আফগানিস্তান সীমান্ত পরিস্থিতি।
Pakistan Afghanistan Border Tension: আফগানিস্তান এবং পাকিস্তানের মধ্যে নতুন করে উত্তেজনা ছড়িয়েছে। রবিবার, ১২ অক্টোবর ২০২৫-এ আফগান বিদেশমন্ত্রী আমির খান মুতাক্কি ভারত সফরে থাকা অবস্থাতেই কাবুল দাবি করে— তারা সীমান্তে সংঘর্ষে ৫৮ জন পাকিস্তানি সেনাকে হত্যা করেছে। অন্যদিকে, পাকিস্তানের সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, অন্তত ২৩ জন পাকিস্তানি সেনা নিহত হয়েছে এবং ২০০ জন তালেবান যোদ্ধা মারা গেছে। এই ঘটনায় দক্ষিণ এশিয়ার ভূরাজনীতি আবারও আলোচনায় উঠে এসেছে।
কেন আবার যুদ্ধের মুখে পাকিস্তান এবং আফগানিস্তান?
এই সংঘাতের মূল কারণ ‘তেহরিক-ই-তালেবান পাকিস্তান’ (TTP)। ২০০৭ সালে গঠিত এই গোষ্ঠীটি পাকিস্তান রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছে। কারণ, তারা চায় দেশটি ইসলামি শরিয়ত-ভিত্তিক রাষ্ট্রে পরিণত হোক। যদিও TTP-র শক্তি একসময় কমে গিয়েছিল, আফগান তালেবান ২০২১ সালে কাবুল দখল করার পর তাদের প্রভাব আবার বেড়ে যায়। আফগানিস্তানের বর্তমান তালেবান সরকার ও TTP-র আদর্শ অনেকটাই এক। ফলে, ইসলামাবাদ যখন আফগান সীমান্তে TTP ঘাঁটি টার্গেট করে বিমান হামলা চালিয়েছে, তখন কাবুল তার কড়া বিরোধিতা করেছে।
আরও পড়ুন- এবার কি কনকনে ঠান্ডায় কাঁপবে ভারত? কী বলছেন আবহাওয়াবিদরা, সত্যিটা জানুন
পাকিস্তান দীর্ঘদিন ধরে আফগান তালেবানকে অর্থ, আশ্রয় ও সামরিক প্রশিক্ষণ দিয়ে এসেছে। তাদের আশা ছিল— আফগানিস্তানে তালেবান ক্ষমতায় এলে পাকিস্তান ‘স্ট্র্যাটেজিক ডেপথ’ পাবে, অর্থাৎ আফগান ভূখণ্ড ভারতের বিরুদ্ধে কৌশলগত ভরসা হিসেবে কাজ করবে। কিন্তু বাস্তবে ঘটেছে উলটোটা। আফগান তালেবান এখন পাকিস্তানের হামলাকে 'সার্বভৌমত্ব লঙ্ঘন' বলে মনে করছে। দু’দেশের সীমান্তবর্তী খাইবার-পাখতুনখোয়ায় সাধারণ মানুষও পাকিস্তান সরকারের প্রতি ক্ষুব্ধ। ফলে ইসলামাবাদের জন্য পরিস্থিতি হয়ে উঠেছে জটিল।
আরও পড়ুন- ইজরায়েল-হামাস সংঘর্ষবিরতি! কতটা প্রভাব পড়বে ভারতের ওপর?
এই সংঘাতের সময়ই আফগান বিদেশমন্ত্রী মুতাক্কি ভারতে সফরে রয়েছেন। ভারত-আফগানিস্তান সম্প্রতি সম্পর্ক পুনরুদ্ধার করেছে। এমনকী, নয়াদিল্লি আবার কাবুলে তার দূতাবাস পুনরায় খোলার পরিকল্পনাও করছে। এই পরিস্থিতি পাকিস্তানের জন্য উদ্বেগের। ইসলামাবাদ বহুদিন ধরে ভারতের বিরুদ্ধে অভিযোগ করে আসছে যে, ভারত নাকি TTP ও বেলুচ বিদ্রোহীদের অর্থ দিচ্ছে। পাকিস্তান সেনার মুখপাত্র সংস্থা ISPR এই সংঘাতকে 'India-sponsored Fitna-al-Khawarij attack' বলে দাবি করেছে। তবে ভারত এখন পর্যন্ত এই অভিযোগে কোনও প্রতিক্রিয়া জানায়নি।
আরও পড়ুন- এমনি এল শান্তির নোবেল? গোটা ভেনেজুয়েলা মাতিয়ে দিয়েছেন মারিয়া মাচাদো, জানেন সেসব?
চিন এই মুহূর্তে চায় না যে CPEC (China-Pakistan Economic Corridor) প্রকল্পের পথে কোনও নতুন সংঘাত বাধা হয়ে দাঁড়াক। অন্যদিকে সৌদি আরব ও কাতার, যারা আফগানিস্তানের তালেবান সরকারের ঘনিষ্ঠ, তারাও ঘটনায় restraint বা সংযম দেখানোর আহ্বান জানিয়েছে। তারা মধ্যপ্রাচ্যে চলমান গাজা যুদ্ধ চলাকালীন আর কোনও মুসলিম দেশের সীমান্তে সংঘাত চায় না। দক্ষিণ এশিয়ার এই টানাপোড়েনে ভারত কূটনৈতিকভাবে সঠিক সময়ে এগিয়েছে। আফগানিস্তানের সঙ্গে সম্পর্ক পুনর্গঠন করে ভারত নিজেকে আবারও আঞ্চলিক স্থিতিশীলতার কেন্দ্রে নিয়ে আসছে। যদি ভারত কাবুলে বিনিয়োগ, পরিকাঠামো এবং মানবিক সহায়তা বাড়াতে পারে, তবে পাকিস্তানের কৌশলগত প্রভাব অনেকটাই হ্রাস পেতে পারে।
আরও পড়ুন- ইজরায়েল ও হামাস প্রথম ধাপের শান্তি পরিকল্পনায় রাজি, কূটনৈতিক সাফল্য ট্রাম্পের!
এই কারণে বলা যায় যে, পাকিস্তান-আফগানিস্তান সংঘাত শুধু দুই দেশের সমস্যা নয়; এটি গোটা দক্ষিণ এশিয়ার ভূরাজনীতিতে ঢেউ তুলছে। ভারত এই পরিস্থিতিতে শান্তি ও স্থিতিশীলতার পক্ষে অবস্থান নিলে, কূটনৈতিকভাবে অনেক লাভবান হতে পারে।